হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ

হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ প্রসঙ্গে বৃষ্টিপাত হ্রাস, যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন, বাঁধ নির্মাণে অবহেলা, সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিকম্প তত্ত্ব, বন্যার প্রকোপ, নাগরিক বোধের অভাব, রক্ষণশীলতা ও স্থবিরত্ব এবং আর্য জাতির আক্রমণ সম্পর্কে জানবো।

হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাহরপ্পা সভ্যতার পতন
প্রাকৃতিক কারণভূমিকম্প, বন্যা, বৃষ্টিপাত হ্রাস
আভ্যন্তরীণ কারণরক্ষণশীলতা ও স্থবিরত্ব
বৈদেশিক আক্রমণআর্য জাতি
হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ

ভূমিকা :- সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার মত প্রাণবন্ত সভ্যতা কি কারণে বিলুপ্ত হয় তা ঠিক জানা যায় নি। কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা না থাকায়, সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনগুলি পরীক্ষা করে পণ্ডিতেরা এই সভ্যতা ধ্বংসের কারণ অনুমান করেন। সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার হলে হয়ত এই বিষয়ে আলোকপাত হতে পারে।

হরপ্পা সভ্যতার পতন সম্পর্কে বিভিন্ন মত

পণ্ডিতদের মতে, সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত বিভিন্ন শহরের মাসে বিভিন্ন কারণে ঘটেছিল। কোন একটিমাত্র কারণে সকল শহরগুলি ধ্বংস হয়েছিল এমন কথা বলা যায় না। প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল যে, সিন্ধু নগরগুলি অকস্মাৎ ধ্বংস হয়নি। সিন্ধু নগরগুলি অকস্মাৎ ধ্বংস একদা এই মত চালু থাকলেও, অধুনা প্রায় সকল গবেষক একমত যে সিন্ধু সভ্যতার অবক্ষয় ক্রমান্বয়ে ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত তা ধ্বসে পড়ে। সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্যে আভ্যন্তরীন কারণগুলিও বেশী দায়ী ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে বৃষ্টিপাত হ্রাস

প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে সিন্ধু অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের জন্য দায়ী ছিল বলা যায়। একদা সিন্ধু অঞ্চলে মহিষ, বাইসন, বাঘ, গণ্ডার, হাতী প্রভৃতি প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। প্রচুর বৃষ্টিপাতযুক্ত ও স্যাতসেতে জলাভূমি অঞ্চলে এই প্রাণীগুলি বাস করে। সুতরাং সিন্ধু উপত্যকায় একদা প্রচুর বৃষ্টিপাত হত একথা অনুমান করা হয়। কালক্রমে সিন্ধু উপত্যকায় আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে বৃষ্টিপাত খুবই কমে যায়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে কৃষির ধ্বংস

বৃষ্টিপাত হ্রাসের ফলে সিন্ধু অঞ্চলে মরুভূমি জেগে ওঠে। মাটিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়। শহরগুলির খাদ্য সরবরাহ নষ্ট হয়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন

বৃষ্টিপাত হ্রাস ও জমিতে জল সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে হুইলার বলেন যে, সিন্ধু নগরগুলিতে গৃহ নির্মাণের জন্যে প্রচুর পোড়ামাটির ইটের দরকার হয়। ইট পোড়াবার জন্য শত শত বছর ধরে স্থানীয় জঙ্গল কেটে কাঠ জোগাড় করা হয়। ব্যাপক গাছ কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে বাঁধ নির্মাণে অবহেলা

সিন্ধু নদের জল বাঁধ দ্বারা ধরে রেখে চাষ-আবাদ করা হত। পরবর্তী কালে এই বাঁধ মেরামতের কোনো চেষ্টা হয়নি। এর ফলে নদীর জল কৃষির জন্যে পাওয়া যেত না। এভাবে কৃষি নষ্ট হয়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তন

অনেকের মতে সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তিত হলে মহেঞ্জোদারো নগরী বিপন্ন হয়। মহেঞ্জোদারো থেকে নদীপথে বাণিজ্য নষ্ট হয়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে ভূমিকম্প তত্ত্ব

  • (১) অনেকের মতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে হরপ্পার নগরগুলি ধ্বংস হয়। মহেঞ্জোদারোতে যে নরকঙ্কালগুলি পাওয়া গেছে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তাদের সংস্কার করা হয় নি। অনেকগুলি কঙ্কালের গায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। সম্ভবত ভূমিকম্পে নগর বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে মৃতদেহগুলির সৎকার হয় নি এবং মৃতদেহগুলি ক্ষত-বিক্ষত হয়।
  • (২) হয়ত সিন্ধু উপত্যকায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল, যার ফলে এই নগরী ধ্বংস হয়। ভূমিকম্প তত্ত্বের দুর্বলতা এই যে, হরপ্পা সহ অন্য নগরগুলি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয় এমন কোন প্রমাণ নেই। মহেঞ্জোদারোর ক্ষেত্রে ভূমিকম্প তত্ত্ব সত্য হলেও অন্যত্র তা খাটে না।
  • (৩) তাছাড়া ডঃ শাঙ্খালিয়া প্রশ্ন করেছেন যে, যদি মহেঞ্জোদারোর অধিবাসীরা শহর ধ্বংস হলে পর পর সাতটি স্তরে সাতবার শহরের পুননির্মাণ করে থাকে, তবে ভূমিকম্পে ধ্বংসের পর পুনরায় নগর গঠনে তাদের বাধা কি ছিল? সুতরাং অন্য কোনো কারণ নিশ্চয় মহেঞ্জোদারোর পতনের জন্য দায়ী ছিল বলা যায়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে বন্যার প্রকোপ

  • (১) হরপ্পা সংস্কৃতির ধ্বংসের জন্যে প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে অনেকে সিন্ধু নদের বন্যাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। সিন্ধুনদে পলি পড়ে নদীর গর্ভ উঁচু হয়ে যায়। এজন্য বর্ষার নদী জল কুল ছাপিয়ে শহর প্লাবিত করতে থাকে। বন্যার হাত থেকে শহরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • (২) মহেঞ্জোদারোতে দেখা যায় যে, বন্যার জল থেকে শহরকে রক্ষার জন্যে নদীর পাড়ে ৫০ ফুটের বেশী চওড়া বাঁধ দেওয়া হয়। বাড়ির ভেতর যাতে বন্যার জল ঢুকতে না পারে সেজন্য বাড়ির ভিত উঁচু করা হয়। বাড়ির যে অংশে জল লাগবার সম্ভাবনা ছিল সেই অংশ পোড়ামাটির ইট দ্বারা তৈরি করা হয়।
  • (৩) মহেঞ্জোদারো দুর্গের জল নির্গমের নালীতে যাতে বন্যার জল প্রবেশ না করে এজন্য এই নালীকে ১৪ ফুট উঁচু করে পুনরায় তৈরি করা হয়। এই সকল নিদর্শন থেকে এ কথা প্রমাণ হয় যে, বন্যার তাণ্ডবে মহেঞ্জোদারো শহরের ধ্বংস ঘটেছিল। লোথালেও বন্যার চিহ্ন দেখা যায়। সুতরাং এই শহরের ধ্বংসের জন্যে বন্যার প্রকোপ বড় কারণ ছিল একথা বলা যায়।
  • (৪) মহেঞ্জোদারোর ক্ষেত্রে বন্যাতত্ত্ব যুক্তিযুক্ত হলেও হরপ্পার ক্ষেত্রে বন্যার তত্ত্ব কার্যকরী নয়। কারণ হরপ্পায় বন্যার কোনো নিদর্শন নেই। কালিবাঙ্গানেও বন্যার তত্ত্ব কার্যকরী নয়। এইচ. ডি. শাঙ্খালিয়ার মতে, কালিবঙ্গানে ঘর্ঘরা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই শহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে নাগরিক বোধের অভাব

  • (১) মহেঞ্জোদারো তে পর পর যে সাতটি স্তরে এই নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তার ওপরের স্তরগুলিতে পৌর প্রশাসনের অভাব দেখা যায়। নীচের স্তরগুলিতে গৃহগুলি যেরূপ পৌর আইন মেনে তৈরি করা হয় ওপরের স্তরে তা দেখা যায় নি।
  • (২) রাস্তা অবরোধ করে গৃহ নির্মাণ, গলি অবরোধ করে ইটের পাঁজা নির্মাণ, কূপ খনন, বড় বড় কক্ষগুলিকে ভাগ করে ক্ষুদ্র কক্ষে পরিণত করা ইত্যাদি নাগরিক আদর্শের অবনতি ওপরের স্তরগুলিতে দেখা যায়। শহরের এই অবনতি লক্ষ্য করে অনেকে বলেন যে, মহেঞ্জোদারো শহর অকস্মাৎ ধ্বংস না হয়ে ক্রমে ক্রমে ধ্বংস হয়।
  • (৩) হুইলার মন্তব্য করেছেন যে, “পরবর্তী যুগের মহেঞ্জোদারো আনুমানিক হরপ্পা পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় দরিদ্র ও হতশ্রী”। নাগরিক বোধের অভাব অন্ততঃপক্ষে মহেঞ্জোদারো নগরের পতনের কারণ ছিল এতে সন্দেহ নাই।
  • (৪) হরপ্পার ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধঃপতনের চিহ্ন দেখা যায়। বাণিজ্য যা এই নগরগুলির সমৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল তা আর অবশিষ্ট ছিল না। কৃষির কাজেও অবহেলা দেখা যায়। নদী বাঁধগুলি মেরামত করায় অবহেলা দেখা যায়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে রক্ষণশীলতা ও স্থবিরত্ব

  • (১) হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন পরীক্ষা করলে এই সভ্যতার পরবর্তী স্তরগুলিতে ক্রমিক অবনতির ছাপ স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এই ক্রমিক অবনতির ফলেই হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয় বলে মনে করা হয়।
  • (২) সিন্ধু নগরগুলিতে বৈদেশিক আক্রমণ হওয়ার আগেই এই অবক্ষয়ের সূচনা হয়। বৈদেশিক আক্রমণের পর হয়ত ক্ষয় দ্রুত হয়। কিন্তু অবক্ষয় ভেতর থেকেই হয় বলে অনেকে মনে করেন। এখন কথা হল হরপ্পা সংস্কৃতি কেন তার উচ্ছল প্রাণশক্তি হারিয়ে ক্ষয়ধরা, জরাজীর্ণ হয়ে যায় এবং ধ্বংসের কোলে ঢলে পড়ে?
  • (৩) পণ্ডিতদের মতে, হরপ্পা নগরের লোকেরা ছিল দারুণ রক্ষণশীল। নতুন কিছু তারা শিখতে চাইত না। যেমন চলছে তেমনই চলবে এই নিয়মে তারা বিশ্বাস করত। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে জানত না। অধিকন্তু যা ছিল তাকে ভালভাবে রক্ষা করতেও তারা শিখেনি।
  • (৪) আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে, সিন্ধু নদীর গতিপথ বদলালে তারা জলসেচের জন্যে খাল খননের কোনো চেষ্টা করেনি। অথচ সুমেরিয়ার খাল কেটে জলসেচ ব্যবস্থার কথা তারা জানত। বন্যার তাণ্ডবে মহেঞ্জোদারো বিপন্ন হলে তারা বন্যা রোধের জন্যে উপযুক্ত বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেনি। নগরগুলির পৌর শাসন ব্যবস্থাকে দৃঢ় ও আঁটোসাটো রাখার চেষ্টা পরবর্তী যুগে করা হয়নি। তাই রাস্তা আটকে বাড়ি তৈরির প্রবণতা বাড়ে।
  • (৫) সুতরাং হরপ্পা সভ্যতার অবক্ষয় হরপ্পা অধিবাসীদের পরিবর্তন-বিমুখতা ও সংস্কার-বিমুখতার ফলে ঘটে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও বৈদেশিক আক্রমণের তীব্রতার ফলে হরপ্পার নগরগুলি ধ্বংস হয় কিন্তু তার প্রাণশক্তি আগেই ক্ষয় পায়।

আর্য জাতির আক্রমনে হরপ্পা সভ্যতার পতন

  • (১) মাটিমার হুইলার প্রমুখ পণ্ডিতেরা মনে করেন যে, বহিরাগত আর্য জাতির আক্রমণে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ঋগ্বেদ -এ আর্য দেবতা ইন্দ্রকে “পুরন্দর” বা পুরের ধ্বংসকারী বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুর বলতে সিন্ধু নগর বুঝায় বলে হুইলার মনে করেন। ডি. ডি. কোশাম্বীও একই অভিমত দিয়েছেন।
  • (২) মহেঞ্জোদারোতে কুপের ধারে পড়ে থাকা মনুষ্য কঙ্কালগুলির খুলিতে ধারালো অস্ত্রের দ্বারা আঘাতের চিহ্ন এবং মৃতদেহগুলি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত থাকা ও মৃতদেহগুলিকে সংকার না করা এই ইঙ্গিত দেয় যে, আকস্মিক আক্রমণের ফলে এই সকল নগরবাসী নিহত হয়।
  • (৩) অনুমান করা হয় যে, সিন্ধু শহরে কোনো বহিরাগত জাতি আক্রমণ চালায়। এই বহিরাগত জাতিকে আর্য জাতি বলে মনে করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের কাল আনুমানিক ১৫০০-১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব। অপর দিকে আর্যদের ভারতে আগমনের কাল আনুমানিক ১৫০০-১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব।
  • (৪) সিন্ধু নগরগুলির পতন ও আর্য জাতির আগমনের সমকালীনতা আকস্মিক ঘটনা নয়। আর্য জাতি ছিল গ্রামীন জীবনে অভ্যস্ত, পশুপালন ছিল তাদের আদি জীবিকা। সিন্ধু উপত্যকার নগর সভ্যতাকে তারা পছন্দ করত না। এই কারণে তারা এই সভ্যতাকে ধ্বংস করে ফেলে।
  • (৫) আর্যদের হাতে ছিল লোহার অস্ত্র এবং যুদ্ধে তারা ঘোড়া বা রথ ব্যবহার করত। সিন্ধু অধিবাসীরা তামার অস্ত্র নিয়ে তাদের বাধা দিতে পারে নি। এজন্য সিন্ধু অধিবাসীরা সহজে পরাস্ত হয়।
  • (৬) আর্য দেবতা ইন্দ্রের অপর নাম হল পুরন্দর। হুইলারের মতে, সিন্ধু অঞ্চলের নগর বা পুরগুলি ধ্বংস করার ফলে হৃষ্ট আর্যরা তাদের দেবতার এই নাম দেয়।

