শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি

মোগল সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি বা কান্দাহার নীতির ক্ষেত্রে কান্দাহার পুনরুদ্ধার, কান্দাহার হস্তচ্যুত, কান্দাহার পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ, কান্দাহার পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা ও ফলাফল সম্পর্কে জানবো।

মোগল সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম নীতি প্রসঙ্গে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি বা কান্দাহার নীতি, শাহজাহানের কান্দাহার পুনরুদ্ধার, শাহজাহানের কান্দাহার হস্তচ্যুত, শাহজাহানের কান্দাহার পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ ও শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি বা কান্দাহার ফলাফল সম্পর্কে জানব।

শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি (North-Western frontier policy of Shah Jahan)

ঐতিহাসিক ঘটনাশাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি
অপর নামকান্দাহার নীতি
কান্দাহার হস্তচ্যুতজাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে
কান্দাহারে মোগল অভিযান১৬৪৯, ১৬৫২ ও ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে
মোগলদের থেকে কান্দাহার দখলপারস্যের শাহ আব্বাস
শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি

ভূমিকা :- ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীর -এর আমলে কান্দাহার মোগলদের হস্তচ্যুত হয় এবং পারসিক সম্রাট শাহ আব্বাস তা দখল করেন। এরপর কান্দাহার পুনরুদ্ধারের কোনও চেষ্টা হয় নি। দীর্ঘদিন বাদে শাহজাহানই এই ব্যাপারে উদ্যোগী হন।

শাহজাহানের কান্দাহার পুনরুদ্ধার

  • (১) পারস্য-অধিকৃত কান্দাহারের শাসনকর্তা আলি মর্দান-এর সঙ্গে পারস্য সম্রাটের তিক্ততার সুযোগে তাঁকে প্রচুর অর্থ দ্বারা বশীভূত করে মোগল বাহিনী ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার দখল করে।
  • (২) শাহজাহান আলি মর্দানকে নানা সম্মানে ভূষিত করে কাবুল ও কাশ্মীরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরবর্তী ১০ বৎসর কান্দাহার মোগল অধিকারে থাকে।

শাহজাহানের কান্দাহার হস্তচ্যুত

  • (১) পারস্য সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আব্বাস কান্দাহার হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না। ১৬৪৮খ্রিস্টাব্দের শীতকালে তিনি কান্দাহার অবরোধ করেন। দু’মাস অবরোধ চলে।
  • (২) প্রবল তুষারপাতের জন্য শাহজাহান সময়মতো সাহায্য পাঠাতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে পারসিকরা কান্দাহার দখল করে।

শাহজাহানের কান্দাহার পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ

কান্দাহার পুনরুদ্ধারের জন্য শাহজাহান সেখানে তিনটি অভিযান পাঠান।

  • (১) ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ও ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় অভিযানের দায়িত্বে যুগ্মভাবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সাদুল্লা খান ও শাহজাদা ঔরঙ্গজেব।
  • (২) ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দের তৃতীয় অভিযানের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন দারাশিকো। তিনটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। এরপর কান্দাহার পুনরুদ্ধারের আর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় নি।

শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতির ফলাফল

মোগল সম্রাট শাহজাহানের কান্দাহার নীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এর ফলে

  • (১) সমগ্র এশিয়াবাসীর কাছে শাহজাহান ও মোগল রাজশক্তির মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। প্রমাণিত হয় যে, মোগল বাহিনী হল কাগুজে বাঘ’।
  • (২) এই ব্যর্থ অভিযানে ব্যয় হয় ১২ কোটি টাকা এবং অসংখ্য প্রাণ – বিনিময়ে ভারত এক ইঞ্চি জমিও ফিরে পায় নি।
  • (৩) কান্দাহার হাতছাড়া হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত বিদেশিদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়। ঔরঙ্গজেব তাঁর গোটা রাজত্বকালে পারসিক আক্রমণের আতঙ্কে ভুগেছেন।

উপসংহার :- কান্দাহারের ব্যর্থতা মোগল সেনাপতিদের মনোবল এতটাই ভেঙ্গে দিয়েছিল যে কেউই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব নিতে চাইতেন না।

(FAQ) শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কার রাজত্বকালে কান্দাহার মোগলদের হস্তচ্যুতহয়?

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে।

২. কান্দাহার কে দখল করেন?

পারস্যের রাজা শাহ আব্বাস।

৩. কোন মোগল সম্রাট কান্দাহার পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন?

শাহজাহান।

Leave a Comment