মধ্য যুগের ভারতের ঐতিহাসিক উপাদানের বৈশিষ্ট্য

মধ্যযুগের ভারত ইতিহাসের উপাদানের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে উপাদানের প্রাচুর্য, রাজকাহিনী, লেখকদের ধর্মান্ধতা, অমুসলিমদের লেখা ইতিহাস, বৈদেশিক পর্যটকদের বিবরণ, স্থানীয় ইতিহাস ও ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে জানবো।

মধ্য যুগের ভারতের ঐতিহাসিক উপাদানের বৈশিষ্ট্য

বিষয়মধ্য যুগের ভারতের ঐতিহাসিক উপাদানের বৈশিষ্ট্য
জিয়াউদ্দিন বরনিতারিখ-ই-ফিরোজশাহী
ইবন বতুতাকিতাব-উল-রাহেলা
ভাষাফারসী
মধ্য যুগের ভারতের ঐতিহাসিক উপাদানের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা :- প্রাচীন যুগের লিখিত ইতিহাসের সংখ্যা খুবই স্বল্প। এজন্য প্রাচীন যুগের ইতিহাস রচনায় প্রধানত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান-এর উপর নির্ভর করতে হয়। মধ্য যুগের ক্ষেত্রে এই অসুবিধা নেই। কারণ মুসলিম পণ্ডিতরা ছিলেন ইতিহাস সচেতন।

মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদানের প্রাচুর্য

  • (১) জিয়াউদ্দিন বরণী মনে করতেন যে, জ্ঞান চর্চার একটি বড় ধাপ হল ইতিহাস চর্চা। আরব আক্রমণের যুগ থেকে মোগল সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত বিভিন্ন সমকালীন লেখকের লেখা অনেক ঐতিহাসিক গ্রন্থ পাওয়া যায়।
  • (২) এই গ্রন্থগুলি মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান। তবে মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে লিখিত ইতিহাস থাকলেও, প্রত্নতত্ত্বকে একেবারে বাদ দেওয়া যায় না। এজন্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সাহায্য নিতে হয়।

মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদান রাজকাহিনী

  • (১) মধ্যযুগের শাসকরা তাদের দরবারে ঐতিহাসিক, তথ্য লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এর ফলে মধ্যযুগের বেশীর ভাগ মুসলিম ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রধানত রাজকাহিনী লিখেছেন।
  • (২) এই সকল কাহিনীতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রাজা, বাদশাহের রাজ্য বিস্তার, যুদ্ধ জয়, শাসন সংস্কার, তাদের চরিত্র, খেয়ালখুশীর কথাই স্থান পেয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে তারা বিশেষ নজর দেন নি। তাঁদের রচনা এজন্য অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইতিহাস হতে পারে নি।
  • (৩) এই সকল লেখকদের মধ্যে বেশীর ভাগ বিভিন্ন রাজা বা সুলতানের আশ্রয়পুষ্ট ছিলেন। এজন্য তাঁরা নিজ নিজ প্রভুর গুণকীর্তন করেছেন। সাধারণ মানুষের কথা তাঁদের লেখনীতে স্থান পায়নি। তবে মধ্যযুগের সকল ঐতিহাসিক শুধু পুরস্কার ও অর্থ লোভেই তাদের রচনাগুলি লিখেছেন একথা বলা যায় না।
  • (৪) জিয়াউদ্দিন বরণীর মত অনেক ঐতিহাসিক নিজ বুদ্ধিবৃত্তির প্রেরণাতেই ঐতিহাসিক কাহিনীগুলি রচনা করেন। বরনী তাঁর তারিখ-ই-ফিরোজশাহীর মুখবন্ধে লিখেছেন যে তিনি তার এই রচনা রাজা ও শাসকশ্রেণীকে শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্যই লিখেছেন।

মধ্যযুগের লেখকদের ধর্মান্ধতা

  • (১) মধ্যযুগের মুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে এক শ্রেণীর লেখক ইসলামীয় চিন্তাধারায় আচ্ছন্ন ছিলেন। তারা সকল কিছু ঘটনাকে ইসলামীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতেন। ফলে তাঁরা অমুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে সর্বদা নিরপেক্ষ দৃষ্টি নেন নি।
  • (২) ডঃ মহিবুল হাসানের মতে এই সকল ঐতিহাসিকের মানসিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আধুনিক পাঠকের সতর্ক থাকা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে তাদের দেওয়া মতামত ও তথ্য নির্ভরযোগ্য নয়। এই সকল গোড়া ঐতিহাসিকরা ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের প্রতিও সদয় ছিলেন না। অবশ্য অনেক ঐতিহাসিক এই ধরণের ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধে ছিলেন।

মধ্যযুগে অমুসলিমদের লেখা ইতিহাস

ভারতের মধ্য যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অমুসলিম ঐতিহাসিকদের রচনাও বিশেষ মূল্যবান উপাদান। রাজপুত, শিখ ও মারাঠাদের লেখা ইতিহাস থেকে স্থানীয় বহু তথ্য পাওয়া যায়।

মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদান বৈদেশিক পর্যটকদের বিবরণ

মধ্য যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বৈদেশিক লেখকদের রচনা বিশেষ মূল্যবান। সুলতানি যুগে বৈদেশিক পর্যটক মুর ভ্রমণকারী ইবন বতুতা এবং ইউরোপ -এর পর্যটকদের রচনা থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের বহু তথ্য পাওয়া যায়।

মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদান স্থানীয় সাহিত্য

সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্য, মুদ্রা, মুঘল চিত্রকলা, রাজপুত চিত্রকলা, সমকালীন ফার্সী, উর্দু ও স্থানীয় সাহিত্য থেকে বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।

মধ্য যুগে ভাষার ব্যবহার

মুসলিম যুগের গোড়ার দিকের ঐতিহাসিক উপাদানগুলি আরবি ও তুর্কী ভাষায় লিখিত ছিল। পরবর্তীকালের বেশীর ভাগ রচনাগুলি ছিল ফারসী ভাষায় লিখিত। পশ্চিম এশিয়ার মার্জিত ও পরিশীলিত ভাষা হিসাবে ফারসী পরিগণিত হয়।

উপসংহার :- ভারত -এ তুর্কী শাসকরা ফারসী ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এজন্য সরকারী নথিপত্র এবং ঐতিহাসিক উপাদানগুলি ফারসী ভাষায় রচিত হয়।

(FAQ) মধ্যযুগের ভারত ইতিহাসের উপাদানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের তুর্কী শাসকরা কোন ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করত?

ফারসী।

২. সুলতানি যুগে ভারতে আগত একজন পর্যটকের নাম লেখ।

ইবন বতুতা।

৩. সুলতানি যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক কে ছিলেন?

জিয়াউদ্দিন বরনি।

৪. তারিখ-ই-ফিরোজশাহী কার লেখা?

জিয়াউদ্দিন বরনি।

Leave a Comment