দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ প্রসঙ্গে ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি, নাৎসি দলের উত্থান, ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মিত্রপক্ষীয়দের মধ্যে বিবাদ, নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা, জাতিসংঘের ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ সম্পর্কে জানবো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা 

ঐতিহাসিক ঘটনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ
সময়কাল১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ
বিবাদমান পক্ষঅক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি
অক্ষশক্তিজার্মানি, ইতালি, জাপান
মিত্রশক্তিইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা
তোষণ নীতি গ্রহণইংল্যান্ড ও ফ্রান্স
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর দামামা বেজে ওঠে। এই বিশ্বযুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অপেক্ষা অনেক ব্যাপক, বিধ্বংসী ও ভয়াবহ ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি

এই মহাযুদ্ধের পেছনে নানা কারণ ছিল। যেমন –

(ক) ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

  • (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ জন্য অনেকেই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভার্সাই সন্ধিকে দায়ী করে থাকেন। তাঁদের মতে, ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাইয়ে সমবেত নেতৃমণ্ডলী নিছক প্রতিশোধ-স্পৃহা দ্বারা পরিচালিত হয়ে পরাজিত জার্মানির উপর এই অপমানজনক, প্রতিশোধমূলক, স্বার্থপর ও সর্বনাশা ভার্সাই চুক্তি বলপূর্বক চাপিয়ে দেন।
  • (২) ঐতিহাসিক ই. এইচ. কার এই চুক্তিকে বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া ‘জবরদস্তিমূলক চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। চুক্তি স্বাক্ষরকালে জার্মান প্রতিনিধিদের কোনোরকম মতামত প্রকাশের ‘সুযোগ না দিয়ে সম্পূর্ণ ভীতির পরিবেশে তাঁদের এই চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়।
  • (৩) অধ্যাপক এ জে পি টেলর বলেন যে, হিটলারের অনেকগুলি দাবি ছিল ন্যায্য। জার্মানির ন্যায্য দাবি গুলি পূরণ করে জার্মানিকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের সীমানায় ফিরিয়ে দিলেই জার্মানি সন্তুষ্ট হত।

(খ) নাৎসি দলের উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

  • (১) জার্মানিতে নাৎসি দল -এর উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এই দলের উদ্দেশ্য ছিল ভার্সাই সন্ধিকে বাতিল করা, ইউরোপ-এর জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিকে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করে বৃহত্তর জার্মানি গঠন করা।
  • (২) বিশুদ্ধ আর্য জাতি হিসেবে পৃথিবীর অপরাপর জাতিগুলির উপর জার্মানির আধিপত্য স্থাপন করে বিশ্বব্যাপী এক জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করার জন্য জার্মানির পক্ষে যুদ্ধনীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য ছিল।

(গ) ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

  • (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদী স্পৃহা। ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি তার উপনিবেশগুলি থেকে বঞ্চিত হয় এবং মিত্রশক্তিবর্গ তা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়।
  • (২) মিত্রপক্ষে থাকা সত্ত্বেও ইতালি ও জাপান যা পেয়েছিল তাতে তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। এইভাবে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা, বেলজিয়ান, নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয়।
  • (৩) জার্মানি, জাপান ও ইতালির সম্প্রসারণের জন্য আর বিশেষ কোনও স্থান ছিল না, অথচ ঐ সব রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য স্থান সঙ্কুলান এবং শিল্প ও কলকারখানার জন্য কাঁচামাল ও বাজারের প্রয়োজন ছিল। এই কারণে ইতালি, জার্মানি ও জাপান স্থিতাবস্থা ভেঙে উপনিবেশ বিস্তারে উদ্যোগী হয়।
  • (৪) ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উত্তর আফ্রিকায় উপনিবেশ বিস্তারে উদ্যোগী হলে এইসব অঞ্চলে ইঙ্গ-ফরাসি স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক হয়ে ওঠে। এই সময় সোভিয়েত রাশিয়াও সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করে। এইভাবে বিভিন্ন জাতিবর্গের সাম্রাজ্যবাদী স্পৃহা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

(ঘ) মিত্রপক্ষীয়দের মধ্যে বিবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

