দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II)

মানবসভ্যতার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নিম্নে আলোচনা করা হল।

১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II) প্রসঙ্গে যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ, যুদ্ধের সূচনাকাল, যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি বা কারণ, যুদ্ধের সূচনা, জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, যুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গন, জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ, জাপানের আত্মসমর্পণ, যুদ্ধের সমাপ্তি ও শেষ পরিণতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে হিটলারের ভূমিকা, যুদ্ধে জাপানের ভূমিকা, বিশ্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল।

ভয়াবহ বিধ্বংসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (The devastating Second World War)

সময়১৯৩৯ – ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ
বিবাদমান পক্ষআমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স বনাম জার্মানি, জাপান, ইতালি
সূচনা১ লা সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ
সমাপ্তি১৪ ই আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

মানবসভ্যতার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ)

ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ২০ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব শেষ হতে না হতেই বিশ্ববাসী আরও এক ভয়ানক ও বিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখি হয় । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানির হিটলার -এর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়েই সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর এই দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ স্থায়ী ছিল ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে ঘটেছিল (When did World War II take place?)

মূলত ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, অর্থাৎ ছয় বছর ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলেছিল। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রান্ত হয়। আর এরই ফলশ্রুতিতে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যুদ্ধ ঘোষণা করে – শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ (Warring parties in World War II)

এই বিশ্বযুদ্ধের একদিকে ছিল জার্মানি, জাপান, ইতালির অক্ষশক্তি জোট এবং অপরদিকে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মিত্রশক্তি জোট।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ (Causes of World War II)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি হল –

(১) ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি

ভার্সাই সন্ধি বা চুক্তিপত্রের ৪৪০ টি ধারার বেশিরভাগ রচিত হয়েছিল জার্মানিকে আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে শক্তিহীন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। জার্মানির সমরশক্তিকে বেলজিয়ামের মতো অতি ক্ষুদ্র দেশের থেকেও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মিত্রশক্তি বর্গ জার্মানির উপনিবেশগুলি ভাগ করে নিয়েছিল। শুধু তাই নয় ভার্সাই চুক্তির দ্বারা জার্মানির ওপর বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি যুদ্ধমুখী হতে বাধ্য হয়েছিল।

(২) অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ

হিটলার পূর্ব ইউরোপ -এ জার্মান সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে জার্মানবাসীর জন্য লেবেনশ্রউম বা বাসস্থানের সম্প্রসারণ ঘটাতে চেয়েছিলেন। এই অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদকে স্বীকৃতি দিতে নাৎসি দল -এর ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে প্রাক্-বিশ্বযুদ্ধকালীন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ।

 (৩) হিটলারের পররাষ্ট্রনীতি

জার্মানিকে ইউরোপের প্রধান শক্তিতে পরিণত করাই ছিল হিটলারের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য। হিটলার নিজ কূটনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে মিত্রশক্তিগুলির মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সূচনা করেছিলেন এবং রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই জোট থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পৃথক করে ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন।

অন্যদিকে হিটলার ফ্রান্স, পোল্যান্ড মৈত্রীতে ভাঙন ধরানোর উদ্দেশ্যে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইঙ্গ-ফরাসি জোট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । ই. এল. উডওয়ার্ড বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল হিটলারের যুদ্ধ। তিনি এই যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনি আরম্ভ করেছিলেন এবং শেষপর্যন্ত তিনিই পরাজিত হয়েছিলেন।”

(৪) উগ্র জাতীয়তাবাদ

হিটলার মনে করতেন বিশ্বে বিশুদ্ধ আর্য রক্তের অধিকারী একমাত্র জার্মানরাই। তাই বিশ্বে জাতিগত দিক থেকে তারাই প্রভু জাতি বা হেরেনভক। এই কারণে অন্যান্য জাতির ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করার অধিকার তাদের আছে। হিটলারের এই হেরেনভক তত্ত্ব থেকে যে উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতির জন্ম হয় তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশে জার্মানির অধিকার স্থাপনের প্রচেষ্টা বিশ্বযুদ্ধকে নিশ্চিত করে তুলেছিল ।

