পোল্যান্ড

স্বাধীন দেশ পোল্যান্ড প্রসঙ্গে সীমা, আয়তন ও জনসংখ্যা, ঐতিহাসিক দিক, পোলিশ প্রজাতন্ত্র ও উল্লেখযোগ্য শহর গুলি সম্পর্কে জানবো।

ইউরোপের স্বাধীন দেশ পোল্যান্ড প্রসঙ্গে পোল্যান্ডের সীমা, পোল্যান্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা, পোল্যান্ডের ঐতিহাসিক দিক, পোলিশ প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ডের উল্লেখযোগ্য শহর, পোল্যান্ডের রাজধানী, পোল্যান্ডের ভাষা, পোল্যান্ডের ধর্ম ও পোলিশ করিডোর।

পোল্যান্ড

দেশপোল্যান্ড
রাজধানীওয়ারশ
ভাষাপোলিশ
রাষ্ট্রপতিআন্দ্রেই দুদা
প্রধানমন্ত্রীমাতেউসজ মোরাউয়েকি
সদস্যইউরোপীয় ইউনিয়ন
পোল্যান্ড

ভূমিকা :- ইউরোপ মহাদেশের মধ্যস্থলের একটি রাষ্ট্র ও ঐতিহাসিক অঞ্চল হল পোল্যান্ড, সরকারিভাবে পোল্যান্ড প্রজাতন্ত্র। পোল্যান্ডের রাজধানীর নাম ওয়ারশ। ২০০৪ সালের ১লা মে থেকে পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।

পোল্যান্ডের সীমা

স্বাধীন দেশ পোল্যান্ডের পশ্চিমে জার্মানি, দক্ষিণে চেক প্রজাতন্ত্রস্লোভাকিয়া, পূর্বে ইউক্রেন ও বেলারুস, এবং উত্তরে বাল্টিক সাগর, লিথুয়ানিয়া ও রাশিয়া অবস্থিত। বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ডের সাথে ডেনমার্কের জলসীমান্ত রয়েছে।

পোল্যান্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা

স্বাধীন দেশ পোল্যান্ডের আয়তন ৩ লক্ষ বর্গকিমিরও বেশি। বর্তমানে পোল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি। এখানে প্রতি বর্গকিমিতে ১২৩ জন বসবাস করে।

পোল্যান্ডের ঐতিহাসিক দিক

  • (১) দেশটিতে প্রথম বসতি স্থাপন করে স্লাভিক উপজাতিরা। পিয়াস্ট রাজবংশের শাসনকালে দশম শতাব্দীতে রাজ্য হিসেবে পোল্যান্ড সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ব্যাপ্টিজম মতাবলম্বীরা ৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিতে আসে এবং এই সময়ই তাদের প্রচেষ্টায় খ্রিস্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
  • (২) ১৩৮৫ সালে পোলিশদের হাত ধরে পাশের রাজ্য লুথিয়ানায়ও খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তখন পোলিশ-লিথুনিয়ান ইউনিয়ন গঠিত হয়, যা ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে।
  • (৩) পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ্য পোল্যান্ড-লুথিয়ানার ওপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চেষ্টা করে। ষোড়শ শতকের শেষের দিক হল পোল্যান্ডের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ। এই সময়ই পোল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ, সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
  • (৪) ১৭৯১ সালের পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া, অস্ট্রিয়াপ্রাশিয়া পোল্যান্ডকে অধিকার করে নিজেদের মধ্যে পোল্যান্ড রাজ্যটি ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এর পর দেশটি আবার স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এ আবার পোল্যান্ডের ওপর আঘাত আসে।
  • (৫) নাৎসি জার্মানি ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড দখল করে নেয়। পোলিশরা ইংল্যান্ডফ্রান্স সাহায্য চাইলে সূত্রপাত ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ করে।
  • (৬) নাৎসি জার্মানি দ্বারা ওয়ারশের পতন হলে দেশটি আবার পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ হয়ে যায়। নির্বাসিত পোলিশ সরকার প্রথমে ফ্রান্স ও পরবর্তীতে লন্ডন থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।
  • (৭) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পোল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন এক রাজ্য কমিউনিস্ট পিপলস রিপাবলিক পোল্যান্ড হিসেবে পরিচিত হয়। ফলে পোল্যান্ড তার বহু বছরের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার সম্মিলিত ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হতে থাকে।

