হরপ্পা সভ্যতা (Harappan Civilization) -র ঐতিহাসিক উৎস, আবিষ্কার, নামকরণ, বিস্তার, আয়তন, উল্লেখযোগ্য নদী, যোগাযোগ, উল্লেখযোগ্য নগর, রাজনৈতিক জীবন প্রভৃতি দিক্ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
ভারতের প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতা প্রসঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার উৎস উপাদান, হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার, আবিষ্কারের ফল, আবিষ্কারক, সভ্যতার উন্মেষ, সমসাময়িক সভ্যতা, মেহেরগড় সভ্যতার উত্তরসূরি, হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র সমূহ, সভ্যতার অবস্থান, উল্লেখযোগ্য নদী, সিন্ধু সভ্যতা নামকরণ, হরপ্পা সভ্যতা নামকরণ, সভ্যতার প্রাচীনত্ব, সভ্যতার বিস্তার, সভ্যতার আয়তন, প্রায় ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা, তাম্র প্রস্তর যুগের সভ্যতা, নদীমাতৃক সভ্যতা, বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ, নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা, নগর পরিকল্পনা, শস্যাগার, স্নানাগার, সভ্যতার আধুনিকতা, সভ্যতার অধিবাসীদের সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, ধর্মীয় জীবন, আমদানি-রপ্তানি পণ্য ও হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ।
নগরকেন্দ্রিক হরপ্পা সভ্যতা (The Harappan civilization was urban)
প্রায় ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা | হরপ্পা সভ্যতা |
সূচনা | আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব |
অবস্থান | সিন্ধু নদী উপত্যকা |
সভ্যতার ধরণ | নগরকেন্দ্রিক |
প্রধান নগর | হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো |
পতন | আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব |
ভূমিকা :- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব প্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারত -এর হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা।
হরপ্পা সভ্যতার ঐতিহাসিক উৎস (Historical source of Harappan civilization)
লিখিত উপাদানের অভাবে ঐতিহাসিকগণ সিন্ধু সভ্যতায় প্রাপ্ত বিভিন্ন হাতিয়ার, মৃৎপাত্র, মূর্তি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে এই সভ্যতার ইতিহাস রচনা করেন।
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের ফল (Harappan civilization is the result of discovery)
এই হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারের ফলে প্রমাণ হয়। যে বৈদিক সভ্যতার পূর্বে এবং বিশ্বের সুপ্রাচীন সভ্যতাগুলির সমসাময়িক কালে ভারতে নগর সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।
হরপ্পা সভ্যতার উন্মেষ (Discovery of Harappan Civilization)
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভারতের সিন্ধুনদের উপত্যকা অঞ্চলে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।
হরপ্পা সভ্যতার সমসাময়িক সভ্যতা (A contemporary civilization of the Harappan civilization)
সিন্ধু সভ্যতা, প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা, মেসোপটেমীয় সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা প্রভৃতি সুউন্নত সভ্যতাগুলির সমসাময়িক ছিল।
মেহেরগড় সভ্যতার উত্তরসূরি হরপ্পা সভ্যতা (Mehergarh civilization was succeeded by Harappan civilization)
কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন যে, বালুচিস্তানের গ্রামীণ মেহেরগড় সভ্যতা -র উত্তরসূরি হিসেবে হরপ্পা বা সিন্ধুর নগর সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্বে ভ্রান্তি (Fallacies before the discovery of the Harappan civilization)
একশো বছর আগেও মনে করা হত যে, ভারতে আর্য সভ্যতার আগে কোনো সভ্যতার বিকাশ ঘটেনি। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ মন্তব্য করেছেন, “বৈদিক যুগ থেকে হিন্দু সভ্যতার শিকড় লক্ষ করা যায়।”
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের ফলে ভ্রান্তির অবসান (The discovery of the Harappan civilization ended the fallacy)
১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের ফলে ভ্রান্তির অবসান ঘটে এবং প্রমাণিত হয় যে, বৈদিক সভ্যতারও পূর্বে ভারতে হরপ্পার উন্নত নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার প্রসঙ্গে আর. সি. মজুমদারের বক্তব্য (In the context of the discovery of the Harappan civilization. C. Majumdar’s statement)
ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘Ancient India’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন যে,
“এই সভ্যতার আবিষ্কার আমাদের ভারতীয় ইতিহাসের ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব এক ধাক্কায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে পৌঁছে যায়।”
(ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার)
হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার (Discovery of the Harappan Civilization)
সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদ যুক্ত ছিলেন।
(১) চালস ম্যাসন
ইংল্যান্ড -এর প্রত্নতত্ত্ববিদ চার্লস ম্যাসন ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু উপত্যকায় সর্বপ্রথম হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন।
(২) কানিংহাম
ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৫৩ ও ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে বেশ কয়েকবার হরপ্পা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করেন। তিনি ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকে একটি সিলমোহর আবিষ্কার করেন।
(৩) দয়ারাম সাহানি
পরবর্তীকালে প্রত্নতত্ত্ববিদ দয়ারাম সাহানি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পাকিস্তান -এর পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারি জেলার ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পা নামক স্থানে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন।
(৪) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার একটি পুরোনো বৌদ্ধ বিহারে খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন।
(৫) জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
এরপর জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে স্যার জন মার্শালের নেতৃত্বে হরপ্পা ও মহেন-জো-দাড়ো নামক স্থান দুটিতে ব্যাপক খননকার্য চালানো হয়। ফলে এখানে প্রাচীন সভ্যতার আরও বহু নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়।
(৬) অন্যান্যদের প্রয়াস
এছাড়াও স্যার জন মার্শাল, মর্টিমার হুইলার, ম্যাকে, পিগট, ফ্রাঙ্কফোর্ট, ননীগোপাল মজুমদার প্রমুখ হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রসমূহ (Major centers of Harappan civilization)
বহুদূর বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে হরপ্পা সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। এর অন্তত ১৫০০টি কেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলি ছিল-
(১) হরপ্পা
পাঞ্জাবের রাভি বা ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল হরপ্পা। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি হরপ্পা আবিষ্কার করেন।
(২) মহেন-জো-দাড়ো
সিন্ধু প্রদেশে সিন্ধু নদের তীরে এই নগরটি অবস্থিত ছিল। এই নগরটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আবিস্কার করেন।
(৩) কালিবঙ্গান
ঘর্ঘরা নদীর তীরে অবস্থিত এই নগরটি আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
(৪) রুপার
পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছে।
(৫) লোথাল
গুজরাটের ভোগাবর নদীর তীরে অঞ্চলটি অবস্থিত ছিল। এটি ছিল সিন্ধু সভ্যতার একটি সমুদ্রবন্দর। এটি আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে।
(৬) অন্যান্য কেন্দ্র
এই সভ্যতার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলি হল সূতকাজেনদোর (বালুচিস্তান), দাবরকোট (বালুচিস্তান), চানহুদাড়ো (সিন্ধু প্রদেশ), কোটদিজি (সিন্ধু প্রদেশ), রাখিগড়ি (পূর্ব পাঞ্জাব), বানওয়ালি (হরিয়ানা), রোজদি (গুজরাট), রংপুর (গুজরাট), ধোলাভিরা (গুজরাট), আলমগিরপুর (উত্তরপ্রদেশ) প্রভৃতি।
সিন্ধু সভ্যতা নামকরণ (Naming the Indus Civilization)
সিন্ধু নদের উপত্যকায় এই সভ্যতার সর্বপ্রথম নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে সাধারণভাবে প্রাচীন এই সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত।
হরপ্পা সভ্যতা নামকরণ (Naming the Harappan Civilization)
পরবর্তীকালে সিন্ধু সভ্যতার নামকরণ করা হয় ‘হরপ্পা সভ্যতা’ বা ‘হরপ্পা সংস্কৃতি’। হরপ্পার নাম অনুসারে এই সভ্যতার নামকরণের প্রধান দুটি কারণ হল-
(১) প্রথম নিদর্শন প্রাপ্তি
বহুদূর বিস্তৃত এই সভ্যতার প্রথম নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিল হরপ্পায়।
(২) প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন
মহেন-জো-দাড়ো বা অন্যান্য স্থানের তুলনায় হরপ্পায় প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি বেশি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ।
হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব (Antiquity of Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার সূচনা ও অবলুপ্তি করে ঘটেছিল তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে।
- (১) ঐতিহাসিক ড. সি. জে. গ্যাড, ড. ফ্যারি প্রমুখ হরপ্পা সভ্যতার বিকাশকাল হিসেবে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দকে চিহ্নিত করেছেন।
- (২) স্যার মর্টিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতার সূচনাকাল হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দকে চিহ্নিত করেছেন।
- (৩) রমেশচন্দ্র মজুমদার, হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী ও কালীকিঙ্কর দত্ত রচিত ‘An Advance History of India’-তে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশকাল হিসেবে মোটামুটি ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দকে উল্লেখ করা হয়েছে।
