ইলবারি সুলতানদের আমলে বাংলা

ইলবারি সুলতানদের আমলে বাংলা প্রসঙ্গে বল্কা খলজির বিদ্রোহ, ইলতুৎমিসের বাংলা অভিযান, ইলতুৎমিসের মৃত্যু, তুঘ্রিল খান, তমর খাঁর বাংলা অভিযান, মুঘিসুদ্দিন ইউবাক খান সম্পর্কে জানবো।

ইলবারি সুলতানদের আমলে বাংলা

বিষয়ইলবারী সুলতানদের শাসনে বাংলা
বল্কা খলজিইলতুৎমিস
তুঘ্রিল খাঁরাজিয়া
ত্রিহুত জয়তুঘ্রিল খাঁ
তবকাত-ই-নাসিরীমিনহাজ উদ্দিন সিরাজ
ইলবারি সুলতানদের আমলে বাংলা

ভূমিকা :- গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ শাহের মৃত্যুর পর বাংলায় দিল্লী সুলতানির প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপিত হয়। ইলতুৎমিসের জোষ্ঠপুত্র নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ গিয়াসুদ্দিনকে নিহত করে কিছুকাল নিজেই বাংলার শাসনভার নেন।

বল্কা খলজির বিদ্রোহ

দেড় বছর শাসন করার পর রোগাক্রান্ত হয়ে নাসিরুদ্দিন মারা যান। নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর পর গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজের পুত্র বল্কা খলজি লখনৌতি অধিকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ইলতুৎমিসের বাংলা অভিযান

বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে ইলতুৎমিস দ্রুত বাংলায় আসেন (১২৩০ খ্রি) এবং বল্কা খলজিকে বিতাড়িত করেন ও মালিক আলাউদ্দিন জানিকে বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। আলাউদ্দিন জানি স্বল্পকাল এই পদে থাকেন।

ইলতুৎমিসের মৃত্যু

ইতিমধ্যে সুলতান ইলতুৎমিসের মৃত্যু হলে দিল্লীতে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ দেখা দেয়। সেই সুযোগে বাংলায় বিভিন্ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোক ক্ষমতার লড়াই আরম্ভ করে।

তুঘ্রিল খান

শেষ পর্যন্ত বিহারের শাসনকর্তা তুঘ্রিল তুগান খাঁ উদীয়মান আগুর খাঁ আইবককে নিহত করে বাংলায় আধিপত্য (১২৩৬ খ্রি) স্থাপন করেন। তুঘ্রিল তুগান খাঁ বাংলায় তাঁর আধিপত্যকে বৈধ করার জন্য সুলতান রাজিয়ার ফর্মান নেন। তবকাত-ই-নাসিরীর লেখক মিনহাজ উদ্দিন সিরাজ তুঘ্রিল তুগান খাঁয়ের দরবারে ছিলেন।

তুঘ্রিল খানের রাজ্য বিস্তার

তুঘ্রিল খান ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী শাসক। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নিয়ে তিনি একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখেন। এজন্য তার সঙ্গে উড়িষ্যার হিন্দু রাজা প্রথন নরসিংহদেব এবং কারামানিকপুরের শাসক তমর খাঁর বিরোধ দেখা দেয়। তুঘ্রিল খান পূর্ব বাংলা, কামরূপ জয় না করে উপরোক্ত অঞ্চলে রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করায় প্রবল বাধার সম্মুখীন হন।

তুঘ্রিল খানের ত্রিহুত জয়

রাজিয়ার মৃত্যুর পর দিল্লীতে গোলযোগের সুযোগে তুঘ্রিল ত্রিহুত জয় করে উত্তরপ্রদেশের কারামানিকপুর সীমান্তে এসে পৌঁছান (১২৪২ খ্রি)। দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন মাহমুদ শাহ তুঘ্রিলের এই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

উড়িষ্যা আক্রমণ

তুঘ্রিল এর পর তার বাহিনীর মুখ ঘুরিয়ে দক্ষিণে উড়িষ্যা আক্রমণ করেন (১২৪৪ খ্রি)। কিন্তু কটাসিনের যুদ্ধে প্রথম নরসিংহদেব তুঘ্রিলকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন। পরাজিত তুঘ্রিলের পিছু নিয়ে নরসিংহদেব রাঢ়দেশে ঢুকে পড়েন।

তমর খাঁর বাংলা অভিযান

তুঘ্রিল বিপদ বুঝে দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন মাহমুদ শাহের সাহায্য ভিক্ষা করেন। সুলতানের নির্দেশে অযোধ্যার শাসনকর্তা তমর খাঁ বাংলার দিকে ছুটে আসেন।

উড়িষ্যার বাহিনীর প্রত্যাবর্তন

উড়িষ্যার বাহিনী এই সময় লখনৌতির অবরোধে রত ছিল। তমর খাঁর আসার সঙ্কেত পেয়ে তারা উড়িষ্যায় ফিরে যায়।

তুঘ্রিল খাঁ ও তমর খাঁর বিবাদ

এরপর লখনৌতির ওপর অধিকার নিয়ে তুঘ্রিল খাঁ ও তমর খাঁর মধ্যে ঘোর বিবাদ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক মিনহাজের মধ্যস্থতায় এক সন্ধি স্থাপিত হয়। এই সন্ধির ফলে ১২৪৭ খ্রিস্টাব্দে তুঘ্রিল খাঁ লখনৌতি ছেড়ে চলে যান। এর পর তমর খাঁ এবং তারপর জালালুদ্দিন মামুদ জানী বাংলা শাসন করেন।

মুঘিসুদ্দিন ইউবাক খান

  • (১) জালালুদ্দিন মামুদের পর বাংলার বিখ্যাত শাসনকর্তা ছিলেন মুঘিসুদ্দিন ইউবাক খান। তার আমলে দিল্লীর সুলতান ছিলেন নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ। শান্তিপ্রিয় সুলতান বাংলার এই উচ্চাকাঙ্খী শাসনকর্তার অন্যায় আচরণ ক্ষমা করতেন।
  • (২) মুঘিসুদ্দিন ইউবাক প্রথমে জাজনগর বা উড়িষ্যা আক্রমণ করেন। যদিও তিনি উড়িষ্যা অধিকার করতে পারেন নি, তবুও বাংলার দক্ষিণ সীমান্ত এর ফলে সুরক্ষিত হয়। তিনি অযোধ্যা আক্রমণ করেন এবং নিজেকে স্বাধীন সুলতানরূপে ঘোষণা করেন।
  • (৩) মুঘিসুদ্দিন পূর্ব সীমান্তে আসাম বা কামরূপ আক্রমণ করেন। কিন্তু বর্ষার দরুন তাঁর বাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং মুঘিসুন্দিন আসাম রাজের হাতে বন্দী দশায় প্রাণত্যাগ করেন।

উপসংহার :- মুঘিসুদ্দিনের মৃত্যুর পর জালালুদ্দিন মামুদ জানী, ইজুদ্দিন ইউজবকী ও তাজউদ্দিন আসলাম খান পর পর বাংলা শাসন করেন।

(FAQ) ইলবারি সুলতানদের আমলে বাংলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন সুলতানের শাসনকালে বাংলায় দিল্লি সুলতানির প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপিত হয়?

ইলতুৎমিস।

২. রাজিয়ার সময় বাংলার শাসনকর্তা কে ছিলেন?

তুঘ্রিল খাঁ।

৩. দিল্লির কোন সুলতান শান্তিপ্রিয় ছিলেন?

নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ।

৪. তবকাত-ই-নাসিরী কার লেখা?

মিনহাজ উদ্দিন সিরাজ।

Leave a Comment