সুলতানি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুলতান যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে শিক্ষা দান, ইসলামীয় শিক্ষার বিস্তার, হিন্দু শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠদান, অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, ছাত্রদের স্থান, উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য, উচ্চ শিক্ষার বাহন, শিক্ষাকেন্দ্র মিথিলা, নদীয়া, কাশ্মীর, মক্তব ও মাদ্রাসা সম্পর্কে জানবো।

সুলতানি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনাসুলতানি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা
হিন্দুটোল, পাঠশালা
ইসলামমক্তব, মাদ্রাসা
মাদ্রাসা-ই-মুইজিকুতুবউদ্দিন আইবক
মিথিলার কবিবিদ্যাপতি
সুলতানি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা

ভূমিকা :- ভারত তুর্কী শাসন স্থাপিত হওয়ার আগে ভারতের নিজস্ব শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এই শিক্ষারীতি প্রাচীন হিন্দু যুগ থেকে চলে আসছিল। তুর্কী আফগানরা তাদের নিজস্ব শিক্ষারীতি ভারতে আনেন। এর ফলে দীর্ঘকাল ধরে ওই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা পাশাপাশি চলতে থাকে।

সুলতানি যুগে শিক্ষার আদান-প্রদান

তুর্কী শাসনের গোড়ার দিকে উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদান-প্রদান না হলেও, দীর্ঘকাল পাশাপাশি থাকায় উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদান-প্রদান চলতে থাকে।

সুলতানি যুগে শিক্ষাদান

  • (১) যেহেতু উভয় ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে নিজ নিজ ধারার ধর্মীয় চিন্তাধারার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল, সেহেতু হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এবং মুসলিম সমাজে মোল্লা-উলেমারা ছিলেন শিক্ষাদান এবং শিক্ষা বিস্তারের প্রধান স্তম্ভ।
  • (২) তারা একাধারে শিক্ষাদান ও ধর্ম সম্পর্কীয় কাজের দায়িত্ব পালন করতেন। হিন্দুরাজ্যগুলিতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শ্রেণী ও মুসলিম শাসকদের অধীনস্থ রাজ্যগুলিতে মোল্লাশ্রেণী নিজ নিজ শাসকশ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষাদানের কাজে রত থাকতেন। এরা শিক্ষক হিসেবে সমাজে সম্মান ভোগ করতেন।

সুলতানি যুগে ইসলামীয় শিক্ষার বিস্তার

খলজি যুগের আগে সুলতানি শাসন ভারতের গভীরে প্রবেশ করে নি। এজন্য বেশির ভাগ অঞ্চলে একমাত্র হিন্দু শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। পরে ইসলামীয় শিক্ষা ব্যবস্থাও ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

সুলতানি যুগে হিন্দু শিক্ষা ব্যবস্থা

  • (১) হিন্দু শিক্ষা ব্যবস্থার কয়েকটি স্তর ছিল। হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় ধ্যানধারণায় শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে ছিল না। শিক্ষাদান ছিল ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ ধর্ম বা জৈন ধর্ম অবলম্বী শ্রেণীর ব্যক্তিগত দায়িত্ব। রাজারা শিক্ষাদানরত ব্যক্তিদের ভরণপোষনের জন্য ভূমিদান করতেন।
  • (২) কিন্তু শিক্ষাদান কিভাবে হবে অথবা কি শিক্ষা দেওয়া হবে সে সম্বন্ধে তারা কোনো শর্ত আরোপ করতেন না। হিন্দু বা জৈন মন্দিরগুলির সংলগ্ন স্থানে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠশালা স্থাপিত হত।
  • (৩) শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য এই সকল পাঠশালায় মন্দিরের পুরোহিত অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি শিক্ষকের কাজ করতেন। রাজা বা ভূস্বামীর দানের দ্বারা এই সকল বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহ হত।

সুলতানি যুগে পাঠদান

এই সকল শিশু পাঠশালায় ধর্মশাস্ত্র, অক্ষর পড়িয়ে ও অঙ্ক গণনা শিক্ষা দেওয়া হত। ধর্মশাস্ত্র ও ভাষা সাহিত্য বেশীর ভাগ মুখস্ত করানো হত। এইভাবে আবৃত্তির মাধ্যমে পাঠদান চলত।

সুলতানি যুগে অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা

বড় বড় নগর বা জনপদ-এ জনসাধারণের উদ্যোগ ও দাক্ষিণ্যে এই ধরনের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠশালা চালু করা হত। ছাত্রদের শিক্ষালাভের জন্য কোনো বেতন দিতে হত না।

সুলতানি যুগে ছাত্রদের স্থান

ব্রাহ্মণ পণ্ডিত পরিচালিত পাঠশালায় শূদ্র ছাড়া অন্য সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রকে পাঠ দেওয়া হত। বৌদ্ধরা তাদের পাঠশালায় সকল বর্ণের ছাত্রকে স্থান দিতেন।

সুলতানি যুগে উচ্চতর শিক্ষা

টোল, চতুষ্পাঠী ও সঙ্গমগুলিতে উচ্চতর শিক্ষা দেওয়া হত। অনেক সময় গুরুকুল বা গুরুগৃহে থেকে বিদ্যার্থী উচ্চতর শিক্ষা পেত। উচ্চতর শিক্ষার বিষয়বস্তু দুভাগে বিভক্ত ছিল, যথা ধর্মশাস্ত্র, স্মৃতি প্রভৃতি শিক্ষা অথবা কাব্য-দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র শিক্ষা। শিক্ষার্থী যে কোনো একটি শাখায় শিক্ষা নিত।

সুলতানি যুগের শিক্ষা সম্পর্কে আলতেকরের মন্তব্য

ডঃ আলতেকরের মতে, “ভারতে মুসলিম বিজয়ের পর হিন্দু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অতীত যুগের জ্ঞানভাণ্ডারকে রক্ষার জন্য শিক্ষকশ্রেণী প্রধান উদ্যম দেখান।”

সুলতানি যুগে উচ্চশিক্ষার সমৃদ্ধি ক্ষয়

শিক্ষক মণ্ডলী শিক্ষার্থীদের প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে থাকেন, যাতে এগুলি বিস্মৃতির আড়ালে না চলে যায়। নতুন কিছু গ্রহণ বা উদ্ভাবনের দিকে তাঁরা উৎসাহ দেখান নি। এর ফলে উচ্চশিক্ষার পুষ্টি ও সমৃদ্ধি ক্ষয় পেতে থাকে।

সুলতানি যুগে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য

উচ্চশিক্ষা দানের প্রধান লক্ষ্য হয়, শিক্ষার্থীর নৈতিক শক্তিকে বৃদ্ধি করা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণবিধি রক্ষায় তাকে উৎসাহিত করা।

সুলতানি যুগে শিক্ষা গ্ৰহণের সময়সীমা

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ছাত্রের শিক্ষা সমাপ্ত হলে গুরুই তা ছাত্রকে জানিয়ে দিতেন। মনুস্মৃতি অনুসারে ব্রাহ্মণ সন্তানের ৫ বছর বয়সে উপনয়নের পর ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত গুরুকুলে পাঠগ্রহণ করাই ছিল বিধি। গুরুরা ছাত্রকে পুত্রবৎ দেখতেন। ছাত্ররা গুরুকে পিতার মতই শ্রদ্ধা ভক্তি ও সেবা করতেন।

সুলতানি যুগে উচ্চশিক্ষার বাহন

সংস্কৃত ভাষা ছিল উচ্চ শিক্ষার বাহন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃতের পাঠ শুরু হত। মৌখিক শিক্ষাদানই ছিল প্রধান। কদাচিৎ ছাত্রকে পাণ্ডুলিপি পাঠে উৎসাহিত করা হত।

সুলতানি যুগে শিক্ষার বিষয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত ও অঙ্ক গণনা শিক্ষা দেওয়া হত। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানে জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষ, গণিত, শারীর বিদ্যা ও চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া হত। সাধারণ উচ্চশিক্ষায় কাব্য, ছন্দ, ব্যাকরণ, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষা করা যেত। ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে বর্ণভেদ শিক্ষা লাভের পথে বাধা ছিল।

সুলতানি যুগে গুরুকে দক্ষিণা প্রদান

গুরু ছাত্রের ব্যক্তিগত পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে ছাত্রের পাঠ সাঙ্গ হত। কখনও কখনও ছাত্র গুরুকে দক্ষিণা দিত। বিশেষ প্রতিভাবান ছাত্ররা সার্বভৌম, উপাধ্যায়, মহামহোপাধ্যায়, দ্বিবেদী, ত্রিবেদী প্রভৃতি উপাধি লাভ করত।

সুলতানি যুগের শিক্ষাকেন্দ্র মিথিলা

  • (১) মধ্য যুগে হিন্দুদের উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উত্তর বিহারের মিথিলা ছিল একটি বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র। মিথিলার পণ্ডিত জগদ্ধারা ভগবদ গীতা, মেঘদূতের টীকা রচনা করেন। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ঠাকুর তার ভক্তি সঙ্গীতের দ্বারা বিহার-বাংলাকে ভাসিয়ে দেন।
  • (২) মিথিলার গণেশ উপাধ্যায় নব ন্যায় রচনা করেন এবং তার বিখ্যাত গ্রন্থ তত্ত্ব চিন্তামণি ছিল ন্যায় শাস্ত্রের এক বিখ্যাত টীকা গ্রন্থ। মিথিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করার জন্য ছাত্রদের শলাকা পরীক্ষা দিতে হত।

সুলতানি যুগের শিক্ষাকেন্দ্র নদীয়া

সেন যুগে বাংলার নবদ্বীপ বা নদীয়া ছিল এক প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র। বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের পরে নদীয়ায় হিন্দু শাস্ত্র, সংস্কৃত সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষার ধারা অব্যাহত ছিল।

সুলতানি যুগের শিক্ষাকেন্দ্র কাশ্মীর

কাশ্মীরে সংস্কৃত সাহিত্য, দর্শন ও বৌদ্ধ শাস্ত্র চর্চার বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। কাশ্মীরের ধর্মসহিষ্ণু সুলতান জয়নাল আবেদিনের আমলে এই শিক্ষার ধারা কাশ্মীরে অক্ষুন্ন ছিল।

রাজপুত রাজাদের উৎসাহ

রাজপুত রাজারাও জ্যোতিষ, জ্যোতির্বিদ্যা, সাহিত্য, দর্শনের চর্চায় উৎসাহ দিতেন। ধার, উজ্জয়িনী বিদ্যাশিক্ষার বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল।

হিন্দু পণ্ডিতদের দক্ষিণে গমন

উত্তর ভারতে মুসলিম বিজয়ের পর বহু হিন্দু পণ্ডিত বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে চলে যান। এই স্থানে তারা চতুষ্পাঠি, খেটিকা স্থাপন করে শিক্ষা বিতরণ করেন।

সুলতানি যুগে শিক্ষার প্রসারে সদর-উস-সুদূরের ভূমিকা

দিল্লির সুলতানি আমলে দিল্লী সুলতানরা ইসলামীয় শিক্ষার প্রসারে উদ্যম দেখান। সদর-উস-সুদূর ছিলেন একাধারে দাতব্য ও ইসলামীয় শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী। সুলতানি রাজত্বের একটি বড় অংশ তাঁর দপ্তরের খরচার জন্য নিয়োজিত হয়। উলেমা ও মোল্লা সম্প্রদায় সদরের নির্দেশে শিক্ষা দানের কাজে আত্মনিয়োগ করতেন। এজন্য রাষ্ট্র থেকে ভূমি ও অর্থ প্রদান করা হত।

সুলতানি যুগে মক্তব

  • (১) প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলির নাম ছিল মক্তব। মসজিদ, খানকা, দরগাগুলির সংলগ্ন স্থানে মক্তব স্থাপিত হত। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও স্বতন্ত্রভাবে মক্তব স্থাপিত হত। মক্তবগুলির স্থাপনা ও ব্যয় নির্বাহের ভার সরকার, মুসলিম ধর্মীয় সংস্থা ও সাধারণ মুসলিমরা বহন করতেন।
  • (২) হিন্দুদের পাঠশালার মতই মক্তব ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। মোল্লা বা মৌলভীরা এখানে পাঠদান করত। সাধারণ মুসলিম পরিবারের শিশুরা এখানে প্রাথমিক শিক্ষা পেত।
  • (৩) সম্পন্ন মুসলিম পরিবারের শিশুরা নিজগৃহে মোল্লার কাছে শিক্ষা পেত। মক্তবে বিনা বেতনে ছাত্ররা পড়ত এবং যে কোনো মুসলিম শিক্ষার্থী মক্তবে ভর্তি হতে পারত। জাতি বা বর্ণগত কোনো বৈষম্য মানা হত না।

সুলতানি যুগে মক্তবে শিক্ষার বিষয়

মক্তবে আরবী বা ফার্সী ভাষা শিক্ষার সঙ্গে ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রের পাঠ দেওয়া হত। অক্ষর পরিচয়ের জন্য তাখিৎ বা কাঠের ফলকে অক্ষর লিখে ছাত্রদের শেখানো হত। কোরাণের বয়েৎ মুখস্থ করান হত।

সুলতানি যুগের মাদ্রাসা

ইসলামীয় উচ্চশিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিল মাদ্রাসা। এগুলির ব্যয়ভার সরকার বহন করতেন। মাদ্রাসাগুলির অপর নাম ছিল জামিয়া। সুলতান ও প্রাদেশিক শাসনকর্তারা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা করতেন। ছাত্ররা মাদ্রাসা সংলগ্ন ছাত্রবাসে থাকত। এখানে পড়া ও থাকা-খাওয়ার জন্য ছাত্রদের কোনো ব্যয় হত না। মাদ্রাসার সমুদায় খরচ সরকার বহন করতেন।

সুলতানি যুগে মাদ্রাসার শিক্ষার বিষয়

ইজাজ-ই-খসরুভি থেকে জানা যায় আরবী ও ফারসী ভাষার উচ্চতর পাঠক্রম ছাড়া, মাদ্রাসায় ছাত্রেরা মানকুল বা ধর্মশাস্ত্র, তফসির বা ধর্মশাস্ত্রের ব্যাখ্যা, হাদিস- পয়গম্বরের আপ্ত বাক্যের ব্যাখ্যা, ফিখ বা আইন শাস্ত্র, রিয়াজি বা অঙ্ক, মাজ্জুম বা জ্যোতির্বিদ্যা, মনটিক – তর্কশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে পাঠ নিত।

সুলতানি দাস বংশের আমলে মাদ্রাসা

  • (১) দিল্লী সুলতানদের মধ্যে সুলতান কুতবুদ্দিন আইবক মাদ্রাসা-ই-মুইজি স্থাপন করেন। বখতিয়ার খলজি বাংলা ও বিহারে কয়েকটি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। মধ্য এশিয়ায় মোঙ্গল আক্রমণের ফলে বহু ইসলামীয় পণ্ডিত ভারতে এসে ইলতুৎমিসের দরবারে আশ্রয় পান।
  • (২) ইলতুৎমিস দিল্লীতে মুইজ্জি ও নাসিরি মাদ্রাসার পৃষ্টপোষক ছিলেন। ইলতুৎমিসের বংশধর নাসিরুদ্দিন মহম্মদের আমলে জলন্ধরে এক বিখ্যাত মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক নিজামউদ্দিন সিরাজ নাশিরি মাদ্রাসায় অধ্যক্ষতা করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনও বহু মাদ্রাসা ও ইসলামীয় শাস্ত্রের পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।

সুলতানি খলজি বংশের আমলে মাদ্রাসা

  • (১) জালালউদ্দিন খলজিআলাউদ্দিন খলজি উলেমা ও মৌলভীদের মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে হস্তক্ষেপ করতেন না। সিরিনগরের হাউজ ইলাহিভবনের পাশে আলাউদ্দিন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (২) ফিরিস্তার মতে ৪৫ জন বিখ্যাত পণ্ডিত আলাউদ্দিনের আনুকূল্যে বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করতেন। আলাউদ্দিনের কঠোর সমালোচক জিয়াউদ্দিন বরণী স্বীকার করেছেন যে, সুলতান আলাউদ্দিন এমন ৪৬ জন মুসলিম পণ্ডিতকে ভাতা দিতেন যাদের জ্ঞান ও বিদ্যা বুখারা, সমরখন্দ, বাগদাদের বা ইস্পাহানের পণ্ডিতদের অপেক্ষা বেশি ছিল।
  • (৩) যে সকল গুণী, দার্শনিক ও শিক্ষাগুরু আলাউদ্দিনের আনুকূল্য ছাড়াই নিজ গুণে ইতিহাসে খ্যাতি পান তাদের মধ্যে তাজউদ্দিন, রুকনউদ্দিন, শেখ উসমান প্রমুখের নাম করা যায়।

দিল্লির সুলতানি তুঘলক বংশের আমলে মাদ্রাসা

  • (১) মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লীতে একটি মাদ্রাসা ও তৎসংলগ্ন মসজিদ নির্মাণ করেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক ইসলামীয় শিক্ষা বিস্তারে সর্বাপেক্ষা বেশি আগ্রহ দেখান। তার উদ্যাগে শত শত মক্তব ও ৩০টি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়।
  • (২) পুরাতন মাদ্রাসাগুলির তিনি সংস্কার ও উন্নতির ব্যবস্থা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রধান মাদ্রাসা ছিল দিল্লীর মাদ্রাসা-ই-ফিরোজশাহী (১৩৫২ খ্রি)। মৌলনা জালালুদ্দিন রুমী এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন।

শিক্ষার প্রসারে সিকান্দার লোদীর উদ্যম

দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদীর উদ্যমের ফলে বহু হিন্দু ফার্সী সাহিত্যের সমৃদ্ধি জানতে পেরে শুধুমাত্র ভাষা ও সাহিত্যের স্বাদ পাওয়ার জন্য ফার্সী শিখতে শুরু করেন। মক্তব ও মাদ্রাসাগুলির দ্বার তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সুলতানের চেষ্টায় মক্তব, মাদ্রাসায় প্রার্থনার সময় হিন্দু ছাত্রদের প্রার্থনায় যোগ দিতে বাধ্য করা হত না।

সুলতানি যুগে মক্তব ও মাদ্রাসা প্রসারের ফল

মক্তব ও মাদ্রাসার প্রসারের ফলে হিন্দুরাও ফার্সী ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী হন। ধর্মান্তর গ্রহণকারী হিন্দুরা স্বেচ্ছায় আরবী ও ফার্সী শিক্ষায় আগ্রহ দেখান। রাজনৈতিক স্বার্থ ও সরকারি চাকুরীর লোভে বহু সাধারণ হিন্দু সুলতানি রাষ্ট্রভাষা ফার্সী শিখতে শুরু করেন। কায়স্থ সম্প্রদায় বিশেষভাবে তাদের সন্তানদের মক্তবে ফার্সী শিক্ষায় উৎসাহ দেন। এর ফলে তারা করণিক ও অন্যান্য পদ পেতেন।

উপসংহার :- সংস্কৃত পুঁথি ফার্সীতে অনুবাদের জন্য ফিরোজ তুঘলক, সিকান্দার লোদী উৎসাহ দেখান। সংস্কৃত চিকিৎসাশাস্ত্র ‘অর্গর মহাবেদক’ সিকান্দার লোদীর উদ্যোগে ফার্সীতে ‘টিব্বি সিকান্দার’ নামে অনূদিত হয়।

(FAQ) সুলতানি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মাদ্রাসা-ই-মুইজি প্রতিষ্ঠা করেন কে?

কুতুবউদ্দিন আইবক।

২. হিন্দু ধর্মের উচ্চশিক্ষার বাহন কোন ভাষা?

সংস্কৃত।

৩. দিল্লীর মাদ্রাসা-ই-ফিরোজশাহী কে প্রতিষ্ঠা করেন?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

৪. ইসলামীয় প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলির নাম কি ছিল?

মক্তব।

Leave a Comment