ভুটান

পার্বত্য দেশ ভুটান প্রসঙ্গে অবস্থান, সীমা, শব্দের উৎপত্তি, নামকরণ, ইতিহাস, রাজনৈতিক দিক, ভৌগোলিক দিক, অর্থনৈতিক দিক, অধিবাসী, ধর্ম, ভাষা, খাদ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ভুটান দেশটি প্রসঙ্গে ভুটানের অবস্থান, ভুটানের সীমা, ভুটান শব্দের উৎপত্তি, ভুটানের নামকরণ, ভুটানের ইতিহাস, ভুটানের রাজনৈতিক দিক, ভুটানের শহর, ভুটানের অর্থনীতি, ভুটানের শহর, ভুটানের ভৌগোলিক দিক, ভুটানের অধিবাসী, ভুটানের ধর্ম, ভুটানের ভাষা, ভুটানের গণমাধ্যম, ভুটানের সংস্কৃতি।

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ভুটান

ঐতিহাসিক স্থানভুটান
অন্য নামড্রাগনের দেশ, বজ্রপাতের দেশ
রাজধানীথিম্পু
সরকারি ভাষাজংখা
রাজাজিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক
প্রধানমন্ত্রীলোটে শেরিং
ভুটান

ভূমিকা:- দক্ষিণ এশিয়ার একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ হল ভুটান, আনুষ্ঠানিক নাম ভুটান রাজ্য। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষায় (জংখা) ‘দ্রুক ইয়ুল’ বা ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে ডাকে।

ভুটানের অবস্থান

ভুটান দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত।

ভুটানের সীমা

পার্বত্য দেশ ভুটানের উত্তরে চীন -এর তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারত -এর সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও উত্তরবঙ্গ অবস্থান করছে।

ভুটানের শব্দের উৎপত্তি

ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “ভূ-উত্থান” থেকে যার অর্থ “উঁচু ভূমি”। সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুুুটান দেশটিকে বোঝানো হয়।

সার্কের সদস্য ভুটান

ভুটান সার্ক -এর একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ।

ভুটানের রাজধানী ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র

পার্বত্য দেশ ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্পু। ফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

ভুটানের নামকরণ

  • (১) ভুটানের নাম এসেছে সংস্কৃত শব্দ “ভূ-উত্থান” থেকে, যার অর্থ উচ্চভূমি। অন্য মতে, ভুটান এসেছে ভোটস-আন্ত থেকে, যার অর্থ “তিব্বতের শেষ সীমানা”। কারণ, ভুটান তিব্বতের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত।
  • (২) ঐতিহাসিকভাবে ভুটান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে খ্যাত ছিল। যেমন, লো মন বা দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজ্য, লো সেন্দেঞ্জং বা সেন্দেন সাইপ্রেস বৃক্ষমন্ডিত দক্ষিণের রাজ্য, লোমেন খাঝি বা দক্ষিণের রাজ্য যাতে চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে, ও লো মেন জং বা দক্ষিণের রাজ্য, যেখানে ওষধি বৃক্ষ পাওয়া যায়।

ভুটানের ইতিহাস

  • (১) ভুটান দেশটির প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সেখানে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট কিছু জানা যায় না। এখানে হয়ত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেও বসতি ছিল, তবে নবম শতকে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচলনের পরেই এলাকাটির সম্পর্কে আরও জানা যায়।
  • (২) সেই সময় বহু তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু পালিয়ে ভুটানে চলে আসেন। দ্বাদশ শতকে এখানে বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই বর্তমানে ভুটানের বৌদ্ধধর্মের প্রধান রূপ। ভুটানের বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্মশিক্ষালয় দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর সবসময় প্রভাব ফেলেছে।
  • (৩) ১৬১৬ সালে নগাওয়ানা নামগিয়াল নামের এক তিব্বতি লামা তিনবার ভুটানের উপর তিব্বতের আক্রমণ প্রতিহত করলে ভুটান এলাকাটি একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হতে শুরু করে।
  • (৪) নামগিয়াল বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে পদানত করে, একটি ব্যাপক ও সূক্ষ্ম বিবরণসমৃদ্ধ আইন ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং একটি ধর্মীয় ও সিভিল প্রশাসনের উপর নিজেকে একনায়ক বা শাবদ্রুং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর অন্তর্কোন্দল ও গৃহযুদ্ধের কারণে পরবর্তী ২০০ বছর শাবদ্রুঙের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে।
  • (৫) ১৮৮৫ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক শক্ত হাতে ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হন এবং ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের রাজা নির্বাচিত হন এবং ঐ বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো বা ড্রাগন রাজা।
  • (৬) ১৯১০ সালে রাজা উগিয়েন ও ব্রিটিশ শক্তি পুনাখার চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ব্রিটিশ ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উগিয়েন ওয়াংচুক ১৯২৬ সালে মারা গেলে তার পুত্র জিগমে ওয়াংচুক পরবর্তী শাসক হন।
  • (৭) ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভুটানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গণ্য করে। ১৯৪৯ সালে ভুটান ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ভুটান ভারতের কাছ থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে পথনির্দেশনা নেবার ব্যাপারে সম্মত হয় এবং পরিবর্তে ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
  • (৮) ১৯৫২ সালে জিগমে ওয়াংচুকের ছেলে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তার আমলে ভুটান পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ -এর একটি সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তার সময়েই ভুটানে একটি জাতীয় সংসদ, নতুন আইন ব্যবস্থা, রাজকীয় ভুটানি সেনাবাহিনী এবং একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • (৯) ১৯৭২ সালে ১৬ বছর বয়সে জিগমে সিঙিয়ে ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন এবং পল্লী উন্নয়নের মত ব্যাপারগুলির উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জনগণের সামগ্রিক সুখের একজন প্রবক্তা।
  • (১০) উন্নয়ন সম্পর্কে জিগমের দর্শন কিছুটা ভিন্ন এবং এই ভিন্নতার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছেন। তার আমলে ধীরে ধীরে ভুটান গণতন্ত্রায়নের পথে এগোতে থাকে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজার পদ ছেড়ে দেন এবং তার ছেলে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভুটানের রাজা হন।
  • (১১) ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই ভুটানের সংসদ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক দিন থেকে ভুটানে পরম রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে এবং ভুটান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়।

