শিবাজির উত্থানের পটভূমি

মারাঠা নায়ক শিবাজির উত্থানের পটভূমি হিসেবে ভৌগোলিক পরিবেশ, আত্মনির্ভরশীল ও সংগ্রামী জীবন যাত্রার অধিকারী, সামরিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, সামাজিক সাম্য, ধর্মীয় প্রভাব, ভাষা, সাহিত্যের প্রভাব ও শিবাজির নেতৃত্ব সম্পর্কে জানবো।

শিবাজির উত্থানের পটভূমি প্রসঙ্গে শিবাজির উত্থানের পটভূমি আলোচনা, শিবাজির উত্থানে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, শিবাজির উত্থানে সামরিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, শিবাজির উত্থানে সামাজিক সাম্য, শিবাজির উত্থানে ধর্মের প্রভাব, শিবাজির উত্থানে ভাষা ও ধর্মের প্রভাব এবং শিবাজির নেতৃত্ব সম্পর্কে জানব

শিবাজির উত্থানের পটভূমি

ঐতিহাসিক ঘটনাশিবাজির উত্থানের পটভূমি
রাজ্যাভিষেক১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দ
পিতাশাহজী ভোঁসলে
শিক্ষকদাদাজী কোণ্ডদেব
অস্ত্রবাঘনখ
শিবাজির উত্থানের পটভূমি

ভূমিকা :- সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা জাতির উত্থান ভারত ইতিহাসে এক অতি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই প্রসঙ্গে গ্রান্ট ডাফ (Grant Duff) বলেন যে, “বনাঞ্চলে সৃষ্ট দাবানলের মতোই সপ্তদশ শতকে মারাঠারা ভারতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল।”

শিবাজির উত্থানের পটভূমি

এই দাবানলের সৃষ্টি কোনও অস্বাভাবিক বা আকস্মিক ঘটনা নয়। শিবাজির আবির্ভাবের বহু পূর্ব থেকেই এমন অনেক শক্তি মহারাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল ছিল যা মারাঠা অভ্যুদয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। যেমন –

(ক) শিবাজির উত্থানে ভৌগোলিক পরিবেশ

  • (১) মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থান সেই দেশের জনগণের চরিত্র ও ইতিহাস গঠনে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করেছে।
  • (২)উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত সহ্যাদ্রি পর্বতমালা, পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা ও বিন্ধ্য পবর্তমালা এবং নর্মদা ও তাপ্তি নদী ও অসংখ্য পর্বত-সঙ্কুল দুর্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত মহারাষ্ট্র যে কোনও বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে পূর্ণ সুরক্ষিত।
  • (৩) সারা দেশটি পর্বত-সঙ্কুল হওয়ায় তা ছিল গেরিলা যুদ্ধের উপযোগী এবং বিদেশি কোনও শক্তির পক্ষে এখানে জয়ী হওয়া একপ্রকার অসম্ভব ছিল।

(খ) আত্মনির্ভরশীল, সংগ্রামী জীবনযাত্রার অধিকারী

অনুর্বর পাথুরে জমি, বারিপাতের স্বল্পতা এবং কৃষি পণ্যের অপ্রতুলতা মহারাষ্ট্র-বাসীকে আত্মনির্ভরশীল, সাহসী, কষ্টসহিষ্ণু, সংগ্রামী, ধৈর্যশীল ও সহজ জীবনযাত্রার অধিকারী করে তোলে।

(গ) শিবাজির উত্থানে সামরিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা

  • (১) মহারাষ্ট্রের জমি চাষ-বাসের উপযুক্ত না হওয়ায় মহারাষ্ট্রের অধিবাসীদের অনেকেই বিজাপুর, গোলকুণ্ডা ও দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন সামরিক ও অসামরিক বিভাগে কর্মে নিযুক্ত ছিলেন।
  • (২) আহম্মদনগর রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মালিক অম্বর মহারাষ্ট্রের কৃষকদের গেরিলা রণনীতিতে পারঙ্গম করে তোলেন। এইভাবে মহারাষ্ট্রের অধিবাসীরা সামরিক ও অসামরিক কর্মে নানাবিধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীকালে শিবাজি এই সব সেনাদের সাহায্য পান।

(ঘ) শিবাজির উত্থানে সামাজিক সাম্য

  • (১) শিবাজির উত্থানে মারাঠিদের সামাজিক সাম্যবোধ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যা অধিক হওয়ায় সেখানকার অনুর্বর ও বন্ধ্যা জমি মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত ছিল না এবং মারাঠিদের মধ্যে ধন-বৈষম্যও বিশেষ প্রকট ছিল না।
  • (২) একজন দরিদ্র মারাঠাও সৈনিক বা যোদ্ধা হিসেবে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিল। স্যার যদুনাথ বলেন যে, “ধনী ও সভ্য সমাজে যেমন শ্রেণীবিভাগ, উচ্চ-নীচ ভেদ আছে, ষোড়শ শতকের সরল, গরীব মারাঠাদের মধ্যে সেরূপ ছিল না।”
  • (৩) এর ফলে মারাঠাদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। নারী স্বাধীনতার ফলে মহারাষ্ট্রে জাতীয় শক্তিও দৃঢ় হয়।

(ঙ) শিবাজির উত্থানে ধর্মের প্রভাব

  • (১) পঞ্চদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর ভক্তি আন্দোলন মহারাষ্ট্রবাসীকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মধ্যে এক নিবিড় ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়।
  • (২) একনাথ, তুকারাম, রামদাস, বামন পণ্ডিত প্রমুখ সংস্কারকদের প্রচারের ফলে প্রাচীন সামাজিক বিভেদগুলি ভেঙ্গে পড়ে এবং ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ মারাঠিদের মধ্যে এক একতাবোধ গড়ে ওঠে।

(চ) শিবাজির উত্থানে ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাব

  • (১) মহারাষ্ট্রের জাতীয় জাগরণে মারাঠা ভাষা ও সাহিত্যের অবদানও অকিঞ্চিৎকর নয়। তুকারামের ‘আভঙ্গ’, রামদাসের ‘দাশবোধ’ ও ‘আনন্দ-বন-ভুবন’ প্রভৃতি ভজনগীতি মারাঠা সমাজে ঐক্যবোধ জাগ্রত করে।
  • (২) মারাঠি চারণকবিরা (‘গোন্ধালী’) মহারাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে মহারাষ্ট্রের প্রাচীন গৌরব-কথা (‘পোবাড়া’) গেয়ে বেড়াতেন। মহারাষ্ট্রের প্রাচীন চালুক্য, রাষ্ট্রকূট প্রভৃতি রাজবংশের গৌরব-গাথা মহারাষ্ট্রবাসীকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করত।
  • (৩) সুতরাং সপ্তদশ শতকে শিবাজির রাজনৈতিক ঐক্য আনার পূর্বেই সমগ্র মারাঠা জাতির মধ্যে ধর্মগত, জীবনাচরণগত ও ভাষাগত একটি জাতীয়তার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল।তাই আচার্য যদুনাথ সরকার বলেছেন যে, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর জোর দিয়ে মহারাষ্ট্রে মারাঠা জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়েছিল।

শিবাজির নেতৃত্ব

ঐক্যের সকল উপাদান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এই প্রভাবগুলিকে কাজে লাগিয়ে মারাঠাদের মধ্যে ঐক্যবোধ গড়ে উঠছিল না। শিবাজি তাঁর ব্যক্তিত্ব, আকর্ষণী শক্তি ও সংগঠন ক্ষমতা দ্বারা দরিদ্র ও অশিক্ষিত মারাঠাদের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেন।

উপসংহার :- এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা লাভ করে নিজ নেতৃত্ব বলে সামান্য এক জায়গিরদার পুত্র শিবাজী গঠন করেন এক শক্তিশালী রাজ্য ও জাতি – ভারত ইতিহাসে যাদের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ।

(FAQ) শিবাজির উত্থানের পটভূমি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শিবাজীর পিতার নাম কী?

শাহজী ভোঁসলে।

২. শিবাজীর শিক্ষাগুরু কে ছিলেন?

দাদাজী কোণ্ডদেব।

৩. শিবাজীর রাজ্যাভিষেক কবে কোথায় হয়?

১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে রায়গড় দুর্গে।

৪. শিবাজী মহারাজের অস্ত্রের নাম কী ছিল?

বাঘনখ।

Leave a Comment