সাতবাহন যুগের সভ্যতা

সাতবাহন যুগের সাহিত্য ও সভ্যতা প্রসঙ্গে প্রাকৃত ভাষা গাথাসপ্তসতী, বৃহৎ কথা, কামসূত্র, মৃচ্ছকটিকম, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, কার্লে চৈত্য ও বৌদ্ধ গুহা সম্পর্কে জানবো।

সাতবাহন যুগের সাহিত্য ও সভ্যতা

ঐতিহাসিক ঘটনাসাতবাহন যুগের সাহিত্য ও সভ্যতা
সাম্রাজ্যসাতবাহন সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাতাসিমুক
শ্রেষ্ঠ রাজাগৌতমীপুত্র সাতকর্ণী
শেষ রাজাযজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী
সাতবাহন যুগের সাহিত্য ও সভ্যতা

ভূমিকা :- সাতবাহন যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পশ্চাতে প্রাকৃত ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষ অবদান ছিল। তাছাড়া বৌদ্ধ গুহা, স্তূপ, চৈত্য প্রভৃতি স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সাতবাহন সাম্রাজ্যের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সাতবাহন সভ্যতার ভাষা প্রাকৃত

দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন যুগে প্রাকৃত ভাষার বিশেষ বিকাশ হয়েছিল। মৌর্য সম্রাটরা প্রাকৃত ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। সাতবাহন রাজারা পৈশাচী প্রাকৃত বা পশ্চিম ভারতীয় প্রাকৃত ভাষার গুণগ্রাহী ছিলেন। এই ভাষা থেকেই মারাঠী ভাষার উৎপত্তি হয়।

সাতবাহন সভ্যতার রাজা হাল গাথা সপ্তসতী

  • (১) সাতবাহন রাজা হাল প্রাকৃত ভাষায় ৭০০ গাথা বা গাথা সপ্তশতীর সঙ্কলন করেন। এই গাথাগুলির বহু গাথা আগেই প্রচলিত ছিল। লোক-সাহিত্যের মানব মনের বিভিন্ন ভাব প্রকাশ করতে এবং প্রেমজ্ঞাপন করতে এই গাথাগুলি রচিত হয়েছিল।
  • (২) গাথা সপ্তশতীতে বিভিন্ন ভাবের গাথা বা কবিতার সঙ্কলন দেখা যায়। কোনোটি চটুল, লঘু, কোনোটি বিষাদে মলিন, আবার কোনোটি দার্শনিক ভাবে উদ্দীপ্ত। মহারাজ হালের আগে জনৈক কবি যাঁর নাম ছিল বৎসতন তাঁর সঙ্কলনের ওপর নির্ভর করে হাল এই গাথা সঙ্কলন করেন। মারাঠী গীতি কবিতার কথা গাথা সপ্তশতী থেকে বুঝা যায়।

সাতবাহন সভ্যতার যুগে রচিত বৃহৎ কথা

গুণাঢ্যের বৃহৎ কথা সম্ভবত সাতবাহন যুগে রচিত হয়। গুণাঢ্য সাতবাহন রাজার মন্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়।

সাতবাহন সভ্যতার যুগে রচিত কামসূত্র

  • (১) মৌর্য-সাতবাহন যুগে ভারত -এ বহু নগর গড়ে উঠেছিল এবং বহু লোক বাণিজ্যে অর্থ উপার্জন করে নগরবাসী হয়ে জীবন-যাপন করত। এই সকল স্বচ্ছল, সমৃদ্ধিশালী শ্রেণীর বিনোদনের জন্য বাৎসায়ন তাঁর কামসূত্র গ্রন্থটি রচনা করেন।
  • (২) এই গ্রন্থটি নাগরিক বুর্জোয়া সংস্কৃতির পরিচয় দেয়। যদিও গ্রন্থটি মূলত যৌন বিষয়ে রচিত, তথাপি এর সঙ্গে নগর জীবনের আচার পদ্ধতি, জীবনযাত্রা, ভব্যতার চিত্র কামসূত্রে পাওয়া যায়। অবশ্য বাৎসায়ণের রচনা সাতবাহন যুগে হলেও এজন্য সাতবাহন রাজারা কোনো আলাদা কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন না।

সাতবাহন সভ্যতার বর্ণনায় মৃচ্ছকটিকম্

শূদ্রকের মৃচ্ছকটিকম্ সাতবাহন যুগে রচিত হয় বলে মনে করা হয়। নর্তকী বসন্তসেনার প্রতি ব্রাহ্মণ চারুদত্তের প্রেম এই নাটকের উপজীব্য। সাতবাহন যুগের শিথিল সমাজ বিন্যাসের পটভূমিকায় এরূপ মানবিক গুণ সম্পন্ন নাটক রচনা হয়ত সম্ভব ছিল।

সাতবাহন সভ্যতার স্থাপত্য ও ভাস্কর্য

দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন যুগে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পকলার কথা উল্লেখযোগ্য। সাতবাহন যুগে পাহাড় কেটে যে বৌদ্ধ গুহাগুলি তৈরি হয় তা এই যুগের স্থাপত্যের নিদর্শন। পাহাড় কেটে গুহা তৈরির পদ্ধতি মৌর্য যুগ থেকে চালু হয়। সাতবাহন যুগেও তা অব্যাহত ছিল।

সাতবাহন সভ্যতার নিদর্শন কার্লে চৈত্য

কার্লে গুহা চৈত্যটি পাহাড়ের গায়ে ১২৪ ফুট গর্ত করে তৈরি করা হয়েছিল। গুহার ছাদগুলি স্তম্ভের দ্বারা ধরে রাখা হত। স্তম্ভগুলির গায়ে পাথর খোদাই করে অলঙ্করণ করা হয়েছিল।

সাতবাহন সভ্যতা প্রসঙ্গে বৌদ্ধ গুহা

নাসিক, কল্যাণ ও আরও নানাস্থানে সাতবাহন যুগে বৌদ্ধ গুহা তৈরি করা হয়। এগুলির মধ্যে ভট্টিপ্রলু, পিতালখোরোর গুহা বিখ্যাত। সাতবাহন যুগে পূর্ব দাক্ষিণাত্যে অমরাবতী অঞ্চলে বহু স্তূপ তৈরি হয়।

উপসংহার :- সাতবাহন যুগে গ্রাম ও নগরের জীবনে বিহারের স্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অমরাবতীর স্তূপগুলির ভাস্কর্য অত্যন্ত বিখ্যাত। পার্থিবতা ও ইন্দ্রিয়তা অতিক্রম করে এই ভাস্কর্য একটি আধ্যাত্মিক চরিত্র লাভ করেছিল।

(FAQ) সাতবাহন যুগের সাহিত্য ও সভ্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গাথাসপ্তসতী কার লেখা?

সাতবাহন রাজা হাল।

২. সাতবাহন যুগে রচিত দুটি বিখ্যাত গ্ৰন্থের নাম লেখ।

কামসূত্র, বৃহৎ কথা, মৃচ্ছকটিকম, গাথাসপ্তসতী।

৩. কামসূত্র রচনা করেন কে?

বাৎসায়ন।

৪. মৃচ্ছকটিকম্ কার লেখা?

শূদ্রক।

৫. বৃহৎ কথা কার লেখা গ্রন্থ?

গুণাঢ্য।

Leave a Comment