কল্পনা দত্ত

কল্পনা দত্ত -এর জন্ম, বংশ পরিচয়, শৈশব, শিক্ষা, রিপাবলিকান আর্মিতে যোগদান, বিপ্লবী দলে স্থান, গোপনে অস্ত্র সরবরাহ, সাহসী পদক্ষেপ, বন্দুক চালনার প্রশিক্ষণ, ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব, আত্মগোপন, বন্দী, মুক্তির আর্জি, স্নাতক ডিগ্রি অর্জন, কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান, বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ, দিল্লি ও বাংলাদেশ গমন ও তার রচিত গ্রন্থ সম্পর্কে জানবো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী কল্পনা দত্ত প্রসঙ্গে কল্পনা দত্তের জন্ম, কল্পনা দত্তের শিক্ষা, কল্পনা দত্তের কর্মজীবন, কল্পনা দত্তের বিপ্লবী দলে যোগদান, বাংলার অগ্নিকন্যা ও অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত, কল্পনা দত্ত রচিত গ্ৰন্থ ‘চট্টগ্ৰাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’ ও সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে কল্পনা দত্তের অবদান।

বিপ্লবী কল্পনা দত্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রকল্পনা দত্ত
জন্ম২৭ জুলাই ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ
পরিচিতির কারণচট্টগ্রাম অস্ত্রগার আক্রমণের অংশীদার
আন্দোলনভারত -এর বিপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন
কল্পনা দত্ত

ভূমিকা :- জাতির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্য ছিলেন কল্পনা দত্ত।

কল্পনা দত্তের জন্ম

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে কল্পনা দত্ত জন্মগ্ৰহণ করেন।

কল্পনা দত্তের বংশ পরিচয়

তাঁর পিতা বিনোদবিহারী দত্তগুপ্ত ছিলেন সরকারী কর্মী। মাতা শোভনাবালা দেবী এবং পিতামহ ছিলেন রায়বাহাদুর দুর্গাদাস।

কল্পনা দত্তের শৈশবকাল

থেকেই কল্পনা ছিলেন অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। মানসিক দিক থেকেও ছিলেন ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত ভাবপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর। দুঃখী মানুষের দুঃখের কাহিনী তাকে ব্যথিত করত। তাই শৈশব থেকেই সকলকে নিয়ে এক সুখী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

কল্পনা দত্তের শিক্ষা

কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন।

বেথুন কলেজের ছাত্রী সংঘে কল্পনা দত্তের যোগদান

শহীদ ক্ষুদিরাম বসু এবং বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজে গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘে যোগদান করেন।

রিপাবলিকান আর্মিতে কল্পনা দত্তের যোগদান

পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সাহায্যে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং তার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন।

বন্দী নেতৃবৃন্দ

তিনি যখন মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দেন তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী।

বিপ্লবী দলে কল্পনা দত্তের স্থান

তৎকালীন সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তার দলে গ্রহণ করেন।

গোপনে কল্পনা দত্তের অস্ত্র সরবরাহ

কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন। তাছাড়া গোপনে গান কটনও তৈরী করেছিলেন তিনি।

কল্পনা দত্তের সাহসী পদক্ষেপ

বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।

কল্পনা দত্তের প্রতিবন্ধকতা

বিপ্লবী কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। এরপর তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন।

কল্পনা দত্তের বন্দুক চালনার প্রশিক্ষণ

একই সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।

ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বে কল্পনা দত্ত

মাস্টার দা সূর্য সেন ১৯৩১ সালে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন ও গ্রেফতার হন।

প্রীতিলতার আত্মহত্যার খবর

তিনি জেলে বসে অপারেশন পাহাড়তলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবর শোনেন।

কল্পনা দত্তের আত্মগোপন

জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি মাস্টার দার নির্দেশে কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেললে কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু মাস্টার দা বন্দী হন।

গ্রেফতার কল্পনা দত্ত

কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।

কল্পনা দত্তের মুক্তির আর্জি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্নিকন্যা কল্পনার মুক্তির আবেদন জানিয়ে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গান্ধীজী, রবীন্দ্রনাথের বন্ধু সি এফ এন্ডরুজও কল্পনাকে মুক্ত করার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

কল্পনা দত্তের স্নাতক ডিগ্রি লাভ

১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর কল্পনা দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এইসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।

কমিউনিস্ট পার্টিতে কল্পনা দত্তের যোগদান

এরপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে C.P.I নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিবাহ হয়।

বিধানসভা নির্বাচনে কল্পনা দত্তের অংশগ্রহণ

তিনি চট্টগ্রামে ফিরে দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করলেও জয়ী হতে পারেন নি।

কল্পনা দত্তের চাকরি গ্ৰহণ

স্বাধীনতার পর কল্পনা দত্ত ভারতে চলে আসেন এবং ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন।

কল্পনা দত্তের দিল্লি গমন

পরে তিনি দিল্লীতে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা নেন। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ -এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

কল্পনা দত্তের বাংলাদেশ গমন

দেশ ভাগের পর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন দু’বার ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমব্যথী।

কল্পনা দত্ত রচিত গ্ৰন্থ

‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকারীদের স্মৃতিকথা’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার লেখা গ্রন্থটি এক ঐতিহাসিক দলিল। ১৯৯০ সালে ‘‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’’ নামে ভারত সরকারের উদ্যোগে তার লেখা আর একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়‘।

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত

কল্পনা দত্তের বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।

কল্পনা দত্তের মৃত্যু

১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে নয়া দিল্লীতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে কল্পনা দত্ত

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন নিয়ে বলিউডে খেলে হাম জি জান সে নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান চরিত্র কল্পনা দত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন।

উপসংহার :- সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি চিরস্মরণীয় নাম। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা কল্পনা দত্ত।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “কল্পনা দত্ত” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) কল্পনা দত্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. অগ্নিকন্যা কাকে বলা হয়?

কল্পনা দত্তকে।

২. ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকারীদের স্মৃতিকথা’ গ্ৰন্থটি কার লেখা?

কল্পনা দত্তের।

৩. কল্পনা দত্ত কোন ঘটনার সক্রিয় সদস্য ছিলেন?

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন।

৪. কল্পনা দত্ত কে ছিলেন?

ভারতের অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী যোদ্ধা।

৫. ভারতের অগ্নিকন্যা কাকে বলা হয়?

কল্পনা দত্তকে।

৬. বাংলার অগ্নিকন্যা কাকে বলা হয়?

কল্পনা দত্তকে।

৭. অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা কাকে বলা হয়?

কল্পনা দত্তকে।

৮. বাংলার অগ্নিকন্যা নামে কে পরিচিত?

কল্পনা দত্ত।

৯. অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা নামে কে পরিচিত?

কল্পনা দত্ত।

Leave a Comment