জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রসঙ্গে পত্রিকার প্রকাশকাল, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার প্রকাশের উদ্দেশ্য, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদক, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদকদের কটাক্ষ, শিরোভূষণ কবিতা, ইংরেজি ও বাংলা জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রকাশ, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার লেখক সম্পর্কে জানবো।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দ্বিভাষিক জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রসঙ্গে জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদক, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার প্রকাশকাল, ইয়ং বেঙ্গল দলের মুখপত্র জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার শিরোভূষণ কবিতা, জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার অবদান সম্পর্কে জানব।

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা

ঐতিহাসিক পত্রিকাজ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা
ধরণসাপ্তাহিক পত্রিকা
ভাষাবাংলা
প্রকাশকাল১৮ জুন ১৮৩১ খ্রি
সম্পাদকদক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা

ভূমিকা :- ডিরোজিওর অনুগামী ইয়ং বেঙ্গলদের মুখপত্র ছিল জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা। জ্ঞানান্বেষণ ছিল সেই যুগের একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা।

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার প্রকাশকাল

কলকাতা চোরবাগান থেকে এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্ৰকাশ করার জন্য গভর্মেন্ট ১৮৩১ সালের ৩১ মে দক্ষিণানন্দন (পরে দক্ষিণারঞ্জন) মুখোপাধ্যায়কে লাইসেন্স দেন। পরবর্তী ১৮ই জুন ‘জ্ঞানান্বেষণে’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার প্রকাশের উদ্দেশ্য

প্রথম সংখ্যার “অনুষ্ঠানে” পত্রিকা প্রচারের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এইরূপ লিখিত হয়েছিল,

“জ্ঞানান্বেষণ। শনিবার ইং ১৮ জুন। —– সংপ্রতি এতন্মহানগরে নানাবিধ সমাচারপত্র দ্বারা নানা দেশীয় সমাচার প্রচার হইতেছে তাহাতে এই পত্র প্রস্তুতকরা কেবল নানা দেশীয় গুহ্যাগুহ্য বৃত্তান্ত প্রকাশ করিবার নিমিত্তে এমত নহে পরন্তু অন্য প্রয়োজন অনেক আছে।”

  • (১) এক প্রয়োজন এই যে এতদ্দেশীয় বিশিষ্ট বংশোদ্ভব অনেক মহাশয়েরা লোকের প্রপঞ্চ বাক্যেতে প্রতারিত হইতেছেন তাহাতে তাহারদিগের কোনরূপেই ভাল হইবার সম্ভাবনা না দেখিয়া খেদিত হইয়া বিবেচনা করিলাম যে নানা দেশে প্রচলিত বেদবেদান্ত মনুমিতাক্ষরা প্রভৃতি গ্রন্থের আলোচনা ছাড়া তাঁহারদিগের ভ্রান্তি দূর করিতে চেষ্টা করিব।
  • (২) দ্বিতীয়তঃ এই যে এতদ্দেশনিবাসি অনেকেই আপন জাতিবিহিত ধর্ম্মের প্রতি জিজ্ঞাসা করিলে যথাশাস্ত্রানুসারে কহিয়া থাকেন কিন্তু সেই মহাশয়েরা এমত কর্ম করেন যে তাহা কোনো বিশিষ্টলোকেরই কৰ্ত্তব্য নহে ইহার কারণ কি তাহাও বিবেচনা করিতে হইবেক।
  • (৩) তৃতীয়তঃ এই যে ভূগোল প্রভৃতি গ্রন্থ যেগুলি এতদ্দেশে দেশান্তরীয় ও বঙ্গদেশীয় ভাষায় নানাপ্রকারে প্রকাশ হইয়াছে তথাপি সে অতিবিস্তারিতরূপে প্ৰচার হয় নাই অতএব সকলের আশু বোধের নিমিত্তে সেই সকল গ্রন্থ আমরা বঙ্গদেশীয় ভাষায় ক্রমেই প্রকাশ করিব। এবং অন্য বিষয় যাহা প্রকাশ করা আবশ্যক তাহাও উপস্থিতানুসারে প্রকাশ করিতে ত্রুটি করিব না ইতি – (২ জুলাই ১৮৩১ তারিখের ‘সমাচার দর্পণ-এ’ উদ্ধৃত)

