মিহিরকুল

ভারত অভিযানকারী হূণ নেতা মিহিরকুল প্রসঙ্গে পরিচয়, নিষ্ঠুর চরিত্র, জয়লাভ, যুদ্ধ, মিহিরকুলের পরাজয়, হিউয়েন সাঙের বিবরণ, ধর্মগত বিরোধ, ধর্মযুদ্ধ, মুদ্রা, বর্বর আখ্যা ও কলহনের বর্ণনা সম্পর্কে জানবো।

ভারতের এটিলা মিহিরকুল প্রসঙ্গে ভারতে হুন আক্রমণের নেতা মিহিরকুল, মিহিরকুলের পরিচয়, নিষ্ঠুর চরিত্র মিহিরকুল, মিহিরকুলের জয়লাভ, মিহিরকুলের পরাজয়, হিউয়েন সাঙের বর্ণনায় মিহিরকুল, কলহনের বর্ণনায় মিহিরকুল, ধর্মগত বিরোধে মিহিরকুল, মিহিরকুলের ধর্মীয় যুদ্ধ, মিহিরকুলের বর্বর অ্যাখ্যা লাভ, মিহিরকুলের মুদ্রা।

রাজা মিহিরকুল

ঐতিহাসিক চরিত্রমিহিরকুল
পরিচয়হূণ নেতা
উপাধিভারতের এটিলা
পরাজিতযশোধর্মন
মিহিরকুল

ভূমিকা :- ভারত -এ গুপ্ত সাম্রাজ্য -এর আমলে হূণ আক্রমণ ঘটে। প্রাথমিক ভাবে স্কন্দগুপ্ত তা প্রতিহত করলেও পরবর্তীতে হূণরা পুনরায় ভারত আক্রমণ করে। তোরমানের পর যে বিখ্যাত হূন বিজেতা ভারতে হূণ অনুপ্রবেশের পথ তৈরি করেন তার নাম ছিল মিহিরকুল।

মিহিরকুলের পরিচয়

অনেকে বলেন যে, মিহিরকুল প্রকৃতপক্ষে হূণ ছিলেন কিনা তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তোরমানের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা সঠিক জানা যায়নি। হয়ত মিহিরকুল কোনো কুষাণ রাজা হতে পারেন, যাকে ভুল করে ভারতের ইতিহাসে হূণ বলা হয়েছে। কিন্তু কুরা শিলালিপির ভিত্তিতে অধিকাংশ পণ্ডিত মিহিরকুলকে হূণ বলে চিহ্নিত করেছেন।

নিষ্ঠুর চরিত্র মিহিরকুল

মিহিরকুল খুবই নিষ্ঠুর ও রক্তপিপাসু যোদ্ধা ছিলেন বলে ভারতীয় সূত্র থেকে জানা যায়। গ্রীক লেখক কোসমাস ও মিহিরকুলের নিষ্ঠুরতার উল্লেখ করেছেন। কলহণের রাজতরঙ্গিনীতে মিহিরকুলের নিষ্ঠুরতার বিবরণ পাওয়া যায়।

মিহিরকুলের জয়লাভ

মিহিরকুল পাঞ্জাব জয় করে মালব জয় করেন। হিউয়েন সাঙ -এর মতে, তিনি সারা ভারত জয় করেন। সম্ভবত এই মন্তব্যে অতিশয়োক্তি আছে।

গুপ্তদের মিহিরকুলের যুদ্ধ

ভানুগুপ্তের সঙ্গে তোরমান অথবা মিহিরকুলের প্রকৃত কার সঙ্গে যুদ্ধ হয় তা সঠিক জানা যায়নি। ডঃ মজুমদারের মতে, ভানুগুপ্তের সঙ্গে তোরমানেরই যুদ্ধ ঘটেছিল।

মিহিরকুলের পরাজয়

মিহিরকুল মালব অধিকারের চেষ্টা করলে মালবের গুপ্ত সামন্ত যশোধর্মণ তাঁকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। যশোধর্মণের মান্দাসোর লিপি থেকে জানা যায় যে, ৫৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মিহিরকুলকে পরাজিত করেন।

হিউয়েন সাঙের বিবরণে মিহিরকুল

  • (১) হিউয়েন সাঙের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, বালাদিত্য অর্থাৎ নরসিংহ গুপ্ত মিহিরকুলকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। যদি যশোধর্মণ মিহিরকুলকে পরাস্ত করে থাকেন তবে নরসিংহ গুপ্তের পুনরায় তাঁকে কেন পরাস্ত করার দরকার হল এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা যায়নি।
  • (২) হিউয়েন সাঙ নরসিংহ গুপ্তের সঙ্গে মিহিরকুলের যুদ্ধের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। এমনও হতে পারে যে, নরসিংহ গুপ্তের সামন্ত সেনাপতি হিসেবে যশোধর্মণ মিহিরকুলকে পরাস্ত করেন। পরে নিজ ক্ষমতা বাড়লে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং হূণযুদ্ধকে তাঁর নিজের বিজয় বলে ঘোষণা করেন।
  • (৩) হিউয়েন সাঙের বিবরণকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয় তবে নরসিংহ গুপ্ত মিহিরকুলের বিরুদ্ধে গোড়ার দিকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমনকি তিনি মিহিরকুলকে কর দিতে বাধ্য হন। তারপর তিনি তার ক্ষমতা বাড়িয়ে মিহিরকুলকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করেন।

