জাতিসংঘের সংগঠন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের সংগঠন প্রসঙ্গে সদর দপ্তর, সাধারণ সভা, লিগ পরিষদ, সচিবালয়, আন্তর্জাতিক বিচারালয়, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থা সম্পর্কে জানবো।

১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের সংগঠন

ঐতিহাসিক ঘটনাজাতিসংঘের সংগঠন
ঘটনাজাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা
প্রতিষ্ঠা দিবস২৮ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ
প্রথম অধিবেশন১০ জানুয়ারি, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ
জনকউড্রো উইলসন
প্রেক্ষাপটপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ
জাতিসংঘের সংগঠন

ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসকাণ্ড ও নারকীয় হত্যালীলা মানুষের মনে প্রবল আতঙ্ক ও হতাশার সৃষ্টি করে। পৃথিবীর সর্বত্রই শান্তির জন্য প্রবল ব্যাকুলতা দেখা দেয় এবং এই ব্যাকুলতা থেকেই জন্ম নেয় ‘লিগ অব নেশনস্’ বা ‘জাতিসঙ্ঘ’।

জাতিসংঘের সংগঠন

একটি সাধারণ সভা, একটি পরিষদ বা কাউন্সিল ও একটি সচিবালয় নিয়ে জাতিসঙ্ঘ গঠিত। তাছাড়া, এর অধীনে একটি আন্তর্জাতিক বিচারালয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (International Labour Organisation) ছিল। এছাড়া আরও কিছু উন্নয়নমূলক সংস্থা এর অধীনে ছিল।

জাতিসংঘের সদর দপ্তর

জাতিসঙ্ঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর স্থাপিত হয় জেনেভা শহরে।

জাতিসংঘের সাধারণ সভা

লিগের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে সাধারণ সভা গঠিত হত। এর বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) জাতিসংঘের সাধারণ সভার ভোট সংখ্যা

প্রত্যেক সদস্য-রাষ্ট্র সাধারণ সভায় তিনজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারত, কিন্তু ভোট ছিল মাত্র একটি। এই সভা ছিল লিগের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা।

(২) জাতিসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশন ও আলোচনা

বছরে অন্তত একবার এই সভার অধিবেশন বসত এবং এখানে বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সমস্যা, আন্তর্জাতিক বিরোধ, সংখ্যালঘু সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হত।

(৩) জাতিসংঘের সাধারণ সভার সাধারণ সম্পাদক

লিগের সাধারণ সম্পাদক এই সভার আলোচ্যসূচি স্থির করতেন। কোনও নতুন রাষ্ট্রকে লিগের সদস্য হতে হলে এই সভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগত।

জাতিসংঘের লিগ পরিষদ

লিগের কাজকর্ম পরিচালনা করার মূল দায়িত্ব ছিল লিগ পরিষদের হাতে। এর বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) জাতিসংঘের লিগ পরিষদের গঠন

৫ জন স্থায়ী ও ৪ জন অস্থায়ী, অর্থাৎ মোট ৯ জন সদস্য নিয়ে এই সভা গঠিত হয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালিজাপান ছিল এর স্থায়ী সদস্য। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী সদস্যরূপে বিবেচিত হয়েও লিগে যোগদান করে নি। পরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত হতেন।

(২) জাতিসংঘের লিগ পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি

পরবর্তীকালে লিগ পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা ৬ এবং অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ৯ অর্থাৎ মোট সদস্য হয় ১৫ জন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া নতুন স্থায়ী সদস্য হিসেবে লিগে যোগ দেয়।

(৩) জাতিসংঘের লিগ পরিষদের অধিবেশন ও আলোচনা

বছরে অন্তত তিনবার এই পরিষদের অধিবেশন বসত। আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা ও তার সমাধান, যুদ্ধ বন্ধের উপায় নির্ধারণ, বিশেষ কোনও সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান প্রভৃতি এই পরিষদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে লিগ পরিষদকে ঐকমত্য হতে হত।

জাতিসংঘের সচিবালয়

লিগের কার্যাবলী পরিচালনা এবং সাধারণ সভা ও লিগ পরিষদের সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করার জন্য একজন মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের অধীনে লিগের একটি সচিবালয় বা দপ্তর ছিল। সাধারণ সভা ও লিগের বিবেচনার জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করা, কোনও রাষ্ট্রের অভিযোগ থাকলে তা নথিভুক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজও সচিবালয়কে করতে হত। লিগের প্রথম মহাসচিব ছিলেন স্যার এরিক ড্রমন্ড।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারালয়

আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির ব্যাখ্যা প্রভৃতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিচারালয় (P.C. I.J) ছিল। এর প্রধান কার্যালয় ছিল নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের রাজধানী হেগ নগরীতে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত ১৫ জন বিচারক ৯ বছরের জন্য নিযুক্ত হয়ে এই আদালতের বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। এই আদালতের সিদ্ধান্ত কারও কাছে বাধ্যতামূলক ছিল না।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন এবং তারা যাতে শোষিত না হয় – এইসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (ILO) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ছিল জেনেভা শহরে। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রই এই সংস্থার সভ্য ছিল।

জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা

এইসব সংস্থা ব্যতীত লিগের অধীনে আরও কিছু সংস্থা ছিল। এগুলির মধ্যে ‘স্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক কমিশন’ ও ‘সংখ্যালঘু সমিতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও, সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগের জন্য আরও কয়েকটি কমিটি গঠিত হয়।

উপসংহার :- লিগই প্রথম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির ধারণাটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। এটিই তার শ্রেষ্ঠ অবদান। এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর পর প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ

(FAQ) জাতিসংঘের সংগঠন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লিগ অব নেশনস বা জাতিসংঘ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৯১৯ সালে।

২. জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয় কবে?

২৮ এপ্রিল।

৩. জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় কখন?

১০ জানুয়ারি, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে।

৪. জাতিসংঘের জনক কাকে বলা হয়?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।

Leave a Comment