নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস দেশটি প্রসঙ্গে অবস্থান, সীমা, আয়তন, জনসংখ্যা, রাজধানী ও বৃহত্তম শহর, নামকরণ, ভৌগোলিক দিক, ঐতিহাসিক দিক, রাজবংশের শাসন, উপনিবেশ স্থাপন, দুই বিশ্বযুদ্ধ, অর্থনৈতিক দিক, রাজনৈতিক দিক, প্রশাসনিক অঞ্চল, জাতি, ধর্ম ও দেশটির বিশেষ দিক সম্পর্কে জানবো।

উত্তর পশ্চিম ইউরোপের স্বাধীন রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান, নেদারল্যান্ডসের সীমা, হল্যান্ডের বর্তমান নাম নেদারল্যান্ডস, নেদারল্যান্ডসের রাজধানী, নেদারল্যান্ডসের ইতিহাস, নেদারল্যান্ডসের ধর্ম, নেদারল্যান্ডসের আয়তন, নেদারল্যান্ডসের লোক ওলন্দাজ বা ডাচ, নেদারল্যান্ডসের ভাষা, নেদারল্যান্ডসের বৃহত্তম শহর ও নগরী

হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডস

ঐতিহাসিক স্থাননেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড
মহাদেশইউরোপ
রাজধানীআমস্টারডাম
সরকারি ভাষাওলোন্দাজ
মুদ্রাইউরো
প্রধানমন্ত্রীমার্ক রুট্টে
দর্শনীয় বিষয়পোল্ডার ভূমি
নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড

ভূমিকা :- উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র হল নেদারল্যান্ডস। দেশটিকে হল্যান্ড নামে ডাকা হলেও হল্যান্ড মূলত নেদারল্যান্ডসের একটি ঐতিহাসিক অঙ্গরাজ্যের নাম। ক্যারিবীয় নেদারল্যান্ডসের তিনটি দ্বীপকে নিয়ে এটি নেদারল্যান্ডস রাজ্য গঠন করেছে।

নেদারল্যান্ডসের সীমা

দেশটির পূর্বে জার্মানি ও দক্ষিণে বেলজিয়ামের স্থলসীমান্ত আছে। দেশটি উত্তর সাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর পশ্চিমে বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্যের সাথে ও পূর্বে জার্মানির সাথে দেশটির সামুদ্রিক সীমান্ত আছে।

নেদারল্যান্ডসের আয়তন

স্বাধীন রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের আয়তন ৪২ হাজার ৬৭৯ বর্গকিমি। দেশটির বর্তমান আয়তনের প্রায় ১৭ ভাগ সাগর ও হ্রদ থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলিকে স্থানীয় ওলন্দাজ ভাষায় পোল্ডার বলা হয়।

নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যা

বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি। নেদারল্যান্ডস ইউরোপের ১১তম বৃহৎ জনসংখ্যা সমৃদ্ধ দেশ। এখানে জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে ৪১৫ জন। বৃহৎ জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশগুলির মধ্যে কেবল বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের জনঘনত্ব হল্যান্ডের থেকে বেশি।

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর

স্বাধীন রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের রাজধানী শহর হল আমস্টারডাম। এছাড়া রটারডাম, হেগ, উট্রেখট ও আইন্ডহোফেন চারটি বৃহৎ শহর।

নেদারল্যান্ডসের নামকরণ

‘নেদারল্যান্ডস’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘নিম্নভূমি’। এই নামকরণটি যথার্থ। কারণ, দেশটির মাত্র ৫০ ভাগ ভূখণ্ড সমুদ্রসমতলের ১ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশের বেশির ভাগ ভূখণ্ডই সমুদ্রসমতলের নিচে অবস্থিত। ভূমি পুনর্দখল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ভূখণ্ড সৃষ্টি করা হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের ভৌগোলিক দিক

স্বাধীন রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলের বেশিরভাগই সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত‌। এখানে খুব স্বল্পসংখ্যক উঁচু পাহাড় পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিমভাগ নিম্নভূমি, যা মূলত রাইন, মোজ ও শেল্ডে নদী তিনটির সম্মিলিত ব-দ্বীপ। জুইডারজিতে পোল্ডার আছে। উপকূলীয় এলাকাগুলি সম্পূর্ণ সাগরের নিচে এবং এগুলিকে চর ও কৃত্রিম সমুদ্রবাঁধের মাধ্যমে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা রয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের ঐতিহাসিক দিক

  • (১) প্রাচীনকালে নেদারল্যান্ডসে কেল্টীয় ও জার্মানীয় গোত্রের লোকেরা বাস করত। রোমানরা অঞ্চলটি জয় করার পর এখানে শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে জার্মান গোত্রদের আক্রমণে ও সমুদ্রের করালগ্রাসে রোমানদের শক্তি হ্রাস পায়। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম শতকে এক জার্মানীয় আক্রমণ রোমান শক্তির অবসান ঘটায়।
  • (২) প্রথমে মেরোভিঞ্জিয় ও পরে সপ্তম শতকে ক্যারোলিঞ্জীয় রাজবংশ এখানে শাসন করে। ক্যারোলিঞ্জীয় রাজারা এখানকার জনগণকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেন। ৮১৪ সালে রাজা শার্লম্যান বা মহান চার্লসের মৃত্যুর পরে এটি মধ্যযুগীয় লোথারিঞ্জীয় রাজ্যের অন্তর্গত হয়।
  • (৩) এখানে রাজকীয় গির্জা নামের একটি ধর্মনিরপেক্ষ গির্জার অনুসারী সম্প্রদায় গড়ে ওঠে, যারা পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য -এর অধীনস্থ ছিল না।

নেদারল্যান্ডসে ভূমি পুনরুদ্ধারকরণ প্রক্রিয়া

দ্বাদশ শতকের শুরু থেকে সমুদ্রবাঁধ বা ডাইক নির্মাণ শুরু হয় এবং বড় আকারে সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

নেদারল্যান্ডসে রাজবংশের শাসন

চতুর্দশ শতকের শেষদিকে বুর্গোইনের ডিউকেরা এবং তার পরে ষোড়শ শতকের শুরুতে স্পেন -এর হ্যাপসবার্গ রাজবংশ দেশটি শাসন করে।

স্পেনের কাছ থেকে নেদারল্যান্ডসের স্বাধীনতা ঘোষণা

১৫৮১ সালে ক্যালভিনবাদীদের নেতৃত্বে উত্তরের ৭টি প্রদেশ স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৬৪৮ সালে ত্রিশ বছরের যুদ্ধের পর স্পেন ওলন্দাজদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।

নেদারল্যান্ডসের উপনিবেশ স্থাপন

ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এশিয়াতে বিশেষ করে ভারত -এ উপনিবেশ স্থাপন করে এবং দেশের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে থাকে।

নেপোলিয়নের অধীনে নেদারল্যান্ডস

অষ্টাদশ শতকে ওলন্দাজদের সামুদ্রিক শক্তি হ্রাস পায়। ফরাসি বিপ্লবকালে যুদ্ধ সমূহের সময় ফরাসিরা অঞ্চলটি জয় করে। ১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন -এর অধীনে এটি হল্যান্ড রাজ্য নামে পরিচিত হয়।

দুই বিশ্বযুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের ভূমিকা

হল্যান্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এ নিরপেক্ষতা ঘোষণা করলেও জার্মানি অঞ্চলটি দখল করে। যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে দেশটি নেদারল্যান্ডস ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) এবং ১৯৬২ সালে নেদারল্যান্ডস নতুন গিনির (বর্তমান ইরিয়ান জায়া) উপর কর্তৃত্ব হারায়। ১৯৪৯ সালে দেশটি নেটোতে যোগদান করে।

নেদারল্যান্ডসের অর্থনৈতিক দিক

  • (১) নেদারল্যান্ডসে একটি মিশ্র অর্থনীতি, নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার অর্থনীতি বিদ্যমান। ফ্লান্ডার্স অঞ্চলটি বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে। মৎস্যশিকার ও জাহাজনির্মাণে ওলন্দাজদের জুড়ি ছিল না। নেদারল্যান্ডসের মুদ্রা ইউরো।
  • (২) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পরে নেদারল্যান্ডস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশ। মাটির উর্বরতা, মৃদু জলবায়ু এবং অত্যন্ত উন্নত নিবিড় কৃষিপদ্ধতির কারণে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। রটারডাম বন্দরটি ইউরোপের বৃহত্তম এবং এশিয়ার বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর

নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক দিক

১৮১৫ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কায়েম ছিল। ১৮৪৮ সাল থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং একটি বিকেন্দ্রীকৃত ঐক্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোতে পরিচালিত হয়। নেদারল্যান্ডসের রাজা রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান। হেগ শহরে দেশের দ্বিকাক্ষিক আইনসভা, মন্ত্রিসভা ও সর্বোচ্চ আদালত অবস্থিত।

নেদারল্যান্ডসের প্রশাসনিক অঞ্চল

নেদারল্যান্ডস ১২ টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলি প্রভিয়েন্স নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি প্রভিয়েন্স কমিশনার অব দ্য কুইন বা কমিস্যারিস ভ্যান দ্য কোনিগিন নামে একজন গর্ভনর দ্বারা শাসিত হয়। প্রতিটি প্রভিয়েন্স ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিউনিসিপালিটিতে বিভক্ত।

নেদারল্যান্ডসের জাতি ও ধর্ম

নেদারল্যান্ডসের সিংহভাগ জনগণ ওলন্দাজ জাতিভুক্ত। ওলন্দাজ এখানকার একমাত্র সরকারী ভাষা। তবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। খ্রিস্টধর্ম এখানকার মূল ধর্ম। তবে ইসলাম এখানকার বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্ম।

সংস্থার সদস্য নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোজোন, জি ১০, ন্যাটো, ওইসিডি এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে অন্যতম।

নেদারল্যান্ডসে বিভিন্ন সংস্থার অবস্থান

নেদারল্যান্ডসে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা, জাতিপুঞ্জ -এর আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপরাধ অনুসরণ সংস্থা, জাতিসংঘ আটক ইউনিট অবস্থিত।

উদার জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস

একটি উদার জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস। এখানে সমস্ত নাগরিককে বিনামূল্যে বা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, সরকারী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা এবং পরিবহন কাঠামো ব্যবহারের সুবিধাসহ আরও বহু ধরনের সামাজিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

নেদারল্যান্ডস দেশটির বিশেষ দিক

নেদারল্যান্ডস ১৮৭০ সালে মৃত্যুদণ্ড বেআইনি ঘোষণা করে এবং ১৯১৭ সালে নারীদের ভোটদানের ক্ষমতা প্রদান করে। ২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে নেদারল্যান্ডস সমকামীদের বিবাহ আইনসিদ্ধ করে।

উপসংহার :- সপ্তদশ শতকে ওলন্দাজ সভ্যতার স্বর্ণযুগে স্পিনোজার বেনেডিক্ট এবং রেনে দেকার্ত বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা উপভোগ করেন এবং চিত্রশিল্পী রেমব্রান্ট ও ইয়োহানেস ফারমিয়ার তাদের সর্বোৎকৃষ্ট চিত্রকর্ম এই সময় সৃষ্টি করেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “নেদারল্যান্ডস” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) নেদারল্যান্ড বা হল্যান্ড দেশটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. হল্যান্ডের রাজধানীর নাম কি?

আমস্টারডাম।

২. হল্যান্ডের সরকারি ভাষা কি?

ওলোন্দাজ।

৩. হল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে?

মার্ক রুট্টে।

৪. পোল্ডার ভূমি কোন দেশে দেখা যায়?

হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি

Leave a Comment