সুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র

বিখ্যাত ব্যঙ্গকাব্য রচয়িতা জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র প্রসঙ্গে জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার পরিচিতি, জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার খ্যাতি, জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার প্রেম, জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

জোনাথন সুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্রসুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র
দেশআয়ারল্যান্ড
প্রকৃত আবাসইংল্যান্ড
পরিচিতিবিখ্যাত ব্যঙ্গকাব্য রচয়িতা
প্রেমিকাভেনেসা
সুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র

‘গ্যালিভারের’ ভ্রমণ বৃত্তান্তের বিখ্যাত লেখক জোনাথন সুইফটকে আমরা তৎকালিন ব্যঙ্গকাব্য রচয়িতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলেই মনে করি। তাঁর স্বভাব ছিল একটু বায়ুগ্রস্ত – বার্ধক্যে তিনি একেবারে উন্মাদ না হলেও সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ ছিলেন না – শেষ জীবনে কয়েক বছর তিনি জীবন্মৃত ছিলেন। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত খিটখিটে – অতি সহজেই তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটত। তাঁর কথায় কেউ সামান্য় প্রতিবাদ করলে তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে উঠতেন।

প্রেম তাঁর ধাতে সহ্য় হত না। বিবাহের সৌভাগ্য তাঁর হয় নি। প্রথম যৌবনে মিস ওয়ারিং-এর সঙ্গে একবার তাঁর প্রেম হয় – কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর স্বভাবের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন নি। বছরে মাত্র ৩০০ পাউণ্ড আয় নিয়ে মিস ওয়ারিং সংসার চালাতে পারবেন না জেনে সুইফট, তাঁর সংস্রব ত্যাগ করেন। এরপর আসেন এসমার জনসন ওরফে ‘ষ্টেলা’; তাঁকে তিনি ভালবাসতেন – কেউ কেউ বলেন এই ষ্টেলার সঙ্গে সুইফটের গোপনে বিাবাহ হয়েছিল। ষ্টেলার সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের কারণ জানা নেই।

তৃতীয়বারে সুইফটের প্রেমের আকাশে উদয় হলেন এসমার ভেনুমারী ওরফে ভেনেসা। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই সুইফটের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন – এই বন্ধুত্ব ক্রমে প্রেমে পরিণত হয়। ভেনেসা একদিন কথায় কথায় ষ্টেলার কথা সুইফটকে জিজ্ঞাসা করেন – সুইফট, তাতে ভয়ানক চটে গেলেন – ঝগড়া করে ভেনেসাকে তাড়িয়ে দিলেন। ভেনেসা সুইফটকে প্রকৃতই ভালবাসতেন, অন্তরে এতবড় আঘাত তিনি সহ্য় করতে পারলেন না – শোকে দুঃখে ও হতাশায় অচিরেই তাঁর জীবনের অবসান হল। উভয়ের সাক্ষাতের পর যে পত্র সুইফট সর্বপ্রথম, ভেনেসাকে লিখেছিলেন তা একেবারে নীরস – তাকে প্রেমপত্র বলা যায় না। সে পত্র সুইফটের অদ্ভুত প্রকৃতির পরিচয় দেয়।

সেন্ট জেমস স্ট্রীট লণ্ডন, ১১ই আগস্ট, ১৭১২

ভেবেছিলাম কর্ণেলের হাতে তোমাকে একখানা চিঠি দেব – কিন্তু না, তার হাতে তোমায় চিঠি দিতে কেমন বাধো বাধো ঠেকল।

আচ্ছা, আমার অনুপস্থিতিতে তোমার সময় কাটে কি করে – আমি তো তা ভেবে পাই না! নিশ্চয় তুমি খুব বেলা পর্যন্ত ঘুমোও, তারপর উঠে তোমার আর যে সব অনুগ্রহ ভাজন আছে তাদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে খাবার বেলা পর্যন্ত কাটিয়ে দাও – কেমন? তারপর সারা বিকেল কি কর? একদিন তুমি যখন অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমোবে হঠাৎ তোমার কাছে গিয়ে উপস্থিত হব – দেখব তুমি তখন কি কর। তুমি না পার কোনো কাজ করতে, না পার পড়তে। খেলাধুলাও যখন তোমার দ্বারা হয় না তখন বাড়িতে বসে না থেকে আমার ভগিনী মেরীর সঙ্গে খানিকটা পার্কে বেড়ালেই পার (অন্তত আমার তো তাই ইচ্ছা)। আমার ইচ্ছা তোমার সঙ্গে বসে এক কাপ কফি খাই, আমি হয়ত খাব না আর তুমি বার বার বলবে “খাও. . . . খাবেনা কেন?”

