ভারতের প্রধানমন্ত্রী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী -র নিয়োগকর্তা, কার্যকালের মেয়াদ, বেতন ও ভাতা, যোগ্যতা, লোকসভার নেতা হিসেবে ভূমিকা, মন্ত্রীসভার গঠনে ভূমিকা, কেবিনেটের নেতা হিসেবে ভূমিকা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা, নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব, জাতির নেতা হিসেবে দায়িত্বদায়িত্ব ও তার পদমর্যাদা সম্পর্কে জানবো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর যোগ্যতা, প্রধানমন্ত্রীর বেতন ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী

বাসভবন৭, লোক কল্যাণামার্গ, নতুন দিল্লি
নিয়োগকর্তারাষ্ট্রপতি
মেয়াদকালপাঁচ বছর
সর্বপ্রথমজওহরলাল নেহরু (১৫ আগস্ট ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ)
প্রধানমন্ত্রী

ভূমিকা :- ভারতের মন্ত্রী পরিষদ শাসিত শাসন ব্যবস্থায় সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শাসন ব্যবস্থায় সংসদ বা সংসদের নেতার ভূমিকাও পালন করেন।

ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা মূলত ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যবস্থার অনুরুপে সাজানো হয়ে থাকে। এই ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার ও নির্বাহী বিভাগের সভাপতি ও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রধান আনুষ্ঠানিক পদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা

এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের দাপ্তরিক প্রতিনিধিদের প্রধান (রাজা, রাষ্ট্রপতি, বা গভর্নর-জেনারেল) প্রধান আনুষ্ঠানিক পদে আসীন থাকেন যদিও তাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকে।

রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী

ভারত -এর প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা তথা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকর্তা

সংবিধান -এর ৭৫(১) নং ধারা অনুসারে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা গোষ্ঠীর নেতাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ

প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর ওই সময় তিনি লোকসভার নেতা বা নেতৃরূপে কাজ করে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীর বেতন ও ভাতা

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মাসে ২৮০০০০ হাজার টাকা বেতন পান। তাছাড়া তিনি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর যোগ্যতা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ব্যক্তির কিছু যোগ্যতা থাকা দরকার। এগুলি হল –

  • (ক) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে।
  • (খ) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে সংসদের রাজ্যসভা অথবা লোকসভা যে কোনো একটি কক্ষের সদস্য হতে হবে।
  • (গ) সংসদের সদস্য না হয়েও কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সেক্ষেত্রে ছ-মাসের মধ্যেই তাঁকে সংসদের যে কোনো কক্ষের সদস্য হয়ে আসতে হবে।
  • (ঘ) লোকসভার সদস্য হলে প্রধানমন্ত্রীর বয়স অন্তত ২৫ বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং রাজ্যসভার সদস্য হলে তাঁর বয়স ৩০ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
  • (ঙ) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার সময় অর্থ প্রাপ্তি হয় এমন কোনও সরকারি বা বেসরকারি অথবা সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন কোনও সংস্থায় তিনি কোনও পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী

ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতা নিহিত থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তার ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপ –

(১) ভারতের লোকসভার নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা

ভারত -এর প্রধানমন্ত্রী লোকসভার নেতা বা নেত্রী হিসাবে কাজ করেন।

  • (ক) লোকসভার অধিবেশন কখন আহূত হবে, কতদিন চলবে, কোন কোন বিষয়ের ওপর আলোচনা চলবে ইত্যাদি বিষয়ের উপর তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহনের অধিকারী।
  • (খ) প্রয়োজন মনে করলে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন এবং বিরোধী পক্ষের সঙ্গে যতখানি সম্ভব সদ্ভাব বজায় রাখেন, যাতে সভার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায়।
  • (গ) সভার শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রক্ষার ব্যাপারে তিনি স্পিকারকে সহযোগিতা করেন।

(২) মন্ত্রীসভার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখতে হয়।

  • (ক) নিজেদের নেতৃস্থানীয় লোকেরা যাতে মন্ত্রিসভায় স্থান পান।
  • (খ) মন্ত্রীসভার তপশিলি জাতি, উপজাতি, অনুন্নত সম্প্রদায়গুলির প্রতিনিধি যাতে স্থান লাভ করতে পারে।
  • (গ) ভবিষ্যতে দলকে নেতৃত্ব গ্রহনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিজ দলের তরুন অথচ উদীয়মান নেতাদের তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান দেন।
  • (ঘ) সমস্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্যগুলি যাতে মন্ত্রিসভায় তাদের প্রতিনিধি প্রেরন করতে পারে।

(৩) ক্যাবিনেটের নেতা প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে ভূমিকা

ক্যাবিনেটের সভায় প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্বকরেন। ক্যাবিনেটের নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। যেমন –

  • (ক) প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ করে এবং পদচ্যুতি করতে পারেন।
  • (খ) ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন এবং প্রয়োজনে পূণর্বণ্টনও করেন।
  • (গ) ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
  • (ঘ) ক্যাবিনেটের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে এবং ওই সব দপ্তরের সম্পাদিত কার্যাবলীর মধ্যে সংহতি তৈরি করেন।

(৪) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। দেশে পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। বিদেশি রাষ্ট্র প্রধানদের তিনি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

(৫) প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করে থাকেন। যেমন – বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, সুপ্রিমকোর্ট -এর বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার ইত্যাদি।

(৬) রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা প্রধানমন্ত্রী

মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখা তাঁর কর্তব্য। কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, সামরিক বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ, রাজ্যসভার সদস্য মনোনয়, প্রজাতন্ত্র দিবসে ক্ষেতাব বণ্টন ইত্যাদি বহুবিদ ব্যাপারে তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

(৭) লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী

সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে তাঁকে পার্লামেন্টের ভেতরে ও বাইরে সদা সর্বদা দলের মোর্চা অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়। দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার দায়িত্ব তাঁরই। দলের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আলাপ – আলোচনার মাধ্যমে তিনি সেই সব বিরোধের নিস্পত্তি করেন।

(৮) জাতির নেতা প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির নেতা, জনমানুষের অভিপ্রায় অনুধাবন ও জনমত উপলব্ধি করা এবং তা নিয়ন্ত্রন করা প্রধানমন্ত্রীর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব সত্যনিষ্ঠা, সাহসিকতা, জনপ্রিয়তা বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ, ব্যক্তিত্ব এমনকি তাঁর চলাফেরা, পোশাক পরিচ্ছদ পর্যন্ত জনমনে কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদা

ইংল্যান্ড -এর প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ও মর্যাদাকে কেন্দ্র করে দুটি পরস্পর বিরোধী মতের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অনেকের মতে প্রধানমন্ত্রী সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য, কারণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় মন্ত্রিসভা কিংবা ক্যাবিনেট কোনরূপ ভোটাভুটি হয়না। আবার অনেকের মতে প্রধানমন্ত্রী সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য নন, কারণ প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতে হয়।

উপসংহার :- ভারতের সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জোট সরকারের চল শুরু হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি তাঁর বিচক্ষণতা, সমন্বয়সাধনকারী নেতৃত্ব ও যােগ্য ব্যক্তিত্বের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভারতের প্রধানমন্ত্রী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নিযুক্ত হন?

সংসদীয় ব্যবস্থার রীতি হিসেবে সাধারণ নির্বাচনের পর লোকসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের সর্বসম্মতিক্রমে একজনকে নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। রাষ্ট্রপতি সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জন কারি দলের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন।

২. ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কে নিয়োগ করেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি।

৩. স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু।

৪. ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে?

নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী (পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী)।

Leave a Comment