পোল্যান্ডে স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা

১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিতে প্রথম স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন পোলিশ নেতা লেচ ওয়ালিসা। মূলত তার নেতৃত্বেই পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে।

পোল্যান্ডের পোলিশ প্রজাতন্ত্র

১৯৮৯ সালে তৃতীয় পোলিশ প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পোল্যান্ড সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করে। প্রতিষ্ঠিত হয় উদার সংসদীয় গণতন্ত্র। ১৯৯৭ সালে দেশটির নতুন সংবিধান রচিত হয় এবং ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর সদস্য হয়।

পোল্যান্ডের উল্লেখযোগ্য শহর

পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহর গুলি হল –

(১) পজনান

পোল্যান্ডের পুরনো রাজধানী পজনান। এখানকার প্রাচীনকালের গোথিক স্থাপত্য দেখা যায়, যা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ছাগলের নানা স্থাপত্য। তাই পজনান শহরকে বলা হয়ে ‘দ্য সিটি অব হেড বাটিং গোটস’।

(২) রক্লো

ওডার নদীর তীরে অবস্থিত পশ্চিম পোল্যান্ডের এক বৃহত্তম শহর রক্লো। প্রাশিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি এবং বোহেমিয়াদের দ্বারা শাসিত হয়েছে এই শহর। এই শহরের প্রধান আকর্ষণ মার্কেট স্কয়ার, ওল্ড টাউন হল ও সেন্ট এলিজাবেথ চার্চ। এখানেই রয়েছে পোল্যান্ডের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা।

(৩) ওয়ারশ

পোল্যান্ডের রাজধানী শহর হল ওয়ারশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটির অনেকটাই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধের পর শহরটিকে আবার নতুনভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে শহরটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

(৪) তোরান

জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত তোরান শহর। শহরের টাউন হলটি ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত। ঐ সময়ের অনেক পুরাতন গির্জা, ক্যাথেড্রাল পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

(৫) ক্র্যাকো

পোল্যান্ডে ওয়াওয়েল পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ক্র্যাকো শহরটি। ক্র্যাকোকে ধনীদের শহর বলা হয়ে থাকে। এটি পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। পুরাতন শহরের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্র্যাকো।

(৬) ম্যালবর্ক

পোল্যান্ডের মধ্যযুগের নিদর্শনের এক শহর ম্যালবর্ক। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে টিউটনিক সাম্রাজ্য এখানে তাদের সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করে। মধ্যযুগীয় নানা নিদর্শনের সাক্ষী এই ম্যালবর্ক। এখানে রয়েছে ইউরোপের বৃহত্তম গোথিক দুর্গ, যার নামকরণ করা হয়েছে ভার্জিন মেরির নামে।

উপসংহার :- ওয়ারশ শহরের ওল্ড টাউন স্কোয়ারের মাঝখানে আছে ঢাল-তলোয়ার হাতে মারমুখী মৎস্যকন্যার এক বিশাল স্থাপত্য। এই স্থাপত্যের কারণে ওয়ারশকে বলা হয় ‘দ্য সিটি অফ মারমেইড’। এখানেই রয়েছে কোপারনিকাস বিজ্ঞান কেন্দ্র।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “পোল্যান্ড” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) স্বাধীন দেশ পোল্যান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পোল্যান্ডের রাজধানীর নাম কি?

ওয়ারশ।

২. পোল্যান্ডের প্রধান ভাষা কি?

পোলিশ।

৩. পোল্যান্ডের বর্তমান রাষ্ট্রপতি কে?

আন্দ্রেই দুদা।

৪. পোল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে?

মাতেউসজ মোরাউয়েকি।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি

Leave a Comment