চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এর সময়কাল, বিবাদমান পক্ষ, যুদ্ধের কারণ হিসেবে বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে টিপুর যোগ, স্বাধীনতার স্মারক বৃক্ষ রোপণ, লর্ড ওয়েলেসলির আগমন, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন, গভর্নর জেনারেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা, টিপুর পরাজয়, স্বাধীন মহীশূর রাজ্যের পতন, টিপুর রাজ্যের ভাগবাটোয়ারা ও চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯৯ খ্রিঃ)
সময়কাল | ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | মহীশূর রাজ্যের টিপু সুলতান ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি |
ফলাফল | টিপু সুলতানের পরাজয় ও মহীশূর রাজ্যের পতন |
টিপু সুলতানের মৃত্যু | ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এর পর স্বাক্ষরিত শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি টিপুর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। মহীশূরের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও সেনাবাহিনী সুসংহত করে তিনি নিজ শক্তি বৃদ্ধি করতে শুরু করেন।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের কারণ
বিভিন্ন কারণে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। যেমন –
(১) বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে টিপুর যোগাযোগ
সামরিক সাহায্য লাভের আশায় টিপু ফ্রান্স, মরিশাস, কনস্টান্টিনোপল, আরব, কাবুল প্রভৃতি বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
(২) স্বাধীনতার স্মারক বৃক্ষ রোপণ
তিনি নিজে ফ্রান্সের ‘জেকোবিন ক্লাব’ (Jacobin Club)-এর সদস্য হন এবং কিছু ফরাসি স্বেচ্ছাসেবক তার পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মহীশূরে উপস্থিত হয়। তাদের প্রেরণায় টিপু রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে ‘স্বাধীনতার স্মারক বৃক্ষ’ বা ‘Tree of Liberty’ রোপন করেন।
(৩) লর্ড ওয়েলেসলির আগমন
এই সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলির (১৭৯৮-১৮০৫ খ্রিঃ) পক্ষে টিপুর শক্তিবৃদ্ধি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলল না।
(৪) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন
ভারত -এ ইংরেজ সাম্রাজ্য বিস্তার ও সুদৃঢ় করার জন্য ওয়েলেসলি‘ অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি‘ প্রবর্তন করেন এবং ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে টিপুর কাছে এক চরমপত্র পাঠিয়ে তাঁকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন।
(৫) গভর্নর জেনারেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
টিপু গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলির প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা
টিপু সুলতান অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্ৰহণে অস্বীকার করলে ইংরেজ ও নিজামের যুগ্মবাহিনী মহীশূর আক্রমণ করে (১৭৯৯ খ্রিঃ)।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে টিপুর পরাজয়
সদাশির ও মলভেরীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে আশ্রয় নেন। শত্রুপক্ষ রাজধানী অবরোধ করে এবং তিনি এই যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন (৪ঠা মে, ১৭৯৯ খ্রিঃ)।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের ফলে স্বাধীন মহীশূর রাজ্যের পতন
এই যুদ্ধে টিপু সুলতানের পরাজয় ও মৃত্যুতে হায়দার আলির প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন মহীশূর রাজ্যের পতন ঘটে।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের পর মহীশূর রাজ্যের ভাগ বাটোয়ারা
- (১) টিপুর মৃত্যুর পর তাঁর রাজ্যের বৃহদংশ ইংরেজ ও নিজামের মধ্যে বণ্টিত হয়। ইংরেজরা পায় শ্রীরঙ্গপত্তম, কোয়েম্বাটুর, কানাড়া, মালাবার প্রভৃতি অঞ্চল।
- (২) হায়দ্রাবাদ-সংলগ্ন কয়েকটি জেলা নিজামকে দেওয়া হয়, যদিও কিছুদিনের মধ্যেই তা আবার ইংরেজরা দখল করে (১৮০০ খ্রিঃ)।
- (৩) অপর অংশে মহীশূরের প্রাচীন হিন্দু রাজবংশের এক নাবালককে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এইভাবে দাক্ষিণাত্যে ইংরেজদের প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহীশূর রাজ্যের পতন ঘটে।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের ফলাফল
- (১) ঐতিহাসিক ডীন হাটন (Dean Hutton) বলেন যে, সামরিক, অর্থনৈতিক ও শান্তিকারী ব্যবস্থা হিসেবে মহীশূর জয় হল ক্লাইভের পরবর্তীকালে অর্জিত সৰ্বাধিক সাফল্য।
- (২) এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজরা এক প্রবল পরাক্রান্ত শত্রুরহাত থেকে অব্যাহতি পায়।
- (৩) ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের ক্ষেত্রে পলাশীর যুদ্ধ-এ ইংরেজরা প্রথম বাধাটি অতিক্রম করেছিল, শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধে দ্বিতীয় বাধাটি অতিক্রান্ত হয়।
উপসংহার:- এই যুদ্ধের ফলে ফরাসিরা তাদের শেষ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মিত্রের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয় এবং ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে ফরাসিদের বাধাদান প্রচেষ্টার স্থায়ী বিলুপ্তি ঘটে।
(FAQ) চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ।
লর্ড ওয়েলেসলি।
চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে বা শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধে।
টিপু সুলতান।
মহীশূরের টিপু সুলতান।