গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব প্রসঙ্গে রোম ও চীন সভ্যতার প্রভাব, মুদ্রার ওপর প্রভাব, বিজ্ঞানে প্রভাব, নাটকে প্রভাব, ভাস্কর্যে প্রভাব, চিত্রশিল্পে প্রভাব, বৈদেশিক প্রভাবের ভারতীয়করণ ও ভারতীয় মণীষা সম্পর্কে জানবো।

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব

ঐতিহাসিক ঘটনাগুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব
সাম্রাজ্যগুপ্ত সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাতাশ্রীগুপ্ত
শ্রেষ্ঠ রাজাসমুদ্রগুপ্ত
শকারিদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব

ভূমিকা :- ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন যে, “প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বৈদেশিক সভ্যতার সঙ্গে সংযোগের ফলে গুপ্ত সংস্কৃতির এরূপ উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছিল।”

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব সম্পর্কে যুক্তি

এটা সত্য যে, গুপ্ত যুগে ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে বিচ্ছিন্ন ছিল না। পূর্বে দূর প্রাচ্য, চীন এবং পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্য-এর সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক যোগ ছিল। পশ্চিম ভারতের শক শক্তিকে পরাস্ত করার ফলে পশ্চিম ভারতের বন্দরগুলির সঙ্গে গঙ্গা-যমুনা উপত্যকার প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটে।

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক রোম ও চীন সভ্যতার প্রভাব

দক্ষিণ ভারত সমুদ্রগুপ্তের বিজয়ের ফলে সংযোগ ঘটেছিল। এর ফলে পশ্চিম এশিয়া হতে রোমান সভ্যতার প্রভাব বাণিজ্যের মাধ্যমে গুপ্ত ভারতে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে। চীনের সঙ্গে সংযোগ অনেক আগেই ছিল। ফা-হিয়েন -এর ভারত ভ্রমণ একথা প্রমাণ করে। এর ফলে গুপ্ত যুগে ভারতে চীনা ও রোমান সভ্যতার প্রভাব পড়ে।

গুপ্ত যুগের মুদ্রার ওপর বৈদেশিক প্রভাব

ভারতের গুপ্ত যুগের মুদ্রাগুলি পরীক্ষা করলে, এই মুদ্রার গঠনে রোমান সলিডাসের প্রভাব দেখা যাবে। গুপ্ত যুগের সিংহলাঙ্কিত মুদ্রায় বিশেষভাবে রোমান প্রভাব দেখা যায়। মুদ্রাগুলির ওজন, প্রান্তগুলি কাটা কাটা রাখা এবং তার শিল্প রোমান মুদ্রার অনুকরণে করা হয়।

গুপ্ত যুগের বিজ্ঞানে বৈদেশিক প্রভাব

বরাহমিহিরের সূর্যসিদ্ধান্তে রোমান জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রভাব প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সূর্যসিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, রোমক নগরে সূর্য ময়দানবকে এই বিজ্ঞানের জ্ঞান দেন। সুতরাং বরাহমিহির পরোক্ষভাবে রোম -এর নিকট ঋণ স্বীকার করেছেন। আর্যভট্ট -এর জ্যোতির্বিজ্ঞানের চিন্তাধারার ওপর আলেকজান্দ্রিয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রভাব স্পষ্টতই দেখা যায়।

গুপ্ত যুগের নাটকে বৈদেশিক প্রভাব

প্রাচীন গুপ্ত যুগের সংস্কৃত নাটকের রচনায় গ্রীক প্রভাব দেখা যায়। নাটকের শেষে যবনিকা পতন বা পর্দা ফেলানোর প্রথা যবন বা গ্রীকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। মিনান্দার -এর আমলে ভারতে গ্রীক নাটকের এই প্রভাব পড়ে এবং গুপ্ত যুগে তার ভারতীয়করণ করা হয়।

গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যে বৈদেশিক প্রভাব

ডঃ বাসাম গুপ্ত ভাস্কর্য, বিশেষত দেব-দেবীর মূর্তি গঠনের ভঙ্গিমায় গ্রীক ভাস্কর্যের প্রচ্ছন্ন প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। যদিও মূর্তিগুলির দাঁড়াবার ভঙ্গি ও মুখাকৃতি ভারতীয়, কিন্তু পাথর কেটে এরূপ মনুষ্যাকার দেব-দেবী মূর্তি নির্মাণের মধ্যে তিনি গ্রীক প্রভাব দেখতে পেয়েছেন।

গুপ্ত যুগের চিত্রশিল্পে বৈদেশিক প্রভাব

অজন্তার চিত্রাবলীতে চীনা অঙ্কনশৈলী কোনো কোনো চিত্রে বিশেষভাবে প্রকট হয়েছে। চীনা ধরনের নাক, চোখ, গহনা ও রং-এর ব্যবহার এর সাক্ষ্য দেয়।

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাবের ভারতীয়করণ

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, গুপ্ত সভ্যতার উপর কিছু কিছু বৈদেশিক প্রভাব পড়েছিল। ভারতীয় সভ্যতা চিরকালই পরকে আপন করে নিতে পেরেছে। এইভাবে কিছু কিছু বৈদেশিক প্রভাবের ভারতীয়করণ হওয়া অসম্ভব নয়। মৌর্য সাম্রাজ্য-এর পতনের পর বৈদেশিক অনুপ্রবেশের ফলে ভারতের বৈদেশিক প্রভাব নিঃসন্দেহে এসে পড়ে।

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব সম্পর্কে স্মিথের মন্তব্য যথার্থ নয়

গুপ্ত যুগে বাণিজ্যের মাধ্যমে রোমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র বৈদেশিক সংযোগের ফলেই গুপ্ত যুগের সভ্যতার এতদূর উন্নতি হয় স্মিথের এই মন্তব্য যথার্থ নয়। ফুলের বোঁটা ও পরাগ যেমন আসল কিন্তু তার সৌন্দর্য তার পাপড়িতে প্রকাশিত হয়, গুপ্ত সভ্যতার মূল প্রেরণা ছিল ভারতীয়, তাতে কিছু কিছু বৈদেশিক প্রভাব অলঙ্করণের কাজ করে মাত্র।

গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে ভারতীয় মনীষা

গুপ্ত যুগের সাহিত্য, দর্শন ছিল একান্তভাবে ভারতীয় মনীষার অভিব্যক্তি। গুপ্ত স্থাপত্যও ছিল ভারতীয়। গুপ্ত ভাস্কর্যে অমরাবতী ও মথুরা রীতির মিশ্রণ করে তাকে নবরূপ দান করা হয়।

উপসংহার :- গুপ্ত যুগের রাজনৈতিক ঐক্য, শান্তি ও স্থিতি জনসাধারণের সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে। এই সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব কাজ করেছিল এমন কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

(FAQ) গুপ্ত সভ্যতার বিকাশে বৈদেশিক প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

শ্রীগুপ্ত।

২. গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রথম সার্বভৌম রাজা কে ছিলেন?

প্রথম চন্দ্রগুপ্ত

৩. গুপ্ত সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কে ছিলেন?

সমুদ্রগুপ্ত।

৪. লিচ্ছবি দৌহিত্র এবং ভারতের নেপোলিয়ন কাকে বলা হয়?

সমুদ্রগুপ্ত।

৫. শকারি কে ছিলেন?

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।

Leave a Comment