মিত্রপক্ষীয় বিভিন্ন দেশের অনৈক্য ও স্বার্থ-সংঘাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণকে অনিবার্য করে তোলে। যেমন –

  • (১) মার্কিন সেনেট ভার্সাই সন্ধি অনুমোদন না করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ায়। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ব্রিটেন সম্ভাব্য জার্মান আক্রমণ থেকে ফ্রান্সের নিরাপত্তা বিধানের কোনও দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে।
  • (২) বেলজিয়ামও পরে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষীয় দেশ হয়েও ইতালি তার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়। এই কারণে প্রথম থেকেই সে মিত্রপক্ষের বিরোধিতা করতে শুরু করে এবং অচিরেই জার্মানি ও জাপানের সঙ্গে জোট গঠন করে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
  • (৩) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষে থাকলেও জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আশা-আকাঙ্ক্ষা বিশেষ চরিতার্থ হয় নি। জাপান সুদূর প্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করলেই ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি মিত্রদের সঙ্গে তার বিবাদের সূচনা হয় এবং জাপান অন্য শিবিরে যোগদান করে। সুতরাং যুদ্ধান্তে মিত্রপক্ষীয় শক্তিবর্গের পারস্পরিক বিবাদ বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

(ঙ) ইঙ্গ-ফরাসি অনৈক্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

  • (১) ইংরেজ, ফরাসি এবং মার্কিন ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রনীতিজ্ঞরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করলেও, ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে ইউরোপে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য ইঙ্গ-ফরাসি ঐক্য অপরিহার্য ছিল, কিন্তু এ সময় দুই রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়।
  • (২) ফ্রান্স সম্ভাব্য জার্মান আক্রমণের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে সুস্পষ্টভাবে নিরাপত্তার ‘গ্যারান্টি’ চেয়েছিল। ইংল্যান্ড এই ধরনের কোনও ‘গ্যারান্টি’ দিতে অস্বীকৃত হলে ফ্রান্স পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেকোশ্লোভাকিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রীসূত্রে আবদ্ধ হয়ে নিজ নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হয়।
  • (৩) ভার্সাই সন্ধি সম্পর্কেও উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। ফ্রান্স চাইছিল ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী কঠোরভাবে প্রয়োগ করে জার্মানিকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখতে। অপরপক্ষে, ইংল্যান্ড চাইছিল ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী কিছুটা উদার করে জার্মানিকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ করে দিতে।
  • (৪) ইঙ্গ-ফরাসি মতানৈক্যের জন্য জার্মানি একের পর এক ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে থাকে। যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, জাতিসঙ্ঘের দুর্বলতা সর্বসমক্ষে প্রকট হয়ে ওঠে এবং ইউরোপীয় রাজনীতি দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়।

(চ) নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ

  • (১) নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক শান্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে প্রেসিডেন্ট উইলসন তার ‘চোদ্দো দফা শর্ত‘ -এ নিরস্ত্রীকরণের কথা বলেন। ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী এবং জাতিসঙ্ঘের চুক্তিপত্রে নিরস্ত্রীকরণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
  • (২) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে জেনেভাতে যে বিশ্ব নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে সব সভ্য রাষ্ট্রই জার্মানির অস্ত্র হ্রাসের ব্যাপারে একমত হলেও, নিজেরা কেউই কিন্তু অস্ত্র-হ্রাস করতে সম্মত হয় নি।
  • (৩) জার্মানি দাবি করে যে, হয় ফ্রান্স তার অস্ত্র জার্মানির সম-পরিমাণ করুক অথবা জার্মানিকে ফ্রান্সের সম-পরিমাণ অস্ত্র রাখতে দেওয়া হোক। এই প্রশ্নে তীব্র বিতণ্ডার শুরু হয়। জার্মানি জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে ইচ্ছামতো সামরিক সাজসজ্জা বৃদ্ধি করতে থাকে। এর ফলে ইউরোপে যুদ্ধের পরিবেশ গড়ে ওঠে।

