হুমায়ুনের সমস্যা

হুমায়ুনের সমস্যা প্রসঙ্গে সিংহাসন নিরঙ্কুশ নয়, সিংহাসন নিয়ে বিরোধ, দুর্বল সাম্রাজ্য, শেরশাহের অভ্যুত্থান, সেনাদলে ভাঙন, অর্থসঙ্কট ও হুমায়ূনের চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব সম্পর্কে জানবো।

হুমায়ুনের সমস্যা

ঐতিহাসিক ঘটনাহুমায়ুনের সমস্যা
সম্রাটহুমায়ুন
পিতাবাবর
পুত্রআকবর
মৃত্যু১৫৫৬ খ্রি
হুমায়ুনের সমস্যা

ভূমিকা :- বাবরের চার পুত্র ছিলেন – হুমায়ুন, কামরান, আসকারি ও হিন্দাল। হুমায়ুন ছিলেন জ্যেষ্ঠ এবং তাঁর মাতার নাম ছিল মহম সুলতানা। হুমায়ুন ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে তার পিতার মৃত্যুর পর দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।

হুমায়ুনের সিংহাসন নিরঙ্কুশ নয়

হুমায়ুন কথাটির অর্থ ভাগ্যবান হলেও, হুমায়ুন সার্থকনামা ছিলেন না। তিনি তার পিতার কাছ থেকে যে সিংহাসন পান তা মোটেই নিরঙ্কুশ ছিল না।

হুমায়ুনের সিংহাসন লাভ নিয়ে বিরোধ

  • (১) তৈমুর বংশে জ্যেষ্ঠ পুত্রই সিংহাসনের নায্য উত্তরাধিকারী হবেন এমন কোনো প্রথা এর আগে ছিল না। মৃত সম্রাটের সকল পুত্রই সিংহাসনের সমান দাবীদার হতে পারতেন। হুমায়ুনের ক্ষেত্রে তাঁর তিন ভ্রাতা বিশেষত কামরান দিল্লীর সিংহাসনের ওপর দাবী জানান।
  • (২) হুমায়ুনের আত্মীয় মহম্মদ জামান ও মহম্মদ সুলতানও দিল্লী সিংহাসনের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি দেন। এর ফলে তৈমুর বংশের মধ্যেই সিংহাসন নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।

হুমায়ুনের নিকট দুর্বল সাম্রাজ্য

বাবর যে সাম্রাজ্য রেখে যান তা ছিল শিখিল, অনিয়ন্ত্রিত এবং দুর্বল। বাবরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় বিদ্রোহ দেখা দেয়। জায়গীরদার ও আমীররাও হুমায়ুনের প্রতি আনুগত্য দিতে বিরত থাকে।

হুমায়ুনের আমলে শেরশাহের অভ্যুত্থান

সম্রাট হুমায়ূনের দুর্বলতার সুযোগে পরাজিত আফগান শক্তি বিপুল বিক্রমে পুনর্বার মাথা তুলে দাঁড়ায়। গুজরাটে বাহাদুর শাহ এবং বিহারে শেরশাহ দ্রুত আফগান সর্দারদের সঙ্ঘবদ্ধ করে দিল্লী দখলের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে শেরশাহের অভ্যূত্থান ছিল হুমায়ুনের পক্ষে দারুন বিপজ্জনক।

হুমায়ুনের সময় সেনাদলে ভাঙন

বাবরের মৃত্যুর পর মুঘল সেনাদল ও সর্দারদের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। বাবরের সেনা তুর্কী, উজবেগী, পার্সী, আফগান প্রভৃতি বিভিন্ন জাতির লোক নিয়ে গঠিত ছিল। বাবর নিজ ব্যক্তিত্বের দ্বারা এই সেনাদলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন। কিন্তু হুমায়ুনের সেই ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব শক্তি ছিল না।

হুমায়ুনের অর্থসঙ্কট

বাবর তার অমিতব্যয়িতা ও ভ্রান্ত অর্থনীতির দরুন রাজকোষ শূন্য করে যান। হুমায়ূন এজন্য দারুন অর্থসঙ্কটে পড়েন।

হুমায়ূনের চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব

উদ্ভূত সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার জন্য একজন সামরিক ও কূটনৈতিক দক্ষতাসম্পন্ন দৃঢ় চরিত্রের শাসকের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হুমায়ুনের চরিত্রে এই গুণগুলি ছিল না। তিনি উদারচিত্ত, আমোদপ্রিয়া, সংস্কৃতিবান লোক ছিলেন। রাজ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দৃঢ়তা ও ধৈর্য তার চরিত্রে আদপেই ছিল না।

উপসংহার :- ষ্ট্যানলি লেনপুল নামক ঐতিহাসিক বলেছেন যে, “হুমায়ুন একনাগাড়ে কোনো দুরূহ ও কঠিন কাজ করতে পারতেন না। সামান্য সফলতা লাভের পর তিনি অহিফেন সেবন ও আমোদ প্রমোদে কালক্ষেপ করতেন। সেই সুযোগে তার শত্রুরা শক্তি সঞ্চয় করত। যখন যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা উচিত তখন তিনি গৃহে থাকতেন এবং যাকে শাস্তি দেওয়া উচিত তাকে তিনি ক্ষমা করতেন। বাস্তব জ্ঞানের অভাব তার বিলক্ষণ ছিল।”

(FAQ) হুমায়ুনের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট কে ছিলেন?

হুমায়ুন।

২. হুমায়ুন কথার অর্থ কি?

ভাগ্যবান।

৩. হুমায়ুনের প্রধান সমস্যা কি ছিল?

শেরশাহের অভ্যুত্থান।

৪. হুমায়ুনকে ক্ষমতাচ্যুত করেন কে?

শেরশাহ।

Leave a Comment