বেশী কিছু লিখতে পারছি না। তোমার মাকে আমার শ্রদ্ধা জানিও, আর মল (ভগিনী মেরী) ও কর্ণেলকে দিও আমার শুভেচ্ছা। আজ এখানেই বিদায় নিলাম।

সুইফট

ভেনেসা একদিন সুইফটকে লিখেছিলেন –

ডাবলিন, ১০ই ডিসেম্বর ১৭১৪

আমার প্রতি তোমার যে কত টান তা আমি বেশ বুঝেছি! তুমি আমাকে সরল হতে বলেছ, তাহলেই তুমি মাঝে মাঝে আমায় দেখা দিয়ে যাবে। কেন আমাকে মিথ্যা স্তোক বাক্য দাও, তোমার বলা উচিত যে, যখন তোমার খুশি হবে (আমার আনন্দের জন্য নয়, তোমার মনের অবস্থা বুঝে নিজের স্বার্থের জন্য) আমার সঙ্গে দেখা করবে, না হয়ত ‘ভেনেসা’ বলে যে কেউ আছে একথা যখন তোমার মনে পড়বে তখন একবার আসবে আমার কাছে, কি বল?

তুমি যদি আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহারই করতে থাক তবে আর বেশী দিন আমি তোমায় বিরক্ত করব না। ওগো, কি বলব তোমাকে। তোমার সঙ্গে শেষ দেখা হওয়ার পর থেকে কি ভাবে যে আমার দিন কাটছে, কি দুঃসহ বেদনা বুকে নিয়ে আছি তা আর সামান্য় পত্রে কি জানাব প্রিয়তম। এক এক সময় মনে হয়েছে কি হবে বেঁচে থেকে যদি মরি তবে কার কি আসে যায়? এ মুখ যেন তোমায় আর দেখাতে না হয়। কিন্তু ওগো, আমি মরতে পারি নি। আমার সে সঙ্কল্প নিমেষে টুটে গেছে – তোমার কথা মনে পড়ে গিয়ে সে দৃঢ়তা কোথায় ভেসে গিয়েছে তাই তোমার সুখের পথে কাঁটা হয়ে আমি আজও বেঁচে আছি। মানুষের প্রকৃতি – আশা নিয়েই সে বেঁচে থাকে। মরতে পারি নি এই আশায় যে হয়তো একদিন তুমি আমার উপর দয়া করবে – একদিন আমায় দুটো মিষ্টি কথা বলবে, কারণ আমার এ বিশ্বাস আছে, আমার অন্তরের ব্যথা তুমি যদি একবার বুঝতে পার তাহলে কখনই তুমি আমায় বিমুখ করতে পারবে না, শুধু আমায় কেন, কোনো দিন কারো মনে আর তুমি দাগ দিতে পারবে না।

তোমায় এত কথা লিখছি এই জন্য যে তোমার সঙ্গে দেখা হলে, তোমার মুখের দিকে চাইলে আমার সব ঘুলিয়ে যায়, তোমার ক্রুদ্ধ দৃষ্টির সমনে আমার বাক রোধ হয়ে আসে।

হায়! যদি আমায় একটুও ভালবাসতে তাহলে নিশ্চয় তুমি আমায় দয়া করতে! হায়রে দুরাশা। বেশী আর কিছু বলব না। আমায় ক্ষমা কর – যা বলেছি তার জন্য মার্জনা চাইছি। যা বলেছি মনের আবেগে না বলে থাকতে পারলাম না। মরি নি – আজও বেঁচে আছি। –

ভেনেসা

(FAQ) সুইফট ও ভেনেসার প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জোনাথন সুইফট কে ছিলেন?

একজন বিখ্যাত ব্যঙ্গকাব্য রচয়িতা।

২. জোনাথন সুইফট কোন দেশের নাগরিক?

আয়ারল্যান্ড।

৩. জোনাথন সুইফট-এর প্রেমিকার নাম কী?

ভেনেসা।

Leave a Comment