কপালকুণ্ডলা

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের প্রকাশকাল, উপন্যাসের নাট্যরূপ, কঠিন ভাষা শৈলী, উপন্যাসের চরিত্র, বহুচর্চিত উক্তি, উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ, উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নির্মাণ সম্পর্কে জানবো।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত কপালকুণ্ডলা উপন্যাস প্রসঙ্গে কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের প্রকাশকাল, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নামকরণ, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নাট্যরূপ, কাব্যধর্মী উপন্যাস কপালকুণ্ডলা, নারী প্রধান উপন্যাস কপালকুণ্ডলা, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের কঠিন ভাষা শৈলী, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের চরিত্র, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নায়িকা চরিত্র, কপালকুণ্ডলা শব্দের অর্থ, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের শিল্পমূল্য, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের পরিচ্ছেদ, কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের মূল ভাব ও কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের বিষয়বস্তু

ধরণউপন্যাস
লেখকবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ভাষাবাংলা
প্রকাশকাল১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ
কপালকুণ্ডলা

ভূমিকা :- সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস হল কপালকুণ্ডলা।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের প্রকাশকাল

১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নাট্যরূপ

গিরিশচন্দ্র ঘোষ এই উপন্যাসের একটি নাট্যরূপ দেন (১৮৭৩) এবং দামোদর মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাসের একটি উপসংহার উপন্যাস রচনা করেন এবং নামকরণ করেন মৃন্ময়ী (১৮৭৪)।

কাব্যধর্মী উপন্যাস কপালকুণ্ডলা

কপালকুণ্ডলা বাংলা সাহিত্যের একটি কাব্যধর্মী উপন্যাস।

নারী প্রধান উপন্যাস কপালকুণ্ডলা

নারী প্রধান চরিত্রের এক বলিষ্ঠ ও অসাধারণ এক উপন্যাস হল কপালকুণ্ডলা।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের কঠিন ভাষা শৈলী

উপন্যাসটি সাধু ও সংষ্কৃত শব্দের ব্যবহারে বেশ কঠিন ভাষাশৈলী তবে পাঠকরা একটু ধৈর্য্য রক্ষা করে পড়লে এক অনবদ্য সৃষ্টি কপালকুণ্ডলা।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের চরিত্র

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র গুলি হল –

  • (১) নবকুমার শর্ম্মা – সপ্তগ্রামনিবাসী যুবক।
  • (২) কাপালিক – যোগসাধক সন্ন্যাসী এবং কপালকুণ্ডলার প্রতিপালক।
  • (৩) কপালকুণ্ডলা/মৃন্ময়ী – কাপালিকের পালিতা কন্যা ও নবকুমারের দ্বিতীয়া স্ত্রী।
  • (৪) অধিকারী – দেবালয়ের সেবক বা পুরোহিত।
  • (৫) মতিবিবি/লুৎফান্নিসা/পদ্মাবতী – নবকুমারের প্রথম পত্নী।
  • (৬) শ্যামাসুন্দরী – নবকুমারের ভগিনী বা বোন।
  • (৭) জাহাঙ্গীর ও মেহেরউন্নিসা বা নূরজাহান – মোগল বাদশাহ ও বেগম (ঐতিহাসিক চরিত্র)।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ

  • (১) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক নির্জন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফান্নিসা নামে এক বিদেশী রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়।
  • (২) কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিরল দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচারআচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। তার নাম বদলে রাখা হল মৃন্ময়ী।
  • (৩) মতিবিবি বা লুৎফান্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথমা স্ত্রী পদ্মাবতী। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে পেতে উৎসুক হন এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ -এর হুগলি জেলার সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
  • (৪) এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়। পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।
  • (৫) শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে বহুচর্চিত উক্তি

এই উপন্যাসের কিছু অবিস্মরণীয় উক্তি বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়। যেমন –

  • (১) তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? (নবকুমার)।
  • (২) পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? (নবকুমারের উদ্দেশ্যে কপালকুন্ডলা)।
  • (৩) যাহাতে জগদীশ্বরের হাত, তাহা পন্ডিতে বলিতে পারেনা। (নবকুমার, কপালকুণ্ডলার উদ্দেশ্যে অধিকারি)
  • (৪) ক্ষেত্রে বীজ রোপিত হইলে আপনিই অঙ্কুর হয়।

কপালকুণ্ডলা অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ

১৯৩৩ সালে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরিচালনায় কপালকুণ্ডলা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন উমাশশী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মলিনা দেবী, নিভাননা দেবী, অমর মল্লিক, অমূল্য মিত্র প্রমুখ।

টেলিভিশন ধারাবাহিক কপালকুণ্ডলা

২০১৯ সালে ভারত -এর স্টার জলসায় রাজ চক্রবর্তী দ্বারা কপালকুণ্ডলা ধারাবাহিকটির সম্প্রচার শুরু হয়।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “কপালকুণ্ডলা উপন্যাস” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) কপালকুণ্ডলা উপন্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কপালকুণ্ডলা কী জাতীয় উপন্যাস?

কাব্যধর্মী রোমান্টিক উপন্যাস।

২. কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নায়িকা চরিত্রের নাম কী?

কপালকুণ্ডলা।

৩. কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের কয়টি খণ্ড?

চারটি।

৪. কপালকুণ্ডলা শব্দের অর্থ কি?

ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী।

৫. কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের দুটি ঐতিহাসিক চরিত্রের নাম লেখো।

জাহাঙ্গীর ও নূরজাহান।

৬. কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি কি?

তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? (নবকুমার)।

Leave a Comment