দাদাভাই নওরোজি

ভারতের প্রথম সারির একজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী দাদাভাই নওরোজি -র জন্ম, শিক্ষা, পত্রিকা প্রকাশ, অধ্যাপক, রাজনীতিতে যোগদান, লণ্ডন ইন্ডিয়া সোসাইটি গঠন, ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় অবদান, বরোদার প্রধানমন্ত্রী, বোম্বে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য, ভারত সভার সদস্য, কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে যোগদান, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচন, কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতি, জাতীয় কংগ্রেসের তিনবার সভাপতি, পরামর্শদাতা, নির্গমন তত্ত্বের প্রবক্তা, গ্ৰন্থ রচনা, উপাধি ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ভারতীয় রাজনীতিবিদ দাদাভাই নওরোজী প্রসঙ্গে দাদাভাই নওরোজীর জন্ম, দাদাভাই নওরোজীর শিক্ষা, দাদাভাই নওরোজীর পত্রিকা প্রকাশ, অধ্যাপকের পেশায় দাদাভাই নওরোজী, দাদাভাই নওরোজীর রাজনীতিতে যোগদান, বরোদার প্রধানমন্ত্রী দাদাভাই নওরোজী, ভারত সভার সদস্য দাদাভাই নওরোজী, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের তিনবারের সভাপতি দাদাভাই নওরোজী, সম্পদ নির্গমন তত্ত্বের প্রবক্তা দাদাভাই নওরোজী, দাদাভাই নওরোজীর গ্ৰন্থ রচনা, দাদাভাই নওরোজীর মৃত্যু, দাদাভাই নওরোজীর উপাধি ও সম্মাননা।

দাদাভাই নওরোজি

ঐতিহাসিক চরিত্রদাদাভাই নওরোজি
জন্ম৪ সেপ্টেম্বর, ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ
পেশারাজনৈতিক নেতা, সংসদ সদস্য, অধ্যাপক
পরিচিতিস্বাধীনতা সংগ্ৰামী
মৃত্যু৩০ জুন, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ
দাদাভাই নওরোজি

ভূমিকা:- ভারত -এর একজন প্রথম সারির রাজনীতিবিদ ছিলেন দাদাভাই নওরোজি। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম সদস্য।

দাদাভাই নওরোজির জন্ম

১৮২৩ সালেবোম্বাই শহরের এক পার্সি পুরোহিত পরিবারে দাদাভাই নওরোজি জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবার সাধারণ ভাবে গুজরাটি ভাষাতেই কথা বলতেন।

দাদাভাই নওরোজির শিক্ষা

দাদাভাই নওরোজর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউট স্কুলে। এরপর তিনি বরোদার মহারাজার পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা জীবন শেষ করেন।

পত্রিকা প্রকাশ

১৮৫৪ সালে তিনি রাস্ত গোফতার নামে একটি গুজরাটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। গুজরাটি ভাষায় রাস্ত গোফতার কথার অর্থ সত্য ভাষণ।এই সময় তিনি দা ভয়েস অফ ইন্ডিয়া নামে আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক

তিনি ১৮৫৫ সালে মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে গণিত ও প্রাকৃতিক দর্শনের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ইংল্যান্ড -এ যান এবং পরের বছর ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনে গুজরাটি ভাষা বিভাগের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন।

দাদাভাই নওরোজির রাজনীতিতে যোগদান

লন্ডনের প্রবাস জীবনেই নওরোজি রাজনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন।

লন্ডন ইন্ডিয়ান সোসাইটি গঠন

ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন এবং ভারতবর্ষের সমস্যাদি ইংরেজদের সামনে তুলে ধরার অভিপ্রায় থেকে অন্যান্যদের সহযোগিতায় গড়ে তুলেন লন্ডন ইন্ডিয়ান সোসাইটি।

ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় অবদান

১৮৬৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় দাদাভাই নওরোজি যথেষ্ট সহায়তা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ জনসাধারণের কাছে ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা।

বরোদার প্রধানমন্ত্রী

দাদাভাই নওরোজি ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বরোদার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

বোম্বে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য

১৮৮৫-৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দাদাভাই নওরোজি লেজিসলেটিভ কাউন্সিল অফ বোম্বে -এর সদস্য ছিলেন।

ভারত সভার সদস্য

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দাদাভাই নওরজি।

কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে যোগদান

দাদাভাই নওরোজি ১৮৮৫ সালে বোম্বাই শহরে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন -এ যোগ দেন।

পার্লামেন্ট নির্বাচন

পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং ১৮৯২ সালের নির্বাচনে মধ্য-ফিন্সবেরি এলাকা থেকে উদারনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন।

জেন্দ আবেস্তা ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ

পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করার সময় পার্সি হওয়ার কারণে দাদাভাই নওরোজি বাইবেলের পরিবর্তে জেন্দ আবেস্তা ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেন।

কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতি

১৯০৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে দাদাভাই নওরোজি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনেই তিনি ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রথম উত্থাপন করেন।

জাতীয় কংগ্রেসের তিনবার সভাপতি

নওরোজি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।তিনি ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ, ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ ও ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ – তিনবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।

পরামর্শদাতা

তিনি বাল গঙ্গাধর তিলক, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, মহাত্মা গান্ধী সহ বহু কংগ্রেস নেতার পরামর্শদাতা ছিলেন।

নির্গমন তত্ত্বের প্রবক্তা

তিনি ছিলেন সম্পদের বহির্গমন বা নির্গমন তত্ত্বের প্রবক্তা। পলাশীর যুদ্ধ -এর পর ব্রিটিশ সরকারের বাংলা তথা ভারত থেকে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ লুট করার কথা তিনিই প্রথম তুলে ধরেন।

দাদাভাই নওরোজি কর্তৃক গ্ৰন্থ রচনা

তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ পভার্টি অ্যান্ড আন ব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া।

উপাধি ও সম্মাননা

দাদাভাই নওরোজকে গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান অফ ইন্ডিয়া এবং আন অফিশিয়াল অ্যাম্বাসাডার অফ ইন্ডিয়া উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

দাদাভাই নওরোজির মৃত্যু

৩০ শে জুন ১৯১৭ সালে মুম্বাইয়ে ৯১ বছর বয়সে দাদাভাই নওরোজ এর জীবনাবসান ঘটে।

উপসংহার:- গান্ধীর আগে তিনিই ছিলেন ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আন্তর্জাতিকভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “দাদাভাই নওরোজি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) দাদাভাই নওরোজি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের গ্ৰ্যান্ড ওল্ড ম্যান কাকে বলা হয়?

দাদাভাই নাওরোজিকে।

২. ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম ভারতীয় সদস্য কে ছিলেন?

দাদাভাই নাওরোজি।

৩. কংগ্রেসের কোন অধিবেশনে দাদাভাই নওরোজি প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন।

১৮৮৬ খ্রিঃ কলকাতা অধিবেশনে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment