সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর জন্ম, শিক্ষা, কর্মজীবন, রাজনৈতিক জীবন, সমাজ সংস্কার, সাংবাদিকতা, বক্তৃতা প্রদান, সিভিল সার্ভিস আন্দোলন, ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

বাংলার মুকুটহীন রাজা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মজীবন, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন, সমাজ সংস্কারক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিভিল সার্ভিস বিষয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন, বাংলার মুকুটহীন রাজা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু।

রাষ্ট্র গুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঐতিহাসিক চরিত্রসুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম১০ নভেম্বর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু৬ আগস্ট ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ
পেশারাজনীতি, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা
অবদানভারত সভা প্রতিষ্ঠা
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভূমিকা :- ব্রিটিশ ভারত -এর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম যুগের একজন বিশিষ্ট নেতা হলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।  রাষ্ট্র গুরু, সামুদ্রিক ঝড়ের পাখি, surrender not যার নামের প্রথমে বসে তিনিই হলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ঐ যুগের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ড -এ চলে যান এবং ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) পরীক্ষা পাশ করেন।

পাশ্চাত্য চিন্তাবিদের সংস্পর্শে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

১৮৭৪-৭৫ সালে লন্ডনে তাঁর অবস্থানকালে তিনি বার্ক, মাৎসিনি ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য উদারতাবাদী চিন্তাবিদদের লেখা গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করেন।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মজীবন

কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।

(১) সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রূপে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিভিল সার্ভিসের কর্মজীবনে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিলেটে আসেন। তিনি তার নির্ধারিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি ও অগ্রসর হতে চান না – এই অজুহাতে তাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়।

(২) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইংল্যান্ড গমন

জাতীয় নেতৃত্বে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে তিনি পুনরায় ইংল্যান্ডে গমন করেন। তিনি যেমন ছিলেন একজন স্বভাবজাত লেখক তেমনি বাগ্মী হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।

(৩) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতে প্রত্যাগমন

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন এবং শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে মনোনিবেশ ঘটান।

(৪) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষক জীবন

ইংরেজির প্রফেসর হিসেবে প্রথমে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’ এবং পরে রিপন কলেজে যোগ দেন। পরবর্তীকালে এই রিপন কলেজই তার নামে নামকরণ করা হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ হিসেবে।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান অসামান্য।

(১) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারত সভা প্রতিষ্ঠা

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ সর্ব ভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন।

(২) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্রিকা প্রকাশ

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি দি বেঙ্গলি শিরোনামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন এবং নির্ভিক ও ঔৎসুক চিত্তে জাতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিশেষ করে জাতীয় সংস্কৃতি, একতা, স্বাধীনতা ও মুক্তির বিষয়ে নিয়মিত লিখতেন।

(৩) বিধানসভার সদস্য সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় বিধানসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৮৭৬-১৮৯৯ সাল পর্যন্ত একাধারে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনেরও সদস্য ছিলেন।

(৪) বার্ষিক সভা পরিচালনায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

তার সুদক্ষ ও সুচারু নেতৃত্বের ফলে ভারত সভা অল্প সময়েই পরিস্ফুটিত হয়। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি ভারতের সকল এলাকা থেকে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে নিয়মিতভাবে বার্ষিক সভা পরিচালনা করতেন।

(৫) ভারত সভা ও কংগ্রেসের সংযুক্তিতে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভারত সভার সাথে মিল থাকায় ১৮৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন -এ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত সভাকে কংগ্রেসের সাথে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেন।  

(৬) জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি নতুন প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্য ১৮৯৫ এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দুবার কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করেন।

(৭) বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদান

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্ৰহণ করেন এবং স্বদেশী আন্দোলন -এ নেতৃত্ব দেন। ফলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।

(৮) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেস ত্যাগ

পরবর্তীতে তিনি মতানৈক্যজনিত কারণে ১৯১৮ সালে কংগ্রেস থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এরপর মধ্যপন্থী হিসেবে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে একীকরণের জন্য তিনি উদ্যোগী হন।

(৯) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশসেবা

বাংলায় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের সেবায় মনোনিবেশ করেন।

সমাজ-ধর্ম পুনর্জাগরণ আন্দোলনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা

উনবিংশ শতকে রাজা রামমোহন রায় -এর নির্দেশিত সমাজ-ধর্ম বিষয়ক পুনর্জাগরণের আন্দোলনকে আরো গতিশীল করতে তিনি বিশেষভাবে সচেষ্ট ছিলেন।

সমাজ সংস্কারক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সমাজ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অংশগ্রহণ হিসেবে, বিশেষত বিধবা বিবাহ, মেয়েদের অধিক বয়সে বিবাহ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।

সাংবাদিক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম সাংবাদিকতা জীবনে পদার্পণ। সে যুগের অন্যতম সাংবাদিক ও অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘোষের সঙ্গে তিনি সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন। পরে তিনি নিজে বেঙ্গলি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা প্রদান

শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর ছাত্রদের সদ্যোজাত ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নব চেতনায় উদ্দীপ্ত করেন। এই সময় তিনি কলকাতায় ও কলকাতার বাইরে ‘ভারতীয় ঐক্য’, ‘মাৎসিনির জীবন ও চিন্তাধারা’ এবং ‘শিবাজি ও শিখদের ইতিহাস’ ইত্যাদি বিষয়ে জনসমক্ষে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন।

সিভিল সার্ভিস বিষয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন

তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স-সীমা কমানোর বিরোধিতা করেন। এজন্য তিনি সমগ্র ভারতব্যাপী ব্যাপক প্রচার অভিযান চালান

বাংলার মুকুটহীন রাজা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ে

সুরেন্দ্রনাথের অদ্বিতীয় নেতৃত্বের দক্ষতা স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়েছে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সৃষ্টি ও স্বদেশী আন্দোলনে, যা তাঁকে বাংলার ‘মুকুটহীন রাজা’-য় পরিণত করে।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীমূলক গ্ৰন্থ হল A Nation in Making.

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই আগস্ট ৭৭ বৎসর বয়সে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার :- তিনি আজ শুধু মাত্র একটি কলেজের নাম ও একটি রাস্তার নাম হিসেবেই থেকে গিয়েছেন। কিন্তু বাঙালিকে শিড়দাঁড়াটা সঠিক শিড়দাঁড়ার অবস্থানে রাখতে শিখিয়েছিলেন তিনিই।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কি?

A Nation in Making.

২. রাষ্ট্রগুরু কাকে বলা হয়?

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

৩. বাংলার মুকুটহীন রাজা কাকে বলা হয়?

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

৪. Surrender not কাকে বলা হয়?

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Leave a Comment