- (৪) সুমের ও মহেন-জো-দাড়োতে প্রাপ্ত সিলমোহরের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করে স্যার জন মার্শাল বলেছেন যে, হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে। কেননা, সুমেরীয় সিলমোহরের তারিখ ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বলে মনে করা হয়।
- (৫) সবদিক বিচার করে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দকেই হরপ্পা সভ্যতার সূচনাকাল বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।
- (৬) ড. মটিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তির কাল হিসেবে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দকে চিহ্নিত করেছেন। অধিকাংশ পণ্ডিত এই অভিমত গ্রহণ করেছেন।
হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার (Spread of Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা সিন্ধু নদের অববাহিকা অঞ্চল ছাড়াও বহুদূর বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমে ইরান থেকে পূর্বে দিল্লির নিকটবর্তী আলমগিরপুর এবং উত্তরে জম্মুর নিকটবর্তী মান্ডা থেকে দক্ষিণে গোদাবরী নদীর তীরে দাইমাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা।
সর্ববৃহৎ হরপ্পা সভ্যতা (The largest Harappan civilization)
পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিল সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা।
হরপ্পা সভ্যতার আয়তন (Size of the Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার আয়তন ছিল প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার চেয়ে হরপ্পা সভ্যতার আয়তন অন্তত ২০ গুণ বেশি ছিল। তবে এর সবগুলি কেন্দ্রেই উন্নত নগরজীবনের বিকাশ ঘটেনি।
প্রায় ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা হরপ্পা (Harappa is a civilization of almost historical period)
হরপ্পা সভ্যতায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে বিভিন্ন মৃৎপাত্র, সিলমোহর প্রভৃতি পাওয়া গেছে। সিন্ধু লিপি আবিষ্কার হলেও তা পাঠোদ্ধার করা আজও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এজন্য এই সভ্যতাকে ‘প্রায় ঐতিহাসিক যুগ – এর সভ্যতা‘ বলে চিহ্নিত করা হয়।
তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা হরপ্পা (Copper-Stone Age Civilization Harappa)
হরপ্পা সভ্যতার মানুষ বিভিন্ন হাতিয়ার ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরির জন্য পাথর এবং তামা ব্যবহার করত। এজন্য এই সভ্যতাকে ‘তাম্র প্রস্তর যুগ -এর সভ্যতা‘ বলা হয়।
হরপ্পা সভ্যতায় ব্রোঞ্জের ব্যবহার (Use of Bronze in Harappan Civilization)
পরের দিকে সিন্ধু সভ্যতায় তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে তৈরি ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয়।
হরপ্পা সভ্যতা নদীমাতৃক সভ্যতা (Harappan civilization is a riverine civilization)
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলির মতো হরপ্পা সভ্যতাও নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। সিন্ধু-সহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য কয়েকটি নদীর বিস্তীর্ণ অববাহিকা অঞ্চলে এই সভ্যতার প্রসার ঘটেছিল। তাই হরপ্পা সভ্যতাকে ‘নদীমাতৃক সভ্যতা’ বলা হয়।
হরপ্পা সভ্যতার উল্লেখযোগ্য নদী (Important river of Harappan civilization)
সিন্ধু, রাভি বা ইরাবতী, ঘর্ঘরা, শতদ্রু, ভোগাবর প্রভৃতি নদী ছাড়াও বিভিন্ন শাখানদী ও উপনদীর অববাহিকায় হরপ্পা সভ্যতার প্রসার ঘটেছিল।
বহির্বিশ্বের সাথে হরপ্পা সভ্যতার যোগাযোগ (Contact of the Harappan Civilization with the Outside World)
সমকালীন সুমেরীয়, মিশরীয়, আক্কাদীয়, মেসোপটেমীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরীয় প্রভৃতি সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়।
নগরসভ্যতা হরপ্পা (Urban civilization Harappa)
হরপ্পা সভ্যতা ছিল একটি সুপ্রাচীন নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। নাগরিকদের রুচিবোধ, কর্মপ্রচেষ্টা ও দক্ষতার দ্বারা এই সভ্যতা এক উন্নত নগর সভ্যতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
হরপ্পা সভ্যতার উল্লেখযোগ্য নগর (Important city of Harappan civilization)
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম নগরগুলি ছিল হরপ্পা, মহেন-জো-দাড়ো, কালিবঙ্গান, চানহুদাড়ো, কোটদিজি, আলমগিরপুর, রংপুর, বানওয়ালি, লোথাল, সুরকোটরা, রোজদি প্রভৃতি।
হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা (Urban planning of the Harappan civilization)
সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেই উন্নত নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার প্রধান দিকগুলি ছিল-
(১) হরপ্পা সভ্যতার জীবনযাত্রার সাদৃশ্য (Similarity of Harappan Civilization lifestyle)
