নারায়ণ গুরু

শ্রী নারায়ণ গুরু -র জন্ম, শিক্ষা, বর্ণ হিন্দুদের বিধিনিষেধ, মন্দিরে প্রবেশে বাধা, ভারতের উন্মাদ আশ্রম, নারায়ণ গুরুর সংস্কারকার্য, মতাদর্শ প্রচার, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে উদ্দোগ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন, সংগঠন স্থাপন, ভাইকাম সত্যাগ্রহ, দক্ষিণ ভারতে গান্ধীজীর আগমন এবং শ্রী নারায়ণ গুরুর ওপর রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর প্রভাব সম্পর্কে জানবো।

শ্রী নারায়ণ গুরু

ঐতিহাসিক চরিত্রশ্রী নারায়ণ গুরু
জন্ম১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ
পরিচিতিদক্ষিণ ভারতের সমাজ সংস্কারক
অবদানভাইকাম সত্যাগ্রহে সফলতা
মৃত্যু১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ
শ্রী নারায়ণ গুরু

ভূমিকা :- দক্ষিণ ভারত -এর একজন উল্লেখযোগ্য ধর্ম ও সমাজ সংস্কারকছিলেন শ্রী নারায়ণ গুরু। তিনি শ্রী নারায়ণ গুরু স্বামী নামেও পরিচিত। তিনি আধ্যাত্মিক মুক্তি ও সামাজিক সমতার নতুন মূল্যবোধ বর্ধিতকরণে অবদান রাখেন।

শ্রী নারায়ণ গুরুর জন্ম

১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কেরালার নিম্ন সম্প্রদায়ভুক্ত এজহারা পরিবারে শ্রী নারায়ণ গুরু জন্মগ্রহণ করেন।

শ্রী নারায়ণ গুরুর শিক্ষা

তিনি সংস্কৃত, তামিল ও মালায়লম ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন একাধারে সন্তু, দার্শনিক ও সংস্কারক।

বর্ণহিন্দুদের বিধি নিষেধ

শ্রী নারায়ণ গুরু যে অচ্ছুত এজহারা সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন সেই সম্প্রদায়ের পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মচর্চা প্রভৃতি সব বিষয়েই বর্ণহিন্দুদের বিভিন্ন বিধিনিষেধ চেপে বসেছিল।

শ্রী নারায়ণ গুরুর এজহারা সম্প্রদায়ের মন্দিরে প্রবেশে বাধা

এজহারা সম্প্রদায় হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না।এমনকি এজহারাদের নিজস্ব মন্দিরেও হিন্দু দেবদেবীর ছবি বা বিগ্রহ রাখা যেত না।

ভারতের উন্মাদ আশ্রম

ঊনবিংশ শতকে কেরালা জাতপাত ও অস্পৃশ্যতার কঠিন শৃঙ্খলে এতটাই আবদ্ধ ছিল যে স্বামী বিবেকানন্দ কেরালাকে ‘ভারতের উন্মাদ আশ্রম’ (lunatic asylum of Indian) বলে অভিহিত করেছেন।

শ্রী নারায়ণ গুরুর সংস্কার কার্য

শ্রী নারায়ণ গুরু কেরালার সর্বত্র ভ্রমণ করে এই জাতি ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

(১) শ্রী নারায়ণ গুরুর মতাদর্শ প্রচার

শ্রী নারায়ণ গুরুর মূল আদর্শ ছিল “এক জাতি, এক ধর্ম এবং এক ঈশ্বর।” তিনি কেরালার সর্বত্র পরিভ্রমণ করে জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্য, সামাজিক অবিচার ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রচার চালান এবং এই সবের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।

(২) শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে শ্রী নারায়ণ গুরুর উদ্দোগ

এজহারা সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং তাদের অন্যান্য সামাজিক বিষয়ের উন্নতির জন্য তিনি সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজহারাদের আর্থিক অগ্রগতির জন্য তিনি তাদের ব্যাবসা করার পরামর্শ দেন। তিনি মদ তৈরি ও মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচার চালান।

(৩) শ্রী নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন

তাঁর উদ্যোগে কেরালার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মন্দির, মঠ ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এইসব প্রতিষ্ঠানের দরজা নিম্নবর্ণের মানুষদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরগুলিতে উচ্চবর্ণের আরাধ্য দেবদেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেগুলির রন্ধনশালায় অস্পৃশ্যদের নিয়োগ করা হয়।

(৪) শ্রী নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে সংগঠন স্থাপন

তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দির, মঠ ও বিদ্যালয়গুলির কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয়সাধনের উদ্দেশ্যে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রী নারায়ণ ধর্ম পরিপালন যোগম’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এজহারা সম্প্রদায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক উন্নতি, তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং দক্ষিণ ভারতে অসবর্ণ বিবাহ প্রচলনে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

শ্রী নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে ভাইকম সত্যাগ্রহ

দক্ষিণ ভারতের ভাইকমে বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দিরের নিকটবর্তী রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য এই রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রী নারায়ণ গুরু তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন (১৯২৪ খ্রি.) যা ভাইকম সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত।

শ্রী নারায়ণ গুরুর ভাইকম সত্যাগ্রহে মুগ্ধ গান্ধীজীর দক্ষিণ ভারতে আগমন

ভাইকম সত্যাগ্রহের ব্যাপকতায় মুগ্ধ হয়ে মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ ভারতে এসে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। শেষপর্যন্ত ভাইকম সত্যাগ্রহ জয়যুক্ত হয়।

শ্রী নারায়ণ গুরুর উপর রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর প্রভাব

শ্রী নারায়ণ গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁর আন্দোলন কেরালা তথা দক্ষিণ ভারতের হিন্দু সংস্কার আন্দোলনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে।

উপসংহার :- প্রথমদিকে তাঁর সংস্কার আন্দোলন মূলত এজহারা সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় অগ্রগতির জন্য পরিচালিত হলেও পরবর্তীকালে তা দক্ষিণ ভারতের সামগ্রিক জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ শ্রী নারায়ণ গুরুর আন্দোলনে শামিল হলে তা দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক আকার ধারণ করে।

(FAQ) শ্রী নারায়ণ গুরু সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শ্রী নারায়ণ গুরু কে ছিলেন?

দক্ষিণ ভারতের একজন উল্লেখযোগ্য ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক।

২. ভাইকাম সত্যাগ্রহ কী?

দক্ষিণ ভারতের ভাইকমে বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দিরের নিকটবর্তী রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য এই রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রী নারায়ণ গুরু ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।এই ঘটনা ভাইকম সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত।

৩. ভাইকাম সত্যাগ্রহে কে নেতৃত্ব দেন?

শ্রী নারায়ণ গুরু।

Leave a Comment