(৫) জাপানের আগ্রাসী নীতি

প্রাচ্য তথা এশীয়া মহাদেশে জাপানের ক্রম অগ্রগমন মিত্রশক্তির মনে আতঙ্কের সঞ্চার করেছিল। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জাপান কর্তৃক চীন -এর মাঞ্চুরিয়া অধিকার তার সাম্রাজ্যবাদী নীতিরই পরিচায়ক।

(৬) ইতালির আগ্রাসন

ইতালির আগ্রাসন ও পররাজ্য গ্রাস নীতি বিশ্বকে দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে দেয়। ইতালি কর্তৃক আবিসিনিয়া অধিকারের কোনো প্রতিকার না হওয়ায় মুসোলিনির ক্ষমতা ও প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর আগ্রাসী মনোভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।

(৭) দুটি সামরিক শিবিরের স্বার্থ সংঘাত

ভার্সাই চুক্তির কিছু সময় পরেই ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ মিত্রশক্তি জোট এবং জার্মানি, জাপান ও ইতালির অক্ষশক্তি জোটের মধ্যে বাণিজ্যিক, ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী সংঘাত বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করেছিল। মুসোলিনি বলেছিলেন দুই জগতের এই দ্বন্দ্বে আপসের কোনো স্থান নেই, হয় আমরা নয় ওরা।

(৮) ইঙ্গ ফরাসি তোষণ নীতি

তোষণ নীতির দ্বারা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপের পরিবর্তে পূর্বে রাশিয়ার দিকে হিটলারের অবাধ সম্প্রসারণ চেয়েছিল। কারণ তাদের মতো ধনতন্ত্রী দেশগুলির কাছে নাৎসি জার্মানি বা ফ্যাসিবাদী ইতালির চেয়ে সমাজতন্ত্রী রাশিয়া ছিল অনেক বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু এই তোষণ নীতি হিটলারের মতো একনায়কদের শুধু শক্তিই বৃদ্ধি করেনি, তাদের আগ্রাসী মনোভাবকে তীব্র করে তুলেছিল। এ. জে. পি. টেলরের মতে ইঙ্গ ফরাসি তোষণ নীতিই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

(৯) আদৰ্শগত দ্বন্দ্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি আদর্শগত দিক থেকে পরস্পর বিরোধী দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি গণতন্ত্রবাদী রাষ্ট্রগুলি। অন্যদিকে ছিল ইতালি, জাপান, জার্মানি, স্পেন প্রভৃতি স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলি। আবার সোভিয়েত রাশিয়া ছিল সাম্যবাদী আদর্শ দ্বারা পরিচালিত। এই সব দেশের আদর্শের দ্বন্দ্ব বিশ্বের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বিঘ্ন করে এবং আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

(১০) সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক ভাবধারার সংঘাত

সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ধনতান্ত্রিক ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বারবার ভুল বোঝাবুঝি ও পারস্পরিক সন্দেহপ্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি দ্বারা রাশিয়াকে নিষ্ক্রিয় রাখলেও ইংল্যান্ডের দুর্বল নীতি যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

(১১) বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তার ফলে বিশ্ববাণিজ্য ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চরম আকার ধারণ করে। বেশ কিছু দেশ এই সমস্যার থেকে দেশবাসীর মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধে যোগ দেয়।

(১২) ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই সন্ধির ফলে মিত্রশক্তি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকা উপনিবেশ গুলি দখল করতে থাকে। একইভাবে অক্ষশক্তি জোট ইতালি, জার্মানি ও জাপান উপনিবেশ দখল এর কর্মসূচী গ্রহণ করে। ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অগ্ৰসর হলে ইঙ্গ ফরাসি শক্তি বাধা দেয়। আবার জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করলে মার্কিন শক্তি বাধা দেয়। এই ভাবে মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির মধ্যে ঔপনিবেশিক দ্বন্দের সৃষ্টি হয়।

(১৩) সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতা

শান্তি পুর্নগঠনের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লিগের তত্ত্বাবধানে জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন আহূত হয়। এই সম্মেলনে সমবেত প্রতিনিধিবর্গ সংকীর্ণ দেশীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বক্তব্য রাখতে পারেননি। তাই শেষ পর্যন্ত জার্মানি এই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসে। এই সম্মেলনের ব্যর্থতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

