ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর জন্ম, শিক্ষা, পিতৃপরিচয়, কর্মক্ষেত্র, পত্রিকা সম্পাদনা, সাহিত্য কীর্তি ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ছদ্মনাম, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কলিকাতা কমলালয়, কলকাতা কমলালয় এর লেখক কে, কলিকাতা কমলালয় রচয়িতা কে, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত গ্রন্থ।

কথাসাহিত্যিক ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঐতিহাসিক চরিত্রভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু২০ অক্টোবর, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ
অবদানসমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকার সম্পাদক
বিশেষ পরিচিতিবাংলা সাহিত্যের প্রথম কথাসাহিত্যিক
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম

বাংলা সাহিত্যের প্রথম কথাসাহিত্যিক ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বর্ধমান জেলার উখড়ার নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপরিচয়

পিতা রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার কলুটোলা অঞ্চলে বসবাস করতেন।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা

ছেলেবেলায় পিতার তত্ত্বাবধানে নানা বিষয় এবং বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা অর্জন করেন।

গোঁড়া হিন্দু ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভবানীচরণ গোঁড়া হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও চেতনা বিস্তারের প্রবল বিরোধিতা করেন।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র

  • (১) ভবানীচরণ নিজ যোগ্যতায় বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বিশপ রেজিনাল্ড প্রমুখ ইউরোপীয়ের অধীনে কর্ম করেন।
  • (২) ১৮২২ সালে সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকা প্রকাশ করেন ও ১৮২৮ সালে প্রভাবশালী সমাজপতি হিসাবে জুরি নিযুক্ত হন।
  • (৩) ১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায় -এর সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে ধর্মসভা গঠিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন।
  • (৪) সতীদাহ প্রথা রদ, ভারত -এর অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি ধাঁচে সংস্কার প্রবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দেশে বিদেশি অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন রোধে জমিদারদের দেশীয় সম্পদ উন্নয়নের প্রস্তাব করেন।

পত্রিকা সম্পাদনায় ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশ গ্রহণ

  • (১) সাপ্তাহিক সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকা -য় সাংবাদিকতা শুরু করেন ভবানীচরণ। পরে রামমোহন রায়ের সঙ্গে ধর্মমত নিয়ে বিরোধ বাধায় তিনি এই কাজ ত্যাগ করেন।
  • (২) ১৮২২ সালের ৫ মার্চ কলুটোলায় নিজে প্রেস স্থাপন করে প্রকাশ করেন সমাচার চন্দ্রিকা। রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের মুখপত্র হিসাবে পত্রিকাটি সপ্তাহে দুই দিন প্রকাশিত হত।

রক্ষণশীল হিন্দুদের মুখপত্র সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকা

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ছাপাখানা কিনে ১৮২২ সালের মার্চ মাসে সমাচার চন্দ্রিকা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, যা রক্ষণশীল হিন্দুদের মুখপত্রে পরিণত হয়।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য কীর্তি

তার রচিত সাহিত্যগ্রন্থগুলি তৎকালীন সমাজের দুর্নীতির আবরণ উন্মোচন করে দিয়েছিল।

  • (১) প্রমথনাথ শর্ম্মণ ছদ্মনামে রচনা করেন তার বিখ্যাত গদ্যগ্রন্থ নববাবু বিলাস। কলিকাতা কমলালয় (১৮২৩) ও নববাবুবিলাস (১৮২৫) গ্রন্থদুটিতে তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কলকাতার বাবু কালচার ও ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী।
  •  (২) দূতীবিলাস নামে একটি কাব্য (১৮২৫) ও নববাবুবিলাস-এর দ্বিতীয় পর্ব নববিবিবিলাস (১৮৩১) বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • (৩) এছাড়া শ্রীশ্রীগয়াতীর্থ বিস্তার (১৮৩১), আশ্চর্য্য উপাখ্যান (১৮৩৫) ও পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা (১৮৪৪) নামে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেন।
  • (৪) হাস্যার্ণব (১৮২২), শ্রীমদ্ভাগবত (১৮৩০), প্রবোধ চন্দ্রোদয় নাটকং (১৮৩৩), মনুসংহিতা (১৮৩৩), ঊনবিংশ সংহিতা (১৮৩৩), শ্রীভগবদ্গীতা(১৮৩৫) ও রঘুনন্দন ভট্টাচার্য কৃত অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব নব্য স্মৃতি (১৮৪৮) সম্পাদনা করেন।

নামী ইংরেজদের অধীনে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ

ইংরেজি জানার কারণে বিশপ হেবার, বিশপ মিডলটন এবং প্রধান বিচারপতি পুলারসহ বেশ কয়েকজন নামী ইংরেজের অধীনে তিনি কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।

রামমোহনের সাথে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা

রামমোহন সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পক্ষে আন্দোলন পরিচালনা করলেও, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সতীদাহ প্রথার একজন কট্টর সমর্থক। ফলে দুজন মতভেদ দেখা দেয়।

দুটি পত্রিকার বিরোধিতায় ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি একই সঙ্গে শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনারিদের  সমাচার দর্পণ পত্রিকা এবং রামমোহনের সংস্কারপন্থি সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকা উভয়ের বিরুদ্ধে প্রচার আরম্ভ করেন।

হিন্দু কলেজের ছাত্রদের বিরোধিতায় ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ইংরেজ কর্মকর্তা এবং পাশ্চাত্য সংসর্গের মাধ্যমে ধনী হলেও তিনি ছিলেন প্রচন্ড রক্ষণশীল। হিন্দু কলেজের পশ্চিমা-প্রভাবিত ছাত্রদের এবং তাদের লোকাচার-বিরোধী জীবনযাত্রার তীব্র সমালোচনামুখর ছিল তাঁর পত্রিকা।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক নব্য ধনীদের সমালোচনা

ইউরোপীয়দের সংস্পর্শে আসা যে নব্যধনী শ্রেণি অপরিমিত বিলাসিতা এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণতার জীবন যাপন করত, তিনি তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেন।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় পাঠকদের আকর্ষণ

ভবনীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস রচনা না করলেও, তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম সৃজনশীল গদ্য লেখেন। তাঁর রচনার তীব্র বিদ্রূপ এবং রঙ্গব্যঙ্গ পাঠকদের আকৃষ্ট করে।

ধর্মসভার সম্পাদক ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সতীদাহ প্রথা চালু রাখার উদ্দেশে ১৮৩০ সালে রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে ধর্মসভা স্থাপিত হলে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার সম্পাদক মনোনীত হন। পরবর্তী জীবন তিনি এ পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা

সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নবজাগরণ -এর পরবর্তী পর্যায় থেকেই ভবানীচরণ সমালোচিত ও নিন্দিত হতে থাকেন। তার সাহিত্যের অশ্লীলতার মোড়কে নীতিবাক্য প্রচারের অভিযোগ ওঠে।

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু

১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার :- ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল লেখক এবং সাংবাদিক হিসেবেই নয়, রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের একজন প্রধান নেতা হিসেবেও পরিচিত ও খ্যাতিমান ছিলেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম কী?

প্রমথনাথ শর্ম্মণ।

২. কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবু বিলাস’ গ্রন্থ দু’টির রচয়িতা কে?

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩. ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কলিকাতা কমলালয়’ গ্ৰন্থটি কী জাতীয় রচনা?

নকসা জাতীয়।

৪. ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রন্থ দুটি কি কি?

কলিকাতা কমলালয় ও নববাবু বিলাস।

৫. কলকাতা কমলালয় এর লেখক বা রচয়িতা কে?

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Comment