ইংল্যান্ডের নৌ সেনাপতি লর্ড নেলসনের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে লর্ড নেলসনের পরিচিতি, লর্ড নেলসনের খ্যাতি, যুদ্ধে লর্ড নেলসনের সাফল্য, লর্ড নেলসনের প্রেম, লর্ড নেলসনের প্রেমিকা ও লর্ড নেলসনের মূল প্রেমপত্র সম্পর্কে জানব।
ইংরেজ নৌ সেনাপতি লর্ড নেলসনের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | লর্ড নেলসনের প্রেমপত্র |
দেশ | ইংল্যান্ড |
পরিচিতি | বিখ্যাত নৌ সেনাপতি |
স্ত্রী | হোরাসিয়া |
প্রেমিকা | এমা হ্যামিলটন |
নেপলসের ইংরাজ দূতের পত্নী লেডি হ্যামিলটনের সাথে বিখ্যাত নৌ-সেনাপতি নেলসনের যে অবৈধ প্রণয় ছিল নিম্নে উল্লেখিত পত্রগুলিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। সদ্য সমর-বিজয়ী নেলসনকে লেডি হ্যামিলটন তাঁয় পরিপূর্ণ যৌবন ও অনন্ত সৌন্দর্য নিয়ে প্রথম অভিবাদন করেন তাঁকে আলিঙ্গন করে – আর সেই আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গেই বীরবর নেলসন এই পরস্ত্রীটির হৃদয়ও জয় করেন। এই প্রণয় ক্ষণিকের মোহ নয়, নেলসনের মৃত্যুকাল পর্যন্ত তা ছিল গভীর অপ্রতিহত। তা হলেও এমা হ্যামিলটন ছিলেন নেলসনের ইহকাল; কিন্তু স্বীয় পত্নীর প্রতি তিনি উদাসীন ছিলেন না; স্বামীর কর্তব্যে কোনো দিন অবহেলা করেন নাই এবং চিরদিন একত্রেই বসবাস করতেন।
২৬শে আগষ্ট, ১৮০৩
প্রিয়তমে এমা,
তোমার চিঠিগুলিই আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয় – সব চেয়ে আনন্দদায়ক। তোমার সান্নিধ্য আমার হৃদয়ে যে আনন্দোচ্ছ্বাস আনে তোমার চিঠিগুলির স্থান ঠিক তার পরেই। “নেলসন তোমার” – শুধু এই দুটি কথা তোমার মনে চিরজাগরুক থাকুক – এই আমার ইচ্ছা, এই আমার অকাঙ্ক্ষা।
তুমি নেলসনের ইহকাল-পরকাল। তুমি আমার ইষ্টমন্ত্র। তোমার প্রতি আমার স্নেহ আমার ভালবাসা মর্তের নয় স্বর্গের-নৈসর্গিক। একমাত্র তুমি ছাড়া এ ভালবাসা কেউ ছিন্ন করতে পারবে না – আমি তা হতে দেব না।
আমার বুকের ধন একমাত্র তুমি – আমার প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয়তরা, আর আমিও বোধ হয় তোমার তা-ই। তোমার কাছে আর কেউ আসে তা আমি চাই না – কারো ছায়াও আমি যেন সহ্য় করতে পারি না। আমার সে বিশ্বাস আছে – আর অবিশ্বাস করেও তোমার অমর্যাদা করতে পারি না।
তুমি যে সুখে নরফোক ঘুরে এসেছ এ সংবাদে সত্যই আমার বড় আনন্দ হল। আমার অচ্ছেদ্য প্রেমের বাঁধনে বেঁধে আর একদিন তোমায় নিয়ে যাব। আজ আসি।
তোমারই নেলসন
নেলসনের দ্বিতীয় পত্রখানা ভিক্টরী জাহাজ থেকে লেখা।
ভিক্টরী; ২৯শে সেপটেম্বর, ১৮০৪
এমা, আজকের দিনে আমি জন্মেছিলাম। এই দিনটি আমার বড় প্রিয়-বড় সুদিন – বছরের যে কোনো দিনের চেয়ে আজকের দিনটি বেশ পয়মন্তর – আমার ভাগ্যের সূচক। যেহেতু এই দিনে আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম বলেই ত আমার সকল প্রিয়ের প্রিয় তোমার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। যদি না জন্মাতাম তাহলে তো তোমায় পেতাম না প্রিয়তমে! তোমারও বোধ হয় তাই মনে হয় – অন্তত আমি তা-ই মনে করি।