(১৪) জাতিসংঘের ব্যর্থতা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ। কিন্তু বৃহৎ শক্তিগুলির অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়। ইতালির আবিসিনিয়া দখল, জাপানের মাঞ্চুরিয়া দখল, জার্মানির চেকোস্লাভিয়া দখল প্রভৃতির ওপর জাতিসংঘ রুখে দাঁড়াতে পারেনি। এর ফলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

(১৫) অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের উত্থান

ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষর করেই জার্মানির একমাত্র লক্ষ্য হয় কোনো প্রকারে যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাওয়া। তাছাড়া জাপান ও ইতালির মতো তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সব রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তারা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল। কিন্তু পুরো বিশ্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করা না গেলে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন প্রায় অসম্ভব। এরকম চিন্তাভাবনা থেকেই জার্মানি, ইতালি ও জাপান পুরোপুরি যুদ্ধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

(১৬) চরম আন্তর্জাতিক নৈরাজ্য

অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যকে তুলে ধরছেন। লীগ অফ নেশনস জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ কিংবা ইতালির ইথিওপিয়া আক্রমণকালে কোনোভাবেই যৌথ নিরাপত্তাকে কাজে লাগাতে পারে নি। এজন্য লীগের কার্যকারিতা নিয়ে যথারীতি সন্দেহের উদ্রেক হয়। লীগের উপর বিশ্বব্যাপী এই অনাস্থা আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যকে বাড়িয়ে তুলেছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

(১৭) দীর্ঘ সময় যুদ্ধ বিরতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো তখন দেখা গেল নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও শান্তি আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এজন্য এই দুই মহাযুদ্ধের মাঝখানের সময়টাকে শান্তিপূর্ণ সময় না বলে দীর্ঘযুদ্ধবিরতি হিসেবে গন্য করা হয়। গণতন্ত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত যুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

(১৮) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ (Direct cause of World War II)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণগুলি হল-

হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ

রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি গঠন হওয়ার পর হিটলার পোল্যান্ডের রাষ্ট্রসীমার মধ্যে দিয়ে ডানজিগ অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের জন্য পোলিশ করিডর দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এই ঘোষণার বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে হুমকি দেয়। এই হুমকির পরোয়া না করে হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের পক্ষে যোগ দিলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (Second World War)

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৪:৩০ মিনিটে জার্মান বাহিনী হঠাৎ করেই পোল্যান্ডের ওপর আঘাত হানে। এর মাধ্যমেই সূচনা হয় ঐতিহাসিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সকাল জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ফ্রান্সও তাদের সাথে যোগ দেয়। এইভাবে একের পর এক বিচ্ছিন্ন যুদ্ধ চলতেই থাকে বছর ব্যাপী এবং দীর্ঘ ৬ বছর পর সমাপ্ত হয় রক্তক্ষয়ী, মর্মস্পর্শী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গন (Eastern Front in World War II)

ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনসমূহের একটি অংশ ছিল পূর্ব রণাঙ্গন। এর একপক্ষে ছিল অক্ষশক্তির সদস্যরা, অন্যদিকে তাদের বিপরীতে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড এবং মিত্রবাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা। মধ্য ইউরোপ, উত্তর-পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ, বাল্টিক অঞ্চল এবং বলকান অঞ্চল জুড়ে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ও আধুনিক রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এই যুদ্ধকে বলা হয় “মহান দেশাত্মবোধের যুদ্ধ”। অন্যদিকে জার্মানির দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পূর্ব রণাঙ্গন” নামে পরিচিত। আর বহির্বিশ্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি জার্মান -সোভিয়েত যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ভয়াবহ পরমাণু বোমা হামলা (The atomic bombings of Hiroshima and Nagasaki during World War II)

আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষের পথে, এমন সময়ে ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরে বিধ্বংসী পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে এই প্রথম কোনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় এমন গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র। এর ফলে মারামারা যায় হাজার হাজার মানুষ। আর এর প্রভাব এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে সেই এলাকার মানুষ।

ধারনা করা হয়, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বোমা হামলায় শুধু হিরোশিমা শহরেরই সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে, নাগাসাকিতে মারা যায় প্রায় চুয়াত্তর হাজার মানুষ। এই পরমাণু বোমার তেজস্ক্রিয়তার ফলে পরবর্তী সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলিতে বহু মানুষ ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে। আর বোমার শিকার হয়েও যেসব লোক প্রাণে বেঁচে যায় জাপানে তাদের “হিবাকুশা” বলে পরিচয় দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণ (Surrender of Japan in World War II)

এই বোমা হামলার ঠিক পরপরই ১৪ই আগস্ট জাপান পুরোপুরি নিঃশর্তভাবে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তবে শুধু পরমাণু বোমার ভয়েই জাপান আত্মসমর্পণ করে তা নয় – এই বোমাহামলার অনেক আগেই জাপান আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পরিণতি (The end of World War II)

এই বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত এর বিজয়, তৃতীয় রাইখের নিয়ন্ত্রণের পতন, মিত্রবাহিনীর হাতে জার্মানি দখল, নিরব স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা আর পূর্ব ব্লক ও লৌহ-পর্দা (Iron Curtain)-এর সৃষ্টি হয়। তাছাড়া গ্রীক গৃহযুদ্ধের সূত্রপাতও এখান থেকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে হিটলারের ভূমিকা (Hitler’s role in World War II)

অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন। আর ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশেরই ফিউরার পদেও নিয়োগ ছিলেন। হিটলারই সেই ব্যক্তি যিনি তার সকল রাজনৈতিক বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ও ইহুদী বিদ্বেষ ছড়াতে থাকেন। হিটলার রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। তিনি নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্রে সামরিক বাহিনীকে সজ্জিত করেছিলেন।

হিটলার “লেবেনস্রাম” (জীবন্ত অঞ্চল) দখল করে নেওয়ার মত এক বৈদেশিক নীতি অনুসরন করেন। এই কারণে তার নেতৃত্বে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে। এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই ভাবেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে জাপানের ভূমিকা (Japan’s role in World War II)

১৯৩৭ সাল থেকেই জাপান সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করে। সাম্রাজ্যবাদী এই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর। ইতালির ও জার্মানির সাথে করা ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফলেই জাপানের এই যোগদান।

জাপানের নৌবাহিনী ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবার আক্রমণ করে আমেরিকার নৌবাহিনী, প্রতিরক্ষা বিমানবাহিনী ও সামুদ্রিক বিমানবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এই আক্রমণের শিকার হয়ে আমেরিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে।

বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব (Effects of World War II on the World)

পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এক ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটনা।এর প্রভাব ছিল মর্মান্তিক ও সুদূরপ্রসারী ।

  • (১) এই যুদ্ধের মাধ্যমেই আমেরিকা ও রাশিয়া বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকার নেয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালির মত ইউরোপীয় দেশ গুলোর অবস্থান হয় কর্তৃত্বের দ্বিতীয় সারিতে। ইতালিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। জার্মানি পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি হিসেবে বিভক্ত হয়ে যায়।
  • (২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই সাম্যবাদী আদর্শ পৃথিবীর ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং রাশিয়ায় সর্ব প্রথম সাম্যবাদী আদর্শ জয় লাভ করে হয়। এর পরে পোল্যান্ড, চিন, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি দেশগুলিও একে একে সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে পৃথিবীর নানা দেশে কমিউনিস্ট দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
  • (৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ দুটি জোটে ভাগ হয়ে যায়। তবে ভারত সহ কিছু দেশ নিরপেক্ষ থাকে। দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে যাওয়া দেশগুলির মধ্যে এক ধরণের স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়, যা ঠান্ডা লড়াই বা কোল্ড ওয়ার নামে পরিচিত।
  • (৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরাধীন দেশগুলিতে শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। বিশেষ করে কলোনিয়াল অঞ্চল তাদের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিও উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দানে তৎপর হয়। যার ফলে ভারত সহ বেশ কিছু দেশ স্বাধীনতা লাভ করে ।
  • (৫) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয় (১৯৪৫ খ্রি)। আজও এই সংস্থা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং মানবজাতির সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।
  • (৬) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবের উল্লেখযোগ্য বিষয় হল লিটল বয়। এর ধ্বংসজজ্ঞ এত ব্যপক ছিল যে, প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কাঠের যত স্থাপত্য ছিল তা সবই একেবারে মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। চোখের পলকে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল গোটা শহর। আজ ৭৬ বছর পরেও হিরোশিমা নাগাসাকি শহরের মানুষেরা সেই তেজস্ক্রিয়তার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আজও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গসহ প্রানঘাতি রোগব্যাধী দেখা যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল (Outcome of World War II)