হরপ্পা সভ্যতার পতনে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের বিরোধিতা

  • (১) অধুনা কোনো কোনো পণ্ডিত আর্য আক্রমণ মতের দুর্বলতা উল্লেখ করেন। মহেঞ্জোদারোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক আক্রমণ যুক্তিযুক্ত হলেও সিন্ধুর সকল শহরে তা প্রমাণিত হয় না।
  • (২) তাঁদের মতে, হরপ্পার যে স্তরে শত্রুর আক্রমণে নিহত মৃতদেহগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে তার সংস্কৃতি হরপ্পা বা সিন্ধু সংস্কৃতি হতে স্বতন্ত্র। কারণ এই স্তরের গৃহগুলির দেওয়াল তাড়াহুড়া করে যা তা জিনিষ দ্বারা তৈরি করা। এই স্তরে মৃৎপাত্রের ভেতর মৃতদেহ রেখে মৃতদেহের সমাধি দান একটি স্বতন্ত্র সভ্যতার নিদর্শন দেয়।
  • (৩) সিন্ধু সভ্যতার সকল শহরে আর্য জাতির আক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যায় না। তাছাড়া আর্য জাতিই এই আক্রমণ করে এমন কোনো বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই। অধিকাংশ প্রমাণ হল শব্দতাত্ত্বিক।
  • (৪) একটি সিলের ওপর বাঁটের ছেদাওয়ালা কুড়ালের চিত্র খোদাই দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন যে, আর্যরা এই রকম কুঠার ব্যবহার করত। কিন্তু এই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ খুবই দুর্বল। সুতরাং আর্য জাতির আক্রমণের প্রমাণ কালানুক্রম, শব্দতত্ত্ব প্রভৃতি থেকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়।
  • (৫) বাসামের মতে হরপ্পার নগরগুলির পতন ও আর্য জাতির তথাকথিত আক্রমণের মধ্যে যথেষ্ট সময়ের ব্যবধান ছিল। সুতরাং সিন্ধু সভ্যতা আর্যদের আক্রমণে ধ্বংস হয় একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।
  • (৬) অনেকে মনে করেন যে, বেলুচিস্থানের অধিবাসীরা হরপ্পার নগরগুলি আক্রমণ করে। ম্যাকে নামে প্রত্নতত্ত্ববিদ এই মত প্রচার করেন। আবার অনেকে গৃহযুদ্ধের কথা বলেন, যার ফলে মৃতদেহগুলি সৎকার করা যায় নি। তবে আক্রমণকারী সকলেই বৈদিক আর্য ছিল একথা নিশ্চিত বলা যায় না।

উপসংহার :- সুতরাং সিন্ধুর বিভিন্ন শহর ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন কারণ ছিল। তাছাড়া এই সভ্যতা অকস্মাৎ ধ্বংস পায় একথা বলা যায় না। ধীরে ধীরে এই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়।

(FAQ) হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সিন্ধু সভ্যতার পতনের প্রাকৃতিক কারণ কি ছিল?

ভূমিকম্প, বন্যা, বৃষ্টিপাত হ্রাস।

২. সিন্ধু সভ্যতা পতনের আভ্যন্তরীণ কারণ কি ছিল?

নাগরিক বোধের অভাব ও রক্ষণশীলতা।

৩. কোন বৈদেশিক জাতিরা আক্রমণে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে বলে মনে করা হয়?

আর্য জাতি।

Leave a Comment