খরোষ্ঠী লিপি

ভারতের প্রাচীনতম খরোষ্ঠী লিপি -র নামকরণ, নিদর্শন, লেখার দিক, পাঠোদ্ধার, সম্রাট অশোকের ব্যবহার, সংখ্যার ব্যবহার, নামের উৎপত্তি, জন মার্শালের মত, পাঠোদ্ধার, আরামাইক লিপির উপর নির্ভরশীল, ব্রাহ্মী লিপির প্রাধান্য ও খরোষ্ঠী লিপির পতন সম্পর্কে জানবো।

প্রাচীনতম খরোষ্ঠী লিপি প্রসঙ্গে আরামাইক লিপি থেকে খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব, খরোষ্ঠী লিপির নামকরণ, খরোষ্ঠী লিপির নিদর্শন, খরোষ্ঠী লিপি লেখার দিক, খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার, খরোষ্ঠী লিপি নামের উদ্ভব, খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার কর্তা ও খরোষ্ঠী লিপির বৈশিষ্ট্য।

ভারতের প্রাচীনতম খরোষ্ঠী লিপি

ধরণশব্দীয় বর্ণমালা লিপি
সময়কালখ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী – খ্রিষ্টিয় তৃতীয় শতাব্দী
লেখার দিকডান দিক থেকে বাম দিকে
ভাষাসমূহগান্ধারী, প্রাকৃত
খরোষ্ঠী লিপি

ভূমিকা :- প্রাচীন উত্তর পশ্চিম ভারত -এর গান্ধার সভ্যতার গান্ধারী ভাষা লেখার লিপি পদ্ধতি হল খরোষ্ঠী লিপি। ভারতে প্রাপ্ত সম্রাট অশোক -এর উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের মানসেহরা ও সাহবাজগঢ়ীর লেখগুলি ছিল খরোষ্ঠী লিপিতে। এই লিপিকে সাধারণভাবে অশোকলিপির একটি বিভাগ বলা হয়।

খরোষ্ঠী লিপির নামকরণ

পার্বতীচরণ ভট্টাচার্য মনে করেন যে, লিপিটি ‘খর’ অর্থাৎ ‘গাধার ওষ্ঠ’ (গাধার ঠোট)-এর মতাে দেখতে বলেই, এর এইরূপ নামকরণ হয়েছে।

খরোষ্ঠী লিপির অন্যনাম গান্ধারী লিপি

বর্তমান পাকিস্তান -এর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আশেপাশে, বিশেষ করে গান্ধার অঞ্চলে এই লিপির বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। তাই অনেকে একে গান্ধারী লিপি বলে থাকেন।

খরোষ্ঠী লিপির নিদর্শন

মধ্য এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশের মুদ্রা, কাঠের ফলক, চামড়া এবং শিলালিপিতে এই লিপির নিদর্শন পাওয়া যায়

খরোষ্ঠী লিপির লেখার দিক

খরোষ্ঠীলিপি লেখা হতে ডান দিক থেকে বাম দিক বরাবর। অর্থাৎ একালের আরবি বা ফারসি ভাষার মতো করে। এই কারণে এই লিপিকে সেমেটিক লিপির শ্রেণীতে ধরা হয়ে থাকে।

খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার

মিশ্র ভারতীয়-গ্রীক মুদ্রা থেকে জেমস প্রিন্সেপ সর্বপ্রথম খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার করেন। এই মুদ্রাগুলির এক পিঠে গ্রীক ভাষায় এবং অপর পিঠে খরোষ্ঠী লিপিতে পালি ভাষায় খোদিত ছিল।

অশোকের খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার

জেমস প্রিন্সেপের অবদানে ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে প্রাপ্ত খরোষ্ঠী লিপিতে লেখা সম্রাট অশোকের অভিলেখগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়।

আরমেইক লিপির উপর খরোষ্ঠী লিপি নির্ভরশীল

খরোষ্ঠী লিপি বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, এই লিপি আরমেইক লিপির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হলেও ভারতীয় ভাষাগুলির বিশেষ উচ্চারণ ও ধ্বনিতত্ত্বকে মানিয়ে নিতে এই লিপিতে বহু পরিবর্তন এসেছে।

আরমেইক লিপির খরোষ্ঠী লিপিতে পরিবর্তন

ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আকিমেনীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণ পশ্চিম ভারত আক্রমণ করার সাথে সাথে আরমেইক লিপি ভারতে প্রবেশ করে এবং দুশো বছর ধরে খরোষ্ঠী লিপিতে পরিবর্তিত হয়।

খরোষ্ঠী লিপিতে লেখা সবচেয়ে পুরনো বৌদ্ধ পুঁথি

খাইবার গিরিপথ থেকে পশ্চিমে আফগানিস্তান -এর হাড্ডা শহরের কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্চ গাছের ছালে প্রথম শতাব্দীতে লেখা খরোষ্ঠী লিপিতে গান্ধার যুগের বৌদ্ধ রচনা আবিষ্কৃত হয়। এটিই বৌদ্ধ ধর্ম -এর সবচেয়ে পুরনো পুঁথি।

খরোষ্ঠী লিপিতে সংখ্যা

অক্ষরের মতো সংখ্যাগুলি ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হয়। 5-9 সংখ্যার জন্য কোনো শূন্য এবং কোনো পৃথক চিহ্ন নেই। খরোষ্ঠীতে সংখ্যা একটি সংযোজন পদ্ধতি ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, 1996 নম্বরটি 1000 441 100 20 20 20 20 10 4 2 হিসাবে লেখা হবে।

দরায়ুসের রাজত্বকালে ব্যবহৃত খরোষ্ঠী লিপি

খরোষ্ঠী দরায়ুস দ্য গ্রেটের শাসনামলে প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত এক ধরনের আরামাইক লিপি থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়, যা জনসাধারণের শিলালিপিতে ব্যবহৃত হয় কিউনিফর্মের পরিবর্তে।

খরোষ্ঠী লিপি নামের উদ্ভব

খরোষ্ঠী নামটি হিব্রু খরোশেথ, লেখার জন্য একটি সেমেটিক শব্দ বা পুরাতন ইরানী শব্দ থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যার অর্থ “রাজকীয় লেখা”।

খরোষ্ঠী লিপি সম্পর্কে জন মার্শালের মত

স্যার জন মার্শালের মতে, এটি নিশ্চিত যে, খরোষ্ঠী পরবর্তীতে আরামাইক থেকে বিকশিত হয়েছিল।

খরোষ্ঠী লিপি পরিত্যাগ

প্রাপ্ত ব্রাহ্মী লিপিগুলি বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার করা হলেও খরোষ্ঠী খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় – তৃতীয় শতাব্দীর পর পরিত্যক্ত হয়েছে বলে মনে হয়।

খরোষ্ঠী লিপিকে সরিয়ে ব্রাহ্মী লিপির প্রাধান্য

১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে এসে খরােষ্ঠীকে সরিয়ে ব্রাহ্মী লিপিই সারা ভারতে প্রাধান্য বিস্তার করে।

খরোষ্ঠীর জ্ঞান হ্রাস

সেমেটিক থেকে প্রাপ্ত খরোষ্ঠী লিপি এবং এর উত্তরসূরিদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যের কারণে খরোষ্টির জ্ঞান দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার কর্তা

খরোষ্ঠী লিপিটি প্রায় একইসঙ্গে জেমস প্রিন্সেপ এবং কার্ল লুডভিগ গ্রোটেফেন্ড দ্বারা পৃথকভাবে পাঠোদ্ধার করা হয়েছিল।

উপসংহার :- খরােষ্ঠী লিপি থেকে উদ্ভূত পারসাে-আরবিক লিপিতেই হিন্দুস্থানি ভাষা প্রথম লিখিত হয়েছিল, যা আমাদের দেশ ভারতবর্ষ -এ উর্দু ভাষা নামে পরিচিত।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “খরোষ্ঠী লিপি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) খরোষ্ঠী লিপি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. খরোষ্ঠী নামকরণের কারণ কী?

খরোষ্ঠী শব্দটি ইরানি খরপোস্ত শব্দ থেকে এসেছে। ‘খর’ অর্থ ‘গাধা’ এবং ‘পোস্ত’ অর্থে ‘চামড়া’। অর্থাৎ ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘খরোষ্ঠী’ শব্দের অর্থ ‘গাধার চামড়া’। মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে খরোষ্ঠী লিপির যে প্রাচীন নিদর্শনগুলি পাওয়া গেছে তার অধিকাংশই উট, ঘোড়া বা গাধার চামড়ায় উৎকীর্ণ। সেই কারণে ‘খরোষ্ঠী’ নামকরণ সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয়।

২. ভারতীয় লিপিমালার প্রাচীনতম রূপ কয়টি ও কি কি?

দুটি, যথা- ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী

৩. কোন লিপি থেকে খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব হয়?

প্রাচীন আরামাইক লিপি থেকে।

৪. খরোষ্ঠী লিপি কি?

ভারতের লিপি মালার প্রাচীনতম ২ টি রূপের অন্যতম হল খরোষ্ঠী লিপি।

Leave a Comment