তাম্র প্রস্তর যুগ

আজ তাম্র প্রস্তর যুগ -এ তামা আবিষ্কার, সময়কাল, খনিজ তামার ব্যবহার, তামা ব্যবহারের সুবিধা, পুরুষের প্রাধান্য, এই যুগের নিদর্শন সম্পর্কে জানবো।

ইতিহাসে তাম্র প্রস্তর যুগ প্রসঙ্গে প্রস্তর যুগ কাকে বলে, প্রস্তর যুগের শ্রেণীবিভাগ, তাম্র প্রস্তর যুগে তামা আবিষ্কার, তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতি, তাম্র প্রস্তর যুগে কাঁচা তামা সংগ্ৰহ, তাম্র প্রস্তর যুগের সময়কাল, তাম্র প্রস্তর যুগে খনিজ তামার ব্যবহার, তাম্র প্রস্তর যুগে সর্বত্র তামার ব্যবহার, তাম্র প্রস্তর যুগে তামা ব্যবহারের সুবিধা, তাম্র প্রস্তর যুগে ব্রোঞ্জের ব্যবহার, তাম্র ব্রোঞ্জ যুগ, তাম্র প্রস্তর যুগের অগ্ৰগতি , তাম্র প্রস্তর যুগে নগর সভ্যতার সূচনা, তাম্র প্রস্তর যুগে পুরুষের প্রাধান্য, তাম্র প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ও তাম্র প্রস্তর যুগের নিদর্শন।

ইতিহাসে তাম্র প্রস্তর যুগ

বিষয়তাম্র প্রস্তর যুগ
বৈশিষ্ট্যএকই সঙ্গে তামা ও পাথরের ব্যবহার
তামা আবিষ্কারনব্য প্রস্তর যুগের শেষে
উল্লেখযোগ্য সভ্যতাহরপ্পা সভ্যতা
তাম্র প্রস্তর যুগ

ভূমিকা :- বিভিন্ন পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচীন যুগকে তিনভাগে ভাগ করা হয় – প্রাগৈতিহাসিক যুগপ্রায় ঐতিহাসিক যুগ এবং ঐতিহাসিক যুগ। প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্তর্গত প্রস্তর যুগের শেষ দিকে শুরু হয় তাম্র-প্রস্তর যুগ।

প্রস্তর যুগ

ইতিহাসে তিনটি প্রস্তর যুগ পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরাতন প্রস্তর যুগ বা পুরা প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ এবং নব্য প্রস্তর যুগ বা নতুন পাথরের যুগ। এই নব্য প্রস্তর যুগের শেষ দিকে তাম্র-প্রস্তর যুগের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

তাম্র প্রস্তর যুগে তামা আবিষ্কার

নব্য প্রস্তর যুগ -এর শেষদিকে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শেখে।

তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতি

প্রত্নতত্ত্ববিদ রেমন্ড অলচিন ও ব্রিজেৎ অলচিন বলেছেন যে, নব্য প্রস্তর যুগের শেষদিকে পাথরের ব্যবহারের পাশাপাশি তামার ব্যবহারও শুরু হয়। এজন্য তাঁরা এই যুগের সংস্কৃতিকে ‘তাম্র-প্রস্তর সংস্কৃতি’ আখ্যা দেন।

তাম্র প্রস্তর যুগে কাঁচা তামা সংগ্ৰহ

অবশ্য প্রথমদিকে মানুষ খনি থেকে তামার আকরিক সংগ্রহের পদ্ধতি জানত না। তারা পাথরের সঙ্গে লেগে থাকা তামার আকরিক সংগ্রহ করে এবং তা উত্তপ্ত করে কাঁচা তামা সংগ্রহ করত।

তাম্র প্রস্তর যুগের সময়কাল

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ পর্যন্ত পৃথিবীতে তাম্র-প্রস্তর যুগের অস্তিত্ব ছিল। মানুষ এই সময় পাথর ও মাটিতে মিশে থাকা তামার ব্যবহার শুরু করে।

তাম্র প্রস্তর যুগে খনিজ তামার ব্যবহার

আনুমানিক ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার পরবর্তীকালে সুমেরে সর্বপ্রথম খনিজ তামার ব্যবহার শুরু হয়।

তাম্র প্রস্তর যুগে সর্বত্র তামার ব্যবহার

পরবর্তীকালে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ -এর বিভিন্ন অংশে তামার ব্যবহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। আমেরিকায় তামার ব্যবহার শুরু হয় আরও পরে।

তাম্র প্রস্তর যুগে তামা ব্যবহারের সুবিধা

  • (১) তামার ব্যবহার শুরু হলে মানবসভ্যতার ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়।
  • (২) হাতিয়ার তৈরিতে তামা ব্যবহারের কিছু সুবিধা ছিল।
  • (৩) পাথরের তুলনায় তামার হাতিয়ার অনেক বেশি মজবুত হত।
  • (৪) তামাকে আগুনে গলিয়ে বিভিন্ন আকারের হাতিয়ার তৈরি করা যায়। এই হাতিয়ার পাথরের তুলনায় অনেক বেশি ধারালো ও তীক্ষ্ণ হয়।

তাম্র প্রস্তর যুগে ব্রোঞ্জের ব্যবহার

তামার ব্যবহার শুরু হওয়ার কিছুকাল পর মানুষ তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে ব্রোঞ্জ নামক সংকর ধাতু তৈরি করে।

তাম্র ব্রোঞ্জ যুগ

ব্রোঞ্জের হাতিয়ারগুলি তামার হাতিয়ারের চেয়ে আরও অনেক মজবুত, ধারালো ও উন্নত হয়ে ওঠে। এজন্য তাম্র প্রস্তর যুগের পরবর্তীকাল ‘তাম্ৰ-ব্রোঞ্জ যুগ’ নামে পরিচিত।

তাম্র প্রস্তর যুগে অগ্রগতি

  • (১) তাম্র প্রস্তর যুগে ধাতুর ব্যবহারের ফলে উন্নত কুঠার, তলোয়ার, বর্শা, তিরের ফলা, লাঙল প্রভৃতির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীও তৈরি হতে থাকে।
  • (২) কাঠের ব্যবহার এই সময় যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। কাঠ দিয়ে নৌকা ও ঘরবাড়ি তৈরি হতে থাকে।
  • (৩) কুমোরের চাকা এই যুগে আরও উন্নত হলে মৃৎশিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। বস্ত্র উৎপাদনের জন্য তাঁতের প্রচলনও বৃদ্ধি পায়।
  • (৪) রান্নার কাজে ধাতুর পাত্রের ব্যবহার শুরু হলে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যথেষ্ট পরিবর্তন আসে।

তাম্রপ্রস্তর যুগে নগর সভ্যতার সূচনা

  • (১) তাম্র প্রস্তর যুগে কৃষিজীবী মানুষ বিভিন্ন নদীর তীরে বসতির প্রসার ঘটায়।
  • (২) নদীর তীরে উর্বর কৃষিজমিতে কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধি, জমিতে জলসেচের সুবিধা, নদী থেকে মাছ ধরার সুবিধা, নদীপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের সুবিধা প্রভৃতির ফলে বিভিন্ন নদী-উপত্যকা অঞ্চলে জন-ঘনত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
  • (৩) ক্রমে এসব অঞ্চলে নগরজীবনের প্রতিষ্ঠা হয়। ভারতের হরপ্পা সভ্যতা এরূপ নগর সভ্যতার অন্যতম উদাহরণ।

তাম্র প্রস্তর যুগে পুরুষের প্রাধান্য

  • (১) কৃষিকাজে লাঙল ও পশুকে ব্যবহার করা, পশুপালন করা প্রভৃতি কাজে শারীরিক শক্তির বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
  • (২) ফলে এসব কাজে তাম্র প্রস্তর যুগে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়।
  • (৩) এই সময় থেকে জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে পুরুষের প্রাধান্য স্থাপিত হয় এবং সামাজিক কর্তৃত্বের বিষয়ে মেয়েরা ক্রমে পিছিয়ে পড়তে থাকে। সমাজের সবক্ষেত্রে পুরুষের প্রাধান্য স্থাপিত হয়।

তাম্রপ্রস্তর যুগের নিদর্শন

  • (১) ভারতবর্ষ মেসোপটেমিয়া, এশিয়া মাইনর, মিশর, গ্রিস প্রভৃতি স্থানে ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয়।
  • (২) ভারতের মেহেরগড় সভ্যতা -য় ৪৩০০-৩৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তামা গলাবার পদ্ধতি চালু ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • (৩) অবশ্য এই সময় বিভিন্ন স্থানে তামা বা ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হলেও প্রথমদিকে তামার পাশাপাশি পাথরের ব্যবহারও চলতে থাকে।
  • (৪) কারণ, তামা বা ব্রোঞ্জ ধাতু পাথরের মতে সহজলভ্য ছিল না বা এসব ধাতু নিষ্কাশন করে তা দিয়ে হাতিয়ার তৈরির প্রক্রিয়াও মোটেই সহজ ছিল না।

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “তাম্র প্রস্তর যুগ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) তাম্র প্রস্তর যুগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. তামা কখন আবিষ্কৃত হয়?

নব্য প্রস্তর যুগের শেষ দিকে।

২. তাম্র প্রস্তর যুগের একটি সভ্যতার নাম লেখ?

মেহেরগড় সভ্যতা।

৩. তামার সাথে কি মিশিয়ে ব্রোঞ্জ তৈরি করা হয়?

টিন।

Leave a Comment