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ছিল খুবই ভয়ানক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অপেক্ষা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরও বেশী অস্ত্র শস্ত্র ব্যাবহার করা হয়েছিল। এমনকি পারমাণবিক বোমার মতো বিধ্বংসী বোমাও এই যুদ্ধে ব্যাবহার করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলগুলি হল –

(১) ভিন্ন দুটি মতাদর্শের বিকাশ

যুদ্ধের পর ইউরোপ দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে – পশ্চিম ইউরোপ এবং পূর্ব ইউরোপ। পশ্চিম ইউরোপে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে এবং পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত – এর অনুকরণে নতুন সমাজতন্ত্রের বিকাশ হয়। এই দুইটি মতাদর্শকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে ন্যাটো ও ওয়ারশ সামরিক জোট।

(২) জার্মানির বিভক্তি

হিটলারের মৃত্যুর পর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় – পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি। নাৎসি দলকে নিষিদ্ধ করে তাদের সকল প্রকার ঘৃণ্য আইন বাতিল করা হয়।

(৩) জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয় (১৯৪৫ খ্রি ২৪ অক্টোবর)। আজও এই সংস্থা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং মানবজাতির সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।

(৪) যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তির উত্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবার ঠিক আগে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছিল বৃহৎ দুটি শক্তি । তবে এই যুদ্ধের পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তার প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে এবং বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নেরও উত্থান শুরু হয়। বিপুল পরিমাণ সামরিক শক্তি এবং অঢেল সম্পদের প্রাচুর্য তাদের এই উত্থানে সাহায্য করে।

(৫) ফ্যাসিবাদের পতন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনার মূল কীট ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মিত্রশক্তি জয়ী হলে ফ্যাসিবাদ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় ।

(৬) বিশ্বরাজনীতিতে বৃহৎ শক্তি ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পতন

যুদ্ধের পর ব্রিটেন তার বৃহৎ শক্তি ও সাম্রাজ্য হারায়। ব্রিটেনের অর্থনীতি অনেকটাই ভেঙে পড়ে। ব্রিটেনের সামরিকশক্তিও প্রকাশ্যে খর্ব হয়। ফলে বিশ্বরাজনীতিতে তাদের প্রভাব কমে যায়। অন্যদিকে ফ্রান্সের অবস্থা হয় ব্রিটেনের চেয়েও বহুগুণ খারাপ। শিল্প এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অভাব ও ধর্মঘটে ফ্রান্স ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। এইভাবে বিশ্বরাজনীতিতে ফ্রান্সের গুরুত্বও কমে যেতে থাকে।

(৭) জার্মানির পরাজয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানি চরম ভাবে পরাজিত হয় এবং জার্মানির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক ক্ষমতা একে বারে ভেঙ্গে পড়ে।

(৮) ঠাণ্ডার লড়াইয়ের সূচনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বিশ্বের দুই শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়া কোনো প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধের আবহাওয়ার মধ্যে থাকে ।

উপসংহার :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিশ্ববাসী চেয়েছিল আর যেন তাদের কোনো বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে না হয়। কিন্তু বিশ্ববাসীর আশা ভঙ্গ করে ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদ বনাম গণতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাতের পরিণামে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

(FAQ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (Second World War) হতে জিজ্ঞাস্য?

১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে হয়েছিল?

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শেষ হয়েছিল?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই আগস্ট।

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?

আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্সের সঙ্গে বনাম জার্মানি, জাপান, ইতালির।

Leave a Comment