(ছ) জাতিসঙ্ঘের ব্যর্থতা

  • (১) জাতিসঙ্ঘ -এর দুর্বলতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। প্রথম মহাযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা কারণে জাতিসঙ্ঘ তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়, যার পরিণতি হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
  • (২) জাতিসঙ্ঘের চুক্তিপত্রে এমন কতকগুলি ত্রুটি ছিল, যার ফলে কোনও আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করা বা কোনও আক্রমণকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
  • (৩) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘে যোগদান করে নি। জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়া প্রথমদিকে এর সদস্য ছিল না, এবং পরবর্তীকালে ইতালি, জার্মানি, রাশিয়া ও জাপান সদস্যপদ ত্যাগ করলে জাতিসঙ্ঘ যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • (৪) জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করলে (১৯৩১ খ্রিঃ) বা পুনরায় ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চিন আক্রমণ করলে, ইতালি আবিসিনিয়া (১৯৩৫ খ্রিঃ) ও আলবেনিয়া (১৯৩৬ খ্রিঃ) দখল করলে বা হিটলার একের পর এক ভার্সাই, লোকার্নো (১৯২৫ খ্রিঃ) এবং কেলোগ-ব্রিয়াঁ চুক্তির (১১২৮ খ্রিঃ) শর্তাদি লঙ্ঘন করে গেলে জাতিসঙ্ঘ কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষম হয়। জাতিসঙ্ঘের এই শোচনীয় ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

(জ) দুই শক্তিজোট

  • (১) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপ যেমন পরস্পর বিবদমান দুটি রাষ্ট্রজোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও ঠিক ওই একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। জাপান, জার্মানি ও ইতালি – এই তিনটি ‘অতৃপ্ত রাষ্ট্র’ পারস্পরিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গড়ে তোলে রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি বা জোট।
  • (২) অপরদিকে, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জোটবদ্ধ হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জোটে (মিত্রশক্তি) যোগ দেয়। এই দুই পরস্পর-বিরোধী জোটের মধ্যে সন্দেহ, বিবাদ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

(ঝ) ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি

  • (১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে অনেকেই ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতিকে দায়ী করেছেন। জার্মানি-ইতালি-জাপান যখন ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে ধাপে ধাপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ তাদের বাধা না দিয়ে অহেতুক তোষণ নীতি গ্রহণ করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষাকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়।
  • (২) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন ও ফরাসি প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের মনে করতেন যে, ইউরোপে হিটলার-এর লক্ষ্য খুবই সীমিত। ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ সেগুলি মেনে নিলে বড়ো আকারের যুদ্ধ এড়ানো যাবে। এইভাবে তারা একে একে হিটলারের বিভিন্ন দাবি – জার্মানির অস্ত্রসজ্জা, রাইনল্যান্ড দখল, অস্ট্রিয়া দখল প্রভৃতি মেনে নেয় এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার ব্যাপারে মিউনিখ চুক্তি সম্পাদন করে।
  • (৩) অনুরূপভাবে জাপানের মাঞ্চুরিয়া দখল এবং ইতালির আবিসিনিয়া দখলের ব্যাপারেও তারা তোষণ নীতি অনুসরণ করে, যা ক্লীবত্বের পর্যায়ে পড়ে। শুরুতেই হিটলার-মুসোলিনির আগ্রাসী মনোভাবে বাধা দিলে পরিস্থিতি ভিন্নতর হত। অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের এই তোষণ নীতিকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী করেছেন।

(ঞ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ

  • (১) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার উপলব্ধি করেন যে, ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ আসন্ন। এই যুদ্ধে যাতে রাশিয়া ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষে যোগ দিতে না পারে, সেজন্য হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সঙ্গে দশ বছরের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি সম্পাদন করেন।
  • (২) রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনও বিশেষ পরিস্থিতিতে এই চুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। অতঃপর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। ৩রা সেপ্টেম্বর ইঙ্গ-ফরাসি জোট পোল্যান্ডের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

উপসংহার:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ কোটি, আহত প্রায় চার কোটি এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই কোনও না কোনওভাবে এই মহাযুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

(FAQ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল কত?

১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ।

২. কোন সন্ধির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল?

ভার্সাই সন্ধি।

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?

হিটলারের পোল্যাণ্ড আক্রমণ।

৪. কোন কোন দেশ তোষণ নীতি গ্রহণ করে?

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স।

Leave a Comment