মিহিরকুলের দুবার যুদ্ধ

প্রাপ্ত উপাদানের সাহায্যে জানা যায় যে, মিহিরকুল দুইবার যুদ্ধ করে পরাস্ত হন। প্রথমবার যশোধর্মণের কাছে দ্বিতীয়বার নরসিংহ গুপ্তের কাছে। প্রথমটির সূত্র হল মান্দাসোর লিপি এবং দ্বিতীয়টির হল হিউয়েন সাঙের বিবরণ।

নরসিংহ গুপ্ত ও মিহিরকুলের মধ্যে ধর্মগত বিরোধ

কোনো কোনো ঐতিহাসিক বৌদ্ধ নরসিংহ গুপ্ত ও শৈব মিহিরকুলের মধ্যে ধর্মগত বিরোধের জন্য যুদ্ধ হয় বলে মনে করেন। তবে এই বিরোধ ছিল মূলত রাজনৈতিক, এতে সন্দেহ নেই। যাইহোক মিহিরকুল নরসিংহ গুপ্তের হাতে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করেন।

নরসিংহ গুপ্ত ও মিহিরকুলের মধ্যে ধর্মীয় যুদ্ধ

ইতি মধ্যে হূণ জাতি ভারতে বসবাস করতে শুরু করে এবং তারা দ্রুত ভারতীয় সভ্যতা গ্রহণ করে নেয়। মিহিরকুল ছিলেন শিবের উপাসক। বৌদ্ধ সাহিত্যে তাকে প্রচণ্ড বৌদ্ধ-বিদ্বেষী বলা হয়েছে। তিনি বহু বৌদ্ধ বিহার ও মঠ ধ্বংস করেছিলেন বলে জানা যায়। অনেকে এই কারণে মিহিরকুলের সঙ্গে নরসিংহ গুপ্তের যুদ্ধকে ধর্মীয় যুদ্ধ বলে দেখতে চেয়েছেন।

মিহিরকুলের বর্বর আখ্যালাভ

মিহিরকুল সমকালীন ঐতিহাসিকদের কাছে সুবিচার পাননি। রোমান ঐতিহাসিকরাও হুণ নেতা এ্যাটিলাকে বর্বর, নিষ্ঠুর বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ্যাটিলা রোমের দরজায় এসে পোপ লিওর অনুরোধে রোম আক্রমণ না করে চলে যান। ভারতেও মিহিরকুলকে বর্বর আখ্যা দেওয়া হয়।

মিহিরকুলের মুদ্রা

তাঁর মুদ্রায় শিব, লক্ষ্মী প্রভৃতির মূর্তি খোদিত ছিল। তাঁর শিলালিপিতে তিনি বৌদ্ধবিহার ও সূর্যমন্দির নির্মাণ করেন বলে দাবী করেছেন। যদি তিনি বৌদ্ধ-বিদ্বেষী ও মঠ ধ্বংসকারী হবেন তবে তিনি কেন বৌদ্ধবিহার তৈরি করবেন তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

কলহনের বর্ণনায় মিহিরকুল

কলহনের মত নিষ্ঠাবান ঐতিহাসিক মিহিরকুলের কথা বলেছেন। বহিরাগত কোনো আগ্রাসনকারীর প্রতি হয়ত তিনি ন্যায়বিচার করতে চাননি। যদি মিহিরকুল কোনো কারণে বৌদ্ধদের নির্যাতন করেন তা হয়ত রাজনৈতিক কারণে হতে পারে।

উপসংহার :- মিহিরকুল প্রথম জীবনে বৌদ্ধ নির্যাতন করলেও শেষ জীবনে অনুতাপ করে বৌদ্ধ বিহার তৈরি করেন। মোট কথা, তিনি ছিলেন একজন হিন্দুধর্মাবলম্বী হূণ, যিনি ভারতীয় রাজার সকল চরিত্র নিয়েছিলেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মিহিরকুল” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) মিহিরকুল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারত অভিযানকারী দুজন হূণ নেতার নাম লেখ।

তোরমান ও মিহিরকুল।

২. ভারতের এটিলা কাকে বলা হয়?

মিহিরকুল।

৩. কোন রাজার কাছে মিহিরকুল পরাজিত হন?

মালবের গুপ্ত সামন্ত যশোধর্মন।

৪. মিহিরকুলের নিষ্ঠুরতার বিবরণ কোথায় পাওয়া যায়?

কলহনের রাজতরঙ্গিনীতে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment