নসরৎ শাহ

সুলতান নসরৎ শাহ প্রসঙ্গে সিংহাসনে আরোহন, ত্রিহুত জয়, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বাবরের সাথে সন্ধি, বাহাদুর শাহের সঙ্গে যোগাযোগ, ত্রিপুরার সাথে সংঘর্ষ, পর্তুগিজদের সাথে সংঘর্ষ ও রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা সম্পর্কে জানবো।

সুলতান নসরৎ শাহ

সুলতাননসরৎ শাহ
রাজত্বকাল১৫১৯-১৫৩২ খ্রি:
বংশহুসেন শাহী বংশ
প্রতিষ্ঠাতাআলাউদ্দিন হুসেন শাহ
সুলতান নসরৎ শাহ

ভূমিকা :- নসরৎ শাহ ছিলেন পিতার উপযুক্ত পুত্র। পিতার মতোই নসরৎ শাহের ছিল মানবিক গুণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনিও মধ্যযুগীয় বঙ্গদেশের জাতীয়তার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। বঙ্গদেশের রাজ্যসীমা তিনি আরও বাড়িয়ে তুলেছিলেন।

সিংহাসনে আরোহণ

রিয়াজ-উস-সালাতিন -এর মতে, হুসেন শাহের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নসরৎ শাহ ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশের সিংহাসনে আরোহণ করেন।

ত্রিহুত জয়

নসরৎ শাহের আমলেই উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। গুলাম হুসেন সেলিমের লেখা থেকে জানা যায় যে, তিনি ত্রিহুত জয় করেছিলেন। সেখানকার শাসনভার তাঁর দুই শ্যালকের হস্তে অর্পণ করেন।

নানা সংগ্ৰামে অসাফল্য

  • (১) নসরৎ পিতার উত্তরাধিকারী হিসাবে কামতা ও কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করেন এবং ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকায় অহোম রাজ্য আক্রমণ করেন।
  • (২) কিন্তু দীর্ঘকাল আসামের নানাস্থানে সংগ্রাম চালিয়েও তিনি সাফল্যলাভ করতে পারেন নি। তাঁর এই অসাফল্যের জন্য ড. হবিবুল্লাহ্ বঙ্গদেশের নৌশক্তির দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন।

রাজনৈতিক বিচক্ষণতা

  • (১) নসরৎ শাহের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায় ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে। কারণ, ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল নায়ক বাবর দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লিতে মুঘল রাজত্বের সূচনা করেন।
  • (২) বাবরের হাতে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের রণক্ষেত্রে আফগানশক্তির পতন হলে, বিহারের আফগান বংশীয় লোহানিদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে নসরৎ শাহ ভারতের পূর্বাঞ্চলের স্বাতন্ত্র্যরক্ষার চেষ্টা করেন।

বাবরের সাথে সন্ধি

উত্তর ভারতে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর ক্ষমতালাভ করলে পরাজিত আফগানরা পূর্বদিকে সরে এসে তাঁর অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, এই আশঙ্কায় বিচক্ষণ নসরৎ বাবরের সঙ্গে সন্ধি করেন।

বাহাদুর শাহের সঙ্গে যোগাযোগ

১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বাবরের মৃত্যুর পর পুনরায় নসরৎ শাহ পূর্বাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উদ্যোগী হন। তাকে শাস্তি দেবার উদ্দেশ্যে বাবরের পুত্র হুমায়ুনের উদ্যোগ দেখে নসরৎ শাহ গুজরাটের বাহাদুর শাহের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এতে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়। হুমায়ুন আপাতত বঙ্গদেশ অভিযান স্থগিত রাখেন।

হাবিবুল্লাহর অভিমত

ড. হাবিবুল্লাহ বলেছেন, ‘Nusrat’s political and military defeat was complete but thanks to his diplomacy, Bengal was still at peace with the Mughals.”

ত্রিপুরার সাথে সংঘর্ষ

তিনি ত্রিপুরার রাজার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই সংঘর্ষে কে জয়লাভ করেছিল, তা সঠিকভাবে বলা যায় না।

পর্তুগীজদের সাথে সংঘর্ষ

নসরৎ শাহের সঙ্গে পর্তুগিজদের সংঘর্ষের পরিচয় পাওয়া যায়। পর্তুগিজরা তাঁর রাজত্বকালে তেমন কিছু সুবিধা করতে পারে নি।

রাজ্যের শান্তি-সমৃদ্ধি রক্ষা

নসরৎ শাহের রাজ্য প্রায় সমগ্র বঙ্গদেশ, ত্রিহুত ও বিহারের অধিকাংশ এবং উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। তিনিও তাঁর রাজ্যের শান্তি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছিলেন।

উপসংহার :- রিয়াজ-উস-সালাতিন -এর বর্ণনা ও বুকাননের মতে, ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে একজন প্রাসাদরক্ষী খোজা আততায়ীর হাতে নসরৎ শাহ নিহত হন।

(FAQ) সুলতান নসরৎ শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. নসরৎ শাহের রাজত্বকাল কত?

১৫১৯-১৫৩২ খ্রিস্টাব্দ।

২. নসরৎ শাহের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন?

বাবর।

৩. নসরৎ শাহ বাবরের সাথে সন্ধি করে কখন?

১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে।

৪. নসরৎ শাহ অহোম রাজ্য আক্রমণ করে কখন?

১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment