ষোড়শ মহাজনপদ: অবন্তী

ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান অবন্তী -র অবস্থান, ইতিহাস, ধর্মীয় অর্থনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল । খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে কোনাে কেন্দ্রীয় রাজশক্তি ছিল না। ভারতে কোনাে অখণ্ড সর্বভারতীয় রাষ্ট্র এই সময় ছিল না। একটা অখণ্ড রাষ্ট্রের পরিবর্তে ছিল যােলটি রাজ্য বা যােড়শ মহাজনপদ।

ষোড়শ মহাজনপদ অবন্তী প্রসঙ্গে অবন্তী রাজ্যের অবস্থান, অবন্তী রাজ্যের রাজধানী, অবন্তী রাজ্যের অধিবাসী মহাবল, পর্বতের অধিবাসী অবন্তী রাজ্যের উল্লেখ, সাম্রাজ্যের বিস্তারে অবন্তী রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অবন্তী রাজ্যের প্রাচীন শাসক হৈহেয় গণসমস্টি, অবন্তী রাজ্যের রাজা প্রদ্যোত, মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অবন্তী রাজ্য, মগধের শাসনাধীনে অবন্তী রাজ্য, জুনাগড় শিলালিপিতে অবন্তী রাজ্যের শাসনকর্তার উল্লেখ, বিন্দুসারের রাজত্বকালে অবন্তী প্রদেশের শাসনকর্তা।

ষোড়শ মহাজনপদ:- যেমন – কাশী, কোশল, অঙ্গ, মগধ, বৃজি, মল্ল, চেদি, বৎস্য, কুরু, পাঞ্চাল, মৎস, শূরসেন, অশ্মক, অবন্তী, গান্ধার এবং কম্বোজ

মহাজনপদ: অবন্তী

পরিচিতিঅন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ
অবস্থান বর্তমান ভারত -এর মধ্যপ্রদেশ রাজ্য
রাজধানীউজ্জয়িনী ও মাহিষমতি
স্থায়ীত্ব কালআনুমানিক ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ–৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
বিখ্যাত রাজাপ্রদ্যোত
অবন্তী

ভূমিকা :- মধ্য ভারতের একটি প্রাচীন রাজ্য ছিল অবন্তী। বর্তমানে প্রায়শই মালব অঞ্চল হিসেবে অবন্তী রাজ্যটি বিবেচিত হয়ে থাকে।

অবন্তীর অবস্থান

মালব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল অবন্তী রাজ্য।

অন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ অবন্তী

বৌদ্ধ গ্রন্থ সুত্তপিটকের অঙ্গুত্তরনিকায় অংশে অবন্তীকে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ষোড়শ মহাজনপদ গুলির অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

অবন্তী রাজ্যের রাজধানী

বিন্ধ্য পর্বতমালা দ্বারা অবন্তী জনপদ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এর উত্তর ভাগের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী এবং দক্ষিণ ভাগের রাজধানী ছিল মাহিষমতি।

অবন্তী রাজ্যের অধিবাসী মহাবল

মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে অবন্তীর অধিবাসীদের মহাবল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

পর্বতের অধিবাসী হিসেবে অবন্তী রাজ্যের উল্লেখ

বিষ্ণু পুরাণ, ভগবৎ পুরাণ ও ব্রহ্ম পুরাণে তাদের বিন্ধ্য পর্বতমালার পশ্চিম শাখা পারিযাত্রা পর্বতের অধিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্রাজ্য বিস্তারে অবন্তী রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বৎস, কোশল ও মগধ রাজ্যের সঙ্গে সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবন্তী রাজ্য লিপ্ত ছিল।

অবন্তী রাজ্যের প্রাচীন শাসক হৈহেয় গণসমষ্টি

পুরাণ অনুসারে হৈহেয় গণসমষ্টি অবন্তীর প্রাচীন শাসক ছিল, যারা নাগাদের নিকট থেকে অঞ্চলটি দখল করে।

  • (১) প্রাথমিকভাবে তারা মহিষমতিকে রাজধানী করে রাজ্যশাসন করত। পরবর্তীকালে সমগ্র জনপদকে রাজধানী মহিষমতি ও উজ্জয়িনী এ দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়।
  • (২) বীতিহোত্র, ভোজ, অবন্তী, তুন্ডীক ও সর্য্যত – এই পাঁচটি গোষ্ঠী নিয়ে হৈহেয় গণসমষ্টি গঠিত ছিল।
  • (৩) পরবর্তীকালে বীতিহোত্র গণ শক্তিশালী হলে হৈহেয় ও বীতিহোত্র উভয়ে একই গণ হিসেবে উল্লিখিত হতে থাকে।
  • (৪) শেষ বীতিহোত্র শাসক রিপুঞ্জয়কে তার মন্ত্রী পুলিকা সিংহাসনচ্যুত করেন এবং নিজপুত্র পজ্জোতকে সিংহাসনে বসান।

অবন্তী রাজ্যের রাজবংশ প্রদ্যোত

গৌতম বুদ্ধ -এর সমসাময়িক পজ্জোত বা প্রদ্যোত, যিনি চণ্ডপ্রদ্যোত মহাসেন নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি অবন্তীর প্রদ্যোত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

  • (১) তিনি বৎসরাজ উদয়নকে পরাজিত করেন, কিন্তু পরে উদয়ন প্রদ্যোতের কন্যা বাসবদত্তাকে বিবাহ করেন।
  • (২) মগধের হর্যঙ্ক বংশ -এর রাজা অজাতশত্রু প্রদ্যোতের আক্রমণ থেকে তার রাজধানী রাজগৃহকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি তক্ষশিলার রাজা পুষ্করসারিনের সঙ্গেও যুদ্ধে লিপ্ত হন।
  • (৩) প্রদ্যোতের দুই পুত্র ছিল – গোপাল ও পালক। পরবর্তীতে পুত্র পালক অবন্তীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
  • (৪) কথাসরিৎসাগর অনুসারে পালকের রাজত্বকালে বৎস রাজ্য অবন্তীর অন্তর্ভুক্ত হয় এবং প্রদ্যোত রাজবংশের রাজপুরুষেরা কৌশাম্বী নগরীতে অবন্তীর রাজপ্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
  • (৫) মৃচ্ছকটিক গ্রন্থে পালককে একজন স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাকে জনগণের বিদ্রোহের ফলে সিংহাসনচ্যুত হতে হয়। এই বিদ্রোহের ফলে আর্য্যককে অবন্তীর সিংহাসনে বসানো হয়।
  • (৬) পুরাণে আর্য্যকের পরে পরবর্তী শাসক হিসেবে বর্তিবর্ধন বা নন্দীবর্ধনের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই নামগুলি সম্ভবতঃ অবন্তীবর্ধনের ভিন্ন নাম। কথাসরিৎসাগর অনুসারে, যিনি পালকের পুত্র বা নেপালী বৃহৎকথা অনুসারে, পালকের ভ্রাতা গোপালের পুত্র হিসেবে যিনি পরিচিত।

মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অবন্তী রাজ্য

মগধের রাজা শিশুনাগ অবন্তীবর্ধনকে পরাজিত করে অবন্তী রাজ্যকে মগধ সাম্রাজ্য -এর অন্তর্ভুক্ত করেন।

মগধের শাসনাধীনে অবন্তী রাজ্য

শিশুনাগ বংশ -এর শাসনে অবন্তী মগধের অন্তর্ভুক্ত হয়। মৌর্য সাম্রাজ্য -এর অধীনে অবন্তী সাম্রাজ্যের পশ্চিমদিকের একটি প্রদেশে পরিণত হয় এবং নতুন নাম হয় অবন্তীরট্ঠ। উজ্জয়িনী নগরী এই প্রদেশের রাজধানী ছিল।

জুনাগড় শিলালিপিতে অবন্তী রাজ্যের শাসনকর্তার উল্লেখ

প্রথম রুদ্রদামন -এর জুনাগড় শিলালিপিতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য -এর রাজত্বকালে এই প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন পুষ্যগুপ্ত।

বিন্দুসারের রাজত্বকালে অবন্তী প্রদেশের শাসনকর্তা

মৌর্য সম্রাট বিন্দুসার -এর রাজত্বকালে যুবরাজ অশোক এই প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন।

উপসংহার :- মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর পুষ্যমিত্র শুঙ্গ -এর রাজত্বকালে তার পুত্র অগ্নিমিত্র এই প্রদেশ শাসন করেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ষোড়শ মহাজনপদ: অবন্তী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ষোড়শ মহাজনপদ: অবন্তী হতে জিজ্ঞাস্য?

১. অবন্তী মহাজনপদ ভারতের কোন রাজ্যে অবস্থিত?

মধ্যপ্রদেশ।

২. অবন্তীর রাজধানীর নাম কী?

উজ্জয়িনী ও মাহিষমতি।

৩. অবন্তী রাজ্যের বিখ্যাত রাজার নাম লেখ।

প্রদ্যোত বা চন্ডপ্রদ্যোত।

Leave a Comment