মিনান্দার

ব্যাকট্রিয় বা ইন্দো-গ্ৰীক রাজা মিনান্দার প্রসঙ্গে জন্ম, বংশ, ভারতীয় সাহিত্যে নামোল্লেখ, লিপি ও মুদ্রার অস্তিত্ব, রাজ্য সীমা, বৌদ্ধ শাস্ত্র আলোচনা, বিজেতা ও তার্কিক, মুদ্রায় ব্যবহৃত উপাধি ও তার রাজধানী সম্পর্কে জানবো।

বিখ্যাত ইন্দো-গ্ৰিক রাজা মিনান্দার প্রসঙ্গে মিনান্দারের জন্ম, মিনান্দারের বংশ, মিনান্দারের লিপি ও মুদ্রার অস্তিত্ব, মিনান্দার সম্পর্কে স্ট্র্যাবোর অভিমত, মিনান্দার সম্পর্কে ড. সরকারের মতামত, মিনান্দারের রাজ্য সীমা, মিনান্দারের রাজধানী, জনপ্রিয় ব্যাকট্রিয় রাজা মিনান্দার, মিনান্দারের বৌদ্ধ শাস্ত্র আলোচনা, বৌদ্ধ ভিক্ষু নাগসেনের মিলিন্দ পঞহ বা মিলিন্দ প্রশ্ন বৌদ্ধ গ্ৰন্থ, বিজেতা ও তার্কিক মিনান্দার, মুদ্রায় ব্যবহৃত মিনান্দারের উপাধি।

রাজা মিনান্দার

ঐতিহাসিক চরিত্রমিনান্দার
পরিচয়ইন্দো-গ্ৰীক রাজা
রাজ্যব্যাকট্রিয়া
রাজধানীশিয়ালকোট
ধর্মবৌদ্ধ ধর্ম
মিনান্দার

ভূমিকা :- মৌর্য সাম্রাজ্য -এর পতনের পর ব্যাকট্রিয় গ্রীক বা ইন্দো-গ্রীক, শক, পহ্লব, কুষাণ প্রভৃতি জাতিগুলি ভারত -এ ঢুকে তাদের আধিপত্য স্থাপন করে। এই বিদেশি জাতিগুলির মধ্যে ব্যাকট্রিয় গ্রীক বা ইন্দো-গ্রীক রাজার ডিমিট্রিয়াস ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ভারতীয় সাহিত্যে মিনান্দারের নামোল্লেখ

ইন্দো-গ্রীক রাজাদের মধ্যে মিনান্দার ছিলেন বিশেষ বিখ্যাত। ভারতীয় সাহিত্যে তাঁর নাম পাওয়া যায়। গ্রীক ঐতিহাসিকরা তাঁর নাম বারে বারে উল্লেখ করেছেন। একাদশ খ্রিস্টাব্দের লেখক ক্ষেমেন্দ্র মিনান্দার সম্পর্কে সশ্রদ্ধ মন্তব্য করেছেন।

মিনান্দারের জন্ম

রাজা মিনান্দারের জন্ম হয় আলসান্দা দ্বীপের কালসাই গ্রামে। শিয়ালকোট থেকে ২০০ মাইল দূরে এই স্থানটি অবস্থিত।

মিনান্দারের বংশ

মিনান্দার ডিমিট্রিয়াস বংশের সঙ্গে জন্মগতভাবে সংযুক্ত ছিলেন কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। ডিমিট্রিয়াসের পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল একথা জানা যায়।

মিনান্দার সম্পর্কে স্ট্র্যাবোর অভিমত

রাজা মিনান্দার আলেকজাণ্ডার অপেক্ষা বেশী রাজ্য জয় করেন বলে স্ট্র্যাবো মন্তব্য করেছেন। কাবুল থেকে মথুরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মিনান্দারের মুদ্রার প্রাপ্তি তাঁর রাজত্বের বিশালতা প্রমাণ করে।

মিনান্দারের লিপি ও মুদ্রার অস্তিত্ব

শিনকোট পেটিকা লিপি থেকে পাঞ্জাব, পেশোয়ার ও কাবুল অঞ্চলে তার আধিপত্য প্রমাণিত হয়। তার মুদ্রা সিন্ধু, পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্চাল অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

মিনান্দার সম্পর্কে ডঃ সরকারের অভিমত

ডঃ ডি. সি. সরকারের মতে, মিনান্দার মধ্যভারতে অনুপ্রবেশ করেন। কিন্তু প্রতিদ্বন্ধী হেলিওক্লেসের আক্রমণে তাকে পিছু হঠতে হয়। তিনি তাঁর এই বিশাল সাম্রাজ্য সামন্ত রাজাদের সাহায্যে শাসন করতেন। তাঁর অন্যতম সামন্ত শাসক ছিলেন বিবাক মিত্র। তিনি উত্তর-পশ্চিমের সীমান্তে বাজাউর অঞ্চলে শাসন করতেন।

মিনান্দারের রাজ্য সীমা

মিনান্দারের রাজ্যসীমা আফগানিস্থান, পাঞ্জাব পর্যন্ত নিশ্চয়ই বিস্তৃত ছিল। রোমিলা থাপারের মতে, উত্তরপ্রদেশের একাংশ, রাজপুতানার কিছু অংশ এবং সিন্ধুও তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল। টার্নের মতে, মিনান্দার বহু সামন্ত রাজার সাহায্যে তাঁর রাজ্য শাসন করতেন। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা তিনি বিদেশী হলেও লাভ করেন। কারণ, তার শাসন ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

জনপ্রিয় ব্যাকট্রিয় রাজা মিনান্দার

মিনান্দার ব্যাকট্রিয় রাজাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ছিলেন। তার কারণ হল তাঁর ভারতীয় সভ্যতা সম্পর্কে শ্রদ্ধা এবং বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ।

মিনান্দার কর্তৃক বৌদ্ধ শাস্ত্র আলোচনা

ভিক্ষু নাগসেনের সঙ্গে তিনি বৌদ্ধশাস্ত্র আলোচনা করেন। এই আলোচনা গ্রন্থের আকারে রচিত হয়। তার নাম হল মিলিন্দ প্রশ্ন বা মিলিন্দ পঞহ। তাঁর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের কথা এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়।

বিজেতা ও তার্কিক মিনান্দার

মিলিন্দ প্রশ্ন থেকে জানা যায় যে, এই ইন্দো-গ্রীক রাজা শুধু বিজেতা ছিলেন না। তাঁর দার্শনিক জ্ঞানও গভীর ছিল। তর্কবিদ্যায় তার ব্যুৎপত্তি এই গ্রন্থ প্রমাণ করে।

মিনান্দারের বৌদ্ধ ধর্ম গ্ৰহণ বিষয়ে বিতর্ক

কোনো কোনো ইউরোপীয় ঐতিহাসিকের মতে মিনান্দারের মত গ্রীক জাতীয় রাজার পক্ষে বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণ ছিল অসম্ভব। কিন্তু প্লুটার্কের বিবরণ, মিলিন্দ প্রশ্ন গ্রন্থ প্রমাণ করে যে তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। যখন আমরা দেখি যে হেলিওডোরাস প্রভৃতি গ্রীকরাও ভারতীয় ধর্মমত গ্রহণ করেন, তখন মিনান্দারের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলেই মনে করা যায়।

মুদ্রায় ব্যবহৃত মিনান্দারের উপাধি

তাঁর কতকগুলি মুদ্রায় “ধার্মিকম” (ধার্মিক) উপাধি দেখা যায়। তাঁর মুদ্রায় যে চক্র দেখা যায় তাতে আটটি পাখি আছে। অনেকে এটিকে বৌদ্ধ ধর্মচক্র বলে মনে করেন। টার্ন অবশ্য এই প্রতীককে রাজচক্র বলেছেন।

মিনান্দারের রাজধানী

মিনান্দারের রাজধানী ছিল শাকল বা শিয়ালকোট। তিনি ১১৫-১০ খ্রিস্ট পূর্বে রাজত্ব করতেন বলে মনে করা হয়।

উপসংহার :- মিনান্দারের মত অপর কোনো ব্যাকট্রিয় রাজার এত বৈচিত্রপূর্ণ মুদ্রা পাওয়া যায়নি। কাবুল থেকে মথুরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁর মুদ্রা পাওয়া গেছে। এই প্রাপ্তিস্থানগুলি যদি তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয় তবে তাঁর সাম্রাজ্য বিশাল ছিল সন্দেহ নেই।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মিনান্দার” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) মিনান্দার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যাকট্রিয় রাজা কে ছিলেন?

মিনান্দার।

২. মিনান্দারের রাজত্বকাল কত?

আনুমানিক ১১৫-১০ খ্রিস্ট পূর্ব।

৩. মিনান্দারের রাজধানী কোথায় ছিল?

শিয়ালকোট।

৪. মিনান্দার কোন ধর্ম গ্ৰহণ করেন?

বৌদ্ধ ধর্ম।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment