মহাত্মা গান্ধী

মহাত্মা গান্ধী -র জন্ম, পিতামাতা, শৈশব, শিক্ষা, ভারতে প্রত্যাগমন, দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ আন্দোলন, ভারতের রাজনীতিতে যোগ, চম্পারণ সত্যাগ্রহ, খেদা সত্যাগ্রহ, আমেদাবাদ শ্রমিক ধর্মঘট, রাওলাট সত্যাগ্রহ, অসহযোগ আন্দোলন, অহিংস নীতির পরিবর্ধন, অসহযোগ আন্দোলনের জনপ্রিয়তা, সমাপ্তি, কারাবরণ, সুভাষচন্দ্র ও নেহেরুর ওপর প্রভাব, লবণ সত্যাগ্রহ, গান্ধী-আরউইন চুক্তি, পুনা চুক্তি, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, তার হত্যাকাণ্ড, স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন উপাধি, মূল নীতিনীতি সম্পর্কে জানবো।

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর জন্ম, মহাত্মা গান্ধীর বংশ পরিচয়, মহাত্মা গান্ধীর পিতামাতার নাম, মহাত্মা গান্ধীর শৈশব, মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা জীবন, মহাত্মা গান্ধীর কর্মজীবন, মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন, মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষাদর্শন, মহাত্মা গান্ধীর চম্পারণ, খেদা, আমেদাবাদ ও রাওলাট সত্যাগ্ৰহ, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর খিলাফত আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধী রচিত গ্ৰন্থ, মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর অবদান।

মহাত্মা গান্ধীর জীবনী

ঐতিহাসিক চরিত্রমহাত্মা গান্ধী
জন্ম২ অক্টোবর, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ
বিভিন্ন নামমহাত্মা গান্ধী, বাপুজি, গান্ধীজি
পিতামাতাকরমচাঁদ গান্ধী ও পুতলিবাঈ
পরিচিতির কারণভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, অহিংস আন্দোলন
মৃত্যু৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ (বয়স ৭৮ বছর)
মহাত্মা গান্ধী

ভূমিকা :- মহাত্মা গান্ধী অন্যতম প্রধান ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারত -এর স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলন -এর প্রতিষ্ঠাতা।

মহাত্মা গান্ধীর জন্ম

১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরের হিন্দু বৈশ্য গোত্রে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন।

মহাত্মা গান্ধীর পিতামাতা

তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান। মা পুতলিবাঈ ছিলেন প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর সদস্য।

মহাত্মা গান্ধীর শৈশব

  • (১) গান্ধীর ব্যাপারে তার বোন মন্তব্য করেন যে, তিনি খেলাধুলা কিংবাা ঘোরাঘুরির ব্যাপারে পারদের মত নিশ্চল ছিলেন।
  • (২) তার শৈশব কালে প্রিয় খেলা ছিল কুকুরের কান মোচড়ানো।
  • (৩) ধার্মিক মায়ের সাথে এবং গুজরাটের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন।

মহাত্মা গান্ধীর বিবাহ ও পরিবার

১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান ছিল – হরিলাল গান্ধী, মনিলাল গান্ধী, রামদাস গান্ধী এবং দেবদাস গান্ধী।

মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা

  • (১) মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় পোরবন্দর ও রাজকোটের ছাত্রজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন।
  • (২) কোনো রকমে গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি কলেজেও সুখী ছিলেন না। কারণ তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাকে আইনজীবী করা।
  • (৩) ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৮ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান। রাজকীয় রাজধানী লন্ডনে তার জীবন যাপন ভারতে থাকতে তার মায়ের কাছে করা শপথ দ্বারা প্রভাবিত ছিল।  
  • (৪) তিনি ইংরেজ আদব কায়দা পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি লন্ডনের গুটি কয়েক নিরামিষভোজী খাবারের দোকানের একটিতে নিয়মিত যেতেন।
  • (৫) শুধু তার মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষ ভোজী জীবনযাপন না করে তিনি এই বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষভোজন গ্রহণ করেন।
  • (৬) পরে তিনি “নিরামিষভোজী সংঘে” যোগ দেন এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তার এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেক ভাবে কাজে লাগে।
  • (৭) নিরামিষভোজী অনেক সদস্যই আবার থিওসোফিক্যাল সোসাইটি (১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ)-এর সদস্য ছিলেন। এখানে ধর্ম শিক্ষায় বৌদ্ধ এবং হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য পড়ানো হত। তারা গান্ধীকে ভগবত গীতা পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন।
  • (৮) পূর্বে ধর্ম বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও, গান্ধী হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম এবং বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।

মহাত্মা গান্ধীর ভারতে প্রত্যাগমন

১৮৯১ সালে মহাত্মা গান্ধী ব্যারিস্টারী পাস করে দেশে ফিরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু প্রথম দিকে আইন ব্যবসায় তেমন সুবিধা করতে পারলেন না।

দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধী

  • (১) দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। এখানে তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন।
  • (২) ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং অবিচার লক্ষ্য করে গান্ধী তার জনগণের মর্যাদা এবং অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেন।
  • (৩) দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না। এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপনের জন্য তিনি আরও কিছুদিন সেখানে থেকে যান। বিলের উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হলেও এই আন্দোলন সেই দেশের ভারতীয়দেরকে অধিকার সচেতন করে তুলেছিল।
  • (৪) ১৮৯৪ সালে গান্ধী নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সেখানকার ভারতীয়দেরকে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করেন।
  • (৫) ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতে এক সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ফিরে আসার পর একদল শ্বেতাঙ্গ মব তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। গান্ধী এই মব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। কারণ, কারও ব্যক্তিগত ভুলের জন্য পুরো দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়াকে তিনি সমর্থন করেন না।
  • (৬) ১৯০৬ সালে ট্রান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাশ করে। ১১ই সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে সংঘটিত এক গণ প্রতিরোধে গান্ধী সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন।
  • (৭) এই পরিকল্পনা কাজে দেয় এবং ৭ বছর ব্যাপী এক আন্দোলনের সূচনা ঘটে। এই সময় আইন অম্যান্য করা, নিজেদের নিবন্ধন কার্ড পুড়িয়ে ফেলা সহ বিভিন্ন কারণে অনেক ভারতীয়কে বন্দি করা হয়। অনেকে আহত বা নিহত হয়। সরকার তার কাজে অনেকটাই সফল হয়।
  • (৮) শান্তিকামী ভারতীয়দের উপর এহেন নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়।
  • (৯) বাধ্য হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জেনারেল ইয়ান ক্রিশ্চিয়ান গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হন। ফলে গান্ধীর আদর্শ প্রতিষ্ঠা পায় এবং সত্যাগ্রহ তার আসল রূপ পেতে শুরু করে।

ভারতের রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর যোগদান

১৯১৫ সালের ৯ ই জানুয়ারী গান্ধী ভারতে ফিরে আসেন। এই দিনটিকে প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসাবে পালন করা হয়। গান্ধী ভারতীয় রাজনীতি এবং ভারতীয় জনগণের সাথে পরিচিত হন কংগ্রেস নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখলের মাধ্যমে।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ আন্দোলন

তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে। এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চম্পারণ সত্যাগ্রহ

ভারতে গান্ধীর প্রথম সত্যাগ্রহ ছিল চম্পারণ সত্যাগ্রহ। বিহারের চম্পারণে তিন কাঠিয়া ব্যবস্থায় চাষিরা নীল চাষ করতে এবং নীলকরদের কাছে নির্দিষ্ট দামে বিক্রী করতে বাধা হত। গান্ধিজি ব্রজকিশোর প্রসাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, আচার্য কৃপালনী-এর মতো কয়েকজন তরুণ জাতীয়তাবাদীকে নিয়ে চম্পারণে এক সত্যাগ্রহে (১৯১৭ খ্রিঃ) লিপ্ত হন এবং সাফল্য লাভ করেন।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে খেদা সত্যাগ্রহ

গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে গান্ধীজীর নেতৃত্বে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে খেদা সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয়েছিল। গান্ধীজীর প্রভাবে শেষ পর্যন্ত সরকার কৃষকদের সঙ্গে আপোষ মীমাংসায় রাজি হয়।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

আমেদাবাদের সূতাকল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে গান্ধীর পরিচালিত সত্যাগ্রহ আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। এটি ছিল গান্ধীজি পরিচালিত প্রথম অনশন ধর্মঘট।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে রাওলাট সত্যাগ্রহ

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ একটি সন্ত্রাস বিরোধী এবং দমনমূলক আইন হিসেবে  রাওলাট আইন পাশ হয়। গান্ধীজি এই আইন বিরুদ্ধে এপ্রিল মাসে সর্বভারতীয় রাওলাট সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন এবং হরতাল পালিত হয়।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ

অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড -এর জন্য ব্রিটিশদের কৃতকর্ম এবং ভারতীয়দের প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ উভয়েরই নিন্দা করেন।

মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির পরিবর্ধন

গান্ধী তার অহিংস নীতির পরিবর্ধন করে স্বদেশি নীতি যোগ করেন। স্বদেশি নীতি মতে সকল বিদেশি পণ্য বিশেষত ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা হবে। তিনি সকল ভারতীয়কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পরার আহ্বান জানান এবং ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা, ধনী ও গরিব মানুষকে দৈনিক খাদির চাকা ঘুরানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনকে সমর্থন করতে বলেন।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের জনপ্রিয়তা

গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সাফল্য লাভ করে। উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী এই আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের লোক অংশগ্রহণ করে।

মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি

উত্তরপ্রদেশের চৌরি চৌরায় তীব্র সংঘর্ষের মাধ্যমে আন্দোলন সহিংসতার দিকে মোড় নিতে দেখে এবং এর ফলে সকল কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতার আশঙ্কায় গান্ধী গণ অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

মহাত্মা গান্ধীর কারাবরণ

১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু দুই বছর পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

মহাত্মা গান্ধীর আমলে কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল

গান্ধীজীর অভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভিতরে ফাটল ধরে এবং দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস এবং মতিলাল নেহরু। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে থাকে আর একটি অংশ।

স্বরাজ পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে বাধা দূরীকরণে মহাত্মা গান্ধীর অবদান

গান্ধী ১৯২০ এর দশকের বেশির ভাগ সময় নীরব থাকেন। এই সময় তিনি স্বরাজ্য দল এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দূর করার চেষ্টা করেন।

সুভাষচন্দ্র ও নেহেরুর ওপর মহাত্মা গান্ধীর প্রভাব

গান্ধী ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে কলকাতা কংগ্রেসে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেবার দাবি জানান। অন্যথায় তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যের হুমকি দেন। এর মাধ্যমে তিনি তরুণ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরুকে প্রভাবিত করেন, যারা অবিলম্বে স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন।

সরোজিনী নাইডুর আমেরিকা সফর

১৯২৮  খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা নিয়ে সরোজিনী নাইডু আমেরিকা যান।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ

গান্ধী লবণের উপর কর আরোপের বিরুদ্ধে লবণ সত্যাগ্রহ পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালের মার্চে ডাণ্ডির উদ্দেশ্যে নিজের হাতে লবণ তৈরির জন্য ১২ই মার্চ থেকে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে এলাহাবাদ থেকে ডাণ্ডিতে পৌঁছান।

গান্ধী-আরউইন চুক্তি

ব্রিটিশরা আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ৬০০০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে এবং গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে লর্ড এডওয়ার্ড আরউইনকে প্রতিনিধি নিয়োগ করে। ফলে স্বাক্ষরিত হয় গান্ধী-আরউইন চুক্তি (১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ)

আম্বেদকর মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে পুনা চুক্তি

দলিত নেতা ড. ভীমরাও রামজী আম্বেদকর -এর নেতৃত্বে অস্পৃশ্যদের জন্য পৃথক নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু হলে গান্ধীজি অনশন শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত অস্পৃশ্যদের জন্য আসন সংখ্যা বর্ধিত করার প্রতিশ্রুতিতে উভয়ের মধ্যে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষরিত হয়।