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদক

দক্ষিণানন্দন নামে সম্পাদক হলেও জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার প্রুফ সংশোধনাদি যাবতীয় সম্পাদকীয় কার্য সম্পন্ন করতেন গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ।

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদকদের কটাক্ষ

সমসাময়িক ‘সম্বাদ তিমিরনাশক’ কটাক্ষ করে লেখা প্রকাশিত হয়।

“সন ১২৩৮ সালের ৫ আষাঢ়ে জ্ঞানান্বেষণ কাগজ প্রকাশ হয় তাহার প্রকাশক শ্রীযূত দক্ষিণানন্দন ঠাকুর ইনি বাবু সূর্য্যকুমার ঠাকুরের দৌহিত্র বাঙ্গালা লেখা পড়া কিছুই জানেন না এবং বাঙ্গালা কথা কহিতে ভাল পারেন না তাহাতে রুচিও নাই অথচ বাংলা সমাচার কাগজের এডিটর না হইলেই নয় মাতামহদত্ত কিঞ্চিৎ সঞ্চিত আছে তাহা তাবৎকে বঞ্চিত করিয়া ঐ কাগজের জন্ম কথঞ্চিৎ কিছু ব্যয় করেন এক জন নাটুরে ভাট মদ্যপায়িকে পণ্ডিত জানিয়া চাকর রাখিয়াছেন সে নাস্তিক হিন্দুদ্বেষী কাগজ আরম্ভাবধি কেবল ধার্মিকবর শ্রীযুত চন্দ্রিকাকর মহাশয়কে কটু কহে আর হিন্দুশাস্ত্র ভাল নহে তাহারি দোষ আপন বুদ্ধিতে যাহা আইসে তাহাই লেখে এজন্য ভদ্রলোকমাত্র কেহ ঐ কাগজ পাঠ করেন না অথচ কাগজ ছাপা করিয়া জন কয়েক লোকের বাটীতে পাঠাইয়া দেন। — (২১ জানুয়ারি ১৮৩২ তারিখের ‘সমাচার দর্পণে’ উদ্ভূত)।

জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার শিরোভূষণ কবিতা

শিরোভূষণ-স্বরূপ ‘জ্ঞানান্বেষণে একটি কবিতা মুদ্রিত হত, যেটি গৌরীশঙ্করের রচনা। কবিতাটি এইরূপ –

“এহি জ্ঞান মনুষ্যাণামজ্ঞানতিমিরং হর।

দাসত্যঞ্চ সংস্থাপ্য শঠতামপি সংহর।।”

“বাঞ্ছা হয় জ্ঞান তুমি কর আগমন।

দয়া সত্য উভয়কে করিয়া স্থাপন।।

লোকের অজ্ঞানরূপ হয় অন্ধকার

একেবারে শঠতারে করহ সংহার।।”

ইংরেজি ও বাংলা জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রকাশ

দক্ষিণানন্দন মুখোপাধ্যায়ের পর ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পরিচালন করেন রসিককৃষ্ণ মল্লিক এবং মাধবচন্দ্র মল্লিক। তারা পত্রিকাখানিকে অতঃপর ইংরেজি ও বাংলায় প্রকাশ করবার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করেন। ১৫ জানুয়ারি ১৮৩৩ তারিখে সরকার লাইসেন্স মঞ্জুর করেন।

রামগোপাল ঘোষ ও জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা

স্বনামধন্য রামগোপাল ঘোষ ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রের সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাঁর অনেক রচনা এই পত্রিকায় স্থান পেয়েছিল।

উপসংহার :- প্রায় দশ বছর চলবার পর, ১৮৪০ সালের নভেম্বর মাসে ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকার প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

(FAQ) জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জ্ঞানান্বেষণ কি ধরণের পত্রিকা?

সাপ্তাহিক পত্রিকা।

২. জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়।

৩. জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রকাশিত হয় কখন?

১৮ জুন ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক পত্রিকাগুলি

Leave a Comment