প্রথম কুলোত্তুঙ্গ

চোল রাজা প্রথম কুলোত্তুঙ্গ প্রসঙ্গে সিংহাসনে অধিকার, চালুক্য নীতি, কেরল ও পাণ্ড্য নীতি, সিংহল নীতি, চীনের সঙ্গে মিত্রতা, বেঙ্গী নীতি, কলিঙ্গ আক্রমণ ও তার কৃতিত্ব সম্পর্কে জানবো।

চোল রাজা প্রথম কুলোত্তুঙ্গ প্রসঙ্গে প্রথম কুলোত্তুঙ্গের সিংহাসনে অধিকার, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের দ্বারা বেঙ্গী ও চোল সাম্রাজ্যের সংযুক্তিকরণ, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের চালুক্য নীতি, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কেরল ও পাণ্ড্য নীতি, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের সিংহল নীতি, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের বেঙ্গী নীতি, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কলিঙ্গ আক্রমণ, চোল সাম্রাজ্যের শেষ শ্রেষ্ঠ রাজা প্রথম কুলোত্তুঙ্গ, প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কৃতিত্ব।

রাজা প্রথম কুলোত্তুঙ্গ

ঐতিহাসিক চরিত্রপ্রথম কুলোত্তুঙ্গ
বংশচোল বংশ
রাজধানীতাঞ্জোর
প্রথম রাজাবিজয়ালয়
শ্রেষ্ঠ রাজাপ্রথম রাজেন্দ্র চোল
শেষ রাজাতৃতীয় রাজেন্দ্র
প্রথম কুলোত্তুঙ্গ

ভূমিকা :- চোল রাজা অধিরাজেন্দ্রের সম্ভবত কোনো সন্তান ছিল না। এজন্য বেঙ্গীর পূর্ব চালুক্য রাজ কুলোত্তুঙ্গ চোল সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন শেষ শক্তিশালী চোল রাজা।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের সিংহাসনে অধিকার

চোল সিংহাসনে কুলোত্তুঙ্গের অধিকার ছিল। তাঁর পিতামহী ছিলেন চোল সম্রাট মহান প্রথম রাজরাজ চোল -এর কন্যা; তাঁর মাতা ছিলেন সম্রাট প্রথম রাজেন্দ্রের কন্যা, তাঁর পত্নী ছিলেন দ্বিতীয় রাজেন্দ্রের কন্যা। এই অর্থে তাঁর দেহে ছিল ৭৫% চোল রক্ত।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গ কর্তৃক বেঙ্গী ও চোল সাম্রাজ্যের সংযুক্তি

কুলোত্তুঙ্গ পূর্ব চালুক্য রাজ্য বেঙ্গী ও চোল সাম্রাজ্যকে সংযুক্ত করেন। এই সংযুক্তি ছিল নিঃসন্দেহে পাকা। এরপর পশ্চিম চালুক্য রাজারা আর বেঙ্গীতে চক্রান্ত করার সুযোগ পায়নি। তাঁর পুত্ররা বেঙ্গী শাসন করত।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের চালুক্য নীতি

  • (১) প্রথম কুলোত্তুঙ্গের দীর্ঘ রাজত্বকাল (১০৭০-১১২০ খ্রি) ছিল ঘটনাবহুল। যদিও তাঁর দেহে চালুক্য রক্ত ছিল, তিনি চোল সিংহাসনে বসার পর চোল রাজা হিসেবে পশ্চিম চালুক্যদের সঙ্গে চিরাচরিত দ্বন্দ্বের হাত থেকে রেহাই পান নি।
  • (২) চালুক্য ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য বা দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য ত্রিভুবনমল্ল যিনি একদা চোল দ্বিতীয় রাজেন্দ্রের অনুগ্রহে চালুক্য সাম্রাজ্যের একাংশ পান, তিনি চোল রাজ্য আক্রমণে মুখ্য ভূমিকা নেন। বেঙ্গীর ওপর কুলোত্তুঙ্গের কর্তৃত্ব তার পছন্দ হয়নি।
  • (৩) বিলহন তাঁর বিক্রমাঙ্কদেব চরিতে ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের জয়লাভ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে অতিশয়োক্তি আছে বলে মনে হয়। কারণ, চোল লিপিতে তার অনেক তথ্য সমর্থিত হয় নি।
  • (৪) একথা সত্য যে, কোলারের নিকটে একটি যুদ্ধে উভয় পক্ষ জয়লাভের দাবী করেন। বিলহনের মতে, ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য এই যুদ্ধে জয়লাভ করে গঙ্গামণ্ডলম ও সিঙ্গনম লাভ করেন। চোল লিপির মতে, কুলোত্তুঙ্গ মহীশূরের অংশ দখল করেন।
  • (৫) তিনি ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যকে দুর্বল করার জন্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও তাঁর ভ্রাতা দ্বিতীয় সোমেশ্বরের সঙ্গে মিত্রতা করেন। মোট কথা, কুলোত্তুঙ্গকে ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা দীর্ঘকাল চালান।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কেরল ও পাণ্ড্য নীতি

কুলোত্তুঙ্গ উত্তরে চালুক্য যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকলেও দক্ষিণে কেরল ও পাণ্ড্যদের বর্ধমান অবাধ্যতার কথা বিস্মৃত হন নি। রাজরাজ ও রাজেন্দ্রের আমলে এই অঞ্চলে যে চোল শাসন ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছিল তার কিছুই আর অবশিষ্ট ছিল না। কুলোত্তুঙ্গ অনেক পরিমাণে নষ্ট শাসন ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের সিংহল নীতি

সিংহলের ওপর তাঁর অধিকার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তিনি সিংহলে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দুরভিলাষ ত্যাগ করে ভারত -এর মূল ভূখণ্ডে অর্থাৎ পাণ্ড্য ও কেরলের ওপরেই তার দৃষ্টি আবদ্ধ করেন। তিনি সিংহলী তামিলদের সাহায্যে সিংহলে ক্ষমতা স্থাপনের জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

চীনের সাথে প্রথম কুলোত্তুঙ্গের মিত্রতা স্থাপন

ভারতের ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের বাইরে শ্রীবিজয় ও চীন -এর সঙ্গে তিনি মিত্রতা সম্পর্ক স্থাপন করেন। বাণিজ্যই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তিনি ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে চীনে একটি বাণিজ্য মিশন পাঠান। শ্রীবিজয় রাজা নেগাপতনের বিহারের জন্য প্রদত্ত গ্রামগুলির জন্য পাট্টা দিতে তাকে অনুরোধ জানান।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের বেঙ্গী নীতি

কুলোত্তুঙ্গ বেঙ্গীর সিংহাসনে রাজরাজ চোল ও তারপর বীর চোলকে বসিয়ে দেন। এদের কাজে তুষ্ট না হয়ে তিনি বিক্রম চোলকে বেঙ্গীর সিংহাসনে চিরকালের জন্য বসান।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কলিঙ্গ আক্রমণ

কুলোত্তুঙ্গ ১১১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দুবার কলিঙ্গ আক্রমণ করেন বলে জানা যায়। সম্ভবত কলিঙ্গের হাত থেকে বেঙ্গী রক্ষার জন্য এই আক্রমণ চালানো হয়। এই সময় কলিঙ্গের রাজা ছিলেন অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গ। সম্ভবত তিনি কুলোত্তুঙ্গের হাতে পরাজিত হন।

প্রথম কুলোত্তুঙ্গের কৃতিত্ব

  • (১) কুলোত্তুঙ্গ তার রাজত্বের ৪৫ বছর পর্যন্ত চোল সাম্রাজ্যের সীমা সিংহল ব্যতীত মোটামুটি রক্ষা করেন। তুঙ্গভদ্রাকে চোল পশ্চিম চালুক্যের ঐতিহাসিক সীমানায় পরিণত করা হয়। বেঙ্গীর ওপরেও তাঁর আধিপত্য বজায় থাকে।
  • (২) সম্ভবত তাঁর রাজত্বের শেষ দিকে উদীয়মান হোয়শল রাজ বিষ্ণুবর্ধনের আক্রমণে তিনি গঙ্গাবদি প্রদেশটি হারান। তাছাড়া পশ্চিম চালুক্য রাজ বিক্রমাদিত্যও বেঙ্গীর কিছু অংশ অধিকার করেন। কুলোত্তুঙ্গ রাজেন্দ্র চোলের রাজধানী গঙ্গাইকোণ্ড চোলপুরমকেই তার রাজধানী মনে করতেন। কাঞ্চী ছিল দ্বিতীয় নগরী।

উপসংহার :- ১১১৮ খ্রিস্টাব্দে কুলোত্তুঙ্গের মৃত্যু হলে বিক্রম চোল চোল সিংহাসনে বসেন। কুলোত্তুঙ্গকেই শেষ শ্রেষ্ঠ চোল সম্রাট বলা চলে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “প্রথম কুলোত্তুঙ্গ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) প্রথম কুলোত্তুঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শেষ শ্রেষ্ঠ চোল সম্রাট কে ছিলেন?

প্রথম কুলোত্তুঙ্গ।

২. কুলোত্তুঙ্গ চোলের রাজধানী কোথায় ছিল?

গঙ্গাইকোণ্ড চোলপুরম।

৩. চোলদের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

প্রথম রাজেন্দ্র চোল।

৪. চোলদের শেষ রাজা কে ছিলেন?

তৃতীয় রাজেন্দ্র।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment