ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ

ফ্রান্সে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ প্রসঙ্গে রাজতন্ত্রের স্বরূপ, রাজন্যবর্গের দুর্বলতা, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন, দুর্নীতিগ্রস্ত আইন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা, প্রাদেশিক সভাগুলির বিরোধিতা, রাজ পরিবারের অমিতব্যায়িতা, ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি, দুর্বল অর্থনীতি, রাজা ষোড়শ লুইয়ের দায়িত্ব ও ফিশারের বক্তব্য সম্পর্কে জানবো।

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ
সময়কাল১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ
স্থানফ্রান্স
রাজাষোড়শ লুই
ফলাফলরাজতন্ত্রের পতন
ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ

ভূমিকা :- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে ফ্রান্সের তদানীন্তন বুরবোঁ রাজতন্ত্রের দায়িত্ব ছিল সর্বাধিক।

ফরাসি রাজতন্ত্রের স্বরূপ

  • (১) অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে অতি-কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাজারা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাঁরা বংশানুক্রমিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। রাজা ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক, বিচারক এবং আইন-প্রণেতা। তাঁর ইচ্ছাই ছিল আইন।
  • (২) ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরবর্তী ১৭৫ বছর ‘স্টেটস্ জেনারেল’ বা ফরাসি ‘জাতীয় প্রতিনিধিসভা’-র কোনও অধিবেশন আহ্বান করা হয় নি। সুতরাং, রাজা নিজ ইচ্ছানুসারে সীমাহীন স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ শাসন করতেন। সেখানে প্রজাদের মতামতের কোনও মূল্য ছিল না—রাজতন্ত্র জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল।
  • (৩) ঐতিহাসিক শেভিল (Schevill) বলেন যে, স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বন্ধ থাকার ফলে সাধারণ লোকের অসুবিধা ও অভিযোগের কথা রাজার কাছে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না এবং রাজার পক্ষেও সাধারণ প্রজাদের অবস্থার কথা বোঝা সম্ভব ছিল না। এর ফলে বুরবোঁ রাজতন্ত্র বৃহত্তর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ফরাসি রাজন্যবর্গের দুর্বলতা

  • (১) ফরাসি-রাজ চতুর্দশ লুইছিলেন যোগ্য শাসক। বিলাস-ব্যসনে মগ্ন থেকে তিনি স্বৈরাচারী ক্ষমতার মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তাঁর সুযোগ্য মন্ত্রী কার্ডিনাল রিশল্যু ও ম্যাজারিন ফরাসি রাজতন্ত্রকে সুদৃঢ় করে গড়ে তোলেন। তাঁর আমলে ভার্সাইয়ের রাজপ্রাসাদ ছিল ‘ঐশ্বর্যের ইন্দ্রপুরী’।
  • (২) তিনি এমনই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যে, তিনি বলতেন, “আমিই রাষ্ট্র” (“I am the state.”)। তাঁর শাসনকালে ফরাসি রাজতন্ত্র ফ্রান্সে ও ফ্রান্সের বাইরে জনগণের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
  • (৩) তাঁর উত্তরাধিকারী পঞ্চদশ লুই ছিলেন বিলাসী, অলস ও পরিশ্রমবিমুখ। ‘প্রজাপতি রাজা’ (‘Butterfly Monarch’) নামে পরিচিত এই রাজা সম্পূর্ণভাবে তাঁর উপপত্নী মাদাম দ্য পম্পাদুর-এর প্রভাবাধীন ছিলেন।
  • (৪) শাসনকার্যে তাঁর উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে রাজকর্মচারীরা দেশে যথেচ্ছাচার শুরু করে এবং তাদের সীমাহীন অনাচার, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের ফলে প্রশাসন পঙ্গু হয়ে পড়ে। তাঁর দুর্বল শাসনে রাজতন্ত্র তার সকল মর্যাদা হারিয়ে ফেলে এবং দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  • (৫) এই প্রসঙ্গে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূত কমতে দ্য মার্সি (Comte de Marcy) বলেন যে, “সেই সময় প্যারিসের রাজদরবারে বিশৃঙ্খলা, কলঙ্ক ও অবিচার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ন্যায়নীতি অবলম্বন করে সরকার পরিচালনা করার কোনও চেষ্টা ছিল না এবং সব কিছুই অদৃষ্টের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।”
  • (৬) দেশের শোচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করে মৃত্যুকালে রাজা বলেন, “আমার পরেই মহাপ্রলয় আসছে” (“After me deluge.”)। পরবর্তী ফরাসি-রাজ দুর্বলচিত্ত ও অপদার্থ ষোড়শ লুই-এর আমলে রাজতন্ত্র অবক্ষয়ের শেষ সীমায় উপনীত হয়।
  • (৭)  বিলাস-ব্যসন ও আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে রাজকোষের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। তিনি তাঁর দাম্ভিক ও বিলাসিনী রানি মেরিআঁতোয়ানেত-এর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর দুর্বল শাসনে প্রশাসন একেবারে ভেঙে পড়ে। তাঁর প্রতি জনগণের বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না।
  • (৮) তাঁর দম্ভ ছিল সীমাহীন। তিনি বলতেন, “আমি যা ইচ্ছা করি তাই আইন” (“What I desire is decree.”)। তাঁর পক্ষে রাজশক্তির পতন রোধ করা সম্ভব হয় নি।

ফ্রান্সের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন

  • (১) রাজশক্তির এই দুর্বলতার সুযোগে শাসনকার্য সম্পূর্ণভাবে অভিজাতদের হাতে চলেযায়। তারা স্ব স্ব প্রধান হয়ে উঠে নিজ নিজ স্বার্থে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে।
  • (২) সরকারি কর্মচারী ও বিভাগগুলির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট না থাকায় সরকারি কাজকর্মে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কর্মচারীরা একাধিক বিষয়ের উপর ক্ষমতা ও অধিকার দাবি করায় শাসনকার্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
  • (৩) প্রাদেশিক শাসকরা কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ অবাধে অমান্য করতে থাকে। এর ফলে শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তা ‘ইনটেনডেন্ট’ (Intendent) নামক কর্মচারীদের হাতে চলে যায়।
  • (৪) ইনটেনডেন্টরা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য চরম অত্যাচারী হয়ে ওঠে। জনসাধারণ তাদের ‘অর্থলোলুপ নেকড়ে’ উপাধিতে ভূষিত করে। ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ (Letters de Cachet) নামক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সাহায্যে রাজপুরুষরা যে কোনও সাধারণ নাগরিককে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রাখতে পারত।
  • (৫) বাস্তিল দুর্গ এইসব নিরপরাধ বন্দিতে পূর্ণ হয়ে যায়। ঐতিহাসিক নর্মান হ্যাম্পসন (Norman Hampson) বলেন যে, “শাসনকার্যে অভিজাত শ্রেণির অনুপ্রবেশের ফলে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।”

দুর্নীতিগ্রস্ত ফরাসি আইন

  • (১) এই সময় ফ্রান্সের আইনবিধি ছিল জটিল, বিশৃঙ্খল, দুর্বোধ্য ও অবৈজ্ঞানিক। সমগ্র দেশের জন্য কোনও সার্বজনীন আইন ছিল না। দেশের এক এক অঞ্চলে এক এক রকম আইন প্রচলিত ছিল—কোথাও জার্মান, আবার কোথাও বা রোমান আইন।
  • (২) এইভাবে ফ্রান্সে মোট চারশো বিভিন্ন ধরনের আইন প্রচলিত ছিল। ল্যাটিন ভাষায় রচিত হওয়ায় আইনগুলি ফরাসি জনসাধারণের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। আইনগুলি ছিল অতি নির্মম এবং সাধারণ অপরাধের জন্যও মৃত্যুদণ্ড, ছিল স্বাভাবিক। দেশের এক এক অঞ্চলে এক এক ধরনের দণ্ডবিধি প্রচলিত ছিল।

