বটুকেশ্বর দত্ত

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঙালি বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত -এর জন্ম, পিতৃপরিচয়, শিক্ষা, বাল্যকাল, বিপ্লবী দলে যোগ, বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগ, বিপ্লবীদের কাছে পরিচিতি , স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান, দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপ, গ্ৰেপ্তার, অনশন, অন্তরীন, শেষ জীবন, মৃত্যু, সমাধি, সম্মাননা ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী বটুকেশ্বর দত্ত প্রসঙ্গে বটুকেশ্বর দত্তর জন্ম, বটুকেশ্বর দত্তর পিতামাতা, বটুকেশ্বর দত্তর বাল্যকাল, বটুকেশ্বর দত্তর শিক্ষা, বটুকেশ্বর দত্তর বিপ্লবী দলে যোগ, বটুকেশ্বর দত্তর বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগদান, দিল্লীর সংসদ ভবনে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তর বোমা নিক্ষেপ, বটুকেশ্বর দত্তর কারাবরণ, বটুকেশ্বর দত্তর জেলে অনশন, বটুকেশ্বর দত্তর অন্তরীন অবস্থা, বটুকেশ্বর দত্তর শেষ জীবন, বটুকেশ্বর দত্তর মৃত্যু, বটুকেশ্বর দত্তর সমাধি, বটুকেশ্বর দত্তর প্রতি সম্মাননা ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে বটুকেশ্বর দত্ত।

স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঙালি বটুকেশ্বর দত্ত

ঐতিহাসিক চরিত্রবটুকেশ্বর দত্ত
জন্ম১৮ নভেম্বর, ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ
প্রতিষ্ঠানহিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন
পরিচিতির কারণভারতীয় মুক্তি যোদ্ধা
সহযোদ্ধাভগৎ সিং
মৃত্যু২০ জুলাই, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ
বটুকেশ্বর দত্ত

ভূমিকা:- উনিশ শতকের প্রথম দশকের একজন বাঙালি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা হলেন বটুকেশ্বর দত্ত।

বটুকেশ্বর দত্তের জন্ম

ব্রিটিশ ভারত -এর অধুনা পশ্চিমবঙ্গ -এর পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে বটুকেশ্বর দত্ত জন্মগ্ৰহণ করেন।

বটুকেশ্বর দত্তের পিতৃপরিচয়

তার পিতা ছিলেন গোষ্টবিহারী দত্ত। ছোটবেলায় গ্রামে তিনি ‘মোহন’ নামে পরিচিত ছিলেন। ওঁয়াড়ি গ্রামে কিছুদিন থাকার পর পিতা কর্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে গেলে বটুকেশ্বর তার সঙ্গে যান।

বটুকেশ্বর দত্তের শিক্ষা

তিনি কানপুরের পি. পি. এন হাইস্কুল থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে স্কুল স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন।তিনি কানপুরের পন্ডিত পৃথীনাথ প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হন।

বটুকেশ্বর দত্তের বাল্যকাল

ছেলেবেলা থেকেই বটুকেশ্বর ছিলেন সাহসী ও সংবেদনশীল যুবক। শৈশব থেকেই দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অগাধ।ভগৎ সিংহের সান্নিধ্যে তার বৈপ্লবিক চেতনার আরও বিকাশ ঘটে।

বিপ্লবী দলে বটুকেশ্বর দত্তের যোগদান

তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে দল সংগঠনে প্রথমে আগ্রায়, পাঞ্জাব ও অন্যান্য স্থানে যান। তাদের সংগঠনের নাম ছিল হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন।

বিপ্লবী রাজনীতিতে বটুকেশ্বর দত্তের যোগদান

কানপুরে কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগ দেন।

বিপ্লবীদের কাছে বটুকেশ্বর দত্তের পরিচিতি

বিপ্লবী সদস্যদের নিকট বি.কে নামে পরিচিত ছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত।

স্বাধীনতা আন্দোলনে বটুকেশ্বর দত্তের যোগদান

তিনি বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে আসেন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন।

দিল্লির সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপ

১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল ভগৎ সিংহের সাথে নয়া দিল্লীর কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপ করে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।