দলিতদের হয়ে মহাত্মা গান্ধীর অনশন

গান্ধী হরিজন বা ঈশ্বরের সন্তান নাম দিয়ে দলিত, অস্পৃশ্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ১৯৩৩ সালের ৮ মে তিনি হরিজন আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে ২১ দিনের জন্য আত্মশুদ্ধি অনশন করেন।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট মাসে তিনি বোম্বাই-এ কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার জন্য ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দেন। এই কারণে ৯ ই আগষ্টে তাঁকে গ্রেফতার করে পুনার আগা খান প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়।

ভারতের স্বাধীনতা লাভে মহাত্মা গান্ধীর অবদান

মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন গণ আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশযুদ্ধ শেষ হলে ব্রিটিশরা ভারতের স্বাধীনতা দেবার অঙ্গীকার করে।

মহাত্মা গান্ধীর নোয়াখালী সফর

১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য গান্ধীজি নােয়াখালি সফর যান। এই সফর ভারত ইতিহাসের এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা

মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি হিন্দু মৌলবাদী নাথুরাম গডসে গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেন। তার সাথে চরমপন্থী “হিন্দু মহাসভার” যোগাযোগ ছিল। গডসে ও সহায়তাকারী নারায়ণ আপতেকে ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর ফাঁসি দেওয়া হয়।

মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধ

নতুন দিল্লির রাজঘাটের স্মৃতিসৌধে “হে রাম” – শব্দ দুটিকে গান্ধীর শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়। অবশ্য এই উক্তির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে।

মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন উপাধি

গান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকার সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে। মহাত্মা উপাধি প্রদান করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে রচিত গ্রন্থ

বেশ কয়েকজন জীবনীকার গান্ধীর জীবনী রচনার কাজ করেছেন। যেমন –

  • (১) ডি. জি. তেন্ডুলকরের আট খণ্ডের Mahatma. Life of Mohandas Karamchand Gandhi
  • (২) পিয়ারীলাল ও সুশীলা নায়ারের দশখণ্ডের Mahatma Gandhi।
  • (৩) আমেরিকান সেনাবাহিনীর জি বি সিংহ ২০ বছর ধরে গান্ধীর মূল বক্তৃতা ও রচনা সংগ্রহ করেছেন তার গবেষণা গ্রন্থ ‌Gandhi Behind the Mask of Divinity এর জন্য।

মহাত্মা গান্ধীর লেখালেখি

  • (১) গান্ধী ছিলেন বহুমুখী লেখক, সম্পাদক। কয়েক দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন।
  • (২) ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তার সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকা
  • (৩) তার হাতেই সম্পাদিত হত গুজরাটি ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন, যা পরে হিন্দি ভাষাতেও প্রকাশিত হত।
  • (৪) গান্ধী পত্র-পত্রিকায় প্রচুর চিঠি লিখতেন। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পত্রিকায় তার চিঠি প্রকাশিত হতো।
  • (৫) গান্ধীর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে তার আত্মজীবনী ‘The Story of My Experiments with Truth’, “দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ (Satyagraha in South Africa), “হিন্দি স্বরাজ”ও গুজরাটি ভাষায় জন রাসকিন-এর Unto The Last।

মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী ও তার প্রভাব

অনেক রাজনৈতিক নেতা ও আন্দোলনকে গান্ধী প্রভাবিত করেছেন। যেমন –

  • (১) আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন-এর অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিং ও জেসম লওসন গান্ধীর অহিংস নীতির আলোকে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করতেন।
  • (২) দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন মেন্ডেলাও গান্ধীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
  • (৩) খান আবদুল গাফফার খান, স্টিভ বিকো আং সান সু চী ও আরো অনেককে গান্ধীর জীবন ও শিক্ষা অনুপ্রাণিত করেছে।
  • (৪) ইউরোপ -এ রোমাঁ রোলাঁ ১৯২৪ সালে প্রথম তার “মহাত্মা গান্ধী” গ্রন্থে তাকে ইউরোপে তুলে ধরেন।
  • (৫) ১৯৩১ সালে পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন গান্ধীর সঙ্গে পত্রালাপ করেন। গান্ধীর কাছে লেখা এক চিঠিতে আইনস্টাইন গান্ধীকে “আগামী প্রজন্মের জন্য আদর্শ” (a role model for the generations to come) হিসাবে বর্ণনা করেন।
  • (৬) ব্রিটিশ গায়ক জন লেনন অহিংসা নিয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে গান্ধীকে উল্লেখ করতেন।
  • (৭) ২০০৭ সালে এক সম্মেলনে আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তার ওপর গান্ধীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।

মহাত্মা গান্ধীর অবদান

  • (১) মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবর ভারতের জাতীয় ছুটি গান্ধী জয়ন্তী হিসাবে পালিত হয়।
  • (২) ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘ -এর সাধারণ অধিবেশনে গান্ধীর জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
  • (৩) মহাত্মা গান্ধী বহুত্ববাদী ভারতীয় সমাজে সৌভ্রাতৃত্বপূর্ন সহাবস্থান আদর্শের বিশিষ্ট প্রবক্তা।

মহাত্মা গান্ধীর মূলনীতি

গান্ধীর মূল নীতিগুলি হল নিম্নরূপ –

(ক) মহাত্মা গান্ধীর সত্যের প্রতি আদর্শ

গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে সত্য অর্জন করেছিলেন।

  • (১) তিনি তার আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেণ্টস উইথ ট্রুথ। গান্ধী বলেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের অন্ধকার, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা।
  • (২) গান্ধী তার বিশ্বাসকে প্রথম সংক্ষিপ্ত করে বলেন ঈশ্বর হল সত্য। পরবর্তীতে তিনি তার মত বদলে বলেন সত্য হল ঈশ্বর। এর অর্থ সত্যই হল ঈশ্বরের ক্ষেত্রে গান্ধীর দর্শন।

(খ) মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা নীতি

গান্ধী তার জীবনীতে অহিংসা সম্পর্কে বলেন, “যখন আমি হতাশ হই, আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক-হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষে সবসময়ই তাদের পতন ঘটে।

(গ) মহাত্মা গান্ধীর নিরামিষ ভোজন

নিরামিষ ভোজনের ধারণা হিন্দু ও জৈন ধর্ম -এ গভীরভাবে বিদ্যমান এবং তার স্থানীয় রাজ্য গুজরাটে বেশির ভাগ হিন্দুই ছিলেন নিরামিষভোজী। গান্ধী পরিবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

  • (১) গান্ধী পরবর্তী জীবনে একজন পূর্ণ নিরামিষভোজী হয়ে ওঠেন। তিনি নিরামিষ ভোজনের উপর “দি মোরাল বেসিস অফ ভেজিটেরিয়ানিজম” বই ও বেশ কিছু নিবন্ধ লেখেন।
  • (২) গান্ধী এই সময় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গলাভ করেন এবং লন্ডন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির চেয়ারম্যান ড. জোসেফ ওল্ডফিল্ডের বন্ধু হয়ে ওঠেন।
  • (৩) হেনরি স্টিফেনস সল্টের লেখা ও কাজের পাঠক ও সমঝদার হয়ে ওঠা গান্ধী নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সাথেও মাঝে মাঝে যোগ দেন। লন্ডন থেকে ফেরার পর গান্ধী নিরামিষ খাবার ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করেন।
  • (৪) গান্ধীর মতে নিরামিষ শুধু শরীরের চাহিদাই মেটাবে না, এটি মাংসের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও পূরণ করবে, যা সবজি ও ফলের চেয়ে মূল্যবান।

মহাত্মা গান্ধীর উপর ব্রহ্মচর্যের প্রভাব

৩৬ বছর বয়সে তিনি একজন ব্রহ্মচারীর পথে অগ্রসর হন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ব্রহ্মচর্যের দর্শন তাকে ব্যাপকভাবে প্ররোচিত করে, যা আদর্শগত ও বাস্তবগত পবিত্রতার চর্চা করে।

  • (১) গান্ধী ব্রহ্মচর্যকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ এবং আত্মোপলব্ধির পন্থা হিসেবে দেখতেন।
  • (২) গান্ধী তার আত্মজীবনীতে তার শৈশবের স্ত্রী কস্তুরবার সঙ্গে তার কামলালসা এবং হিংসার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা বলেন।

গান্ধী আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আদর্শ হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তার কাছে ব্রহ্মচর্যের অর্থ হল “চিন্তা, বাক্য ও কর্মের নিয়ন্ত্রণ”।

মহাত্মা গান্ধীর বিশ্বাস

গান্ধী হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার সারা জীবন ধরে হিন্দুধর্মের চর্চা করেন। হিন্দুধর্ম থেকেই তিনি তার অধিকাংশ আদর্শ গ্রহণ করেন।

  • (১) তিনি সকল ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করতেন এবং তাকে এই ধারণা থেকে বিচ্যুত করার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন। তিনি ব্রহ্মবাদে আগ্রহী ছিলেন এবং গুজরাটি ভাষায় “ভগবত গীতা” র উপর ধারাভাষ্য লেখেন।
  • (২) গান্ধী বিশ্বাস করতেন প্রতিটি ধর্মের মূলে আছে সত্য ও প্রেম। তিনি একজন ক্লান্তিহীন সমাজ সংস্কারক ছিলেন এবং সব ধর্মের ভণ্ডামি, অপকর্ম ও অন্ধবিশ্বাসের বিপক্ষে ছিলেন।

মহাত্মা গান্ধীর সরলতা

গান্ধী প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সামাজিক কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি অবশ্যই সাধারণ জীবন যাপন করবে যেটা তার মতে তাকে ব্রহ্মচর্যের পথে নিয়ে যাবে।

  • (১) তাঁর সরলতার সূচনা ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন পশ্চিমা জীবনাচরণ ত্যাগ করার মাধ্যমে। তিনি একে “শূন্যে নেমে যাওয়া” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
  • (২) এই কর্মপন্থার মধ্যে ছিল অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা, সাদামাটা জীবন ধারণ করা এবং নিজের কাপড় নিজে ধোয়া। একবার তিনি নাটালদের দেওয়া উপহার ফিরিয়েও দেন।

মহাত্মা গান্ধীর পোশাক

১৯৩১ সালে লন্ডনে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে গান্ধীর পরিধেয় দেখে চার্চিল বলেছিলেন যে, ওই রকমের পোশাকধারী একজন আইন-অমান্য আন্দোলন চালাচ্ছেন, আবার সেই সঙ্গে সমান মর্যাদায় ভারত সম্রাটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন।

  • (১) গান্ধীর জামাকাপড়ের কমতি দেখে গান্ধীকে দেখতে যাওয়া তার অনুরাগী অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেন শীতের দেশে গান্ধী ওই পোশাকে এসে নিজেকে এমনভাবে আলোচিত করে না-তুললেও পারতেন৷
  • (২) পরিধেয় নিয়ে গান্ধী নিজে অবশ্য মোটেই বিব্রতবোধ করেন নি। উষ্ণ আবহাওয়া ও দারিদ্র্যের কারণে ভারতীয়দের পোশাক ওই রকমেরই মামুলি হওয়া দরকার বলে তিনি ভাবতেন৷
  • (৩) ঐ অর্ধনগ্ন বেশেই তিনি গোলটেবিল বৈঠকের সদস্যদের জন্য বাকিংহাম প্যালেসে সম্রাট পঞ্চম জর্জের দেওয়া রাজকীয় অভ্যর্থনায় যোগ দিয়েছেন এবং নিজের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে সম্রাটের সঙ্গে কৌতুকপূর্ণ বাক্য বিনিময় করেছেন৷
  • (৪) পরবর্তীকালে বেশভূষার স্বল্পতার কথা উল্লেখ করায় গান্ধী জবাব দিয়েছিলেন, ‘তাতে কোনো অসুবিধা হয় নি। কারণ, সম্রাটের নিজের গায়ে যে পোশাক ছিল তা আমাদের দু’জনের জন্য পর্যাপ্ত৷’

উপসংহার :- আচার-আচরণে, নিভীকতায় ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে তিনি ‘জনগণের বাপুজী’। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সার্থক কর্ণধার।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মহাত্মা গান্ধী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মহাত্মা গান্ধীর লেখা আত্মজীবনীর নাম কী?

মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথস।

২. গান্ধীজীর পিতার নাম কি ছিল?

করমচাঁদ উত্তমচাঁদ গান্ধী।

৩. মহাত্মা গান্ধীকে কে প্রথম ‘জাতির জনক’ আখ্যা দেন?

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

৪. গান্ধীজীর আসল নাম কী ছিল?

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

Leave a Comment