নবগোপাল মিত্র

নবগোপাল মিত্র -এর জন্ম, বংশ পরিচয়, উপাধি, ন্যাশনাল পেপার পত্রিকা প্রকাশ, হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা, ন্যাশনাল জিমনাসিয়াম, ন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠা, ন্যাশনাল থিয়েটার ও ন্যাশনাল সার্কাস প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জানবো।

ভারতীয় কবি, নাট্যকার ও দেশপ্রেমিক নবগোপাল মিত্র প্রসঙ্গে নবগোপাল মিত্রের জন্ম, বংশ পরিচয়, ঠাকুর পরিবারের সাথে নবগোপাল মিত্রের সম্পর্ক, নবগোপাল মিত্রের পরিচিতি ন্যাশনাল মিত্র রূপে, নবগোপাল মিত্র প্রকাশিত ন্যাশনাল পেপার, নবগোপাল মিত্র প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মেলা, হিন্দু মেলা, নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল জিমনেসিয়াম, নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল স্কুল ও নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল সার্কাস।

হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠাতা নবগোপাল মিত্র

ঐতিহাসিক চরিত্রনবগোপাল মিত্র
জন্ম১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ
পরিচিতিনাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, দেশপ্রেমিক
অবদানহিন্দু মেলা বা চৈত্র মেলা প্রতিষ্ঠা
নবগোপাল মিত্র

ভূমিকা :- একদিকে ভারতীয় নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, দেশপ্রেমিক এবং অন্যদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাকর্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন নবগোপাল মিত্র।

অগ্ৰগামী প্রতিষ্ঠান হিন্দু মেলা

হিন্দু জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির পটভূমিকায় যে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান রাজনারায়ণ বসু উদ্বোধন করেছিলেন, সেই হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নবগোপাল মিত্র।

নবগোপাল মিত্রের ডাকনাম ন্যাশনাল মিত্র

ন্যাশনাল প্রেস, ন্যাশনাল পেপার, ন্যাশনাল সোসাইটি, ন্যাশনাল স্কুল, ন্যাশনাল থিয়েটার, ন্যাশনাল স্টোর, ন্যাশনাল জিমন্যাসিয়াম এবং ন্যাশনাল সার্কাস প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল ‘ন্যাশনাল মিত্র’।

নবগোপাল মিত্রের জন্ম

তাঁর জন্মবর্ষ নিয়ে বিতর্ক আছে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে তাঁর জন্ম হয়ছিল ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে।

নবগোপাল মিত্রের বংশ পরিচয়

সাংবাদিক নবগোপাল মিত্র কলকাতার সম্ভ্রান্ত বাঙালি হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের কাছে শঙ্কর ঘোষ লেনে তারা বাস করতেন।

ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নবগোপাল মিত্রের সংস্পর্শ

ছেলেবেলা থেকেই জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল।

নবগোপাল মিত্রের সহপাঠী

ঠাকুর পরিবারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু স্কুলে তাঁর সহপাঠী ছিলেন।

নবগোপাল মিত্র ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী

তিনি আদি ব্রাহ্ম সমাজ এবং তত্ত্ববোধিনী সভার প্রধান মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকটতম সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন।

কেশব চন্দ্র ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গি

সেনের অতি-সংস্কারবাদী মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে ছিলেন রক্ষণশীল। কেশব সেনের দর্শন বিশ্বজনীনতায় নিবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন।

নবগোপাল মিত্রের উপর দেবেন্দ্রনাথের প্রভাব

নবগোপাল মিত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের চিন্তাধারায় ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

নবগোপাল মিত্রের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি স্বীকার

নবগোপাল মিত্র জাতীয়তাবাদের পক্ষে ঐক্যকে মৌলিক নির্ণায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন এবং হিন্দু ধর্মকেই হিন্দুদের তরফে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে মেনেছিলেন।

নবগোপাল মিত্রের হিন্দু জাতির সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা

তিনি হিন্দু জাতির একটা সংজ্ঞা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর মতে, “হিন্দু জাতীয়তা … শুধু বাংলায় সীমিত নয়; এটা হিন্দুস্থানের পুরো দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ নির্বশেষে সকল হিন্দু নাম ও হিন্দু বিশ্বাসকে সাগ্রহে গ্রহণ করে; ভূবৈজ্ঞানিক অবস্থান কিংবা ভাষা কোনোটাকেই অযোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়নি। হিন্দুরা একটা ধর্মীয় জাতি হিসেবে পূর্বনির্দিষ্ট ছিল।”

নবগোপাল মিত্র কর্তৃক ন্যাশনাল পেপার প্রকাশ

নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল পেপার শিরোনামে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করেছিলেন। এটি ছিল হিন্দু মেলার মুখপত্র।

নবগোপাল মিত্র প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মেলা

রাজনারায়ণ বসু লিখিত পুস্তিকা ‘বাংলার শিক্ষিত অধিবাসীদের মধ্যে জাতীয়তার অনুভূতি জাগানোর জন্যে এক সমিতির প্রচারপত্র’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু মেলা এবং ন্যাশনাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

(১) হিন্দু মেলার নামকরণ

এই মেলা প্রথমে জাতীয় মেলা নামে পরিচিত ছিল। আবার এটি চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে চৈত্র মেলা নামেও পরিচিত।

(২) হিন্দু মেলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি

তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাঁর লেখা কবিতাগুলো হিন্দু মেলায় আবৃত্তি করার অনুরোধ করেছিলেন। যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত (পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দ) হিন্দু মেলায় যাতায়াত করতেন।

(৩) খেলাধুলায় হিন্দু মেলার গুরুত্ব

হিন্দু মেলায় নবগোপাল মিত্র জিমন্যাস্টিক্স, মল্লযুদ্ধ এবং ঐতিহ্যপূর্ণ খেলাধুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল জিমন্যাসিয়াম

১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর বাড়িতে একটি জিমন্যাস্টিক স্কুল খুলেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন ‘ন্যাশনাল জিমন্যাসিয়াম’।

(১) শিক্ষক তৈরি

এই প্রতিষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এবং কয়েক বছরের মধ্যেই এই বিদ্যালয় একাধিক শারীরশিক্ষার শিক্ষক তৈরি করেছিল।

(২) ব্রিটিশ প্রশিক্ষক

ইউরোপীয় কায়দায় বাঙালি হিন্দু জনতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নবগোপাল মিত্র একজন ব্রিটিশ প্রশিক্ষক নিয়োগ করেন।

(৩) জাতীয়তাবাদী শিক্ষা প্রদান

শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি এই আখড়া ভবিষ্যতের ভারতীয় নেতাদের জাতীয়তাবাদের শিক্ষা প্রদানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। তাঁদের মধ্যে সকলের আগে ছিলেন বিপিন চন্দ্র পাল, সুন্দরী মোহন দাস এবং রাজ চন্দ্র চৌধুরী।

(৪) নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল জিমন্যাসিয়ামে স্বামী বিবেকানন্দের যোগদান

বিবেকানন্দও তাঁর প্রথম জীবনে ন্যাশনাল জিমন্যাসিয়ামে যোগ দিয়েছিলেন। একবার একজন ব্রিটিশ নাবিক ট্রাপিজের উঁচু ডিগবাজির জায়গায় ধাক্কা লেগে অচৈতন্য হয়ে গিয়েছিলেন। নরেন্দ্রনাথ এবং তাঁর বন্ধুরা ওই নাবিক সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত তার শুশ্রূষা করেছিলেন।

নবগোপাল মিত্রের প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল স্কুল

নবগোপাল মিত্র ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ১৩ নম্বর কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে ক্যালকাটা ট্রেনিং অ্যাকাডেমি চত্বরে ন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

(১) উদ্দেশ্য

শিল্পকলা, সংগীত এবং শারীরশিক্ষা চর্চার জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছিল।

(২) পাঠ্যক্রম

শিক্ষাক্রমের মধ্যে ছিল অঙ্কন, মডেলিং, জ্যামিতিক অঙ্কন, স্থাপত্যকলার অঙ্কন, প্রকৌশল এবং জরিপ।

(৩) শিক্ষক

শিক্ষক হিসেবে ছিলেন কলাবিদ্যার প্রধান শিক্ষক শ্যামাচরণ শ্রীমানি এবং ভারত -এর প্রথম শিল্প পত্রিকা ‘শিল্প পুষ্পাঞ্জলি’র প্রতিষ্ঠাতা কালিদাস পাল।

ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠায় নবগোপাল মিত্রের ভূমিকা

  • (১) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার পিছনে নবগোপাল মিত্রের সহায়তা ছিল। তিনিই প্রথম ন্যাশনাল থিয়েটার নামের প্রস্তাব করেছিলেন।
  • (২) ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর ওই গোষ্ঠী তাদের প্রথম প্রদর্শন নীলদর্পণ মঞ্চস্থ করে।
  • (৩) ন্যাশনাল পেপার সংবদপত্রে এই মঞ্চ উপস্থাপনাকে ‘একটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছিল।

নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল সার্কাস

নবগোপাল মিত্র অগ্রগামী জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর যাবতীয় সম্পত্তিকে ব্যবহার করেছিলেন।

(১) নবগোপাল মিত্রের বাড়ি বন্ধক

ন্যাশনাল সার্কাসের তহবিল সংগ্রহের জন্য বাড়ি বন্ধক রেখে নবগোপাল মিত্র ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ১০/২, কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে ন্যাশনাল সার্কাস প্রতিষ্ঠা করেন।

(২) শারীরিক সংস্কৃতির প্রসার

এই অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান ভারতে অ্যাক্রোব্যাটিক সংস্কৃতি, জিমন্যাস্টিক্স ও শারীরিক সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছিল।

(৩) প্রিয়নাথ বসুর অগ্ৰগামী

খুবই বিখ্যাত ও সফল প্রিয়নাথ বসু প্রতিষ্ঠিত গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের অগ্রবর্তী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যাশনাল সার্কাস কাজ করেছিল।

(৪) রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবন

অগ্রগামী বেলুনিস্ট ও প্যারাসুটিস্ট রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ন্যাশনাল সার্কাসেই তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “নবগোপাল মিত্র” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) নবগোপাল মিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কে কবে মিত্র মেলা প্রতিষ্ঠা করেন?

নবগোপাল মিত্র, ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে।

২. ন্যাশনাল মিত্র কাকে বলা হয়?

নবগোপাল মিত্র।

৩. মিত্র মেলা পরে কি নামে পরিচিত হয়?

হিন্দু মেলা।

৪. মিত্র মেলা কে প্রতিষ্ঠা করেন?

নবগোপাল মিত্র।

৫. নবগোপাল মিত্র কে ছিলেন?

হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠাতা।

৬. জাতীয় মেলা কে প্রতিষ্ঠা করেন?

নবগোপাল মিত্র।

Leave a Comment