প্রাচীন হরপ্পার বিভিন্ন নগরগুলিতে সমাজ ও সংস্কৃতি মোটামুটি একই ধরনের ছিল। বিভিন্ন নগরের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও নগরগুলির পরিকল্পনা, গঠন রীতি, জীবনযাত্রা প্রণালী প্রভৃতির মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখা যায়।
(২) হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাঘাট (Roads of Harappan Civilization)
বিভিন্ন নগরের রাস্তাঘাট প্রায় একইরকম ছিল।
- (ক) হরপ্পা সভ্যতার প্রধান রাস্তাগুলি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
- (খ) প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাগুলি ছিল প্রশস্ত, সোজা এবং পরিচ্ছন্ন।
- (গ) রাস্তাগুলি ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল। প্রধান রাস্তা থেকে একাধিক সরু গলিপথ বেরিয়ে যেত। রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ নগরকে বিভিন্ন বর্গাকার বা আয়তাকার ক্ষেত্রে বিভক্ত করত।
- (ঘ) হরপ্পা সভ্যতায় রাস্তা নির্মাণে চুন, সুরকি, পাথর প্রভৃতি ব্যবহার করা হত।
- (ঙ) হরপ্পা সভ্যতার রাস্তার দু-পাশে বাঁধানো ফুটপাত, ডাস্টবিন ও আলোর ব্যবস্থা ছিল।
(৩) হরপ্পা সভ্যতার ঘরবাড়ি (Home of the Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার অধিকাংশ কেন্দ্রের ঘরবাড়ি গুলির মধ্যে অদ্ভূতভাবে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
- (ক) হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলিতে গৃহনির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুনে পোড়ানো ইট এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোদে শুকানো ইট ব্যবহার করা হত। ইটগুলি পাতলা ও ছোটো আকৃতির হত।
- (খ) বাড়িতে প্রবেশের জন্য গলিপথ থাকত। বাড়িগুলি প্রাচীরবেষ্টিত থাকত। বাড়িগুলির রাস্তার দিকে কোনো দরজা-জানালা থাকত না। ফলে দিনের বেলায়ও আলোর অভাব হত।
- (গ) প্রতিটি বাড়িতে রান্নাঘর, শোওয়ার ঘর, স্নানঘর, উঠান, কুয়ো প্রভৃতি থাকত।
- (ঘ) শহরে অসংখ্য দ্বিতল বাড়ি ছিল। মনে করা হয় যে, আয়তাকার উঁচু স্থানের বাড়িগুলিতে প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিরা এবং নীচু স্থানের বাড়িগুলিতে সাধারণ মানুষ বসবাস করত।
- (ঙ) ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড মনে করেন যে, হরপ্পার পৌর শাসকরা সম্ভবত গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত আইনকানুন মেনে চলতেন।
(৪) হরপ্পা সভ্যতার স্নানাগার (Bathhouse of Harappan Civilization)
মহেন-জো-দাড়োর দুর্গ অঞ্চলে একটি বিরাট বাঁধানো স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে।
- (ক) স্নানাগারটি ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও ১০৮ ফুট প্রশস্ত। এর জলাশয়টি ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া এবং ৮ ফুট গভীর।
- (খ) স্নানাগারটিতে ওঠানামার জন্য দু-দিক থেকে সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। গ্রীষ্ম ও শীতকালে প্রয়োজন অনুসারে এখানে ঠান্ডা ও গরম জলের ব্যবস্থা করা যেত।
- (গ) জলাশয়ের এক পাশে কয়েকটি ছোটো ছোটো ঘর ছিল। সম্ভবত স্নানের পর পোশাক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই ঘরগুলি ব্যবহার করা হত বলে ড. রামশরণ শর্মা উল্লেখ করেছেন।
(৫) হরপ্পা সভ্যতার শস্যাগার (Barn of Harappan Civilization)
হরপ্পা-সহ বেশ কয়েকটি শহরে শস্যাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
- (ক) হরপ্পার শস্যাগারটি ২০০ x ১৫০ বর্গফুট উঁচু একটি ভিত্তির ওপর অবস্থিত। এখানে আপৎকালীন সময়ের জন্য খাদ্যশস্য মজুত থাকত বলে মনে করা হয়।
- (খ) শস্যাগারটির পাশে শ্রমিকদের বস্তির মতো ঘর ছিল। শস্যাগারটি হরপ্পা সভ্যতায় সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানার ইঙ্গিত বহন করে।
- (গ) ঐতিহাসিক এ. এল. বাসাম এই শস্যাগারকে বর্তমান কালের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
- (ঘ) স্যার মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে, পঞ্চম শতকের আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও এত বড়ো শস্যাগারের নিদর্শন পাওয়া যায় নি।
(৬) হরপ্পা সভ্যতার নগরদুর্গ (The citadel of the Harappan civilization)
মহেন-জো-দাড়োয় চল্লিশ ফুট উঁচু একটি ঢিপির ওপর একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
- (ক) উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দুর্গটি নগরের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
- (খ) ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, দুর্গ-অঞ্চলের বাড়িগুলিতে শাসকশ্রেণির লোকজন বসবাস করত। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, এই নগরদুর্গ আসলে ছিল এই সভ্যতার ‘পুরোহিত শাসকের রাজপ্রাসাদ‘।
(৭) হরপ্পা সভ্যতার পয়ঃপ্রণালী (Sewer system of Harappan civilization)
হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাগুলির দু-ধারে বর্তমান কালের মতো উন্নত পয়ঃপ্রণালী ছিল।
