আজ নেফারতিতি -র জন্ম, পরিচিতি, দক্ষতা, রাজত্ব, প্রভাব, শাসন পরিচালনা, কৃতিত্ব ও অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কে জানবো।
প্রাচীন মিশরের উল্লেখযোগ্য নারী নেফারতিতি প্রসঙ্গে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর, নেফারতিতির পূর্বে মিশরের বিশৃঙ্খল অবস্থা, নেফারতিতির আবির্ভাব, রানী নেফারতিতির পূর্ব পরিচিতি, রানী নেফারতিতির ফ্যারাও পদ গ্ৰহণ, প্রভাবশালী নারী নেফারতিতি, নেফারতিতির শাসন পরিচালনা, নেফারতিতির রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিবর্তন, রানী নেফারতিতির অন্তর্ধান রহস্য, নেফারতিতির নতুন নাম গ্ৰহণ, ছদ্মবেশে রানী নেফারতিতির দেশ শাসন, নেফারতিতি নামের অর্থ ও তার কৃতিত্ব।
রাণী নেফারতিতি
ঐতিহাসিক চরিত্র | নেফারতিতি |
পরিচিতি | মিশর -এর ফ্যারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ -এর রানী |
জন্ম | আনুমানিক ১৩৭০ খ্রীষ্টপূর্ব |
শাসন পরিচালনা | ১৩৫০-১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্ব |
অবদান | আখেতাতেন শহর নির্মাণ |
মৃত্যু | আনুমানিক ১৩৩০ খ্রিস্টপূর্ব |
ভূমিকা :- প্রাচীন কালের বিভিন্ন সভ্যতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নারীদের অবস্থা পুরুষের তুলনায় হীন ছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা পুরুষের অধীনতা স্বীকার করে পারিবারিক ও গার্হস্থ্যকর্মে নিয়োজিত থেকে জীবন অতিবাহিত করত।
ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর বিশেষ কোনো অধিকার ছিল না। তবে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তও খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য নারী
প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি এবং ক্লিওপেট্রা; ভারত -এর সুলতান রাজিয়া, রাণী দুর্গাবতী, নূরজাহান প্রমুখ নারীর কথা জানা যায়, যাঁরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।
নেফারতিতির অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর
নারী হয়েও তাঁরা রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিষয়ে যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তা এককথায় অসাধারণ।
ফ্যারাও আমেনহোটেপ
চতুর্থ আমেনহোটেপ ছিলেন আজ থেকে প্রায় ৩৩০০ বছর আগের একজন মিশরীয় ফ্যারাও। তাঁর আমলে মিশরে দেবতার আরাধনার প্রচলন ছিল। তখন আমুন ছিলেন মিশরের প্রধান দেবতা। কি
আমেনহোটেপ কর্তৃক একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা
আমেনহোটেপ বহু দেবদেবীর স্থলে মিশরীয় সমাজে একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি দেবতা আমুন-এর পরিবর্তে সূর্যদেবতা ‘আটেন’ (Aten)-এর উপাসনার প্রচলন করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন আখেনাটেন (Akhenaten) অর্থাৎ ঈশ্বর আটেনের পুত্র।
নেফারতিতির পূর্বে মিশরে বিশৃঙ্খল শাসন ব্যবস্থা
বলপূর্বক মিশরের প্রাচীন ধর্মীয় ঐতিহ্য পরিবর্তনের ফলে দেশে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং প্রশাসন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
নেফারতিতির আবির্ভাব
মিশরের এই দুর্যোগ সামাল দিয়ে যিনি সর্বাধিক পরিচয় দেন তিনি আখেনাটেনের পত্নী নেফারতিতি।
রাণী নেফারতিতির পূর্ব পরিচয়
নেফারতিতি ছিলেন আখেনাটেনের অন্যতম পত্নী। তাঁর পূর্ব পরিচয় সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
- (১) অনুমান করা হয় যে, নেফারতিতি ছিলেন টেয়া ও তৃতীয় আমেনহোটেপের কন্যা।
- (২) কেউ কেউ তাঁকে মিশরের ফারাও আয় (Ay)-এর কন্যা বলেও মনে করে থাকে।
- (৩) ‘নেফারতিতি’ শব্দের অর্থ হল আগন্তুক সুন্দরী নারী। এই অর্থের দিক থেকে অনেকে নেফারতিতিকে বিদেশি বংশোদ্ভূত বলে মনে করেন।
- (৪) আবার কারও কারও মতে, তিনি ছিলেন উত্তর সিরিয়ার মিট্টানি রাজ্যের রাজকুমারী।
নেফারতিতির ফ্যারাও পদ গ্ৰহণ
স্বামীর মৃত্যুর পর নেফারতিতি যে ফ্যারাও পদ লাভ করেছিলেন তা অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্বীকার করেন।
প্রভাবশালী নারী নেফারতিতি
- (১) নেফারতিতি তাঁর স্বামী আখেনাটেনের সাহচর্যে থেকে মিশরের প্রশাসন, রাজনীতি ও ধর্মীয় বিষয়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন।
- (২) প্রশাসনিক কাজে তিনি সর্বদা স্বামীর পাশে অবস্থান করে একপ্রকার ফ্যারাও-এর প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হন।
- (৩) সমকালীন বিভিন্ন ভাস্কর্যে নেফারতিতিকে ফ্যারাও-এর পাশে একজন শক্তিশালী ও কর্তৃত্বপরায়ণা নারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
- (৪) বিভিন্ন ভাষ্কর্যে দেখা যায় নেফারতিতি দেবতা আটেনের পুজো পরিচালনা করছেন, রথ চালাচ্ছেন, শত্রুকে প্রতিহত করছেন ইত্যাদি।
নেফারতিতির শাসন পরিচালনা
নেফারতিতি স্বামী আখেনাটেনের সহকারী শাসিকা হিসেবে ১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশরের শাসন পরিচালনা করেন। এই কালপর্বে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনে তিনি স্বামীর সাফল্যের অংশীদার ছিলেন।
নেফারতিতির রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিবর্তন
প্রশাসনে স্বামীর সঙ্গে সহাবস্থান করে নেফারতিতি মিশরের ধর্মীয় জীবন, রীতিনীতি, রাজকীয় পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রাণী নেফারতিতির কন্যার বিবাহ
পুত্রসন্তানহীনা নেফারতিতি ছয় কন্যার জননী ছিলেন। আখেনাটেনের অপর স্ত্রীর গর্ভজাত টুট (পরবর্তীকালে মিশরের ফ্যারাও টুটেনখামেন)-এর সঙ্গে নিজের তৃতীয় কন্যা আঁখেসিনপাটেন (Ankhesen paaten) -এর বিবাহ দিয়ে নেফারতিতি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত করে রাখেন।
নেফারতিতির অন্তর্ধান রহস্য
স্বামী আখেনাটেনের রাজত্বকালের শেষদিকে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ইতিহাসে আর নেফারতিতির নাম পাওয়া যায় না। এই সময় নেফারতিতির মৃত্যু হয় নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অন্তর্ধান পরবর্তী ঘটনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন অভিমত দিয়ে থাকেন।
(১) নেফারতিতির নতুন নাম গ্রহণ
কেউ কেউ মনে করেন যে, এই অন্তর্ধান পর্বে নেফারতিতি নেফারনেফ্রটেন (Nefernefruaten) নাম গ্রহণ করে তাঁর স্বামীর সহ-শাসিকা হিসেবে প্রশাসন পরিচালনা করেন।
(২) ছদ্মবেশে নেফারতিতির দেশ শাসন
আখেনাটেনের পরবর্তীকালে মিশরের সিংহাসন লাভ করেন স্মেঙ্খকারে নামে একজন ফ্যারাও। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এই স্মেঙ্খকারে হল নেফারতিতিরই অপর নাম।
(৩) নেফারতিতি কর্তৃক স্বাধীনভাবে মিশরের শাসন পরিচালনা
নেফারতিতির মূর্তিতে তাঁকে রাজকীয় পোশাকে সজ্জিত হয়ে বিদেশি বন্দিদের শাস্তিদান করতে দেখা যায়। এজন্য কেউ কেউ মনে করেন যে, ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তীকালে নেফারতিতি স্বাধীনভাবে মিশরের শাসন পরিচালনা করেন।
(৪) রাণী নেফারতিতির সাধারণ জীবনযাপন
কেউ কেউ আবার মনে করেন যে, অন্তর্ধান-পরবর্তী বাকি জীবন নেফারতিতি উত্তর প্রাসাদে সাধারণ জীবন যাপন করেন।
নেফারতিতির কৃতিত্ব
আখেনাটেন দেবতা আটেনের উদ্দেশ্যে যে আখেতাতেন শহর (বর্তমান মিশরের আমরানা শহর) প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন তা সমাপ্ত হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এরপর নেফেরতিতি শাসনকার্যে বিভিন্ন কৃতিত্বের পরিচয় দেন। যেমন –
- (১) মিশরের সিংহাসনে বসে নেফারতিতি আখেতাতেন শহরের নির্মাণকার্যে গতি আনেন।
- (২) মিশরের বিশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে তিনি প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনেন।
- (৩) শাসনব্যবস্থা ও ধর্মীয় বিষয়ে তিনি বিভিন্ন যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।
উপসংহার :- নেফারতিতির শাসনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় তাঁর ঐতিহাসিক মূর্তি ও চিত্রের সংখ্যা থেকে, যা ছিল তাঁর স্বামীর মূর্তি ও চিত্রের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “নেফারতিতি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) রাণী নেফারতিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আগন্তুক সুন্দরী নারী।
আনুমানিক ১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্ব।
চতুর্থ আমেনহোটেপ বা আখেনাটেন।