রুশোর প্রেমপত্র

বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রুশোর প্রেমপত্র প্রসঙ্গে রুশোর প্রেমিকা, রুশোর প্রেমপত্র লেখার সময়কাল, রুশোর প্রেমাশক্তি ও রুশোর মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।

ফরাসি দার্শনিক রুশোর প্রেমপত্র

ঐতিহাসিক প্রেমপত্ররুশোর প্রেমপত্র
পরিচিতিফরাসি দার্শনিক
প্রেমিকাকাউন্টেস দ্য মুদেতভ
প্রেমিকাকে সম্বোধনসোফি
প্রেমপত্রের সময়কালজুন, ১৭৫৭ খ্রি
রুশোর প্রেমপত্র

ফ্রান্স-এর বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জাঁ জ্যাকোয়া রুশোর চরিত্রে আবেগের স্থান ছিল মুখ্য, তাঁর আন্তরিকতা ছিল প্রবল, কিন্তু প্রচলিত নীতিধর্মের মূল্য তাঁর নিকট বিশেষ কিছু ছিল না; সৌন্দর্য-দর্শন এবং রচনার সাহত্যিকে রমণীয়তা ছিল উচ্চাঙ্গের। মাদাম দ্য ওয়ারেন্স-এর সাথে বিছুকাল অন্তরঙ্গ জীবনযাপনের পর তিনি অরলিঅন্স থেকে আগত থেরেসা নামের এক বালিকার প্রেমাসক্ত হন এবং তাঁদের পাঁচটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পরে তিনি কাউন্টেস দ্য মুদেতভ, নামে একজন অভিজাত মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হন, যদিচ তিনি জানতেন কাউন্টেস তার প্রতি নয় মারকুইস্ দ্য স্যঁ ল্যাম্বেয়া’র প্রেমাসক্ত।

কাউন্টেসকে লিখিত তার পত্র –

জুন, ১৭৫৭

সোফি, তুমি এস, তোমার নির্দয় হৃদয়কে আমি যন্ত্রণাদগ্ধ করতে চাই, যাতে আমার দিক থেকে আমিও তোমার প্রতি নিষ্ঠুর হতে পারি। তোমাকে ক্ষমা করব কেন, যখন তুমি আমার যুক্তি, মানসম্মান জীবন পর্যন্ত অপহরণ করে বসেছ? কেন আমি তোমার দিনগুলো শান্তিতে অতিবাহিত হতে দেব যখন তুমি আমার দিনরাত্রিকে করেছ দুঃসহ? হ্যাঁ, এই নির্দয় অবহেলার বদলে তুমি যদি আমার বুকে একটা ছুরি বসিয়ে দিতে তাহলে সত্যই তুমি খুব কম নিষ্ঠুর হতে। দেখ, দেখ, আমি কি ছিলাম আর কি হয়েছি এখন। দেখ অধঃপাতের কী এক স্তরে তুমি আমায় নিয়ে গেছ। যখন তুমি একান্তই আমার বলে অভিনয় করেছিলে তখন আমি ছিলাম সকলের সেরা, আর, এখন তোমার কাছ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে আমি হয়েছি সর্বাপেক্ষা হ্রস্ব মানুষ। আমি আজ রিক্ত, যুক্তিতে, উপলব্ধিতে, শক্তি সামর্থ্যে সমস্ত দিক থেকে রিক্ত, এক কথায়, তুমি আমার সর্বস্ব হরণ করেছ! কি করে তোমার আপন সৃষ্টিকে তুমি এভাবে বিনষ্ট করলে? যাকে একদা তোমার মাধুর্য দিয়ে ভরে দিয়েছিলে, তাকে আজ তুমি সমাদরের অযোগ্য বিবেচনা করিলে কিরূপে? – হ্যাঁ, সোফি, যার জন্য একদা ছিলে গর্বিত, তার জন্য আজ লজ্জিত হয়ো না। তোমার নিজের সম্মানের জন্যই তোমার নিকট আমার দাবি, আমার সম্পর্কে তোমার মনোভাব ব্যক্ত করো। আমি কি তোমার প্রেমাস্পদ নই? তুমি কি আমার ভার গ্রহণ করোনি? তুমি কি তা অস্বীকার করিতে পার? আর যেহেতু তুমি-আমি চাই বা না চাই, আমি তোমারই তখন আমাকে সুযোগ্য হতে দাও। সেই পলাতক সুখের ক্ষণগুলোর কথা স্মরণ করো, যা, হা হতোস্মি, আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। সেই অদৃশ্য জ্যোতি যা থেকে আমি আমার দ্বিতীয় এবং অধিকতর মূল্যবান জীবন লাভ করেছিলাম, তা আমার হৃদয়ে আমার অঙ্গের অণুপরমাণুতে এনেছিল যৌবনের দৃপ্ত শক্তি। আমার অনুভবের সুতীব্র আলোক আমাকে তোমার কাছে তুলে ধরেছিল। যদিও তোমার হৃদয় ছিল অন্য তারে বাঁধা, তথাপি তা কি আমার আবেগের তীব্রতায় প্রদীপ্ত হয় নি! সেই সঠিক ধারণার পাশে কুঞ্জবনে তুমি কি প্রায়শ বলতে না, “আমি অনুভব করতে পারি, তুমি সর্বাধিক হৃদয়বান প্রেমিক; না, তোমার মত করে কোনো পুরুষ কখনও ভালবাসে নি।” তোমার ওষ্ঠের এই স্বীকৃতি আমার কত বড় বিজয় ঘোষণা করত! হাঁ, তা সত্য; আমার আবেগে তোমাকে আমি জ্বালাতে চেয়েছিলাম।

ও সোফি আমার, এই মধুক্ষরা মুহূর্তগুলো জানবার পর চিরবিচ্ছেদের চিন্তা তার পক্ষে ভয়ঙ্কর যে তোমাতে বিলীন না হতে পারার চেতনায় ম্রিয়মান। সত্যি কি তোমার কোমল আঁখি যুগল আর কখনও আমার দৃষ্টির সম্মুখে সেই সুমিষ্ট লজ্জায় অবনত হবে না যা আমাকে করত কামনায় বাসনায় প্রমত্ত? আর কি আমি সেই স্বর্গীয় রোমাঞ্চে কখনও পুলকিত হব না, সেই পাগল করা সর্বগ্রাসী, বিদ্যুতের চেয়েও ত্বরিৎগতি আগুনে পুড়ব না? কী দুর্লভ প্রকাশের অতীত সেই মুহূর্ত! কোন হৃদয় কোন ঈশ্বর তোমাকে পাবার পর অবিচল থাকতে পারত!

– রুশো

(FAQ) রুশোর প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

১। রুশো কে ছিলেন?

বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক।

২। রুশোর রচিত গ্রন্থের নাম কী?

সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট

৩। রুশোর প্রেমিকা কে ছিলেন?

কাউন্টেস দ্য মুদেতভ

Leave a Comment