ছেচল্লিশ বছর ধরে চলে আসছে অবিশ্রাম পরিশ্রম। সাধারণ মানুষ এর বেশী আর কি আশা করতে পারে। তাই আমি ভাবছি জীবনের আর যেটুকু সময় আছে তা শান্তি ও আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারলেই সার্থক হবে।
এর পরের চিঠিখানাও ভিক্টরী জাহাজ থেকে লেখা। এতে ইতিহাসের খোরাকও যথেষ্ট পাওয়া যায় – সন তারিখ ও বিষয়বস্তুর অবতারণা থেকে। তাঁর স্বীয় পত্নী হোরাসিয়াকেও যে কখনো অনাদর করেন নি তারও আভাষ পাওয়া যায়। চিঠিখানা কেবল এমাকে সম্বোধন করে নয়, অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদেরও সম্বোধন করা হয়েছে এতে।
ভিক্টরী, ১৯শে অক্টোবর, ১৮০৫
প্রিয়তমে এমা ও আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুগণ,
এইমাত্র সংবাদ পাওয়া গেল যে শত্রুর সমবেত নৌশক্তি আমার বিপক্ষে নিয়োজিত হয়েছে এবং সেই বাহিনী বন্দর পরিত্যাগ করে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাতাসের তত জোর নেই, সুতরাং আগামী কালের আগে সে বাহিনীর সম্মুখীন হবার আশা আমার কম। অদৃশ্য মহাশক্তি রণ-দেবতার আশীর্বাদে আমার শ্রম যেন সার্থক হয় -সব প্রচেষ্টা যেন সফল হয়। আমি যা কিছু করি না কেন আমার সর্বদাই চেষ্টা আমার নাম তোমার ও হোরাসিয়ের কাছে চিরপ্রিয় হয় – কারণ তোমাদের দুজনকেই যে আমি বড় ভালবাসি। এখন যা লিখছি তা হয়ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তবু ভগবানের কাছে প্রার্থনা, যুদ্ধের পর এই চিঠি শেষ করবার সুযোগ আমায় দিও প্রভু! ভগবান তোমাদের যেন নিরাপদে রাখেন – নেলসনের আজ এই প্রার্থনা।
২০শে অক্টোবর (অর্থাৎ তার পরদিন)
আজ সকালে আমরা ‘প্রণালীর’ মুখের কাছে এসে পৌঁছেছি। এখনও পশ্চিমের বাতাস জোর হয় নি তাই ট্রাফালগারের কাছে এখনও বিপক্ষের নৌবাহিনী বেশ প্রত্যক্ষ হচ্ছে না। তবু যতদূর সম্ভব গুণে দেখা গেল ওদের আছে চল্লিশখানা যুদ্ধজাহাজ। তার কতকগুলো Cadiz -এর আলোকস্তম্ভের সামনে দেখা যাচ্ছে বলে মনে হয়। আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে যে রাত্রির মধ্যেই সব জাহাজগুলোই আশ্রয়ে ফিরে যাবে। (রাত্রির মধ্যেই সব আমি ধ্বংস করতে পারব!) ভগবান! আমরা যেন জয়ী হতে পারি – সব শান্তি হোক।
ট্রাফালগার নৌযুদ্ধের পর দেখা গেল এই অসমাপ্ত পত্রখানি নেলসনের টেবিলের উপর পড়ে আছে। লেডি হ্যামিলটনের হাতে দেওয়া হল। চিঠিখানির শেষ পৃষ্ঠায় প্রেমিকা লিখলেন তাঁর প্রেমিকের উদ্দেশে –
“হায়। এমা আজ অভাগিনী। তুমি ধন্য় নেলসন, তুমি আজ প্রকৃতই সুখী”।
(FAQ) লর্ড নেলসনের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইংল্যান্ডের বিখ্যাত নৌ সেনাপতি।
হোরাসিয়া।
এমা হ্যামিলটন।