বটুকেশ্বর দত্তের গ্ৰেপ্তার

ভগৎ সিং ওবটুকেশ্বর দত্ত নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে ইস্তাহার ছড়িয়ে দেন, স্লোগান দেন এবং শান্তভাবে গ্রেপ্তারবরণ করেন। বটুকেশ্বরকে গ্রেপ্তারের পর বিস্ফোরক আইন ভঙ্গ ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রহসন করে ব্রিটিশ সরকার।

জেলে বটুকেশ্বর দত্তের অনশন

জেলে তিনি এবং ভগৎ সিং ভারতীয় রাজনৈতিক জেলবন্দিদের সাথে নোংরা আচরণের বিরুদ্ধে ও রাজবন্দীর অধিকারের দাবীতে এক ঐতিহাসিক অনশনের শুরু করেন এবং তাদের জন্য কিছু অধিকার আদায়ে সক্ষম হন। এই অনশনে বিপ্লবী যতীন দাস শহীদ হন।

অন্তরীন অবস্থায় বটুকেশ্বর দত্ত

১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বটুকেশ্বর মুক্তি পেলেও বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ তার প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ১৯৪২ সালে আবার গ্রেপ্তার করে তাকে অন্তরীন রাখা হয় ৩ বছর।

বটুকেশ্বর দত্তের শেষ জীবন

  • (১) এই সর্বস্বত্যাগী বিপ্লবীর শেষ জীবন ছিল বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। টিবি রোগাক্রান্ত হওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পেলেও স্বাধীন ভারতে তার মূল্যায়ন হয়নি, দারিদ্রের সাথে লড়াই করে জীবন কেটেছে।
  • (২) স্বাধীনতার পর বিবাহ করে বিহারের পাটনায় বসবাস করতেন। সরকারি সাহায্য বা সম্মান বিশেষ কিছু পাননি। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পরিবহন ব্যবসা করতেন

বটুকেশ্বর দত্তের মৃত্যু

২০ জুলাই ১৯৬৫ দিল্লীর একটি হাসপাতালে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে বটুকেশ্বর দত্তের মৃত্যু হয়।

বটুকেশ্বর দত্তের সমাধি

পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা গ্রামে বটুকেশ্বর দত্তের দেহ তার প্রিয় যোদ্ধা ভগৎ সিংহ ও রাজগুরুর সমাধির পাশে শায়িত আছে।

বটুকেশ্বর দত্তের প্রতি সম্মাননা

বাঙালি বটুকেশ্বর দত্তের নামে দিল্লিতে এয়ারপোর্টের পাশে একটি রাস্তার নাম বটুকেশ্বর দত্ত কলোনি রাখা হয়েছে।বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বটুকেশ্বর দত্তের নামে রাখার সুপারিশ করা হয়।

বটুকেশ্বর দত্তের জীবন নিয়ে গ্ৰন্থ রচনা

অনিল ভার্মা ‘বটুকেশ্বর দত্ত: ভগত সিং কে সহযোগী’ নামে একটি বই লিখেছেন।বইটি ভারত সরকারের প্রকাশনা পরিষেবান্যাশনাল বুক ট্রাস্ট দ্বারা বটুকেশ্বরের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি বটুকেশ্বর দত্তেরজীবনের ওপর প্রকাশিত প্রথম বই।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে বটুকেশ্বর দত্ত

বটুকেশ্বর দত্তের জীবনকাহিনীর ওপর নির্মিত দ্য লিজেন্ড অফ ভগত সিং (২০০২) ছবিতে ভাস্বর চ্যাটার্জি বটুকেশ্বরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

উপসংহার:- এই বঙ্গসন্তান দেশ মাতৃকার জন্য নিজের জীবন, যৌবন সব উৎসর্গ করলেও, স্বীকৃতি চিরকালই রয়ে গেল তাঁর অধরা। ইতিহাস কখনোই চিনল না এই বীরকে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বটুকেশ্বর দত্ত” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) বটুকেশ্বর দত্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বটুকেশ্বর দত্ত কোন কোন বৈপ্লবিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন?

নওজোয়ান ভারত সভা ও হীন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন।

২. বটুকেশ্বর দত্তের সহযোদ্ধা কারা ছিলেন?

ভগৎ সিংহ ও রাজগুরু।

৩. দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে কারা বোমা নিক্ষেপ করেন?

ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

Leave a Comment