ফ্রান্সের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা

  • (১) বিচারব্যবস্থা ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত, জটিল ও ব্যয়বহুল।এক কথায় তা ছিল প্রহসনের নামান্তর। বিচারকদের অধিকাংশই ছিলেন অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। এখানেও ছিল অভিজাতদের একচেটিয়া আধিপত্য।
  • (২) বিচারকরা তাঁদের পদগুলি সরকারের কাছ থেকে কিনে নিতেন। সরকার তাঁদের কোনও বেতন দিত না। জরিমানা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সবটাই তাঁরা পেতেন। এজন্য অর্থদণ্ডের পরিমাণ ছিল অত্যধিক।
  • (৩) আইনের চোখে সকলের সমান অধিকার স্বীকৃত ছিল না। বংশানুক্রমিকভাবে নিযুক্ত দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকেরা ন্যায়বিচার অপেক্ষা নিজ স্বার্থসিদ্ধিতেই ব্যস্ত থাকতেন।

ফরাসি প্রাদেশিক সভাগুলির বিরোধিতা

  • (১) রাজকীয় ক্ষমতার উপর ফ্রান্সের প্রদেশগুলিতে অবস্থিত প্রাদেশিক সভা বা পার্লামেন্টগুলির প্রভাব ছিল সীমাহীন। ফ্রান্সে মোট ১৩টি প্রাদেশিক সভা বা পার্লামেন্টছিল। এগুলির মধ্যে প্যারিসের পার্লামেন্ট ছিল সর্বাধিক ক্ষমতাশালী।
  • (২) এই পার্লামেন্টগুলিছিল সর্বোচ্চ আপিল আদালত। রাজা কোনও নতুন আইন বা নির্দেশ জারি করলে অবশ্যই তাকে প্রাদেশিক আইনসভাগুলির অনুমোদন পেতে হত, অন্যথায় তা প্রদেশগুলিতে কার্যকর হত না।
  • (৩) এই প্রাদেশিক সভাগুলির সদস্যরা ছিলেন যাজক ও অভিজাত শ্রেণির। তাঁদের বিরোধিতার মুখে রাজার কিছু করার ছিল না। সুতরাং ফরাসি-রাজ দৈব ক্ষমতা দাবি করলেও বাস্তবে তাঁর ক্ষমতা ছিল সীমিত।
  • (৪) ডেভিড টমসন-এর মতে, “ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল আসলে সামস্ত রাজতন্ত্র।” এই প্রাদেশিক সভাগুলির অনুমোদন ছাড়া কোনও রাজকীয় আইন কার্যকর করা যেত না।
  • (৫) পার্লামেন্টগুলির ক্রমাগত বিরোধিতার জন্য পঞ্চদশ লুই এগুলি ভেঙে দেন, কিন্তু অভিজাতদের ক্রমাগত চাপের মুখে ষোড়শ লুই এগুলির পুনরুজ্জীবন ঘটাতে বাধ্য হন।

ফরাসি রাজপরিবারের অমিত ব্যয়িতা

  • (১) রাজপরিবারের সীমাহীন বিলাস ব্যসন, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অমিতব্যয়িতা দেশের অর্থনীতি ও জনমনে এক ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদ ছিল বিলাস ব্যসন ও ঐশ্বর্যের ইন্দ্রপুরী।
  • (২) রাজপরিবারের সেবার জন্য ১৮ হাজার কর্মচারী সর্বদা নিয়োজিত ছিল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাই রাজপ্রাসাদে বিলাসের জন্য ব্যয় হয়েছিল ২ কোটি মুদ্রা। রাজা, রানি, তাঁদের সন্তান-সন্ততি এবং অগণিত আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য পৃথক পৃথক সুরম্য অট্টালিকা ছিল।
  • (৩) রানি মেরি আঁতোয়ানেত-এর ব্যক্তিগত সহচরীর সংখ্যা ছিল পাঁচশো। রাজপরিবারের প্রমোদ ভ্রমণের জন্য সর্বদা দু’ হাজার ঘোড়া এবং দুশো শকট প্রস্তুত থাকত। রাজপরিবারেরএই অমিতব্যয়িতা ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা জনমনে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার করে।

ফ্রান্সের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি

  • (১) ফরাসি রাজন্যবর্গের দুর্বল ও আত্মঘাতী পররাষ্ট্রনীতি ফরাসি রাজতন্ত্রের মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।ফরাসি সম্রাট পঞ্চদশ লুই অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধে(১৭৪০-১৭৪৮ খ্রিঃ) এবং সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে (১৭৫৬-১৭৬৩ খ্রিঃ) অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।
  • (২) এর ফলে ইউরোপ -এ ফ্রান্সের মর্যাদা বিনষ্ট হয়, ভারত ও আমেরিকায় ফরাসি সাম্রাজ্য স্থাপনের আশা ধূলিসাৎ হয় এবং ফরাসি রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে।
  • (৩) এরপর ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর ফলে ফ্রান্সের অর্থ-সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। তিনি ‘স্টেটস্ জেনারেল’-এর অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য হন, যা ফরাসি বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।

দুর্বল ফরাসি অর্থনীতি

  • (১) ফ্রান্সের অর্থনীতি ও রাজস্বব্যবস্থা ছিল বিশৃঙ্খল, অবৈজ্ঞানিক ও ত্রুটিপূর্ণ। সরকারি আয়-ব্যয়ের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য ছিল না। যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় দেশের মোট সম্পদের ৯৫ শতাংশের মালিক হলেও তাঁরা কোনও কর দিতেন না।
  • (২) অপরদিকে দেশের মাত্র ৫ শতাংশ সম্পদের অধিকারী বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ দেশের আদায়ীকৃত রাজস্বের ৯৫ ভাগ প্রদান করতেন। রাজকীয় করের পাশাপাশি ছিল সামন্তপ্রভু ও গির্জাকে প্রদত্ত নানা করের বোঝা।
  • (৩) ভ্রান্ত অর্থনীতি, রাজপ্রাসাদের বিলাস-বৈভব এবং বৈদেশিক যুদ্ধে অর্থব্যয় দেশের অর্থনীতিকে পতনে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়।

ফরাসি বিপ্লবসংগঠনে ষোড়শ লুইয়ের দায়িত্ব

  • (১) রাজা ষোড়শ লুই পরিস্থিতির জটিলতা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত ছিলেন। এই কারণে তিনি নানা সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। যাজক ও অভিজাতদের বিরোধিতায় তাঁর এই প্রয়াস ব্যর্থ হয় এবং বিপ্লব আসন্ন হয়ে ওঠে।
  • (২) এইচ. এ. এল. ফিশার ও মাদেলা বিপ্লবের জন্য ফরাসি রাজতন্ত্রকে দায়ী করেছেন। বলা হয় যে, ষোড়শ লুই যদি যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকার খর্ব করে নিজ স্বৈরতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করাতে পারতেন বা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারতেন তাহলে হয়তো বিপ্লব এড়ানো যেত।

ফরাসি বিপ্লবের রাজতন্ত্র সম্পর্কে ফিশারের বক্তব্য

ফিশার বলেন যে, ফরাসি-রাজ বিশেষ অধিকারের প্রশ্নটির সমাধানে ব্যর্থ হয়ে বিপ্লব ডেকে এনেছিলেন। মাদেলা বলেন যে, ফরাসি রাজতন্ত্রই বিপ্লব সৃষ্টি করে।

উপসংহার :- ডেভিড টমসন (David Thomson) বলেন যে, যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকার খর্ব করা সম্ভব ছিল না, কারণ এর উপরেই রাজার স্বৈরাচার ও ‘পুরাতনতন্ত্র’ দাঁড়িয়েছিল। এই বিশেষ অধিকারের উপর হাত দিলে সমগ্র ‘পুরাতনতন্ত্র’-ই কেঁপে উঠত। লেফেভর-এর মতে দুর্বলচিত্ত ও অপদার্থ ষোড়শ লুই-এর পরিবর্তে ওই সময় চতুর্থ হেনরি বা চতুর্দশ লুই ফরসি সিংহাসনে থাকলে ইতিহাসের গতি ভিন্ন খাতে বইত এবং বিপ্লব সংঘটিত হত না।

(FAQ) ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফরাসি বিপ্লব কখন কোথায় হয়?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দছ ফ্রান্সে।

২. ফরাসি বিপ্লবের সময় কোন রাজবংশ রাজত্ব করতে?

বুরবোঁ রাজবংশ।

৩. ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা কে ছিলেন?

ষোড়শ লুই।

Leave a Comment