বারাসাত বিদ্রোহ

বারাসাত বিদ্রোহ -এর কারণ, বিদ্রোহের সূত্রপাত, সাংগঠনিক দিক, তিতুমিরের ঘোষণা, তিতুমিরের নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা, বিদ্রোহের বিস্তার, বিদ্রোহের চরিত্র বদল, পরাজয়, ব্যর্থতা ও বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

বারাসাত বিদ্রোহ প্রসঙ্গে বারাসাত বিদ্রোহ কি, বারাসাত বিদ্রোহের সময়কাল, বারাসাত বিদ্রোহ সংঘটিত স্থান, বারাসাত বিদ্রোহের এলাকা, বারাসাত বিদ্রোহের নেতৃত্ব, তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ ধর্মীয় আন্দোলন ছিল কিনা, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ, বারাসাত বিদ্রোহের কারণ, বারাসাত বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য, তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য, বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব।

তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ

ঐতিহাসিক ঘটনাবারাসাত বিদ্রোহ
সময়কাল১৮৩০-৩১ খ্রিস্টাব্দ
স্থান২৪ পরগনা, নদীয়া, ঢাকা, খুলনা, যশোহর, রাজশাহী, মালদা
প্রধান নেতাতিতুমির
ফলাফলব্যর্থতা
বারাসাত বিদ্রোহ

ভূমিকা :- ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন -এ মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন মীর নিসার আলী বা তিতুমীর এবং তার এই আন্দোলন ইতিহাসে বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

বারাসাত বিদ্রোহের কারণ

তিতুমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত বারাসাত বিদ্রোহের কারণ গুলি হল –

(১) ধর্ম সংস্কার

ওয়াহাবি কথার অর্থ হল নবজাগরণ। ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনের জন্য সৈয়দ আহমেদ এই আন্দোলনের সূচনা করেন। তার সঙ্গী মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমির বাংলার বারাসাতে ধর্মসংস্কার করতে এই আন্দোলনের সূচনা করেন।

(২) জমিদার ও ইজারাদারদের অত্যাচার রোধ

ইংরেজ কোম্পানির অত্যাচারী ইজারাদার, জমিদার ও গোমস্তারা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে নির্মম অত্যাচার চালায়। এই নিষ্ঠুর অত্যাচার রোধে তিতুমির আন্দোলনের পথে ধাবিত হয়।

(৩) নীলকরদের অত্যাচার

বাংলার নীলকররা চাষীদের নীল চাষ করার জন্য জোরপূর্বক অত্যাচার চালাত। এই অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি সচেষ্ট হন।

(৪) গোঁফ দাড়ির উপর কর

এই সময় সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের গোঁফ দাড়ির উপর কর ধার্য করলে তারা চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

বারাসাত বিদ্রোহের সূত্রপাত

ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ, অত্যাচারী জমিদার নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিতুমীর বারাসাত বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন।

বারাসাত বিদ্রোহের সাংগঠনিক দিক

তিতুমিরের বারাসাত বিদ্রোহের সাংগঠনিক দিক ছিল খুবই জনপ্রিয়।

(১) লাঠিয়াল বাহিনী গঠন

তিতুমির জমিদার,নীলকরদের অত্যাচার প্রতিকারের লক্ষ্যে বিদ্রোহ সংগঠিত করার জন্য তার অনুগামীদের নিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন এবং তিনি নিজেকে বাদশাহ, মঈনুদ্দিনকে  প্রধানমন্ত্রী পদেও গোলাম মাসুমকে সেনাপতি পদে নিযুক্ত করেন।

(২) বাঁশেরকেল্লা গঠন

বিদ্রোহ সংগঠিত করার জন্য তিনি নারকেলবেড়িয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন এবং তার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।

বারাসাত বিদ্রোহের পূর্বে তিতুমিরের ঘোষণা

তিনি ঘোষণা করেন যে ইছামতি নদীর উভয় তীরের কৃষকরা অত্যাচারী ইজারাদারদেরপরিবর্তে তাকে যেন রাজস্ব দেয়। তার এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষ্ণদেব রায় ইংরেজ বাহিনীর সাহায্য নিয়ে তিতুমিরের বিরুদ্ধে চড়াও হয়।ফলে শুরু হয় উভয়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ।

তিতুমিরের নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা

কৃষ্ণদেব রায়ের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তিনি বারাসাত ও বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা করেন।

বারাসাত বিদ্রোহের প্রসার

ইংরেজ শাসনকে নস্যাৎ করে তিনি ২৪ পরগনা, নদীয়া, ঢাকা, খুলনা, যশোহর, রাজশাহী, মালদা সহ বাংলার বিভিন্ন জেলায় তার বারাসাত আন্দোলন প্রসারিত করেন।

বারাসাত বিদ্রোহের চরিত্র বদল

ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে তিনি এই আন্দোলন শুরু করলে তা ইংরেজ ও মহাজন’ বিরোধী হয়ে ওঠে এবং রাজনৈতিক চরিত্রের রূপ নেয়।

বারাসাত বিদ্রোহে তিতুমিরের পরাজয়

শেষ পর্যন্ত জমিদার, নীলকর ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মিলিত বাহিনী ১৮৩১খ্রিস্টাব্দে তিতুমিরের বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং কামানের আঘাতে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয়।

বারাসাত বিদ্রোহে তিতুমিরের ব্যর্থতা

চরম প্রতিরোধ সত্ত্বেও ইংরেজ বাহিনীর কামানের গোলার আঘাতে তার বাঁশেরকেল্লা ধ্বংস হয়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর যুদ্ধে তিতুমির বীরের ন্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব

  • (১) তিতুমিরের এই বারাসাত বিদ্রোহ বা আন্দোলন ছিল জমিদার বিরোধী ও ব্রিটিশবিরোধী গণসংগ্রাম।
  • (২) তিনি এই আন্দোলন সংগঠিত করে বাংলার কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করেছিলেন, পাশাপাশি নিম্নবর্গের দরিদ্র মানুষেরা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।
  • (৩) তিতুমিরের আন্দোলন কিছুটা হলেও সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট ছিল। এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক বিনয় ভূষণ চৌধুরী বলেছেন “এই বিদ্রোহ হল ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত এক কৃষক বিদ্রোহ।”
  • (৪) তবে তার এই আন্দোলনে কিছু নিম্নবর্গের হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছিল।

মূল্যায়ন :- বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে একত্রিত করে আন্দোলন সংগঠিত করার সূত্রে আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। ডক্টর বিনয় চৌধুরীর মতে তার সংগ্রাম ছিল জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের অন্যায়, অনাচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বারাসাত বিদ্রোহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বারাসাত বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বারাসাত বিদ্রোহ কী?

তিতুমীর বারাসাতের বিস্তীর্ণ এলাকা ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করে নিজেকে বাদশাহ বলে অভিহিত করেন। নারকেলবেড়িয়া গ্রামে তিনি একটি বাঁশের কেল্লা  স্থাপন করেন। তিনি টাকি ও গোবরডাঙ্গা প্রভৃতি জমিদারদের কাছে কর আদায় করতে থাকেন। এই ঘটনাই বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

২. বারাসাত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন কে?

তিতুমির।

৩. বারাসাত বিদ্রোহ কত সালে হয়?

১৮৩০-৩১ সালে।

৪. বারাসাত বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন কে?

তিতুমির।

৫. বারাসাত বিদ্রোহ দমনে যে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তার নাম কী ছিল?

এডওয়ার্ড স্মিথ।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment