প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন কী? আন্দোলনের সময়কাল, আন্দোলনের ধারা, আন্দোলনের কারণ, আন্দোলনের আদর্শ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে তুলে ধরা হল।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের সময়কাল, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন কি? প্রতিবাদী ধর্ম, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ধারা, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের সামাজিক কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ধর্মীয় কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের রাজনৈতিক কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অর্থনৈতিক কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের দার্শনিক কারণ, প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের আদর্শ।

  প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন

ঐতিহাসিক ঘটনা  প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন
সূচনাকালখ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক
বিরোধিতা বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্ম
প্রতিবাদী ধর্মবৌদ্ধ ধর্মজৈন ধর্ম
প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন

ভূমিকা :- খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ভারত -এর রাজনীতি ও ধর্মীয় বিবর্তনের ইতিহাসে দিকচিহ্ন হিসেবে পরিচিত। এইসময় একদিকে মগধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়, অন্যদিকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।  

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন কী?

বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আচার অনুষ্ঠান, ব্যয়বহুল যাগযজ্ঞ, পশুবলি, ব্রাহ্মণ্য পুরোহিতদের একাধিপত্য প্রভৃতির বিরুদ্ধে জটিল হিন্দু ধর্মের প্রতিবাদ স্বরূপ যে ধর্মীয় আন্দোলনের সূচনা হয় তা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন নামে পরিচিত।

প্রতিবাদী ধর্মের উদাহরণ

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থানুসারে ভারতবর্ষে ৬৩টি প্রতিবাদী ধর্মের উত্থান ঘটেছিল যার মধ্যে গৌতম বুদ্ধ প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্ম এবং মহাবীর প্রতিষ্ঠিত জৈন ধর্ম অন্যতম।

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের সময়কাল

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে ধর্মীয় আন্দোলন তথা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন শুরু হয়।

ব্রাহ্মণ্যধর্মের জটিলতা

বিভিন্ন কারণে ব্রাহ্মণ্যধর্ম দিন দিন তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

  • (১) বৈদিক সভ্যতার শেষদিকে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম জটিল কর্মকান্ডে পরিণত হয়।
  • (২) সরল ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তে বাহ্যিক ধর্মীয় আচার আচরণ বৃদ্ধি পায়। এর
  • (৩) ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্য শ্রেণীর একছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (৪) স্বভাবতই সাধারণ জনগণ ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের প্রতি বিরাগভাজন হয়।
  • (৫) সাধারণ মানুষ সহজ সরল ধর্ম বিশ্বাসের পথ খুঁজতে থাকে।
  • (৬) এই পরিস্থিতিতে উপনিষদে যে সহজ সরল ধর্মীয় চিন্তার অবতারণা করা হয়েছিল তারই সূত্র ধরে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন গড়ে ওঠে।

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ধারা

ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের দুটি ধারা পরিলক্ষিত হয়।

(১) নাস্তিকতামূলক

এই প্রথম ধারায় সমস্ত বৈদিক দেবদেবীকে অস্বীকার করা হয়।

(২) একেশ্বরবাদী

দ্বিতীয় ধারায় একেশ্বরবাদী চিন্তাধারার সমর্থন পাওয়া যায় এবং তারা ভক্তিকে ঈস্বরলাভের একমাত্র পথ বলে বিবেচিত করেন।

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ফলে উদ্ভুত ধর্মীয় ধারা

বৌদ্ধ, জৈন, শৈব ও বৈষ্ণব – এই চারটি ধর্মীয় ধারার উদ্ভব ঘটে। এই চারটি ধারা আবার দুই ভাবে দেখা হয়।

  • (১) শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায় বৈদিক দেবতা শিব ও বিষ্ণুকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। তাই তারা সংস্কারবাদী নামে পরিচিত।
  • (২) বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনরূপে আত্মপ্রকাশ করে।

ড. এ. এল. বাসামের বক্তব্য

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উৎপত্তি প্রসঙ্গে ড. এ. এল. বাসাম বলেছেন যে, ”বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক আলোড়নের মধ্যে দিয়ে ভারতে এক যথার্থ ইতিহাসের আবির্ভাব হয় এই যুগে।”

ড. আর. এস শর্মার বক্তব্য

ঐতিহাসিক ড. আর. এস শর্মা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উৎপত্তির কারণ হিসেবে কিছু ধর্মীয় কারণকেই দায়ী করেছেন।