- (ক) বাড়ির নোংরা জল পয়ঃপ্রণালীর সাহায্যে একেবারে নগরের বাইরে বেরিয়ে যেত। পয়ঃপ্রণালীগুলির ওপরে পাথরের ঢাকনাও বসানো থাকত।
- (খ) ঐতিহাসিক এ. এল. বাসাম তাঁর The Wonder That Was India‘ গ্রন্থে বলেছেন যে, “রোমান সভ্যতার আগে অন্য কোনো প্রাচীন সভ্যতায় এত সুদক্ষ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল না।”
(৮) হরপ্পা সভ্যতার ডাস্টবিন (Dustbin of Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার শহরের বাড়িগুলির সামনে ইট দিয়ে বাঁধানো ডাস্টবিন থাকত। বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা এই ডাস্টবিনে জমা হত। সেগুলি নিয়মিত পরিষ্কারের সুব্যবস্থা ছিল।
(৯) হরপ্পা সভ্যতার ম্যানহোল (Manhole of Harappan Civilization)
শহরের নর্দমার সঙ্গে অনেক ম্যানহোল যুক্ত ছিল। এগুলির ওপরে ঢাকনা বসানো থাকত এবং ঢাকনা খুলে নিয়মিত এগুলি পরিষ্কার করা হত।
ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে, ‘পৃথিবীর আর কোনো প্রাচীন সভ্যতা হরপ্পার মতো স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে এত গুরুত্ব দেয়নি।’
(১০) হরপ্পা সভ্যতার রক্ষণশীলতা (Conservatism of Harappan Civilization)
হরপ্পা সভ্যতার নয়টি স্তরে খননকার্য চালিয়ে মোটামুটি একই ধরনের জীবনযাত্রা প্রণালী, নগর পরিকল্পনা, ওজন বা মাপ ব্যবস্থা প্রভৃতির সন্ধান পাওয়া গেছে। অবশ্য শেষদিকের স্তরগুলির সর্বত্রই অবক্ষয়ের ছাপ লক্ষ করা যায়। তাই ঐতিহাসিক ড. এ. এল. বাসাম বলেছেন যে,
“এই সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর তীব্র রক্ষণশীলতা।”
হরপ্পা সভ্যতার আধুনিকতা (Modernity of Harappan Civilization)
সিন্ধু হরপ্পা সভ্যতা অন্তত পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন হলেও এই সভ্যতায় বহু আধুনিক বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব ছিল।
- (১) ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, সম্ভবত হরপ্পা সভ্যতার প্রধান নগরগুলিতে রাতে গ্যাসের আলো জ্বলত।
- (২) এই সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র চানহুদাড়োতে খননকার্য চালিয়ে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে যার ভিত্তিতে অনুমান করা হয় যে, এই সভ্যতায় মেয়েরা আধুনিক যুগের মেয়েদের অনুরূপ লিপস্টিক, নেলপলিশ, ভ্যানিটি ব্যাগ জাতীয় সামগ্রীর ব্যবহার জানত।
- (৩) স্বাস্থ্য-সচেতনতার বিষয়েও এই সভ্যতার মানুষ আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিল।
হরপ্পা সভ্যতার মানুষের সামাজিক জীবন (Social life of people of Harappan civilization)
হরপ্পার সমাজ সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে যতুটুকু তথ্য আছে তা থেকে হরপ্পার সমাজের বেশ কয়েকটি দিক জানা যায়। হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক জীবন নিম্নরূপ-
(১) হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস (Social Hierarchy of Harappan Civilization)
হরপ্লার সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থান ছিল।
- (ক) ডি. ডি. কোশাস্বীর মতে, প্রভাবশালী পুরােহিত ও শাসকগােষ্ঠী, বেতনভুক যােদ্ধা সম্প্রদায়, বণিক, কারিগর ও ভূস্বামীদের দল এবং চাষি, দরিদ্র শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল হরপ্পা সভ্যতার সমাজব্যবস্থা।
- (খ) অধ্যাপক পুসলকর হরপ্পার জনসমাজকে শিক্ষিত সম্প্রদায়, যােদ্ধাশ্রেণি, বণিকশ্রেণি, করিগর ও শ্রমিক শ্রেণি – এই চারভাগে ভাগ করেছেন।
(২) হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক অবস্থান (Social status of Harappan civilization)
সিন্ধুর সমাজব্যবস্থায় এক কেন্দ্রীয় শাসকগােষ্ঠীর অবস্থান ছিল। যাদেরকে সাহায্য করার জন্য গড়ে উঠেছিল আমলাতন্ত্র।
- (ক) সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে শাসক এবং পুরােহিতদের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চে।
- (খ) সমাজের এক শ্রেণি যুদ্ধবিগ্রহকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি বিত্তবানদের একাংশ ব্যাবসাবাণিজ্য ও নানা ধরনের কারিগরি শিল্পের সাথে যুক্ত ছিল।
- (গ) সমাজের একবারে নীচু তলায় অবস্থান ছিল চর্মকার, চাষি, শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের।
(৩) হরপ্পা সভ্যতার সমাজব্যবস্থার প্রকৃতি (Nature of Social System of Harappan Civilization)
সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত অসংখ্য নারীমূর্তি দেখে ঐতিহাসিকদের অনুমান এখানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
(৪) হরপ্পা সভ্যতার খাদ্যাভ্যাস (Food habits of the Harappan civilization)
হরপ্লাবাসীরা গম ও যবের তৈরি খাবার খেত। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন পশুর মাংস, খেজুর, দুধ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। সিন্ধু উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে আঙুর ও আনারস উৎপাদিত হত। সিন্ধু অঞ্চলে তামার বড়শির নিদর্শন মেলায় মনে করা হয় মাছ ও কচ্ছপের মাংসও তাদের খাদ্য ছিল।
(৫) হরপ্পা সভ্যতার পােশাক-পরিচ্ছদ (Clothing of the Harappan Civilization)
হরপ্পাবাসীরা সুতি ও পশমের পােশাক পরত। তারা সাধারণত দুটি বস্ত্র খন্ড পোশাক হিসেবে ব্যবহার করত। একটি দেহের উধর্বাংশে অপরটি দেহের নিম্নাংশে ব্যবহার করা হত।
(৬) হরপ্পা সভ্যতার অলংকার (Ornament of Harappan civilization)
সিন্ধুবাসী নারী, পুরুষ উভয়েই ধাতুর তৈরি অলংকার পরত।
- (ক) কানের দুল, চুড়ি, আংটি, মল, কোমরবন্ধ, মালা প্রভৃতি তারা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত।
- (খ) হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা চোখে সুরমা টানতে জানত।
- (গ) নারীরা বিভিন্নভাবে চুল বাঁধতেও শিখেছিল। তারা চুলে হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি লাগিয়ে রাখত। পাখার মতাে দেখতে এক ধরনের অলংকার তারা মাথায় ব্যবহার করত।
(৬) হরপ্পা সভ্যতার বিনােদন (Entertainment of Harappan Civilization)
সিন্ধু উপত্যকায় মার্বেল পাথরের তৈরি এক ধরনের বল ও পাশা আবিষ্কৃত হয়েছে। ঐতিহাসিকদের ধারণা এপুলি ছিল সিল্ধুবাসীর খেলার সরঞ্জাম। প্রাপ্ত বেশ কিছু সিলমােহরে শিকারের দৃশ্য রয়েছে। এই শিকারের দৃশ্যগুলি থেকে অনুমান করা হয় যে তাদের বিনােদনের আর-এক মাধ্যম ছিল শিকার করা। চিত্তবিনােদনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নাচ, গান, ষাঁড় ও পাখির লড়াই আয়ােজিত হত।
হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন (Political Life of Harappan Civilization)
এই হরপ্পা সভ্যতায় মানুষ রাজনীতি সচেতন ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত ‘সিন্ধুলিপি’র পাঠোদ্ধার না হওয়ায় হরপ্পা সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
হরপ্পা সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন (Economic Life of Harappan Civilization)
প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা মূলত কৃষি ও পশুপালন ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও বাণিজ্যও এই সভ্যতার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। হরপ্পা সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন নিম্নরূপ-
(১) হরপ্পা সভ্যতার পশুপালন (Animal husbandry of the Harappan civilization)
হরপ্লাবাসীদের অর্থনীতিতে পশুপালনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হরপ্পাবাসীদের গৃহপালিত পশু ছিল গােরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শূকর ও উট। প্রয়ােজনে তারা গৃহপালিত পশুদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়া গােরু ও মহিষকে তারা চাষে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত।
(২) হরপ্পা সভ্যতার কৃষিকাজ (Agriculture of the Harappan Civilization)
হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান প্রধান কৃষিজাত ফসল ছিল গম, যব, তিল, মটর, রাই, বাদাম প্রভৃতি। এছাড়াও বাজরা, ধান, নানা ধরনের কলাই এবং কার্পাস চাষ হত বলে জানা যায়।
(৩) হরপ্পা সভ্যতার শিল্প (Art of the Harappan Civilization)
সিন্ধু সভ্যতায় ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকারশিল্প ও বস্ত্রবয়নশিল্পের প্রচলন ছিল।
(ক) ধাতুশিল্প
হরপ্পায় তামা ও ব্রোঞ্জের বর্শা, কুঠার, বড়শি, করাত, ছুঁচ, দাঁড়িপাল্লা প্রভৃতি নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে সােনার অলংকার নির্মাণশিল্পের প্রচলন ছিল। তবে লোহার কোনো চিহ্ন এখানে পাওয়া যায় নি।
(খ) মৃৎশিল্প
হরপ্পা সভ্যতার মৃৎশিল্পীরা পলিমাটি, বালি ও চুনের গুঁড়াে মিশিয়ে কলশি, জালা, থালা, পেয়ালা, ডেকচি, বয়াম প্রভৃতি নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও নানাপ্রকার খেলনা তৈরি করত।
(গ) বস্ত্রবয়নশিল্প
হরপ্পা সভ্যতা বস্ত্রবয়নে খুব উন্নত ছিল বলে জানা যায়।
- (i) সিন্ধু উপত্যকার বসতি এলাকা থেকে পােড়ামাটি ও বিভিন্ন ধরনের বস্তুর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি তকলি মিলছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সুতাে কাটা হত বলে মনে করা হয়।
- (ii) মহেনজোদাড়োয় প্রাপ্ত রঙিন কাপড়ের টুকরােটি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের প্রাচীনতম সুতি কাপড়ের নিদর্শন।
- (iii) সিন্ধু সভ্যতায় যে পুরােহিত রাজার পাথরের মূর্তিটি পাওয়া গেছে, তার পােশাকে ছুঁচ দিয়ে করা যে অলংকরণ বা নকশা দেখা যায়, তা উন্নত সূচিশিল্পের পরিচায়ক।
(৪) হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য (Trade of the Harappan Civilization)
হরপ্পা সভ্যতায় তিন ধরনের বাণিজ্যের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।
(ক) স্থানীয় বাণিজ্য
স্থানীয় বাণিজ্য চলত নিকটবর্তী একটি অঞ্চলের সঙ্গে অন্য একটি অঞ্চলের। পশুতে টানা গাড়ি, ভারবাহী বলদ ও জলযানের সাহায্যে পণ্যসামগ্রীর লেনদেন হত।
(খ) অভ্যন্তরীণ দূরপাল্লার বাণিজ্য
মূলত সিন্ধু নদ ধরেই দেশের মধ্যেকার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাণিজ্য চলত। বণিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে লােথাল, কালিবঙ্গান, ধােলাভিরা ছাড়াও সুদূর হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গেও বাণিজ্যিক যােগাযােগ গড়ে উঠেছিল।
(গ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মিশর, মেসােপটেমিয়া প্রভৃতি বাইরের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য চলত।
হরপ্পা সভ্যতার আমদানি পণ্য (Imported products of the Harappan civilization)
বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান থেকে সােনা, রুপা, সিসা, টিন ও দামি পাথর হরপ্পা সভ্যতায় আমদানি করা হত।
হরপ্পা সভ্যতার রপ্তানি পণ্য (Export product of Harappan civilization)
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হত তুলাে, সুতি বস্ত্র, তামা ও হাতির দাঁতের তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র। সিন্ধু সভ্যতার লােথাল বন্দরটি ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র।
হরপ্পাবাসীর ধর্মীয় জীবন (Religious life of the Harappans)
প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর উপর ভিত্তি করে পণ্ডিতগণ হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে কিছুটা আভাস পেয়েছেন।
(১) হরপ্পা সভ্যতায় ধর্মীয় বিশ্বাস (Religious Beliefs in the Harappan Civilization)
হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত দেবদেবীর মূর্তিগুলি থেকে অনুমান করা হয় যে এখানে মাতৃমূর্তির পূজা করা হত। বিভিন্ন সিলে হাতি, বাঘ, মহিষ, ষাঁড়ের ছবি দেখে মনে করা হয় যে সেসময় পশুকেও পূজা করা হত। এ ছাড়াও হরপ্পাবাসীরা লিঙ্গ ও বৃক্ষ উপাসনায় বিশ্বাসী ছিল।
(২) হরপ্পা সভ্যতায় টোটেম পূজা (Totem worship in the Harappan civilization)
হরপ্পার অধিবাসীরা টোটেম অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাণী, প্রকৃতি ও জড় বস্তুকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করত।
(ক) লিঙ্গ ও যােনি মূর্তির উপাসনা
হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা লিঙ্গ ও যােনি মূর্তির উপাসনা করত। লিঙ্গ পূজার সঙ্গে পরবর্তীকালে দেবতা শিবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তুলে ধরা হয়।
(খ) বৃক্ষ উপাসনা
হরপ্পাবাসীরা বৃক্ষ পূজাও করত। তারা মূলত অশ্বখ বৃক্ষের উপাসনা করত। হরপ্পায় প্রাপ্ত এক সিলমােহরে পা-তােলা ভঙ্গিতে দণ্ডায়মান নারীর উদর থেকে এক চারা গাছ বের হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ঐতিহাসিকদের অনুমান একটি ছিল ভূ-মাতার মূর্তি।
(গ) পশুর উপাসনা
হরপ্পার অধিবাসীরা বিভিন্ন পশুর পূজা করত। বিভিন্ন পশুর মধ্যে কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়ের পূজার প্রচলন ছিল সব থেকে বেশি। কালিবঙ্গানে প্রাপ্ত একটি সিলমােহরে ছাগলের প্রতিকৃতি দেখে মনে করা হয় আদি শিবের পূজাতে ছাগ বলি দেওয়া হত।
(৩) হরপ্পা সভ্যতায় যােগী মূর্তির উপাসনা (Worship of Yogi idols in Harappan civilization)
হরপ্পায় একটি সিলমােহরে পশুবেষ্টিত পদ্মাসনে উপবিষ্ট, তিন মুখ ও তিনটি শিং বিশিষ্ট একটি দেবমূর্তি পাওয়া গেছে। জন মার্শাল হিন্দু দেবতা পশুপতি শিবের সঙ্গে এই দেবতার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন। তবে ব্যাসাম একে আদি শিব বলেছেন।
(৪) হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃমূর্তির পূজা (Mother idol worship in Harappan civilization)
হরপ্পা সভ্যতার কেন্দ্রগুলি থেকে অসংখ্য নারীমূর্তি আবিষ্কৃত হওয়ায় অনুমান করা হয় যে, এখানে মাতৃদেবীর পূজা খুব জনপ্রিয় ছিল। কোনাে কোনাে মূর্তির গায়ে ধোঁয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখে মনে হয়, দেবীকে প্রসন্ন করতে অধিবাসীরা ধূপ ও প্রদীপ জ্বালাত।
(৫) হরপ্পা সভ্যতায় ধর্মীয় প্রতীকসমূহ (Religious symbols in the Harappan civilization)
হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে পদ্ম, স্বস্তিকা, চক্র, স্তম্ভ ও ত্রিশূল প্রভৃতি প্রতীক বা চিহ্ন জড়িত ছিল। মহেনজোদারাে ও হরপ্পায় প্রাপ্ত বেশ কয়েকটি স্বস্তিকাচিহিত সিলে শিংবিশিষ্ট মাথার ছবি মিলেছে।
(৬) হরপ্পা সভ্যতায় পারলৌকিক বিশ্বাস (Supernatural Beliefs in the Harappan Civilization)
সিন্ধু উপত্যকার ধ্বংসাবশেষে মন্ত্রপূত কবচের মতাে দেখতে এক ধরনের বস্তুর অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, হরপ্পার অধিবাসীরা অতিপ্রাকৃত অর্থাৎ অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করত। বজ্রপাত, ঝড়, বন্যা প্রভৃতি ঘটনাকে তারা অতিপ্রাকৃত শক্তির রােষের কারণ বলে মনে করত।
(৭) হরপ্পা সভ্যতায় অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া (Funeral Rituals in the Harappan Civilization)
হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা বিশ্বাস করত মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায় না। এসময় তিন ধরনের পদ্ধতিতে মৃতদেহ সমাধির খোঁজ পাওয়া যায়।
