চরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ

চরমপন্থী আন্দোলন বা চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের স্বরূপ হিসেবে রক্ষণশীল আন্দোলন, ঐতিহ্য ও হিন্দু ধর্মের ভিত্তি, রজনীপাম দত্তের অভিমত, দেশাইয়ের অভিমত, সবদেশেই জাতীয়তাবাদের ভিত্তি, মুসলিম বিরোধী নয়, আন্দোলনের দ্বৈত চরিত্র, ও আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি সম্পর্কে জানবো।

চরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ প্রসঙ্গে চরমপন্থাবাদ বা চরমপন্থা শব্দের অর্থ, চরমপন্থী আন্দোলন রক্ষণশীল আন্দোলন, চরমপন্থী আন্দোলন মুসলিম বিরোধী নয়, চরমপন্থী আন্দোলনের দ্বৈত চরিত্র ও চরমপন্থী আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি সম্পর্কে জানব।

চরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ

ঐতিহাসিক ঘটনাচরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ
নেতৃবৃন্দের পরিচিতিচরমপন্থী
নেতৃবৃন্দবাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপৎ রায়, বিপিন চন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ
লক্ষ্যব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা
ভিত্তিহিন্দু ধর্ম, অতীত ইতিহাস ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা
চরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ

ভূমিকা :- ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে চরমপন্থী পর্ব এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। নরমপন্থী রাজনীতির দুর্বলতার প্রতিবাদে চরমপন্থীরা ভারত-এ এক বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ সরকারকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।

চরমপন্থীদের আন্দোলন রক্ষণশীল আন্দোলন

জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থীদের আন্দোলনকে রক্ষণশীল বলার কারণ হল –

(১) ঐতিহ্য ও হিন্দু ধর্মের ভিত্তি

চরমপন্থী নেতৃবৃন্দ অতীত ঐতিহ্য ও হিন্দু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পরিচালনায় আগ্রহী ছিলেন। এর ফলে আন্দোলনে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও রক্ষণশীলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

(২) রজনীপাম দত্তের সমালোচনা

মার্কসবাদী পণ্ডিত রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংমিশ্রণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, এর ফলে জাতীয়তাবাদের পরিধি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, মুসলিম সমাজ জাতীয় আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায় এবং এইভাবে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীরা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে সুসংহত করেন।

(৩) দেশাইয়ের অভিমত

ঐতিহাসিক ডঃ এ. আর. দেশাই বলেন যে, “হিন্দুধর্ম এবং হিন্দু সমাজের ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বরাজ আন্দোলন গড়ে তোলবার জন্য নব্য-জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকগণ পরবর্তীকালে সমালোচিত হন।”

(৪) সবদেশেই জাতীয়তাবাদের ভিত্তি

পৃথিবীর সব দেশেই প্রাচীন ঐতিহ্য ও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলা হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব -এর পর বলশেভিকরাও ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করেই মধ্য এশিয়ার জনগণের মধ্যে সাম্যবাদী ভাবধারা বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

চরমপন্থীদের আন্দোলন মুসলিম বিরোধী নয়

আমাদের মনে রাখা দরকার যে, তিলক, অরবিন্দ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কখনোই মুসলিম-বিরোধী ছিলেন না—বরং তাঁদের লক্ষ্য ছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করা।

চরমপন্থীদের আন্দোলনের দ্বৈত চরিত্র

ডঃ এস. আর. মেহরোত্রা -র মতে চরমপন্থী আন্দোলনের দ্বৈত চরিত্র ছিল –একদিকে এই আন্দোলন ছিল রক্ষণশীল এবং অপরদিকে বৈপ্লবিক।

(১) রক্ষণশীল

এই আন্দোলন প্রাচীন ঐতিহ্য ও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল—তাই এর চরিত্র রক্ষণশীল।

(২) বৈপ্লবিক

অপরদিকে এই আন্দোলন পাশ্চাত্যের গণ-আন্দোলন ও সন্ত্রাসবাদী চিন্তা ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল—তাই এর চরিত্র বৈপ্লবিক।

চরমপন্থীদের আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি

নরমপন্থী ও চরমপন্থী রাজনীতিকদের সামাজিক ভিত্তির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। –

(১) নরমপন্থী রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি

ইংরেজি-শিক্ষিত ও বিত্তবান শ্রেণীই ছিল নরমপন্থী রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি।

(২) চরমপন্থী রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি

যোগ্য স্থান লাভে বঞ্চিত ইংরেজি-শিক্ষিত সম্প্রদায়, শহরের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের নিয়ে চরমপন্থী রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। নেতৃত্ব ছিল উচ্চবর্ণের শিক্ষিত ‘ভদ্রলোক‘-দের হাতে।

উপসংহার :- চরমপন্থী আন্দোলন বা চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের স্বরূপ যাইহোক না কেন চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের বৈপ্লবিক দিকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।

(FAQ) চরমপন্থী আন্দোলনের স্বরূপ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দুজন চরমপন্থী নেতার নাম লেখ।

বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়।

২. চরমপন্থীদের লক্ষ্য কি ছিল?

ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা।

৩. চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

বঙ্গভঙ্গ।

Leave a Comment