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ভুটানের রাজনৈতিক দিক

  • (১) একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ ভুটান। এখানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ড্রাগন রাজা উপাধি ধারণকারী ভুটানের রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান।
  • (২) মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন হলেন খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।
  • (৩) ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। বর্তমান সংবিধানে দেশটিতে একটি দুই-দলবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক বর্তমানে ভুটানের রাজা।

ভুটানের শহর

পার্বত্য দেশ ভুটানের আয়তন ৪৬,৫০০ বর্গকিমি। থিম্পু ভুটানের রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য।

ভুটানের ভৌগোলিক দিক

  • (১) ভুটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে। মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যে উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস।
  • (২) ভুটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয়, মধ্যভাগে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
  • (৩) বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত। এই অরণ্যই যুগ যুগ ধরে ভুটানের জীব বৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ করে চলেছে।

ভুটানের অর্থনৈতিক দিক

  • (১) ভুটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় রুপীর সাথে সম্পর্কিত। ভুটানে ভারতীয় রুপীরও প্রচলন আছে। ভুটানের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থনীতিগুলির একটি।
  • (২) ভুটানের অর্থনীতি কৃষি, বনজ, পর্যটন এবং ভারতে জলবিদ্যুৎ বিক্রির উপর নির্ভরশীল। ৫৫.৪ শতাংশ জনসংখ্যার মূল জীবিকা কৃষিকাজ। কৃষিকাজ মূলত খামার এবং পশুপালন নিয়ে গঠিত।
  • (৩) হস্তশিল্পগুলির মধ্যে তাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্বত্য ও পাহাড়ী অঞ্চল হবার ফলে রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
  • (৪) সমুদ্রবন্দর না থাকায় ভুটান ব্যবসা বাণিজ্যতে অনুন্নত। ভুটানের কোনও রেলপথ নেই, যদিও ভারতীয় রেলপথ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় দক্ষিণ ভুটানকে তার বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে।
  • (৫) ২০০৮ সালে ভুটান এবং ভারত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা বিশ্বের যেকোনো বাজার থেকে ভুটানে আমদানি ও রফতানি শুল্ক ছাড়াই অনুমতি দেয় ট্রানজিট এর মাধ্যমে।
  • (৬) ১৯৬০ সাল নাগাদ ভুটানের সাথে চীনের স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। শরণার্থীদের আগমনের পরে চীনের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দেয়।
  • (৭) বেশিরভাগ উৎপাদন কুটির শিল্প থেকে আসে, বৃহত্তর শিল্পগুলিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং সিমেন্ট, ইস্পাত ও ফেরো এলয়ের মতো কয়েকটি শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন রাস্তা নির্মাণ, ভারতীয় চুক্তি শ্রমের উপর নির্ভর করে।
  • (৮) কৃষি উৎপাদনের মধ্যে চাল, মরিচ, দুগ্ধ (কিছু ইয়াক, বেশিরভাগ গাভী) পণ্য, বেকওয়েট, বার্লি, সাইট্রাস এবং ভুট্টা পাহাড়ি নিম্ন ভূমিতে হয়। শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, কাঠের পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ফল, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড।

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ভুটানের অধিবাসী

পার্বত্য দেশ ভুটানের অধিবাসীরা ভুটানি নামে পরিচিত। বর্তমানে ভুটানে ৭ লক্ষের বেশি মানুষ বাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে ৪৫ জন। ভুটানে দ্রুপকা জাতির লোক প্রায় ৫০%। এর পরেই আছে নেপালি (৩৫%) এবং অন্যান্য আদিবাসী বা অভিবাসী জাতি।

ভুটানের ধর্ম

দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোক লামাবাদী বৌদ্ধধর্ম -এ বিশ্বাসী। বাকীরা ভারত ও নেপালি ধারার হিন্দু ধর্ম পালন করে।

ভুটানের ভাষা

পার্বত্য দেশ ভুটানের সরকারি ভাষা জংখা বা ভুটানি ভাষা। তাছাড়া বুমথাং-খা, শারচোপ-খা ও নেপালি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজি ভাষাতে শিক্ষা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ভুটানের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০%।

ভুটানের সংস্কৃতি

  • (১) এখানকার বাসিন্দারা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে। ভুটানের একটি সমৃদ্ধ এবং অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, যা বিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মূলত অক্ষত আছে। পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য।
  • (২) ভুটানদের ঐতিহ্য তার বৌদ্ধ ঐতিহ্যে গভীরভাবে বিস্তৃত। দক্ষিণ অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত হিন্দু ধর্ম ভুটানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ধর্ম। সরকার দেশের বর্তমান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বজায় রাখার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
  • (৩) প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য ভুটানকে সর্বশেষ শ্যাংগ্রি-লা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ভুটানের নাগরিকরা বিদেশ ভ্রমণে ক্ষেত্রে স্বাধীন, অনেক বিদেশী ভুটানকে ভ্রমণযোগ্য হিসেবে দেখে।
  • (৪) ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য নিখরচায় ভুটানে প্রবেশাধিকার আছে। তবে অন্য সমস্ত বিদেশিদের একটি ভুটান ট্যুর অপারেটরের সাথে সাইন আপ করতে হবে এবং ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যয় বহন করতে হবে।
  • (৫) ভুটান ধূমপান নিষিদ্ধকারী বিশ্বের প্রথম দেশ। ২০১০ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (ভুটান) অনুসারে প্রকাশ্যে ধূমপান করা বা তামাক বিক্রি করা আইনত অবৈধ হয়েছে।

ভুটানের গণমাধ্যম

  • (১) ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম ত্রিশ মিনিটের জন্য বেতার সম্প্রচার হয়।
  • (২) টেলিভিশন সম্প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৯০-এর দশকে, যদিও মাত্র কয়েকটি ধনী পরিবার তখন স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা কিনতে সক্ষম ছিল। ২০০০ সালে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত ভুটানের খাদ্য

  • (১) ভুটানের প্রধান খাবার হল লাল চাল (বাদামী চালের মতো, কিন্তু এতে বাদামী স্বাদ থাকে, ধানের একমাত্র প্রকার যেটি উঁচু এলাকায় জন্মায়), বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি। পাহাড়াঞ্চলের খাবারের তালিকায় আছে মোরগ, চমরী গাইয়ের মাংস, শুকনো গরুর মাংস, শুকরের মাংস এবং চর্বি ও মেষশাবক ইত্যাদি।
  • (২) স্যুপ এবং সিদ্ধ মাংস, চাল, ফার্ন, মসুর ডাল, এবং শুকনো সবজি, লাল মরিচ এবং পনিরের সাথে মশলা ইত্যাদি ভুটানে শীতকালের প্রিয় খাবার।
  • (৩) দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে গরু এবং চমরী গাইয়ের দুধের তৈরি মাখন এবং পনির অত্যন্ত জনপ্রিয়, প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ দুধ দিয়েই মাখন এবং পনির বানানো হয়।
  • (৪) জনপ্রিয় পানীয় হল মাখন চা, কালো চা, স্থানীয় ভাবে প্রস্তুতকৃত আরা (ভাতের মদ) এবং বিয়ার। জনপ্রিয় মশলা হল এলাচ, আদা, থিংগে (সিচুয়ান মরিচ), রসুন, হলুদ, এবং কেওড়া।

উপসংহার:- ভুটান ভ্রমণ করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা৷ ভুটানের ভূ-প্রকতি প্রাকৃতিক ভাবে খুবই সুন্দর। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভুটান” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ভুটান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভুটান দেশটি অন্য কি নামে পরিচিত?

ড্রাগনের দেশ, বজ্রপাতের দেশ।

২. ভুটানের রাজধানীর নাম কি?

থিম্পু।

৩. ভুটানের সরকারি ভাষা কি?

জংখা।

৪. বর্তমানে ভুটানের রাজা কে?

জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক।

৫. বর্তমানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী কে?

লোটে শেরিং।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি

Leave a Comment