শুঙ্গ বংশ

শুঙ্গ সাম্রাজ্য বা শুঙ্গ বংশ প্রসঙ্গে শুঙ্গদের পরিচয়, পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, ব্রাহ্মণ বিক্ষোভ, পুষ্যমিত্রের শাসন নীতি, বৈদেশিক আক্রমণ, গ্ৰিক আক্রমণ, শুঙ্গ রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি, শুঙ্গ সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন, নতুন রাজধানী, অগ্নিমিত্র, সুজেষ্ঠ্য ও বসুমিত্র, বজ্রমিত্র ও ভাগবৎ শুঙ্গ সম্পর্কে জানবো।

শুঙ্গ সাম্রাজ্য বা শুঙ্গ বংশ

সাম্রাজ্যশুঙ্গ বংশ
প্রতিষ্ঠাতাপুষ্যমিত্র শুঙ্গ
শেষ রাজাদেবভূতি
পূর্ববর্তীমৌর্য সাম্রাজ্য
পরবর্তীকাণ্ব বংশ
শুঙ্গ বংশ

ভূমিকা :- মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে নিহত করে মগধ -এর সিংহাসনে পুয্যামিত্র শুঙ্গ বসেন বলে জানা যায়। এই সুযোগে দক্ষিণে সাতবাহনগণ এক স্বাধীন সাম্রাজ্য স্থাপন করে। কলিঙ্গে চেত বংশের অধীনে এক স্বাধীন সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়।

শুঙ্গ বংশ পরিচয়

শুঙ্গ বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। পাণিনির মতে, শুঙ্গরা ছিল ব্রাহ্মণ ঋষি ভরদ্বাজের বংশ থেকে উদ্ভুত। বৃহদারণ্যক উপনিষদে শুঙ্গীপুত্র নামে এক ব্রাহ্মণ ঋষি ও গুরুর নাম পাওয়া যায়। কিন্তু কালিদাস মালবিকাগ্নিমিত্রম, নাটকে বলেছেন যে, শুঙ্গরা ছিল কাশ্যপ গোত্রের বৈম্বিক বংশের লোক। বৌদ্ধ দিব্যাবদানের মতে, পুষ্যমিত্র ছিলেন মৌর্যবংশ হতে উদ্ভূত।

শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্যমিত্র

আধুনিক পণ্ডিতেরা বলেছেন যে, পুষ্যমিত্র বৈম্বিক বংশের লোক হলেও তার সঙ্গে শুঙ্গ বংশের যোগ বেশী ছিল। এই অর্থে তাকে শুঙ্গ বলা হয়। পুরাণের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ১৮৫-১৪৯ খ্রিস্ট পূর্ব পর্যন্ত ৩৬ বছর মগধ সাম্রাজ্য শাসন করেন।

ব্রাহ্মণ বিক্ষোভ

পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন যে, মৌর্য সম্রাটদের বিরুদ্ধে যে ব্রাহ্মণ বিক্ষোভ ছিল তাকে কাজে লাগিয়ে ব্রাহ্মণ পুষ্যামিত্র মগধের সিংহাসন অধিকার করেন। ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী এ মতের বিরোধিতা করেছেন।

পুষ্যামিত্রের শাসননীতি

সিংহাসনে বসার পর পুষ্যমিত্র তাঁর শত্রুদের বন্দী করে এবং নিজ পুত্র ও আত্মীয়দের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করে ক্ষমতাকে দৃঢ় করেন। সম্ভবত বিদর্ভের শাসনকর্তা যজ্ঞসেন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং যজ্ঞসেনের জ্ঞাতি ভাই মাধব সেন পুষ্যমিত্রের পক্ষ নিলে, তিনি বন্দী হন। যুবরাজ অগ্নিমিত্র যজ্ঞসেনকে যুদ্ধে পরাস্ত করে বিদর্ভ অধিকার করেন এবং এর একাংশ মাধব সেনকে দেওয়া হয়।

শুঙ্গ বংশে বৈদেশিক আক্রমণ

ডঃ স্মিথের মতে, কলিঙ্গ রাজ খারবেল মগধরাজ পুষ্যমিত্রকে পরাস্ত করেন। কিন্তু হাতিগুম্ফা শিলালিপিতে যে বৃহস্পতি মিত্রের নাম আছে তিনিই পুষ্যমিত্র কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ আছে।

শুঙ্গ বংশে গ্ৰিক আক্রমণ

কালিদাস তাঁর মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকে যবন আক্রমণের কথা উল্লেখ করেছেন। পুষ্যমিত্রের পৌত্র যুবরাজ বসুমিত্র এই আক্রমণ প্রতিহত করেন। এই যুদ্ধের গ্রীক আক্রমণকারীর নাম ছিল সম্ভবত মিনান্দার বা মিলিন্দ। অনেকের মতে, পুষ্যমিত্রের মৃত্যুর পর এই আক্রমণ ঘটে। পুষ্যামিত্র তাঁর বিজয়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন।

শুঙ্গ রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি

ঐতিহাসিক রাপসন বলেছেন যে, রাজত্বের শেষ দিকে পুষ্যমিত্রের ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাঁর সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যেমন –

  • (১) অবন্তী প্রদেশটি সাতবাহন রাজ প্রথম সাতকর্ণি জয় করে নেন।
  • (২) শাকল বা শিয়ালকোট বা পাঞ্জাব অঞ্চল গ্রীক রাজা মিনান্দার জয় করে নেন।
  • (৩) ডঃ স্মিথের মতে, কলিঙ্গরাজ খারবেল এই সময় পাটলিপুত্র আক্রমণ করেন। তবে এ সম্পর্কে মতভেদ আছে।

শুঙ্গ সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন

পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ১৪৯ খ্রিস্ট পূর্বে (মতান্তর ১৫১ খ্রিস্ট পূর্বে) দেহত্যাগ করেন। ডঃ এস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, তার মৃত্যুর পরেই শুঙ্গ সাম্রাজ্যে ভাঙন দেখা দেয়।

শুঙ্গ বংশের নতুন রাজধানী

অধ্যাপক রাপসনের মতে, শুঙ্গ বংশ রাজধানী পাটলিপুত্রের ওপর অধিকার হারায় এবং বিদিশা বা বিলসাতে তাদের নতুন রাজধানী স্থাপন করতে বাধ্য হয়। কোনো কোনো পণ্ডিত এই মতের বিরোধিতা করেন। যাই হোক, পুষ্যামিত্রের পর শুঙ্গদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এতে সন্দেহ নেই।

শুঙ্গ বংশের রাজা অগ্নিমিত্র

পুষ্যমিত্রের পর তার পুত্র অগ্নিমিত্র প্রায় ৮ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর শাসনকালে কোনো উল্লেখ্য ঘটনার কথা জানা যায়নি। তিনি ছিলেন কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকের নায়ক।

শুঙ্গ বংশের রাজা সুজেষ্ঠ্য ও বসুমিত্র

অগ্নিমিত্রের পর সিংহাসনে বসেন সুজ্যেষ্ঠ। তিনি ৭ বছর রাজত্ব করেন। এর পর সিংহাসনে বসেন সুমিত্র। সুমিত্র ও বসুমিত্র একই ব্যক্তি বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। হর্ষচরিতের মতে, বসুমিত্র ছিলেন নৃত্য-গীতের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত। তিনি কোশল -এর শাসনকর্তা মিত্রদেবের হাতে নিহত হন।

শুঙ্গ বংশের রাজা বজ্রমিত্র ও ভাগবৎ শুঙ্গ

এর পর সিংহাসনে বসেন বজ্রমিত্র। তিনি ৯ বছর রাজত্ব করেন। তারপর ভগবৎ বা ভাগবৎ শুঙ্গ সিংহাসনে বসেন। তিনি ও বিদিশার রাজা কাশীপুত্র ভাগভদ্র একই লোক বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। তাঁর দরবারে গ্রীক দূত হেলিওডোরাস ছিলেন। তিনি ভাগবৎ বা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে বিদিশায় ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি গরুড় স্তম্ভ তৈরি করেন। ভাগভদ্র ৩২ বছর রাজত্ব

উপসংহার :- শুঙ্গ বংশের শেষ রাজার নাম ছিল দেবভূতি (৮২ খ্রিস্ট পূর্ব)। বাণভট্টের মতে, তিনি ছিলেন ইন্দ্রিয়াসক্ত। তাঁর অমাত্য বাসুদের কাণ্ব এক পরিচারিকার সাহায্যে তাকে নিহত করেন। দেবভূতির মৃত্যুর পর শুঙ্গ বংশের শাসন লোপ পায়।

(FAQ) শুঙ্গ সাম্রাজ্য বা শুঙ্গ বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মৌর্য বংশের পর মগধে কোন বংশ শাসন প্রতিষ্ঠা করে?

শুঙ্গ বংশ।

২. মগধে শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

পুষ্যমিত্র শুঙ্গ।

৩. শুঙ্গ বংশের শেষ রাজা কে ছিলেন?

দেবভূতি।

৪. কালিদাসের মালাবিকাগ্নিমিত্র নাটকের নায়ক কে ছিলেন?

শুঙ্গ রাজা অগ্নিমিত্র।

Leave a Comment