(ক) প্রথম পদ্ধতি
মৃতদেহের সঙ্গে তার ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী সমাধিস্থ করা হত। একে বলা হয় সম্পূর্ণ সমাধি।
(খ) দ্বিতীয় পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে কেবলমাত্র মৃতদেহটিকে সমাধিস্থ করা হত।
(গ) তৃতীয় পদ্ধতি
মৃতদেহ ভস্মীভূত করে সেই ভস্ম একটি আধারে ভরে, আধারটিকে সমাধিস্থ করা হত। মৃতদেহকে সাধারণত সমাধিস্থানের উত্তর থেকে দক্ষিণে শায়িত করার নিয়ম ছিল বলে মনে করা হয়।
(৮) হরপ্পা সভ্যতায় মন্দিরের অস্তিত্বহীনতা (Absence of temples in Harappan civilization)
হরপ্পাবাসীদের ধর্মবিশ্বাসে মন্দির বা দেবালয়ের কোনো স্থান ছিল না বলেই মনে করা হয়।
হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ (The cause of the decline of the Harappan civilization)
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ নিয়ে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিক এই সভ্যতার পতনের সুনির্দিষ্ট কিছু কারণের ওপর জোর দিয়েছেন।
(১) ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন
ভূপ্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সিন্ধু অঞ্চলে মরুভূমির সূচনা ঘটে। ভূগর্ভের জল ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে পড়লে কৃষি-উৎপাদন অত্যন্ত কমে যায় এবং খাদ্যাভাব তীব্রতর হয়।
(২) ভূমিকম্প
গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, সিন্ধু উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। তাই ধারণা করা হয় যে, ভূমিকম্পের ফলে এই সভ্যতার বিনাশ ঘটে।
(৩) বন্যা
অনেকের মতে বন্যা ও প্লাবন সিন্ধু সভ্যতার বিনাশ ঘটিয়েছিল। সিল্ধুবাসীরা নদীতে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করত। ফলে সিন্ধু নদের জল অবরুদ্ধ হয়ে পলি জমে নদীগর্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতি বর্ষাতেই নদীর জল দু- কূল ছাপিয়ে নগরগুলিকে প্লাবিত করে। এম. আর. সাহানির মতে, প্লাবন সিন্ধু সংস্কৃতিকে ভাসিয়ে দেয়।
(৪) সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তন
সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে মহেনজোদারাের বাণিজ্যিক গুরুত্ব নষ্ট হয়। শুধুমাত্র সিন্ধু নদ নয়, শতদ্রু ও যমুনা নদীও গতিপথ পরিবর্তন করায় সমগ্র সভ্যতাটি অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়।
(৫) রক্ষণশীলতা
হরপ্পা, মহেনজোদাড়োর ক্রমিক অবক্ষয়ের আর-একটি কারণ ছিল স্থবিরতা। জীবনযাত্রার কোনাে ক্ষেত্রেই উন্নত রীতির প্রয়ােগ ঘটাতে নাগরিকরা আগ্রহী ছিল না। এই রক্ষণশীল মনােভাব তাদের জনজীবনকে পঙ্গু করে তুলেছিল।
(৬) বনাঞ্চল ধ্বংস
সিন্ধুবাসী গৃহ নির্মাণের প্রয়ােজনীয় ইট পােড়ানাের জন্য তারা যথেচ্ছভাবে বনজঙ্গল ধ্বংস করে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্রুত কমে যায়।
(৭) অন্তর্বিপ্লব বা গৃহযুদ্ধ
সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হিসেবে অধিকাংশ পণ্ডিত সংঘাত ও রক্তপাতকে নির্দিষ্ট করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, অন্তর্বিপ্লব বা গৃহযুদ্ধ থেকেই এই রক্তপাত ঘটেছে।
(৮) অভিনিস্ক্রমণ
কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি কারণে সিন্ধু উপত্যকার বাসিন্দারা আরও উন্নত জীবন ও নিরাপত্তার আশায় অভিনিক্রমণ করলে হরপ্পা সভ্যতা জনশূন্য হয়ে পড়ে।
(৯) বহিরাক্রমণ
অনেকে ধারণা বহিরাগত শত্রুর আক্রমণকে, প্রধানত বৈদিক আর্যদের আক্রমণকে হরপ্পার পতনের জন্য দায়ী করেছে। বৈদিক দেবতা ইন্দ্রকে পুরন্দর বা নগর ধ্বংসকারী উপাধি প্রদান আর্যদের দ্বারা হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের যুক্তিটিকে আরও জোরালো করেছে।
(১০) সাম্প্রতিক গবেষণা
সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা কীভাবে ধ্বংস হল তা নিয়ে আজও গবেষণা চলছে। অধুনা উপগ্রহের মাধ্যমে ভূত্বকের ছবি তুলে এই সভ্যতার বিলুপ্তির প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান চলছে।
উপসংহার :- হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কার ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির দিগন্তকে প্রসারিত করে তার প্রাচীনত্ব ও মৌলিকত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সভ্যতার উন্নত রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, পয়ঃপ্রণালী, স্নানাগার, শস্যাগার, উন্নত স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি ভারত তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নজির স্থাপন করেছে।
[FAQ] হরপ্পা সভ্যতা (Harappan Civilization) সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পশ্চিম পাঞ্জাবের মন্টগোমেরি জেলায়।
দয়ারাম সাহানি ও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন, ব্যাপক বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস ও কৃষির সংকট, মরুভূমির বিস্তার, ভূমিকম্প, বন্যা, সিন্ধুনদের গতিপথ পরিবর্তন, গৃহযুদ্ধ, পৌর প্রশাসনের অবক্ষয় এবং আর্য আক্রমণকে দায়ী করা হয়।