পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা

বাঁকুড়া জেলার রাণীবাঁধ এলাকার খাতড়া ব্লকের সাহেববাঁধ মোড় থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা প্রসঙ্গে গুহার আবিষ্কার, অবস্থান, এলাকাবাসীর দাবি, গুহামুখ, গুহার উচ্চতা ও কুঠুরি, স্থানীয় গবেষকদের বিস্ময়, গুহাটির বর্ণনা, গবেষকদের মত, গুহানির্মান, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত, মধুসূদনের মন্তব্য, বিশেষজ্ঞদের মতামত, স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্তব্য, স্থানীয় বিধায়কের মন্তব্য, প্রত্নতত্ত্ববিভাগে খবর প্রেরণ এবং মুকুটমণিপুর ও পোড়া পাহাড় সম্পর্কে জানবো।

বাঁকুড়া জেলার পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা

ঐতিহাসিক নিদর্শনপোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা
অবস্থানবাঁকুড়া জেলার খাতড়া
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থানমুকুটমণিপুর
বিশেষত্বআদিম গুহার অস্তিত্ব
আবিষ্কারমধুসূদন মাহাতো
পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা

ভূমিকা:- বাঁকুড়া জেলার রাণীবাঁধ এলাকার খাতড়া ব্লকের আট কিলোমিটার দূরে পোড়া পাহাড়ের মাঝামাঝি উচ্চতায় এক গুহার সন্ধান মিলেছে। মুকুটমণিপুর থেকে এই গুহার দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা আবিষ্কার

বাঁকুড়া শহর -এর পোড়া পাহাড়ের এই গুহার সন্ধান পেয়েছেন মধুসূদন মাহাতো নামে স্থানীয় এক লোক গবেষক।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহার অবস্থান

খাতড়া থেকে রাণীবাঁধের রাস্তায় চার কিলোমিটার গেলেই সাহেব বাঁধ মোড়। সেই মোড় থেকে আরও চার কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে পোড়া পাহাড়ের।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে এলাকাবাসীর দাবী

দীর্ঘদিন ধরে এই গুহার সন্ধান জানলেও এলাকার মানুষ ছাড়া বাইরে জগতে এই গুহার সন্ধান জানত না কেউ, এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহার গুহামুখ

দেখতে আর পাঁচটা পাহাড়ের মতোই। পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে ঝোপঝাড়ের রাস্তা পেরিয়ে মাঝামাঝি জায়গায় পৌঁছলেই দেখা মিলবে একটি গুহা মুখের।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহার উচ্চতা ও কুঠুরি

গুহাটির উচ্চতা ৬ ফুট। সুড়ঙ্গের ওই অংশ চলে গিয়েছে পাহাড়ের ভিন্ন প্রান্তে। গুহাটির ভেতরে মোট সাতটি কুঠুরীর সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা নিয়ে স্থানীয় গবেষকদের বিস্ময়

খাতড়ার পোড়া পাহাড়ে ওই গুহার দৈর্ঘ্য এবং আকার দেখে চমকে গিয়েছেন স্থানীয় গবেষকরাও।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহাটির বর্ণনা

  • (১) পোড়া পাহাড়ের এই গুহার মুখ পাহাড়ের উত্তর দিকে। গুহার উচ্চতা ৬ ফুট এবং লম্বায় প্রায় ২০০ ফুট। ভেতরে জায়গা বিশেষে উচ্চতা কমবেশি। চওড়ায় প্রায় ৪ থেকে ৫ ফুট।
  • (২) কিছু দূর গিয়ে গুহা ভাগ হয়ে গিয়েছে দুই দিকে। ডান দিকে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০-৬০ ফুট। তার পর সুড়ঙ্গের ওই অংশ চলে গিয়েছে পাহাড়ের ভিন্ন প্রান্তে। সে দিকেও একটি মুখ রয়েছে গুহাটির।
  • (৩) পাহাড়ের বাঁ দিকের সুড়ঙ্গ চলে যাচ্ছে প্রায় দেড়শো ফুট। গুহাটির ভেতরে মোট সাতটি কুঠুরির সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। যা লম্বায় ২০ ফুট এবং চওড়ায় ৭ ফুট।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহা নিয়ে গবেষকদের মত

