ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র -এর জন্ম, শিক্ষা, পরিবার, কর্মজীবন, সোস্যাল সায়েন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা, প্রভাবশালী ইতিহাসবিদ, স্কুল ও কলেজের পাঠ্যপুস্তক রচনা, ইউ জি সি এর চেয়ারম্যান, টোকিও কাউন্সিলে দায়িত্ব, গবেষণা ও সম্পাদক সদস্য, কমিটির প্রধান, ঐতিহাসিক গোষ্ঠী, পুরোধা পুরুষ, জাযগিরদারী সঙ্কট নিয়ে প্রবন্ধ, উল্লেখযোগ্য রচনা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র
ঐতিহাসিক চরিত্র | সতীশ চন্দ্র |
জন্ম | ২০ নভেম্বর, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ |
পেশা | ঐতিহাসিক |
পরিচিতি | মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস রচনা |
মৃত্যু | ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- সতীশ চন্দ্র ছিলেন একজন ভারতীয় ঐতিহাসিক। তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মধ্যযুগীয় ভারতীয় ইতিহাস চর্চা। তার হিস্ট্রি অফ মিডিয়াভেল ইন্ডিয়া গ্ৰন্থটি ভারতের বিভিন্ন স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক রূপে বহুল প্রচলিত।
সতীশ চন্দ্রের জন্ম
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের মিরাটে ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র জন্মগ্ৰহণ করেন। তার পিতা স্যার সীতা রাম ছিলেন পাকিস্তান -এ ভারত -এর প্রথম হাইকমিশনার এবং মাতা বাসুদেবী।
সতীশ চন্দ্রের শিক্ষা
তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. (১৯৪২), এম.এ. (১৯৪৪) এবং ডি. ফিল. (১৯৪৮) সম্পন্ন করেন। তিনি আর. পি. ত্রিপাঠির অধীনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার ডক্টরেট থিসিস ছিল “Parties and Politics in 18th century India”।
সতীশ চন্দ্রের পরিবার
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র বিবাহ করেন সাবিত্রী নামক এক মহিলাকে এবং তাদের তিন পুত্র হয়।
সতীশ চন্দ্রের কর্মজীবন
ইতিহাসবিদ সতীশ চন্দ্র নিউ দিল্লীতে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালে কেমব্রিজের স্মুটস ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
সোস্যাল সায়েন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সতীশ চন্দ্রের ভূমিকা
তিনি এস. গোপাল, বিপান চন্দ্র এবং রোমিলা থাপারের সাথে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সোসাল সায়েন্সেসের সেন্টার ফর হিস্টোরিকাল স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কয়েক বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন।
সতীশ চন্দ্র ছিলেন প্রভাবশালী ইতিহাসবিদ
সতীশ চন্দ্রকে মুঘল যুগের ভারতের নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতদের একজন এবং ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইতিহাসবিদদের একজন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সতীশ চন্দ্রের লেখা স্কুল ও কলেজের পাঠ্যপুস্তক
তার লেখা ‘মিডিয়াভেল ইন্ডিয়া’ গ্ৰন্থটি সারা ভারতের স্কুল ও কলেজগুলিতে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ইউ জি সির চেয়ারম্যান সতীশ চন্দ্র
১৯৭০-এর দশকে সতীশ চন্দ্র ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় গ্রান্টস কমিশনের (ইউ জি সি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান ছিলেন।
টোকিও কাউন্সিলে সতীশ চন্দ্রের দায়িত্ব পালন
তিনি ১৯৮০ ও ১৯৮৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘ -এর বিশ্ববিদ্যালয় টোকিওর কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করেন।
গবেষণা ও সম্পাদক সদস্য সতীশ চন্দ্র
তিনি ফ্রান্স-এর প্যারিসে Maison des Sciences de l’Homme গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ হিসটোরিকাল সায়েন্সেস বোর্ডের একজন সম্পাদক সদস্য ছিলেন।
কমিটির প্রধান সতীশ চন্দ্র
১৯৮৮ সালে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক ঊর্ধ্বতর সিভিল সার্ভিসের নিয়োগের পদ্ধতি পর্যালোচনা করার জন্য তাকে একটি কমিটির প্রধান হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ঐতিহাসিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত সতীশ চন্দ্র
রোমিলা থাপার, আর এস শর্মা, বিপান চন্দ্র এবং অর্জুন দেবের সঙ্গে তিনি ইতিহাসবিদদের একই গোষ্ঠীর অন্তর্গত ছিলেন। তাদের কখনও কখনও “বামপন্থী” বা “ইতিহাসের দিকে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত” হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
পুরোধা পুরুষ সতীশ চন্দ্র
ষাটের দশক থেকে অধ্যাপক সৈয়দ নুরুল হাসানের উৎসাহে ও উদ্যোগে মোগল আমলের ইতিহাস নিয়ে যে নতুন বিচার ও গবেষণার সূত্রপাত হয়েছিল, সেই ধারার অন্যতম পুরোধা পুরুষ ছিলেন সতীশ চন্দ্র ৷
জায়গিরদারী সংকট নিয়ে সতীশ চন্দ্রের প্রবন্ধ
অষ্টাদশ শতকে মোগল শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে জায়গিরদারি সংকট মোকাবিলার নীতি ও তৎকালীন আঞ্চলিক দেশজ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উত্থান প্রসঙ্গে তিনি নানা প্রকীর্ণ প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
সতীশ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য রচনা
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্ররচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল –
- (১) ধর্ম এইট্টিন সেঞ্চুরি ইন ইন্ডিয়া: ইটস ইকোনমি এন্ড দ্য রোল অফ ধর্ম মারাঠাস, দ্য জাটস, এন্ড দ্য আফগানস (১৯৮৬)।
- (২) এসে ইন মিডিয়াভেল ইন্ডিয়ান ইকোনমিক হিস্ট্রি (১৯৮৭)।
- (৩) মুঘল রিলিজিয়াস পলিসিস, দ্য রাজপুতস এন্ড দ্য ডেকান (১৯৯৩)।
- (৪) হিস্টোরিওগ্রাফি, রিলিজিয়ান এন্ড স্টেট ইন মিডিয়াভেল ইন্ডিয়া(১৯৯৬)।
- (৫) মিডিয়াভেল ইন্ডিয়া ফর্ম সুলতানাত টু দ্য মুঘল (১৯৯৭)।
- (৬) পার্টিস অ্যান্ড পলিটিক্স এট দ্য মুঘল কোর্ট, ১৭০৭-১৭৪০ (২০০২)।
- (৭) এসে অন মিডিয়াভেল ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি (২০০৩)।
- (৮) স্টেট প্লুরালিসম অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান হিস্টোরিকাল ট্র্যাডিশন (২০০৮)।
সতীশ চন্দ্রের মৃত্যু
১৩ অক্টোবর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার:- সতীশ চন্দ্র গবেষণা ও নানা প্রশাসনিক দায়িত্বপালন করেছিলেন। তবে দক্ষ ও সহৃদয় শিক্ষক হিসাবে নিজের ছাত্রদের ভালোমন্দের উপর তিনি সর্বদা নজর রাখতেন ৷
(FAQ) ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২০ নভেম্বর, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র।
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র।
১৩ অক্টোবর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ।