গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ

গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ প্রসঙ্গে বৈদেশিক আক্রমণ, জাতিয়তাবাদী প্রভাব, জাতিয়তাবাদী চিন্তা অকল্পনীয়, গাঙ্গেয় উপত্যকায় শূন্যতা, অর্থনৈতিক কারণ ও শ্রীগুপ্তর সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ সম্পর্কে জানবো।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাগুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ
সাম্রাজ্যগুপ্ত সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাতাশ্রীগুপ্ত
ভারত -এর নেপোলিয়নসমুদ্রগুপ্ত
শকারিদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ

ভূমিকা :- ইতিহাসের ধারা প্রবহমান হলেও, কতকগুলি কার্যকারণের জন্য তাতে পরিবর্তনের স্রোত দেখা যায়। মৌর্য সাম্রাজ্য -এর পতনের পর ভারতের রাজনীতিতে যে বিচ্ছিন্নতা, আঞ্চলিকতার প্রকাশ ও বৈদেশিক শক্তিগুলির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল গুপ্ত বংশের উত্থানের মাধ্যমে তাতে ছেদ পড়ে।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ

কেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভব হল তা ঐতিহাসিকদের গবেষণার খোরাক সৃষ্টি করেছে। ইতিহাসে কোনো কাজ বিনা কার্য কারণে ঘটে না। গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের পশ্চাতেও কারণ ছিল। এই কারণগুলির ব্যাখ্যায় ঐতিহাসিকরা ঐক্যমতে আসতে পারেন নি।

বৈদেশিক আক্রমণ

জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকেরা বলেছেন যে, মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন-এর পর ভারতে যে বৈদেশিক আক্রমণ ও বৈদেশিক সভ্যতার প্রভাব পড়েছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ছিল তার বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ। ডঃ আর. সি. মজুমদার তাঁর “এনসিয়েন্ট ইণ্ডিয়া” গ্রন্থে এই মতের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন যে, ম্লেচ্ছ আক্রমণ ও সভ্যতার প্রতিক্রিয়া গুপ্ত সাম্রাজ্য ও সভ্যতায় দেখা যায়। এই কারণে গুপ্ত সাম্রাজ্যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাব বেশী ছিল।

জাতীয়তাবাদী প্রভাব

সম্প্রতি ডঃ গয়াল তাঁর “হিস্ট্রি অফ ইম্পিরিয়েল গুপ্তজ” গ্রন্থে এই মতকে প্রসারিত করে বলেছেন যে, মৌর্য শাসন ও সভ্যতায় বৈদেশিক প্রভাব ছিল। তার পরে বৈদেশিক আক্রমণের ফলে এই প্রভাব আরও বাড়ে। গুপ্ত যুগে তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্রভাব জাগ্রত হয়। এই কারণে গুপ্ত যুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অভ্যুত্থান দেখা যায়।

জাতীয়তাবাদী চিন্তা অকল্পনীয়

এই মতের বিরোধিতা কোন কোন ঐতিহাসিক করেন। তাদের মতে, গুপ্ত সাম্রাজ্যবাদের পশ্চাতে কোন জাতীয়তাবাদী চিন্তা ছিল কিনা সন্দেহ। কারণ সেই যুগে জাতীয়তাবাদ বলতে কিছু ছিল না।

গাঙ্গেয় উপত্যকায় শূন্যতা

গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পটভূমি অনেকটা যুক্তিসহ। তৃতীয় খ্রিস্টাব্দে যখন গুপ্তবংশের উত্থান আরম্ভ হয় তখন উত্তরপ্রদেশের গাঙ্গেয় উপত্যকাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে ওঠার সুযোগ দেখা দিয়েছিল। কারণ,

  • (১) মগধ অঞ্চলে তখন শক মুরণ্ডর শাসন করায়, মগধ-এ কোনো রাজ্য গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না।
  • (২) উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল ছিল সাসানীয় শাসনে ও শক-কুষাণ এবং উপজাতিদের অধিকারে।
  • (৩) দক্ষিণে বাকাটক রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে একমাত্র গঙ্গা উপতাকা নিয়ে এক সাম্রাজ্য গড়ে ওঠার সুযোগ বা রাজনৈতিক সুবিধা ছিল। শ্রীগুপ্ত থেকে প্রথম চন্দ্রগুপ্ত এর পূর্ণ সুযোগ নেন।

অর্থনৈতিক কারণ

অর্থনৈতিক দিক থেকে গঙ্গা-যমুনা উপত্যকা বা অন্তর্বেদী ছিল খুবই উর্বরা অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক কারণ অঞ্চলে ছিল প্রাচীন নগরীগুলি, গঙ্গার জলাধারা সিঞ্চিত কৃষিক্ষেত্র, গঙ্গ বাহিত বাণিজ্য। এগুলি হাতে থাকায় গুপ্তদের উত্থান সফল হয়। এছাড়া অন্তর্বেদী বা গঙ্গা-যমুনা উপত্যকা ছিল ব্রাহ্মণ সভ্যতার কেন্দ্র। গুপ্ত সম্রাটরা বহু যো প্রশাসক, মন্ত্রী এই অঞ্চল থেকে পান।

শ্রীগুপ্ত

এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা শ্রীগুপ্ত সর্বপ্রথম তার স্বাধীন অধিকার স্থাপন করেন। ডঃ জয়সোয়াল বলেছেন যে, যেহেতু শ্রীগুপ্ত এবং তার উত্তরাধিকারী ঘটোৎকচ গুপ্তের উপাধি ছিল মহারাজা, সেহেতু তারা সামন্ত রাজা ছিলেন। গুপ্তবংশের তৃতীয় রাজা চন্দ্রগুপ্ত মহারাজাধিরাজ উপাধি নিলে তবেই গুপ্তবংশ সার্বভৌম ক্ষমতা পায়।

উপসংহার :- মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে কুষাণরা ও দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন রাজারা কিছুটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি স্থাপনে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের মধ্যভাগে উভয় সাম্রাজ্যের পতন হয়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের অভ্যুত্থানের ফলে এই রাজনৈতিক শূন্যতার অবসান হয়।

(FAQ) গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভবের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

শ্রীগুপ্ত।

২. গুপ্ত যুগে কোন ধাতুর মুদ্রা প্রচলিত ছিল?

সোনা, রূপা, তামা।

৩. গুপ্তযুগের মুদ্রায় কোন দেবীর মূর্তি খোদাই থাকত?

পদ্মাসনা লক্ষ্মী।

৪. গুপ্তযুগে কোন চীনা পর্যটক ভারতে আসেন?

ফা হিয়েন

৫. দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকটি কে রচনা করেন?

বিশাখদত্ত।

Leave a Comment