শশাঙ্কের কৃতিত্ব

শশাঙ্কের কৃতিত্ব প্রসঙ্গে অখ্যাত অবস্থা থেকে উত্তরণ, মহাবীর কর্ণের সাথে তুলনা, আধিপত্য স্থাপন, রাজ্য বিস্তার, বৌদ্ধ নির্যাতনকারী ও তার ব্যক্তিচরিত্র সম্পর্কে জানবো।

শশাঙ্কের কৃতিত্ব

ঐতিহাসিক ঘটনাশশাঙ্কের কৃতিত্ব
রাজ্যগৌড়
রাজধানীকর্ণসুবর্ণ
রাজাশশাঙ্ক
ধর্মশৈব ধর্ম
শশাঙ্কের কৃতিত্ব

ভূমিকা :- সপ্তম শতকের বাংলার ইতিহাসে গৌড়াধিপ শশাঙ্ক অকস্মাৎ উল্কাপিণ্ডের মত উদিত হয়ে কিছু সময়ের জন্য আপন কৃতিত্বের দ্বারা সমকালীন ইতিহাসে আলো ছড়িয়ে দেন।

শশাঙ্কের কৃতিত্ব সম্পর্কে ডঃ মজুমদারের অভিমত

ডঃ মজুমদারের মতে, শশাঙ্ক তার রাজ্য জয় দ্বারা যে নীতির পত্তন করেন তা অনুসরণ করে পাল রাজারা এক বিশাল পাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

অখ্যাত অবস্থা থেকে শশাঙ্কের উত্তরণ

শশাঙ্ক এক অজ্ঞাত ও অখ্যাত অবস্থা থেকে নিজ যোগ্যতার জোরে ভারত ইতিহাসের পাদপ্রদীপের সামনে এসে পড়েন।

শশাঙ্ক সম্পর্কে উপাদানের অপ্রতুলতা

তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান বেশী নেই। যা কিছু তথ্য তার সম্পর্কে পাওয়া যায় তা তার বিরোধী পক্ষের লেখনী থেকে। বাণভট্টের মত তার প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ কোনো সভাকবি তার ছিল না। তাঁর বংশ পরিচয় ছিল অজ্ঞাত। শশাঙ্ক সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান হল মেদিনীপুর লিপি, গঞ্জাম লিপি।

মহাবীর কর্ণের সাথে শশাঙ্কের তুলনা

ধর্মীয় মহাকাব্য মহাভারতের মহাবীর কর্ণের মতই তিনি প্রমাণ করেন যে, জন্ম দৈবের অধীন হলেও পৌরুষ নিজের অধীন।

শশাঙ্কের আধিপত্য স্থাপন

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে বাংলা ছিল কাব্যে উপেক্ষিতার মতই। বারে বারে উত্তর ভারতীয় শক্তি বাংলায় আধিপত্য করত, বাংলা কোনোদিন আধিপত্যের কথা ভাবতে পারেনি। গৌড়াধিপ শশাঙ্কই সর্বপ্রথম ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেন। তিনি বাংলাকে এক সর্বভারতীয় শক্তিরূপে অন্তত কিছুদিনের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন।

শশাঙ্কের রাজ্য বিস্তার

গর্বিত কনৌজ -এর মৌখরী বংশকে ধ্বংস করে, পূর্ব ভাগে ভাস্কর বর্মাকে পদানত করে শশাঙ্ক তার বিজয় রথ ছুটিয়ে দেন। দক্ষিণে গঞ্জাম পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে তিনি বাংলার চারদিকে প্রাকৃতিক সীমান্ত পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। কনৌজ-গৌড় সংগ্রামের পত্তন করে তিনি পরবর্তী যুগে পাল রাজাদের জন্য পথ-নির্দেশ করে যান।

শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থা

  • (১) শশাঙ্ক শুধুমাত্র দুঃসাহসিক অভিযানকারী (adventurer) ছিলেন না। তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ কিছু জানা না গেলেও তাঁর প্রজাহিতৈষণা কম ছিল মনে করা যায় না। রাজধানী কর্ণসুবর্ণ তার আমলে এক সম্পদময়ী নগরীতে পরিণত হয়।
  • (২) তিনি গৌড়দেশের শুধুমাত্র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেননি তার স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি গঠনের আয়োজনও করেন। মেদিনীপুরের দাঁতন বা দণ্ডভুক্তি অঞ্চলে শশাঙ্কের দীঘি (স্থানীয় নাম শরশঙ্কের সাগর) জলসেচ ব্যবস্থার জন্য তাঁর প্রচেষ্টার সাক্ষ্য দেয়।

শশাঙ্কের বিরোধীপক্ষীয় লেখক

গৌড় রাজ শশাঙ্কের দুর্ভাগ্য যে, বাণভট্ট বা হিউয়েন সাঙ -এর মত তার কোনো সহানুভূতিশীল জীবনীকার ছিলেন না। এজন্য তার কীর্তি-কাহিনীর সকল কথা আমরা জানতে পারি নি। তার সম্পর্কে আমরা যা জানি প্রধানত তাঁর বিরোধীপক্ষীয় লেখকদের কলম থেকেই তা পাওয়া যায়।

শশাঙ্কের ব্যক্তি চরিত্র

গৌড় রাজ শশাঙ্কের ব্যক্তিগত চরিত্র অনেকটা বিরোধী লেখকদের অতিরঞ্জনে কালিমালিপ্ত হয়েছে। তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেন বলা হয়। তবে এ সম্পর্কে বিতর্ক আছে।

বৌদ্ধ নির্যাতনকারী শশাঙ্ক

তাকে বৌদ্ধ নির্যাতনকারী ধর্মীয় উম্মাদ বলে চিত্রিত করা হয়। শশাঙ্ক হয়ত বৌদ্ধদের নির্যাতন করেন কিন্তু তার পশ্চাতে ধর্মীয় কারণ অপেক্ষা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ থাকতে পারে। তিনি বৌদ্ধদের শুধু বৌদ্ধ বলেই হয়ত দমন করেননি, তাঁর সরকারের প্রতি শত্রুতার জন্য দমন করেন।

উপসংহার :- শশাঙ্কের প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য স্থায়ী হয়নি। প্রতিকূল পরিস্থিতির চাপে তার মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়। বাংলার প্রথম জাতীয় সম্রাট হিসেবে তাকে ইতিহাসে অবশ্যই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

(FAQ) শশাঙ্কের কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গৌড় বাংলায় স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন কে?

শশাঙ্ক।

২. শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?

কর্ণসুবর্ণ।

৩. কোন কোন লিপি থেকে শশাঙ্ক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়?

মেদিনীপুর লিপি, গঞ্জাম লিপি।

৪. শশাঙ্কের মৃত্যু হয় কখন?

৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে।

৫. শশাঙ্ক কোন ধর্মের অনুরাগী ছিলেন?

শৈব ধর্ম।

Leave a Comment