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ

ঐতিহাসিকগণ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ হিসেবে বহুবিধ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। যেমন –

(১) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের সামাজিক কারণ

বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে।

  • (ক) খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সামাজিক পরিমন্ডলে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
  • (খ) এই সময় উত্তর পূর্ব ভারতে দ্বিতীয় নগরায়নের সূত্রপাত ঘটে। এই দ্বিতীয় নগরায়নের ক্ষেত্রে লোহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
  • (গ) দ্বিতীয় নগরায়ন গঙ্গা উপত্যকায় কেন্দ্রীভূত ছিল। এই সময়ের প্রধান প্রধান নগরগুলি ছিল রাজগৃহ, বারাণসী, কোসাম্বি, শ্রাবস্তী, চম্পা ইত্যাদি। অধ্যাপক H. Kulke মনে করেন যে, বৌদ্ধধর্ম নতুন গঙ্গা কেন্দ্রিক সভ্যতার প্রতিবিম্ব ছিল।
  • (ঘ) বৈদিক যুগের শেষদিকে সমাজব্যবস্থা অনমনীয় হয়ে উঠেছিল। ব্রাহ্মণদের সামাজিক প্রতিপত্তি, মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ক্ষত্রিয়দেরও মর্যাদা ছিল ব্রাহ্মণদের নীচে। বৈশ্যদের প্রতিপত্তি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল।
  • (ঙ) ফৌজদারি বিচারেও জাতিভেদ প্রথা ব্যবহার করা হত।
  • (চ) শুদ্রদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত হীন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এই কঠোর জাতিভেদ প্রথা ও আধিপত্য সাধারণ মানুষকে বিচলিত করে তুলেছিল। এই পরিস্থিতি ধর্মীয় আন্দোলনের আত্মপ্রকাশে সহায়ক হয়েছিল।

(২) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ধর্মীয় কারণ

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল ধর্ম।

  • (ক) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি , কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রবল প্রতাপ।
  • (খ) গৌতম বুদ্ধের নতুন ধর্মীয় আদর্শ, উদারতা, সরলতা, আড়ম্বরহীন ধর্মীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল।
  • (গ) গৌতম বুদ্ধ সমাজে আর্থিক বৈষম্য ও শ্রেণী সংঘাত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।
  • (ঘ) তিনি ব্রাহ্মণ শ্রেণীর সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পর্কে বিরাগভাজন ছিলেন।  
  • (ঙ) গৌতম বুদ্ধ সামাজিক ধনসম্পদ উৎপাদনের সাথে যুক্ত বৈশ্য ও শুদ্র শ্রেণীর প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল ছিলেন।
  • (চ) তিনি এমন এক পথের সন্ধান দেন যা মানুষকে দুঃখ দুর্দশার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
  • (ছ) গৌতম বুদ্ধ যে ধর্ম আন্দোলনের সূচনা করেন, তা একদিকে ছিল আচার অনুষ্ঠান পীড়িত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে ছিল ভোগ, সুখ ও কৃচ্ছসাধন সংক্রান্ত চরম মতবাদের বিরুদ্ধে।
  • (জ) তাঁর প্রদর্শিত পথ সকলের গ্রহনযোগ্য হওয়ায় সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় এই মতাদর্শে বিশ্বাস করে এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন শুরু করে।

(৩) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের রাজনৈতিক কারণ

বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণেও প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের সূচনা ঘটে।

  • (ক) ক্ষত্রিয়রা ছিল শাসক ও রক্ষক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা উপলব্ধি করে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ক্ষত্রিয়দের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ।
  • (খ) কালক্রমে ক্ষত্রিয়রাও  ব্রাহ্মণদের বিরোধী হয়ে ওঠে এবং তারা বিকল্প মতবাদে উৎসাহী হয়ে ওঠে।
  • (গ) তৎকালীন রাজন্যবর্গ যথা – চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশোক প্রমুখের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্ম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে সাথে দক্ষিণ – পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

(৪) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের দার্শনিক কারণ

বিভিন্ন দার্শনিক কারণও প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের পিছনে কাজ করেছিল।

  • (ক) উপনিষদের নতুন তত্ত্ব প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষ উপনিষদের তত্ত্ব গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছিল এবং প্রচলিত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অসাড়তা সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছিল। তাই তারা নতুন আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল।
  • (খ) বস্তুতঃপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের সময়কালে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম সনাতন হিন্দু ধর্মের মূল আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছিলো। আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পরিবর্তে ধর্ম হয়ে উঠেছিল আচার সর্বস্ব ব্যবস্থা।  
  • (গ) নতুন দার্শনিক চিন্তার আবির্ভাব, উপনিষদের যথার্থ ব্যাখ্যা ইত্যাদির ফলে মানুষ ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পেরেছিল এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

(৫) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অর্থনৈতিক কারণ

তদানীন্তন অর্থনৈতিক পরিবর্তনশীলতার কারণে প্রতিবাদী আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেছিলো বলে ঐতিহাসিক ডক্টর রোমিলা থাপার ও ডক্টর রামসরণ শর্মা মনে করেন।

  • (ক) ডক্টর ডি. এন. ঝাঁ মনে করেন যে, কৃষকের হাতে উদ্বৃত্ত সম্পদ জমা হতে থাকাই হলো প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ।
  • (খ) ডক্টর আর. এস. শর্মার মতে, শ্রেষ্ঠী বণিকরা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অপেক্ষা বৌদ্ধ ধর্মকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। ফলে বৌদ্ধ ধর্মের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল।
  • (গ) খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ও পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটে। এই অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রতিবাদী ধর্মীয় আন্দোলনের আত্মপ্রকাশে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।
  • (ঘ) উত্তর – পূর্ব গাঙ্গেয় সমভূমিতে কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। কৃষিকাজ ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে নতুন শ্রেষ্ঠী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। প্রভূত ধন সম্পদের অধিকারী হয়েও এদের সামাজিক মর্যাদা ছিলনা। তাই তারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
  • (ঙ) ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার (Romila Thapar) মনে করেন যে, “The Buddha had greater success among the cities of the monarchial kingdom‘’।
  • (চ) ডক্টর ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল। এক শ্রেণীর হাতে প্রচুর ধনসম্পদ থাকলেও সাধারণ মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
  • (ছ) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অর্থনৈতিক কারণের যৌক্তিকতা আলোচনা করতে গিয়ে তদানীন্তন ভারতে প্রচলিত অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিবাদী আন্দোলনের পথকে প্রশস্ত করেছিল বলে ঐতিহাসিক ডক্টর রোমিলা থাপার ও ডক্টর রামসরণ শর্মা মনে করেন।

(৬) প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের ভাষাগত কারণ

বৈদিক যুগের ব্রাক্ষ্মণ ও পণ্ডিতরা দুর্বোধ্য সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতেন। পালি ভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে জন্মলাভ করে পূর্ব ও পশ্চিম ভারতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। বুদ্ধ নিজেই এই পালি ও প্রাকৃত ভাষায় তাঁর ধর্মমত প্রচার করেছিলেন।

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের আদর্শ

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গতিপ্রকৃতি দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে,

  • (১) বৈদিক ব্রাত্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধেই এই আন্দোলন হয়েছিল।
  • (২) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতেই এই ধর্মের উত্থান।
  • (গ) আদর্শগত দিক বিশ্লেষণ করলে বলতেই হয় এটি হিন্দুধর্মের একটি সংস্করণ যদিও প্রতিবাদী আন্দোলনকারীরা নাস্তিক অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না।
  • (ঘ) ভারতীয় দর্শনের এই সম্প্রদায় মানবতাবাদকে যুক্তি ও বুদ্ধিগ্রাহ্য করে বিশ্বজনীন করে তােলার সর্বপ্রকার চেষ্টা করেছিল
  • (ঙ) এই আন্দোলনে জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা ও অহিংসা মূল আদর্শরূপে প্রকাশ পেয়েছে।
  • (চ) ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ বলেন ভগবান বুদ্ধ নিজেই পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবাদ ও প্রাচ্যের অধ্যাত্মবাদকে তাঁর আন্দোলনে সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। গতানুগতিক ধর্ম ও সমাজজীবনে প্রতিবাদী আন্দোলন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

উপসংহার :- প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন এক ব্যাপক সামাজিক বিপ্লবের নামান্তর ছিল। বৈষয়িক ও মানসিক পটভূমি থেকে উদ্ভুত এই আন্দোলন ভারতের জাতীয় জীবনের এক বিবর্তন সৃষ্টি করেছিল।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

[FAQ] প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন কী?

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ দেখা দেয়, যা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন নামে পরিচিত ।

২. দুটি প্রতিবাদী ধর্মের নাম লেখ?

বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম ।

৩. প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের দুজন নেতার নাম কি?

গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীর।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment