নানা ফড়নবীশ

মারাঠা নেতা নানা ফড়নবীশ -এর জন্ম, প্রথম জীবন, প্রধানমন্ত্রী, পুনেতে পলায়ণ, যুদ্ধে দক্ষতা প্রদর্শন, টিপু সুলতানকে দুর্বল করা, চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে নিরপেক্ষতা, টিপুর মৃত্যুতে মন্তব্য, দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ, বারো ভাইয়ের সমিতি গঠন, চূড়ান্ত কর্তৃত্ব, মহীশূর ও হায়দ্রাবাদের একাংশ দখল, দক্ষ কূটনীতিক, কর্তৃত্বের অবসান, মৃত্যু ও তার মূল্যায়ণ সম্পর্কে জানবো।

মারাঠা সর্দার নানা ফড়নবিশ প্রসঙ্গে নানা ফড়নবিশের জন্ম, নানা ফড়নবিশের প্রথম জীবন, নানা ফড়নবিশের মারাঠা প্রধানমন্ত্রী পদে যোগদান, নানা ফড়নবিশের পুনেতে পলায়ণ, নানা ফড়নবিশের যুদ্ধে দক্ষতা প্রদর্শন, নানা ফড়নবিশের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ, নানা ফড়নবিশের বারো ভাইয়ের সমিতি গঠন, নানা ফড়নবিশের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব, কূটনীতিজ্ঞ নানা ফড়নবিশ, দক্ষ কূটনীতিক নানা ফড়নবিশ, নানা ফড়নবিশের মূল্যায়ণ, নানা ফড়নবিশের কর্তৃত্বের অবসান ও নানা ফড়নবিশের মৃত্যু।

নানা ফড়নবীশ

ঐতিহাসিক চরিত্রনানা ফড়নবীশ
জন্ম১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ
বাল্য নামবালাজি জনার্দন ভানু
উপাধিফড়নবীশ
মৃত্যু১৮০০ খ্রিস্টাব্দ
নানা ফড়নবীশ

ভূমিকা :- পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ -এর বিপর্যয়ের পর যে কয়েকজন সর্দারের নেতৃত্বে মারাঠা জাতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নানা ফড়নবীশ।

নানা ফড়নবীশের জন্ম

বালাজী জনার্দন ভানু ১৭৪২ সালে সাতারার একটি চিতপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল ‘নানা’। তাঁর পিতামহ বালাজি মহাদাজি ভানু প্রথম পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথ -এর সমসাময়িক।

নানা ফড়নবীশের প্রথম জীবন

তাঁর বাল্যনাম ছিল বালাজী জনার্দন। প্রথম জীবনে তিনি মারাঠা দরবারের এক সামান্য কর্মচারী ছিলেন। পরে তিনি পেশোয়ার অর্থ বিভাগের প্রধান কর্মচারীতে উন্নীত হন। এই সময় থেকে তিনি ‘ফড়নবীশ’ উপাধিতে পরিচিত হন।

প্রধানমন্ত্রীরূপে নানা ফড়নবিশ

পরবর্তীতে, যখন পেশোয়া রাজ্যের কার্যত প্রধান হয়ে ওঠেন, তখন ফড়নবীশ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, যিনি পেশোয়া শাসনামলে মারাঠা সাম্রাজ্যের জন্য প্রশাসন ও অর্থের মূল মন্ত্রিত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

নানা ফড়নবিশের পুনেতে পলায়ণ

১৭৬১ সালে তিনি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ থেকে পুনেতে পালিয়ে যান এবং মারাঠা সাম্রাজ্য -এর সামরিক বিষয় পরিচালনা করার জন্য একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। যদিও তিনি নিজে কখনও সৈনিক ছিলেন না।

যুদ্ধে নানা ফড়নবিশের দক্ষতা প্রদর্শন

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, হায়দ্রাবাদের নিজাম, হায়দার আলী, মহীশূরের টিপু সুলতান এবং ইংরেজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মারাঠা বাহিনী দ্বারা জয়ী বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি তার সেরা যুদ্ধ দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন।

টিপু সুলতানকে দুর্বল করায় নানা ফড়নবিশের ভূমিকা

হায়দ্রাবাদ এবং ব্রিটিশদের সাথে তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে একটি জোট গঠন করার নীতি টিপু সুলতানকে দুর্বল করে দিয়েছিল।

চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে নানা ফড়নবিশের নিরপেক্ষতা

ব্রিটিশ এবং টিপু সুলতানের মধ্যে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এ নিরপেক্ষ থাকার তার নীতি পরবর্তীতে তাদের দুর্বল করে দেয়, যা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আধিপত্যের পথ প্রশস্ত করে।

টিপু সুলতানের মৃত্যুতে নানা ফড়নবিশের মন্তব্য

টিপুর মৃত্যুর কথা শুনে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে মারাঠারা এখন বুঝতে পেরেছে যে ইংরেজদের পরবর্তী লক্ষ্য তারা, এবং এই “নিয়তি থেকে পরিত্রাণ নেই”।

নানা ফড়নবিশের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ

ফড়নবিশ ছিলেন বিচক্ষণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ক্ষমতালোভী অথচ আন্তরিকভাবে দেশপ্রেমিক। পেশোয়া নারায়ণ রাও-এর আকস্মিক মৃত্যুর পর মারাঠা রাষ্ট্রসংঘে যে অস্থিরতা দেখা দেয়, তা দূরীকরণের জন্য নানা দৃঢ় পদক্ষেপ নেন।