স্থানীয় গবেষকের মতে, এইসব কুঠুরিগুলিতেই এক সময় আদি মানবের বসবাস ছিল। গুহার আবিস্কর্তা মধুসূদন মাহাতোর ধারণা, আদিম মানুষ সেখানে বসবাস করতো।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা নির্মাণ

গবেষকরা জানিয়েছেন, পাথর কেটে কেটে তৈরি করা হয় ওই গুহা। তার মধ্যে বিভিন্ন কুঠুরি গুলিও পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত

কেউ কেউ বলছেন খনিজ পদার্থ উলফ্রামের খোঁজে ব্রিটিশ আমলে এই গুহা খনন করা হয়ে থাকতে পারে।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে মধুসূদনের মন্তব্য

কুঠুরিগুলিতে আলাদা আলাদা পরিবার বসবাস করত বলে জানিয়েছেন মধুসূদন মাহাতো। তার কথায়, ”ওই সুড়ঙ্গ সংরক্ষণ করা উচিত। এর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। এই সুড়ঙ্গ গুহাবাসী আদিম মানুষের তৈরি করা হতে পারে।”

পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুড়ঙ্গের দেওয়াল দেখে মনে হচ্ছে, পাথরের কোনও অস্ত্র দিয়ে খোদাই করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আদিমানবের বসবাসের প্রমাণ আরও জোরাল হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্তব্য

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য বহু কাল ধরেই ওই গুহার খোঁজ জানতেন। তবে সংরক্ষণের পাশাপাশি এলাকাটি পর্যটন প্রেমীদের জন্যেও আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হবে বলে মত স্থানীয়দের।

পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে স্থানীয় বিধায়কের মন্তব্য

রানিবাঁধের বিধায়ক তথা মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি জানিয়েছেন, ”বছর দুয়েক আগে তিনি নিজে ওই পাহাড়ের উপর উঠে গুহাটি দেখে এসেছেন। ওই গুহায় বর্তমানে শিয়াল-সহ একাধিক বন্যপ্রাণী আশ্রয় নিয়েছে।”

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে খবর প্রেরণ

ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষার (ASI) অফিসে এই গুহার খবর প্রেরণ করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুহাটি ভালভাবে দেখে তবেই বলতে পারবেন, সেখানে আদৌ আদিম মানুষজন থাকত কি না। থাকলে কীভাবেই বা জীবনযাপন করত, সেসবই জানা যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

মুকুটমণিপুর ও পোড়া পাহাড়

স্থানীয়দের মতে, এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হলে মুকুটমণিপুরে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এখানে পাহাড়ে চড়া ও গুহা দেখার বাড়তি আনন্দ পাবেন।

উপসংহার:- পোড়া পাহাড় – এই নামেই পরিচয়। আপাতদৃষ্টিতে কোনও বিশেষত্ব চোখে পড়েনি এতদিন। কিন্তু হঠাৎ সেই পাহাড়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সেটাও একটা রহস্যময় গুহা ঘিরে।

(FAQ) পোড়া পাহাড়ের রহস্যময় গুহা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বর্তমানে বাঁকুড়া জেলার কোথায় আদিম যুগের গুহার সন্ধান পাওয়া গেছে?

রাণীবাঁধের খাতড়া ব্লকের পোড়া পাহাড়ে।

২. পোড়া পাহাড়ের গুহা আবিষ্কার করেন কে?

মধুসূদন মাহাতো।

৩. গুহার ভেতরে কতগুলি কুঠুরি আছে?

৭ টি।

Leave a Comment