নানা ফড়নবিশের বারো ভাইয়ের সমিতি গঠন

ষড়যন্ত্রকারী রঘুনাথ রাও’কে সরিয়ে তিনি মৃত পেশোয়ার সদ্যোজাত পুত্র মাধব রাও নারায়ণ (দ্বিতীয় মাধব রাও)-কে পেশোয়া পদে বসান। বিভিন্ন মারাঠা সর্দারদের নিয়ে ‘বার ভাইয়ের সমিতি’ গঠন করে তিনি রঘুনাথ রাও-এর ষড়যন্ত্র থেকে বালক পেশোয়াকে রক্ষার ব্যবস্থা করেন।

নানা ফড়নবিশের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব

ক্রমে তিনি বালক পেশোয়ার প্রধান অভিভাবকে পরিণত হন। পেশোয়া দরবারের সমস্ত ক্ষমতা নানার হাতে কেন্দ্রীভূত হয়।

নানা ফড়নবিশ কর্তৃক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইংরেজ হস্তক্ষেপের বিরোধিতা

ইংরেজের আধিপত্য বিস্তারের গুরত্ব নানা ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই প্রথম থেকেই তিনি মারাঠাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইংরেজের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন।

কূটনীতিজ্ঞ নানা ফড়নবিশ

ইংরেজরা রঘুনাথ রাওকে সমর্থন করলে নানা ইংরেজের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই যুদ্ধে তিনি মারাঠা, নিজাম ও মহীশূর এই ত্রিশক্তি সংঘ গঠন করে কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় দেন।

মহীশূরের একাংশ দখলে নানা ফড়নবিশের ভূমিকা

প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ -এর পর তিনি দক্ষিণ ভারত -এ মারাঠা শক্তি বৃদ্ধির কাজে উদ্যোগী হন। ইংরেজের সাহায্যে মহীশূরকে পরাজিত করে তিনি মহীশূরের একাংশ দখল করেন।

হায়দ্রাবাদের একাংশ দখলে নানা ফড়নবিশের কৃতিত্ব

‘খরদার’ যুদ্ধে নিজামকে পরাজিত করে নানা হায়দ্রাবাদের একাংশ দখল করেন। এই যুদ্ধে নানা অনন্য সামরিক কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।

দক্ষ কূটনীতিক নানা ফড়নবিশ

  • (১) উত্তর-ভারতে মহাদজীর সাফল্যকে নানা সন্দেহের চোখে দেখতেন। তাই সিন্ধিয়াকে দুর্বল করার জন্য তিনি সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করেন। সিন্ধিয়াকে জব্দ করার জন্য নানা সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে হোলকারকে লেলিয়ে দেন এবং উত্তর-ভারতে সিন্ধিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুতদের সাথে গোপনে যোগাযোগ করেন।
  • (২) আসলে পেশোয়ার দরবারে সিন্ধিয়ার শত্রুতার ভয়ে নানা ভীত ছিলেন। তাছাড়া নানা ভেবেছিলেন সিন্ধিয়া উত্তর-ভারতে স্বাধীন রাজ্য গঠনে ইচ্ছুক। সেক্ষেত্রে মারাঠা সাম্রাজ্য বিভক্ত হতে পারত।
  • (৩) তাই তিনি সিন্ধিয়াকে জব্দ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই দুই নেতা মিলিতভাবে কাজ করলে মারাঠাগণ অপ্রতিহত শক্তিতে পরিণত হতে পারত।

নানা ফড়নবিশের মূল্যায়ণ

অনেকের মতে, নানা ফড়নবীশের কঠোর নিয়ন্ত্রণে হতাশ হয়ে পেশোয়া মাধব রাও নারায়ণ আত্মহত্যা করেন। ফলে পেশোয়া হন দ্বিতীয় বাজীরাও। এতকাল নানা ফড়নবীশ ইংরেজের ‘অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি’ -র বেড়াজাল থেকে মারাঠা নেতৃত্বকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নানা ফড়নবিশের কর্তৃত্বের অবসান

দ্বিতীয় বাজীরাও পেশোয়া হলে তার কর্তৃত্বের অবসান ঘটে। এর ফলে মারাঠা রাষ্ট্রসংঘে অস্থিরতা প্রকট হয়ে ওঠে।

নানা ফড়নবিশের মৃত্যু

‘মহারাষ্ট্রের ম্যাকিয়াভেলী’ নামে অভিহিত এই বীর ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উপসংহার:- পুনার ব্রিটিশ রেসিডেন্ট কর্ণেল পামার-এর ভাষায়,

“With him (Nana Fadanvis) departed all the wisdom and moderaton of maratha Government.”


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “নানা ফড়নবীশ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) নানা ফড়নবীশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বারো ভাইয়ের সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন?

নানা ফড়নবীশ।

২. ভারতের ম্যাকিয়াভেলি কাকে বলা হত?

নানা ফড়নবীশকে।

৩. নানা ফড়নবীশের প্রকৃত নাম কি ছিল?

বালাজি জনার্দন ভানু।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment